Logo
  • Home
  • শ্রী শ্রী গীতা
  • সনাতন ধর্ম
  • সুনির্বাচিত
  • সকল সংবাদ
  • বিনোদন
  • দরকারী তথ্য
  • Online
গীতা, গীতার শ্লোক ও অর্থ, গীতা মাহাত্ম্য, গীতা ১ম অধ্যায়:- অর্জুনবিষাদযোগ

 ১৮.মোক্ষযোগ..................
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিশ্ববাসীকে উদ্দেশ্য করে অর্জুনকে শ্রীমদ্ভগবদগীতা জ্ঞান দান করেন  ১৭.শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগযোগ..........
 ১৬.দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগ
শ্লোক ও বাংলায় অর্থ দেখতে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের উপর ক্লিক করুন  ১৫.পুরুষোত্তমযোগ.............
গীতাপাঠপূর্ব মঙ্গলাচরণ:- ও গীতার ধ্যান:- দেখতে ক্লিক করুন  ১৪.গুণত্রয়বিভাগযোগ.........
 ১৩.ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগ........
 ১২.ভক্তিযোগ...................
  শ্রীবৈষ্ণবীয়-তন্ত্রসারে গীতা-মাহাত্ম্য:-    ১১.বিশ্বরূপদর্শনযোগ.........
  শ্রীশঙ্করাচার্য প্রণীত গীতা-মাহাত্ম্য:-   .  ১০.বিভূতিযোগ................
  শ্রীল ব্যাসদেব কৃত গীতা-মাহাত্ম্য:-   ০৯.রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগ.
 ০৮.অক্ষরব্রহ্মযোগ...........
 সুনির্বাচিত শ্লোক    ০৭.জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ.........
 ০৬.ধ্যানযোগ................
 প্রার্থনা    ০৫.কর্মসন্যাসযোগ..........
 ০৪.জ্ঞানযোগ.................
 ০৩.কর্মযোগ.................
 ০২.সাংখ্যযোগ...............
০১.অর্জুনবিষাদযোগ.....

কর্মষটক *

ভক্তিষটক *

জ্ঞানষটক *

শ্রীমদ্ভগবদগীতা

-: Back  ৮ম অধ্যায়:- অক্ষরব্রহ্মযোগ (শ্লোক:- 28)  শ্লোক ও অর্থ দেখতে নিচে ক্লিক করুন   Next :-

1:কিং তদ্ ব্রহ্ম কিমধ্যা 2:অধিযজ্ঞঃ কথং 3:অক্ষরং ব্রহ্ম পরমং 4:অধিভূতং ক্ষরো.. 5:অন্তকালে চ মামেব 6:যং যং বাপি স্মরন্
7:তস্মাৎ সর্বেষু কালে 8:অভ্যাসযোগযুক্তেন 9:কবিং পুরানামনুশা 10:প্রয়াণকালে মনসা 11:যদক্ষরং বেদবিদো 12:সর্বদ্বারাণি সংযম্য
13:ওঁ ইত্যেকাক্ষরং ব্রহ্ম 14:অনন্যচেতাঃ সতত 15:মামুপেত্য পুনর্জন্ম 16:আব্রহ্মভুবনাল্লোকাঃ 17:সহস্রযুগপর্যন্তমহর্যদ্ 18:অব্যক্তাদ্ ব্যক্তয়ঃ
19:ভূতগ্রামঃ স এবায় 20:পরস্তস্মাত্তু ভাবো 21:অব্যক্তোহক্ষর ইত্যু 22:পুরুষঃ স পরঃ পার্থ 23:যত্র কালে ত্বনাবৃত্তি 24:অগ্নির্জ্যোতিরহঃ
25:ধূমো রাত্রিস্তথা কৃষ্ণ 26:শুক্লকৃষ্ণে গতী হ্যে 27:নৈতে সৃতী পার্থ 28:বেদেষু যজ্ঞেষু তপঃ উপসংহার:-
শ্লোক: . .

অর্থ:- . . .

৮ম অধ্যায়:- অক্ষরব্রহ্মযোগ-এর সার সংক্ষেপ:-

এ উদ্যোগটি আপনার ভাল লাগলে লাইক দিয়ে উৎসাহিত করুন এবং বেশি বেশি প্রচার করুন।





শ্লোক:

=অনুবাদ=

শ্লোক:1:
অর্জুন উবাচ
কিং তদ্ ব্রহ্ম কিমধ্যাত্মং কিং কর্ম পুরুষোত্তম ।
অধিভূতং চ কিং প্রোক্তমধিদৈবং কিমুচ্যতে ॥১॥

কিম্, তৎ, ব্রহ্ম, কিম্, অধ্যাত্মম্, কিম্, কর্ম, পুরুষ-উত্তম,
অধিভূতম্, চ, কিম্, প্রোক্তম্, অধিদৈবম্, কিম্, উচ্যতে ॥১॥
অর্থ:- অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে পুরুষোত্তম ! ব্রহ্ম কি ? অধ্যাত্ম কি ? কর্ম কি ? অধিভূত ও অধিদৈবই বা কাকে বলে? অনুগ্রহপূর্বক আমাকে স্পষ্ট করে বল।
শ্লোক:2:
অধিযজ্ঞঃ কথং কোহত্র দেহেহস্মিন্মধুসূদন ।
প্রয়াণকালে চ কথং জ্ঞেয়োহসি নিয়তাত্মভিঃ ॥২॥

অধিযজ্ঞঃ, কথম্, কঃ, অত্র, দেহে, অস্মিন্, মধুসূদন,
প্রয়াণকালে, চ, কথম্, জ্ঞেয়ঃ, অসি, নিয়তাত্মভিঃ ॥২॥
অর্থ:- হে মধুসূদন ! এই দেহে অধিযজ্ঞ কে, এবং এই দেহের মধ্যে তিনি কিরূপে অবস্থিত? মৃত্যুকালে জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিরা কিভাবে তোমাকে জানতে পারেন ?
শ্লোক:3:
শ্রীভগবানুবাচ
অক্ষরং ব্রহ্ম পরমং সভাবোহধ্যাত্মমুচ্যতে ।
ভূতভাবোদ্ভবকরো বিসর্গঃ কর্মসংজ্ঞিতঃ ॥৩॥

অক্ষরম্, ব্রহ্ম, পরমম্, সভাবঃ, অধ্যাত্মম্, উচ্যতে,
ভূত-ভাব-উদ্ভবকরঃ, বিসর্গঃ, কর্মসংজ্ঞিতঃ ॥৩॥
অর্থ:-পরমেশ্বর ভগবান বললেন- নিত্য বিনাশ-রহিত জীবকে বলা হয় ব্রহ্ম এবং তার নিত্য স্বভাবকে অধ্যাত্ম বলে। ভূতগণের উৎপত্তি ও বৃদ্ধিকর সংসারই কর্ম।
শ্লোক:4:
অধিভূতং ক্ষরো ভাবঃ পুরুষশ্চাধিদৈবতম্ ।
অধিযজ্ঞোহহমেবাত্র দেহে দেহভৃতাং বর ॥৪॥

অধিভূতম্, ক্ষরঃ, ভাবঃ, পুরুষঃ চ, অধিদৈবতম্,
অধিযজ্ঞঃ, অহম্, এব, অত্র, দেহে, দেহভৃতাম্, বর ॥৪॥
অর্থ:- হে দেহ্ধারীশ্রেষ্ঠ ! নশ্বর জড়া প্রকৃতি অধিভূত। সূর্য, চন্দ্র আদি সমস্ত দেবতাদের সমষ্টিরূপ বিরাট পুরুষকে অধিদৈব বলা হ্য়৷ আর দেহীদের দেহান্তরগত অন্তর্যামী রূপে আমিই অধিযজ্ঞ।
শ্লোক:5:
অন্তকালে চ মামেব স্মরন্মুক্ত্বা কলেবরম্ ।
যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ ॥৫॥

অন্তকালে, চ, মাম্, এব, স্মরন্, মুক্ত্বা, কলেবরম্,
যঃ, প্রয়াতি, সঃ, মদ্ভাবম্, যাতি, ন, অস্তি, অত্র, সংশয়ঃ ॥৫॥
অর্থ:- মৃত্যুর সময় যিনি আমাকে স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি তৎক্ষণাৎ আমার ভাবই প্রাপ্ত হন। এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
শ্লোক:6:
যং যং বাপি স্মরন্ ভাবং ত্যজত্যন্তে কলেবরম্ ।
তং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদ্ভাবভাবিতঃ ॥৬॥

যম্, যম্, বা, অপি, স্মরন্, ভাবম্, ত্যজতি, অন্তে, কলেবরম্,
তম্, তম্, এব, এতি, কৌন্তেয়, সদা, তদ্ভাব-ভাবিতঃ ॥৬॥
অর্থ:- অন্তিমকালে যিনি যে ভাব স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি সেই ভাবে ভাবিত তত্ত্বকেই লাভ করেন।
শ্লোক:7:
তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু মামনুস্মর যুধ্য চ ।
ময্যর্পিতমনোবুদ্ধির্মামেবৈষ্যস্যসংশয়ঃ ॥৭॥

তস্মাৎ, সর্বেষু, কালেষু, মাম্, অনুস্মর, যুধ্য, চ,
ময়ি, অর্পিত-মনঃ-বুদ্ধিঃ, মাম্, এব, এষ্যসি, অসংশয়ঃ ॥৭॥
অর্থ:- অতএব, হে অর্জুন ! সর্বদা আমাকে স্মরণ করে তোমার স্বভাব বিহিত যুদ্ধ কর, তা হলে আমাতে তোমার মন ও বুদ্ধি অর্পিত হবে এবং নিঃসন্দেহে তুমি আমাকেই লাভ করবে।
শ্লোক:8:
অভ্যাসযোগযুক্তেন চেতসা নান্যগামিনা ।
পরমং পুরুষং দিব্যং যাতি পার্থানুচিন্তয়ন্ ॥৮॥

অভ্যাসযোগ-যুক্তেন, চেতসা, ন-অন্য-গামিনা ,
পরমম্, পুরুষম্, দিব্যম্, যাতি, পার্থ, অনুচিন্তয়ন্ ॥৮॥
অর্থ:- হে পার্থ ! অভ্যাস যোগে যুক্ত হয়ে অনন্যগামী চিত্তে যিনি অনুক্ষণ পরম পুরুষের চিন্তা করেন, তিনি অবশ্যই তাঁকেই প্রাপ্ত হবেন।
শ্লোক:9:
কবিং পুরাণমনুশাসিতারম্
অণোরনিয়াংসমনুস্মরেদ্ যঃ ।
সর্বস্য ধাতারমচিন্ত্যরূপম্
আদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ ॥৯॥

কবিম্, পুরাণম্, অনুশাসিতারম্,
অণোঃ, অনিয়াংসম্, অনুস্মরেৎ, যঃ,
সর্বস্য, ধাতারম্, অচিন্ত্য-রূপম্,
আদিত্য-বর্ণম্, তমসঃ, পরস্তাৎ ॥৯॥
অর্থ:- সর্বজ্ঞ, সনাতন, নিয়ন্তা, সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর, সকলের বিধাতা, জড় বুদ্ধির অতীত, অচিন্ত্য ও পুরুষরূপে পরমেশ্বর ভগবানের ধ্যান করা উচিত। তিনি সূর্যের মতো জোর্তিময় এবং এই জড়া প্রকৃতির অতীত।
শ্লোক:10:
প্রয়াণকালে মনসাচলেন
ভক্ত্যা যুক্তো যোগবলেন চৈব ।
ভ্রুবোর্মধ্যে প্রাণমাবেশ্য সম্যক্
স তং পরং পুরুষমুপৈতি দিব্যম্ ॥১০॥

প্রয়াণকালে, মনসা, অচলেন,
ভক্ত্যা, যুক্তঃ, যোগবলেন, চ, এব,
ভ্রুবোঃ, মধ্যে, প্রাণম্, আবেশ্য, সম্যক্,
সঃ, তম্, পরম্, পুরুষম্, উপ-এতি, দিব্যম্ ॥১০॥
অর্থ:- যিনি মৃত্যুর সময় অচঞ্চল চিত্তে, ভক্তি সহকারে, পূর্ণ যোগশক্তির বলে ভ্রুযুগলের মধ্যে প্রাণবায়ুকে স্থাপন করে পরমেশ্বর ভগবানকে স্মরণ করেন, তিনি অবশ্যই সেই দিব্য পরম পুরুষকে প্রাপ্ত হন।
শ্লোক:11:
যদক্ষরং বেদবিদো বদন্তি
বিশন্তি যদ্ যতয়ো বীতরাগাঃ ।
যদিচ্ছন্তো ব্রহ্মচর্যং চরন্তি
তত্তে পদং সংগ্রহেণ প্রবক্ষ্যে ॥১১॥

যৎ, অক্ষরম্, বেদবিদঃ, বদন্তি,
বিশন্তি, যৎ, যতয়ঃ, বীতরাগাঃ,
যৎ, ইচ্ছন্তঃ, ব্রহ্মচর্যম্, চরন্তি,
তৎ, তে, পদম্, সংগ্রহেণ, প্রবক্ষ্যে ॥১১॥
অর্থ:- বেদবিৎ পণ্ডিতেরা যাঁকে 'অক্ষর' বলে অভিহিত করেন, বিষয়ে আসক্তিশূন্য সন্ন্যাসীরা যাতে প্রবেশ করেন, ব্রহ্মচারীরা যাঁকে লাভ করার ইচ্ছায় ব্রহ্মচর্য পালন করেন, তাঁর কথা আমি সংক্ষেপে তোমাকে বলব।
শ্লোক:12:
সর্বদ্বারাণি সংযম্য মনো হৃদি নিরুধ্য চ ।
মূর্ধ্ন্যাধায়াত্মনঃ প্রাণমাস্থিতো যোগধারণাম্ ॥১২॥

সর্বদ্বারাণি, সংযম্য, মনঃ, হৃদি, নিরুধ্য, চ,
মূর্ধ্নি, আধায়, আত্মনঃ, প্রাণম্, আস্থিতঃ, যোগ-ধারণাম্ ॥১২॥
অর্থ:- ইন্দ্রিয়ের সব কয়টি দ্বার সংযত করে, মনকে হৃদয়ে নিরোধ করে এবং ভ্রুদ্বয়ের মধ্যে প্রাণ স্থাপন করে যোগে স্থিত হতে হয়।
শ্লোক:13:
ওঁ ইত্যেকাক্ষরং ব্রহ্ম ব্যাহরন্মামনুস্মরন্ ।
যঃ প্রয়াতি ত্যজন্ দেহং স যাতি পরমাং গতিম্ ॥১৩॥

ওঁ, ইতি, এক-অক্ষরম্, ব্রহ্ম, ব্যাহরন্, মাম্, অনুস্মরন্,
যঃ, প্রয়াতি, ত্যজন্, দেহম্, সঃ, যাতি, পরমাম্, গতিম্ ॥১৩॥
অর্থ:- যোগাভ্যাসে প্রবৃত্ত হয়ে পবিত্র ওঙ্কার উচ্চারণ করতে করতে কেউ যদি পরমেশ্বর ভগবানকে স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি অবশ্যই পরমা গতি লাভ করবেন।
শ্লোক:14:
অনন্যচেতাঃ সততং যো মাং স্মরতি নিত্যশঃ ।
তস্যাহং সুলভঃ পার্থ নিত্যযুক্তস্য যোগিনঃ ॥১৪॥

অনন্যচেতাঃ, সততম্, যঃ, মাম্, স্মরতি, নিত্যশঃ,
তস্য, অহম্, সুলভঃ, পার্থ, নিত্যযুক্তস্য, যোগিনঃ ॥১৪॥
অর্থ:-হে পার্থ ! যিনি একাগ্রচিত্তে কেবল আমাকেই নিরন্তর স্মরণ করেন, আমি সেই নিত্যযুক্ত ভক্তযোগীর কাছে সুলভ হই।
শ্লোক:15:
মামুপেত্য পুনর্জন্ম দুঃখালয়মশাশ্বতম্ ।
নাপ্নুবন্তি মহাত্মানঃ সংসিদ্ধিং পরমাং গতাঃ ॥১৫॥

মাম্, উপেত্য, পুনঃ-জন্ম, দুঃখ-আলয়ম্, অশাশ্বতম্,
ন, আপ্নুবন্তি, মহাত্মানঃ, সংসিদ্ধিম্, পরমাম্, গতাঃ ॥১৫॥
অর্থ:- মহাত্মা, ভক্তিপরায়ণ যোগীগণ আমাকে লাভ করে আর এই দুঃখপূর্ণ নশ্বর সংসারে পুনরায় জন্মগ্রহণ করেন না, কেন না তাঁরা পরম সিদ্ধি প্র্রাপ্ত হয়েছেন।
শ্লোক:16:
আব্রহ্মভুবনাল্লোকাঃ পুনরাবর্তিনোহর্জুন ।
মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে ॥১৬॥

আব্রহ্ম-ভুবনাৎ, ল্লোকাঃ, পুনঃ-আবর্তিনঃ, অর্জুন,
মাম্, উপেত্য, তু, কৌন্তেয়, পুনঃ-জন্ম, ন, বিদ্যতে ॥১৬॥
অর্থ:- হে অর্জুন ! এই ভুবন থেকে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সমস্ত লোকই পুনরাবর্তনশীল অর্থাৎ পুনর্জন্ম হয় ৷ কিন্তু হে কৌন্তেয় ! আমাকে প্রাপ্ত হলে আর পুনর্জন্ম হয় না।
শ্লোক:17:
সহস্রযুগপর্যন্তমহর্যদ্ ব্রহ্মণো বিদুঃ ।
রাত্রিং যুগসহস্রান্তাং তেহহোরাত্রবিদো জনাঃ ॥১৭॥

সহস্রযুগপর্যন্তম্, অহঃ, যৎ, ব্রহ্মণঃ, বিদুঃ,
রাত্রিম্, যুগসহস্র-অন্তাম্, তে, অহঃ-রাত্র-বিদঃ, জনাঃ ॥১৭॥
অর্থ:- মনুষ্য মানের সহস্র চতুর্যুগে ব্রহ্মার একদিন হয় এবং সহস্র চতুর্যুগে তাঁর এক রাত্রি হয়। এভাবেই যাঁরা জানেন, তাঁরা দিবা-রাত্রির তত্ত্ববেত্তা৷
শ্লোক:18:
অব্যক্তাদ্ ব্যক্তয়ঃ সর্বাঃ প্রভবন্ত্যহরাগমে ।
রাত্র্যাগমে প্রলীয়ন্তে তত্রৈবাব্যক্তসংজ্ঞকে ॥১৮॥

অব্যক্তাৎ, ব্যক্তয়ঃ, সর্বাঃ, প্রভবন্তি, অহঃ-আগমে,
রাত্রি-আগমে, প্রলীয়ন্তে, তত্র, এব, অব্যক্ত-সংজ্ঞকে ॥১৮॥
অর্থ:- ব্রহ্মার দিনের সমাগমে সমস্ত জীব অব্যক্ত থেকে অভিব্যক্ত হয় এবং ব্রহ্মার রাত্রীর আগমে তা পুনরায় অব্যক্তে লয় প্রাপ্ত হয়।
শ্লোক:19:
ভূতগ্রামঃ স এবায়ং ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে ।
রাত্র্যাগমেহবশঃ পার্থ প্রভবত্যহরাগমে ॥১৯॥

ভূতগ্রামঃ, সঃ, এব, অয়ম্, ভূত্বা, ভূত্বা, প্রলীয়তে,
রাত্রি-আগমে, অবশঃ, পার্থ, প্রভবতি, অহঃ-আগমে ॥১৯॥
অর্থ:- হে পার্থ ! সেই ভূতসমূহ পুনঃ পুনঃ উৎপন্ন হয়ে ব্রহ্মার রাত্রি সমাগমে লয় প্রাপ্ত হয় এবং পুনরায় দিনের আগমনে তারা আপনা থেকেই প্রকাশিত হয়৷
শ্লোক:20:
পরস্তস্মাত্তু ভাবোহন্যোহব্যক্তোহব্যক্তাৎ সনাতনঃ ।
যঃ স সর্বেষু ভূতেষু নশ্যৎসু ন বিনশ্যতি ॥২০॥

পরঃ, তস্মাৎ, তু, ভাবঃ, অন্যঃ, অব্যক্তঃ, অব্যক্তাৎ, সনাতনঃ,
যঃ সঃ, সর্বেষু, ভূতেষু, নশ্যৎসু, ন, বিনশ্যতি ॥২০॥
অর্থ:-কিন্তু আর একটি অব্যক্ত প্রকৃতি রয়েছে, যা নিত্য এবং ব্যক্ত ও অব্যক্ত বস্তুর অতীত। সমস্ত ভূত বিনষ্ট হলেও তা বিনষ্ট হয় না।
শ্লোক:21:
অব্যক্তোহক্ষর ইত্যুক্তস্তমাহুঃ পরমাং গতিম্ ।
যং প্রাপ্য ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম ॥২১॥

অব্যক্তঃ, অক্ষরঃ, ইতি, উক্তঃ, তম্, আহুঃ, পরমাম্, গতিম্,
যম্, প্রাপ্য, ন, নিবর্তন্তে, তৎ, ধাম, পরমম্, মম ॥২১॥
অর্থ:- সেই অব্যক্তকে অক্ষর বলে, তাই সমস্ত জীবের পরমা গতি। কেউ যখন সেখানে যায়, তখন আর তাঁকে এই জগতে ফিরে আসতে হয় না। সেটিই হচ্ছে আমার পরম ধাম।
শ্লোক:22:
পুরুষঃ স পরঃ পার্থ ভক্ত্যা লভ্যস্ত্বনন্যয়া ।
যস্যান্তঃস্থানি ভূতানি যেন সর্বমিদং ততম্ ॥২২॥

পুরুষঃ, সঃ, পরঃ, পার্থ, ভক্ত্যা, লভ্যঃ, তু, অনন্যয়া,
যস্য, অন্তঃস্থানি, ভূতানি, যেন, সর্বম্, ইদম্, ততম্ ॥২২॥
অর্থ:- হে পার্থ ! সর্বশ্রেষ্ঠ পরমেশ্বর ভগবানকে অনন্যা ভক্তির মাধ্যমেই কেবল লাভ করা যায়। তিনি যদিও তাঁর ধামে নিত্য বিরাজমান, তবুও সর্বব্যাপ্ত এবং সব কিছু তাঁর মধ্যেই অবস্থিত।
শ্লোক:23:
যত্র কালে ত্বনাবৃত্তিমাবৃত্তিং চৈব যোগিনঃ ।
প্রয়াতা যান্তি তং কালং বক্ষ্যামি ভরতর্ষভ ॥২৩॥

যত্র, কালে, তু, অনাবৃত্তিম্, আবৃত্তিম্, চ, এব, যোগিনঃ,
প্রয়াতাঃ, যান্তি, তম্, কালম্, বক্ষ্যামি, ভরতর্ষভ ॥২৩॥
অর্থ:- হে ভারতশ্রেষ্ঠ ! যে কালে মৃত্যু হলে যোগীরা এই জগতে ফিরে আসেন অথবা ফিরে আসেন না, সেই কালের কথা আমি তোমাকে বলব।
শ্লোক:24:
অগ্নির্জ্যোতিরহঃ শুক্লঃ ষণ্মাসা উত্তরায়ণম্ ।
তত্র প্রয়াতা গচ্ছন্তি ব্রহ্ম ব্রহ্মবিদো জনাঃ ॥২৪॥

অগ্নিঃ, জ্যোতিঃ, অহঃ, শুক্লঃ, ষট্-মাসাঃ, উত্তরায়ণম্,
তত্র, প্রয়াতাঃ, গচ্ছন্তি, ব্রহ্ম, ব্রহ্মবিদঃ, জনাঃ ॥২৪॥
অর্থ:- ব্রহ্মবিৎ পুরুষগণ অগ্নি, জ্যোতি, শুভদিন, শুক্লপক্ষে ও ছয় মাস উত্তরায়ণ কালে দেহত্যাগ করলে ব্রহ্ম লাভ করেন।
শ্লোক:25:
ধূমো রাত্রিস্তথা কৃষ্ণঃ ষন্মাসা দক্ষিণায়নম্ ।
তত্র চান্দ্রমসং জ্যোতির্যোগী প্রাপ্য নিবর্ততে ॥২৫॥

ধূমঃ, রাত্রিঃ, তথা, কৃষ্ণঃ, ষট্-মাসাঃ, দক্ষিণায়নম্,
তত্র, চান্দ্রমসম্, জ্যোতিঃ, যোগী, প্রাপ্য, নিবর্ততে ॥২৫॥
অর্থ:- ধুম, রাত্রি, কৃষ্ণপক্ষ অথবা দক্ষিণায়নের ছয় মাস কালে দেহত্যাগ করে যোগী চন্দ্রলোকে গমনপূর্বক সুখভোগ করার পর পুনরায় মর্ত্যলোকে প্রত্যাবর্তন করেন।
শ্লোক:26:
শুক্লকৃষ্ণে গতী হ্যেতে জগতঃ শাশ্বতে মতে ।
একয়া যাত্যনাবৃত্তিমন্যয়াবর্ততে পুনঃ ॥২৬॥

শুক্লকৃষ্ণে, গতী, হি, এতে, জগতঃ, শাশ্বতে, মতে,
একয়া, যাতি, অনাবৃত্তিম্, অন্যয়া, আবর্ততে, পুনঃ ॥২৬॥
অর্থ:- বৈদিক মতে এই জগৎ থেকে দেহ ত্যাগের দুইটি মার্গ রয়েছে- একটি শুক্ল এবং অপরটি কৃষ্ণ। শুক্লমার্গে দেহত্যাগ করলে তাকে আর ফিরে আসতে হয় না, কিন্তু কৃষ্ণমার্গে দেহত্যাগ করলে ফিরে আসতে হয়।
শ্লোক:27:
নৈতে সৃতী পার্থ জানন্ যোগী মুহ্যতী কশ্চন ।
তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু যোগযুক্তো ভবার্জুন ॥২৭॥

ন, এতে, সৃতী, পার্থ, জানন্, যোগী, মুহ্যতী, কঃ-চন,
তস্মাৎ, সর্বেষু, কালেষু, যোগযুক্তঃ, ভব, অর্জুন ॥২৭॥
অর্থ:- হে পার্থ ! ভক্তেরা এই দুইটি মার্গ সম্বন্ধে অবগত হয়ে কখনও মোহগ্রস্ত হন না ৷ অতএব হে অর্জুন ! তুমি ভক্তিযোগ অবলম্বন কর।
শ্লোক:28:
বেদেষু যজ্ঞেষু তপঃসু চৈব
দানেষু যৎ পুণ্যফলং প্রদিষ্টম্ ।
অত্যেতি তৎ সর্বমিদং বিদিত্বা
যোগী পরং স্থানমুপৈতি চাদ্যম্ ॥২৮॥

বেদেষু, যজ্ঞেষু, তপঃসু, চ, এব,
দানেষু, যৎ, পুণ্যফলম্, প্রদিষ্টম্,
অতি-এতি, তৎ, সর্বম্, ইদম্, বিদিত্বা,
যোগী, পরম্, স্থানম্, উপ-এতি, চ, আদ্যম্ ॥২৮॥
অর্থ:-ভক্তিযোগ অবলম্বন করলে তুমি কোন ফলেই বঞ্চিত হবে না। বেদপাঠ, যজ্ঞ অনুষ্ঠান, তপস্যা, দান আদি যত প্রকার জ্ঞান ও কর্ম আছে, সেই সমুদয়ের যে ফল, তা তুমি ভক্তিযোগ দ্বারা লাভ করে আদি ও পরম ধাম প্রাপ্ত হও।
ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে 'অক্ষরব্রহ্মযোগো' নাম অষ্টমোঽধ্যায়ঃ ॥৮॥

শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৮ম অধ্যায়:- অক্ষরব্রহ্মযোগ-এর সার সংক্ষেপ:-

লেখক- শ্রী স্বপন কুমার রায়
মহা ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ব্যাংক৷
সাধারণ সম্পাদক, শ্রী শ্রী গীতাসংঘ, মতিঝিল শাখা, ঢাকা৷
--------------------------------------
          গীতার অষ্টম অধ্যায়টি মাত্র ২৮টি শ্লোকবিশিষ্ট অধ্যাত্মতত্ত্বসমৃদ্ধ একটি অধ্যায় যা ‘অক্ষরব্রহ্মযোগ’ নামে পরিচিত। অধ্যায়ের প্রারম্ভেই ভক্ত অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের নিকট কয়েকটি বিষয়ে জানবার জন্য জিজ্ঞেস করেছেন। তিনি জানতে চাইলেন ব্রহ্মকি? অধিযজ্ঞকি? প্রয়াণকালে তিনি কিপ্রকারে তাঁকে জানতে বা স্মরণ করতে পারবেন? অর্জুনের জিজ্ঞাসার উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বললেন অব্যয় ও অক্ষর বস্তুই ব্রহ্ম এবং তাঁর স্বভাবই অধ্যাত্ম। ক্ষর ভাবযুক্ত দেহাদি অধিভূত এবং এই দেহে পরমাত্মারূপে যে পুরুষ অধিষ্ঠিত আছেন তিনিই অধিদৈব। এভাবে বলতে বলতে অন্তিমকালে তাঁকে কিভাবে পাওয়া যাবে সে বিষয়ে তিনি অত্যন্ত সহজ ও সরল ভাষায় অর্জুনকে বললেন যে, মৃত্যুকালে মানুষ যেমনটি চিন্তা করতে করতে দেহত্যাগ করে, মৃত্যুর পর অর্থাৎ পরজন্মে ঠিক সেই চিন্তার অনুরূপ হয়েই জন্মগ্রহণ করে থাকে। অন্তিমকালে কেউ যদি শ্রীকৃষ্ণকে ভাবনা করতে করতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তবে সে পরজন্মে তাঁকেই পাপ্ত হবে। কাজেই শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশ দিলেন যে তিনি যদি সর্বদা তাঁকে স্মরণ করে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয় তবে তার পাপ-পূণ্য, ন্যায়-অন্যায়, কর্তব্য-অকর্তব্য ইত্যাদি বিষয়ে কোন চিন্তার প্রয়োজন হবে না। তাঁকে স্মরণ করে কর্তব্য প্রতিপালন করে গেলে তার মুক্তি অবশ্যম্ভাবী। অতপর শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগীপুরুষ কিভাবে দেহান্তে তাঁকে লাভ করতে পারে তার বর্ণনা দিলেন। কোন যোগী দেহের সর্বদ্বার সংযত করতঃ মনকে হৃদয়ে নিরুধ্য করে প্রাণকে যোগবলে ভ্রুযুগলের মধ্যখানে স্থাপনপূর্বক ‘ওম’ এই ব্রহ্মময় এক অক্ষর উচ্চারণ করতে করতে দেহত্যাগ করলে তিনি পরজন্মে পরমগতি লাভ করে থাকেন। শ্রীকৃষ্ণ আরেকটি বিষয় নিশ্চিত করে বললেন যে, ভূ-লোক থেকে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত লাভ করেও সাধককে পুণ্যফল ভোগের পর পুনরায় পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হয়, কিন্তু একবার শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করা গেলে আর এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হয়না। এরপর শ্রীকৃষ্ণ বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করলেন কোন্ তিথি ও ক্ষণে মৃত্যুবরণ করলে মানুষের পুনঃজন্ম হয় এবং কখন মৃত্যু হলে মানুষ মোক্ষলাভ করে থাকে। তিনি জানালেন ধূম, রাত্রি, কৃষ্ণপক্ষ এবং দক্ষিণায়ন এর সময় মৃত্যুহলে মানুষের পুনঃজন্ম হয়। কিন্তু অগ্নি, জ্যোতি, দিবাকাল, শুক্লপক্ষ এবং উত্তরায়নের কালে প্রাণত্যাগ করলে যোগী মোক্ষধাম প্রাপ্ত হন। জগতে শুক্ল অর্থাৎ প্রকাশময় এবং কৃষ্ণ অর্থাৎ অন্ধকারময়-এই দু’টি পথ অনাদি বলে প্রসিদ্ধ। একটি দ্বারা মোক্ষলাভ হয় এবং অপরটি দ্বারা পুনর্জন্ম হয়। এই মার্গদ্বয় সম্পর্কে অবগত হয়ে যোগীপুরুষ কখনও মোহগ্রস্ত হয়না। অতএব, অর্জুনকে যোগযুক্ত হবার জন্য পরামর্শ দিলেন শ্রীকৃষ্ণ। প্রসংগত একটি বিষয় এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে এ অধ্যায়ে শুক্লপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ, উত্তরায়ন, দক্ষিণায়ন শব্দগুলো ব্যবহার করা হলেও ভক্ত ও জ্ঞানী পাঠক গণকে এশব্দগুলোর শুধু বাহ্যিক অর্থ বিবেচনা করলে সঠিক বিবেচনা করা হবেনা। এগুলোকে বুঝতে হবে অধ্যাত্মিক ও তাত্ত্বিক অর্থে। কারণ বাহ্যিক অর্থে এগুলোর সত্যতা অনুধাবন করতে গেলে হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই বিপরীত ঘটনা পরিদৃষ্ট হবে। এঅধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, শুক্লপক্ষে ও উত্তরায়নের সময় কেহ দেহত্যাগ করলে তার মোক্ষলাভ হবে, কিন্তু কৃষ্ণপক্ষে ও দক্ষিণায়নের সময় দেহত্যাগ হলে পরবর্তী অংশ পার্শ্ববর্তী কলামে, এখানে ক্লিক করুনঃ-
পার্শ্ববর্তী বিবরণের পরবর্তী অংশ
দেহত্যাগ হলে পুনর্জন্ম হবে। জাগতিকভাবে এর সত্যতা খুজতে গেলে দেখা যাবে অনেক মহাযোগীপুরুষ, এমনকি অবতার বলে স্বীকৃত পুরুষও দক্ষিণায়নের সময় দেহত্যাগ করেছেন। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দেবে যে তাঁরা কি তাহলে মোক্ষলাভ করবেন না? তাদেরকি সাধারণ মানুষের ন্যায় আবার পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হবে? এহেন প্রশ্নের বা সন্দেহের উত্তর পাওয়া যাবে এশব্দগুলোর আধ্যাত্মিক বা তাত্ত্বিক অর্থের বিশ্লেষণে। ভূ-গোল পঠনে জানা যায় যে, প্রতি পনের দিনে একপক্ষ। অমাবস্যার পরেরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে পরের পূর্ণিমা পর্যন্ত যে পনের দিন তাকে বলে শুক্লপক্ষ এবং পূর্ণিমার পরের দিন থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত পনের দিন কৃষ্ণপক্ষ। আবার আষাঢ় পূর্ণিমা থেকে পৌষ পূর্ণিমার আগপর্যন্ত যে ছয় মাস তাকে বলে দক্ষিণায়ন। পক্ষান্তরে পৌষপূর্ণিমা থেকে আষাঢ়পূর্ণিমার আগ পর্যন্ত ছয় মাস উত্তরায়ন। শাস্ত্রবলে, যা আছে বিশ্বব্রহ্মান্ডে তা আছে দেহভান্ডে। সে অনুযায়ী বাহ্যিক জগতের কৃষ্ণপক্ষ, শুক্লপক্ষ, দক্ষিণায়ন ও উত্তারয়ণ এ দেহের মধ্যেও কল্পনীয়। প্রথমে দেখা যাক কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষ। কৃষ্ণপক্ষ হচ্ছে অন্ধকারময় সময়। এই পক্ষে প্রতিদিন চন্দ্রের ক্ষয় হতে হতে অমাবস্যায় চন্দ্র একেবারেই অদৃশ্য হয়। মানবদেহের মধ্যেও চন্দ্র রয়েছে যা ব্রহ্ম বা কৃষ্ণচন্দ্র নামে পরিচিত। জীব যখন কাম, কামনায় আসক্ত হয়ে ক্রমশঃ কৃষ্ণচন্দ্রকে ভুলে যায় অর্থাৎ দেহের ব্রহ্ম তথা কৃষ্ণজ্ঞান হারিয়ে ফেলে তখনই জীবদেহে কৃষ্ণপক্ষ। এহেন সময়ে বা অবস্থায় যদি কোন মানুষের মৃত্যু হয় তবে তার মুক্তি হয়না, বরং পুনর্জন্ম লাভ করে কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হয়। পক্ষান্তরে শুক্লপক্ষ প্রকাশময় অর্থাৎ এইপক্ষে চন্দ্রের কলা ক্রমশঃ বৃদ্ধিপায়। জীব যখন সাধনার দ্বারা বা কৃষ্ণভাবনার মাধ্যমে তার ব্রহ্মজ্ঞান বা কৃষ্ণজ্ঞানকে সুদৃঢ়করে অর্থাৎ দেহমনপ্রাণ কৃষ্ণচেতনায় উদ্ভাসিত হয় তখন জীব দেহের শুক্লপক্ষ। এমন অবস্থায় বা কালে জীব দেহত্যাগ করলে তিনি অবশ্যই পরমগতি লাভ করেন। এবার উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক। মানব দেহের মধ্যে ছয়টি চক্র রয়েছে যাকে ষটচক্র বলা হয়। যেমন (সর্বনিম্ন থেকে উর্ধদিকে) 1. মূলাধারচক্র 2. স্বাধিষ্ঠানচক্র 3. মনিপুরচক্র 4. অনাহুতচক্র 5. বিশুদ্ধচক্র 6. আজ্ঞাচক্র। এই ছয়টি চক্রের মধ্যে অনাহুত চক্রটি বক্ষস্থলে অবস্থিত এবং ইহাকে মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত চক্র বলে ধরা হয়। স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, চক্রগুলো এই দেহের অভ্যন্তরস্থ 3টি নাড়ী (ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষন্মা) এর মধ্যমা নাড়ী সুষন্মা নাড়ীতে স্তরে স্তরে অবস্থিত। অনাহুত চক্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এখান থেকে নিম্নদিকে মূলাধার চক্র পর্যন্ত বায়ুর গতি নিম্নগামী। অধোগামী এই বায়ুর সাথে জড়িত আছে কাম ও কামনা। কামে আসক্ত হয়েই জীব ব্রহ্মসত্ত্বাকে নষ্ট করে, অজ্ঞানতার পথে ধাবিত হয় যার ফলে কৃষ্ণচন্দ্র ক্রমশঃ ক্ষীণহয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। ইহাই দেহের দক্ষিণায়ন। অতএব, এই সময়ে দেহত্যাগ হলে জীবের যে পুনর্জন্ম হবে তাতে আর সন্দেহ কি? পক্ষান্তরে অনাহুত চক্র থেকে আজ্ঞাচক্রের দিকে বায়ুর গতি উর্ধমুখী। এই বায়ুর প্রভাবে জীবের ব্রহ্মবস্তু উর্ধগামী হয়ে সহস্রায় অধিষ্ঠিত হয়। তখন জীব দ্বিদল পদ্মে ঈশ্বরকে দর্শন করে। যোগী পুরুষেরা যোগসাধন বলে (রেচক পুরক ও কুম্ভক সাধনের মাধ্যমে) নিম্নগামী বায়ুকে উর্ধমুখী করার চেষ্টা করেন। এতে ব্রহ্মশক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় বা কৃষ্ণচন্দ্রের কলা ক্রমশঃ বৃ্দ্ধি পায়। ইহাই দেহের শুক্লপক্ষ এবং এই অবস্থায় কেহ মৃত্যুবরণ করলে তিনি মোক্ষগতি লাভ করেন। এভাবে অক্ষরব্রহ্মযোগের নিগুঢ়তত্ত্বের কথাগুলো সাধক ভক্ত অনুধাবন করে তা অনুশীলনের মাধ্যমে মুক্তিলাভ করতে পারেন। জয় শ্রীকৃষ্ণ ।।

* * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ লাভ করুন। ধন্যবাদ * * *

শ্রীমদ্ভগবদগীতা          

        ০১.অর্জুনবিষাদযোগ.  ০২.সাংখ্যযোগ ..  ০৩.কর্মযোগ..  ০৪.জ্ঞানযোগ..  ০৫.কর্মসন্যাসযোগ.  ০৬.ধ্যানযোগ...
 ০৭.জ্ঞান-বিজ্ঞানযোগ..  ০৮.অক্ষরব্রহ্মযোগ..  ০৯.রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগ.  ১০.বিভূতিযোগ..  ১১.বিশ্বরূপদর্শনযোগ.  ১২.ভক্তিযোগ...
 ১৩.ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগ.  ১৪.গুণত্রয়বিভাগযোগ..  ১৫.পুরুষোত্তমযোগ..  ১৬.দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগ.  ১৭.শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগযোগ.  ১৮.মোক্ষযোগ..

Say something

ধন্যবাদ ! আপনার মতামত প্রেরিত হয়েছে ।
There was an error.
Please enter name.
Please enter valid email adress.
Please enter your comment.

anup02an@gmail.com

For Donate/Ad Contact (0191 22 086 22 Bkash No.) Thanks @ admin=> www.anupamasite.com
God Bless Everyone