অর্থাৎ যেকোন ব্যাপারে ‘গোঁড়ায় যদি গলদ থাকে তার ভবিষ্যতও ত্রুটিযুক্ত হবে’ এব্যাপারে কি তুমি একমত ?
হৃদয়- কেন নয়? অবশ্যই একমত। শুধু আমি কেন সকল সুস্থ্য মানুষই এব্যাপারে একমত হবে। যে ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেল, চাকুরীতে যোগদান করেই তার উদ্দেশ্য থাকবে আগে ঘুষের টাকাটা যেকোন প্রকারে উসুল করতে। এটাইতো স্বাভাবিক।
স্বপ্নিল- বেশ বেশ। আচ্ছা হৃদয়, তোমরা তো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তোমরা তোমাদের পছন্দ-মত প্রার্থীকে ভোটাধিকার ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে জয়যুক্ত করে থাকো, এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু হৃদয় আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তোমায় একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি, সব সময় বা সবক্ষেত্রে কি তোমরা তোমাদের একান্ত পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ পাও? কথাটা আরও সহজ করেই বলি, তোমাদের দেশে চূড়ান্ত জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো যে দলীয় প্রার্থীকে মনোনীত করে থাকে, সেক্ষেত্রে কখনও কোন প্রকার ভুলত্রুটি বা অনিয়ম হয় কি-না; যে কারনে তোমাদের একান্ত পছন্দের প্রার্থী থাকতেও অনেক সময় তাঁকে তোমাদের ভোটাধিকার ক্ষমতা প্রদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়?
হৃদয়- হ্যাঁ একেবারে আমার মনের কথাটাই বললে বন্ধু। নিজের দেশের সম্পর্কে যেকোন প্রকার ইতিবাচক কথা বলতে গেলে যেমন গর্বে মনটা ভরে যায়, তেমনি যেকোন প্রকার নেতিবাচক কথা অন্য কারো নিকট স্বীকার করতে গেলেও প্রাণে বাজে। তবে তুমি আমার বন্ধু- তোমার নিকট অপ্রিয় হলেও সত্য স্বীকার করতেই হয় যে, আমি যতদূর জানি বা লোকমুখে শুনেছি এক্ষত্রেও অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত বা অনিয়ম হয়ে থাকে। দেখা গেছে অপেক্ষাকৃত যোগ্য এবং জনপ্রিয় লোকের পরিবর্তে তার চেয়ে কম জনপ্রিয় ও অযোগ্য লোককে কখনওবা বিতর্কিত লোককে মনোনীত করা হয়। আর দুঃখের বিষয় এই যে, আমরাও অনেক সময় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেই সমস্ত লোকদেরকে আমাদের মহামূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে থাকি। তবে হ্যাঁ কখনও কখনও কোথাওবা এমন ঘটনাও ঘটে থাকে যে, বেশ জনপ্রিয় কোন ব্যক্তি কোন কারণে দলীয়ভাবে মনোনয়ন না পেয়ে অথবা দলীয়ভাবে নির্বাচন না করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। কেউ কেউ আবার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে নির্বাচনে জয়লাভও করে থাকেন। আচ্ছা বন্ধু তোমাদের দেশেও কি এমনটা হয়?
স্বপ্নিল- হ্যাঁ বন্ধু আমাদের দেশেতো বরাবরই এমনটি হয়, কারণ ওখানকার ব্যবস্থাটাই একটু অন্য রকম।
হৃদয়- অন্যরকম মানে? একটু বুঝিয়ে বলবে দয়াকরে।
স্বপ্নিল- হ্যাঁ সেকথাই বলছি, তবে ধৈর্য্য ধরে সম্পূর্ণটুকু শুনতে হবে কিন্তু- নইলে না বলতে পারার কারণে আমারও অতৃপ্তি থেকে যাবে আর তোমারও বুঝতে অসুবিধা হবে।
হৃদয়- আচ্ছা ঠিক আছে ধৈর্য্য ধরেই শুনবো তুমি বলো।
স্বপ্নিল- দেখ আমাদের দেশের বিজ্ঞজনেরা মনে করেন- যেহেতু বিভিন্ন মত এবং আদর্শের উপর ভিত্তি করেই এক একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়; কিন্তু জনগণের বা সর্বসাধারণের জন্য সবদিক থেকেই মঙ্গলজনক এমন একটাই আদর্শ গ্রহণ করা উচিত বা যেটা করা হয়, যা সংবিধান নামে অভিহিত; তাই সকলেই মনে করেন একমাত্র সংবিধানকে ভিত্তি করে সংবিধানের আলোকে সকলের মানসিকতা গড়ে তোলাই যুক্তিযুক্ত; এক্ষেত্রে আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দল (তথা আলাদা আলাদা মতাদর্শ) থাকার দরকারই নেই। অবশ্য সর্বসাধারণের সর্বাঙ্গিন মঙ্গলের জন্যই যেহেতু সংবিধান, সংবিধানের সকল বিধান- তাই যদি আবশ্যকতা পড়ে, তবে সকলের সম্মতিতে সুনির্দিস্ট পদ্ধতি বা উপায়ে সংবিধানের যেকোন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন বা সংযোজন-বিয়োজন করা যেতে পারে। অর্থাৎ আমাদের ওখানে আলাদা কোন রাজনৈতিক দল তথা মতবাদ বা মতাদর্শ নেই; একমাত্র সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটাই আদর্শ বা বিধান বা চুক্তিনামা তা হল সংবিধান এবং সেচুক্তিনামা অনুযায়ী আমরা সবাই শাসিত হই।
পৃষ্ঠা নং- ২৮ , পরবর্তী বিবরণ