এই উদ্যোগটি আপনার ভাল লাগলে প্রচার কার্যে সহযোগিতা করবেন এটুকু প্রার্থনা রইল । |
শ্লোক: | =অনুবাদ= |
শ্লোক: 1: সঞ্জয় ঊবাচ তং তথা কৃপয়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম্ । বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদনঃ ॥১॥ তম্, তথা, কৃপয়া, আবিষ্টম্, অশ্রুপূর্ণ-আকুল-ঈক্ষণম্, বিষীদন্তম্, ইদম্, বাক্যম্, উবাচ, মধুসূদনঃ ॥১॥ |
অনুবাদ : সঞ্জয় বললেন- অর্জুনকে এভাবে অনুতপ্ত, ব্যাকুল ও অশ্রুশিক্ত দেখে, কৃপায় আবিষ্ট হয়ে মধুসূদন বা শ্রীকৃষ্ণ এই কথাগুলি বললেন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 2: শ্রীভগবানুবাচ কুতস্ত্বা কশ্মলমিদং বিষমে সমুপস্থিতম্ । অনার্যজুষ্টমস্বর্গ্যমকীর্তিকরমর্জুন ॥২॥ কুতঃ, ত্বা, কশ্মলম্, ইদম্, বিষমে, সমুপস্থিতম্, অনার্যজুষ্টম্, অস্বর্গ্যম্, অকীর্তিকরম্, অর্জুন ॥২॥ |
অনুবাদ : পুরুষোত্তম শ্রীভগবান বললেন- প্রিয় অর্জুন, এই ঘোর সংঙ্কটময় যুদ্ধস্থলে যারা জীবনের প্রকৃত মূল্য বোঝে না, সেই সব অনার্যের মতো শোকানল তোমার হৃদয়ে কিভাবে প্রজ্জ্বলিত হল ? এই ধরনের মনোভাব তোমাকে স্বর্গলোকে উন্নীত করবে না, পক্ষান্তরে তোমার সমস্ত যশরাশি বিনষ্ট করবে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 3: ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ নৈতত্ত্বয্যুপপদ্যতে । ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরমন্তপ ॥৩॥ ক্লৈব্যম্, মাস্ম গমঃ, পার্থ, ন, এতৎ, ত্ত্বয়ি, উপপদ্যতে, ক্ষুদ্রম্, হৃদয়দৌর্বল্যম্, ত্যক্ত্বা,উত্তিষ্ঠ, পরমন্তপ ॥৩॥ |
অনুবাদ : হে পার্থ ! এই সন্মান হানিকর ক্লীবত্বের বশবর্তী হয়ো না৷ এই ধরনের আচরণ তোমার পক্ষে অনুচিত । হে পরন্তপ ! হৃদয়ের এই ক্ষুদ্র দুর্বলতা পরিত্যাগ করে তুমি উঠে দাঁড়াও। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 4: অর্জুন উবাচ কথং ভীস্মমহং সংখ্যে দ্রোণং চ মধুসূদন । ইষুভিঃ প্রতিযোৎস্যামি পূজার্হাবরিসূদন ॥৪॥ কথম্, ভীস্মম্, অহম্, সংখ্যে, দ্রোণম্, চ, মধুসূদন, ইষুভিঃ, প্রতি, যোৎস্যামি, পূজার্হৌ, অরিসূদন ॥৪॥ |
অনুবাদ : অর্জুন বললেন- হে অরিসূদন ! হে মধুসূদন ! এই যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষ্ম ও দ্রোণের মতো পরম পূজনীয় ব্যাক্তিদের কেমন করে আমি বাণের দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব ? শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 5: গুরূনহত্বা হি মহানুভাবান্ শ্রেয়ো ভোক্তুং ভৈক্ষ্যমপীহ লোকে । হত্বার্থকামাংস্তু গুরূনিহৈব ভুঞ্জীয় ভোগান্ রুধিরপ্রদিগ্ধান্ ॥৫॥ গুরূন্, অহত্বা, হি, মহানুভাবান্, শ্রেয়ঃ, ভোক্তুম্, ভৈক্ষ্যম্, অপি, ইহ, লোকে, হত্বা, অর্থকামান্, তু গুরূন্, ইহ, এব, ভুঞ্জীয়, ভোগান্, রুধির-প্রদিগ্ধান্ ॥৫॥ |
অনুবাদ : আমার মহানুভব শিক্ষাগুরুদের জীবন হানি করে এই জগৎ ভোগ করার থেকে বরং ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করা ভাল। তাঁরা পার্থিব বস্তুর অভিলাষী হলেও আমার গুরুজন। তাঁদের হত্যা করা হলে, যুদ্ধলব্ধ সমস্ত ভোগ্যবস্তু তাঁদের রক্তমাখা হবে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 6: ন চৈতদ্ বিদ্মঃ কতরন্নো গরীয়ো যদ্ বা জয়েম যদি বা নো জয়েয়ুঃ । যানেব হত্বা ন জিজীবিষামস্ তেহবস্থিতাঃ প্রমুখে ধার্তরাষ্ট্রাঃ ॥৬॥ ন, চ, এতৎ, বিদ্মঃ, কতরৎ,নঃ, গরীয়ঃ, যদ্বা, জয়েম, যদি, বা, নঃ, জয়েয়ুঃ, যান্, এব, হত্বা, ন, জিজীবিষামঃ, তে, অবস্থিতাঃ, প্রমুখে, ধার্তরাষ্ট্রাঃ ॥৬॥ |
অনুবাদ : তাদের জয় করা শ্রেয়, না তাদের দ্বারা পরাজিত হওয়া শ্রেয়, তা আমি বুঝতে পারছি না। আমরা যদি ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হ্ত্যা করি, তাহলে আমাদের আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করবে না। তবুও এই রণাঙ্গনে তারা আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে ৷ শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 7: কার্পণ্যদোষোপহতস্বভাবঃ পৃচ্ছামি ত্বাং ধর্মসম্মূঢ়চেতাঃ । যচ্ছ্রেয়ঃ স্যান্নিশ্চিতং ব্রুহি তন্মে শিষ্যস্তেহহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্ ॥৭॥ কার্পণ্য-দোষ-উপহত-স্বভাবঃ, পৃচ্ছামি, ত্বাম্, ধর্ম-সম্মূঢ়চেতাঃ, যৎ, শ্রেয়ঃ, স্যাৎ, নিশ্চিতম্, ব্রুহি, তৎ, মে, শিষ্যঃ, তে, অহম্, শাধি, মাম্, ত্বাম্, প্রপন্নম্ ॥৭॥ |
অনুবাদ : কার্পণ্যজনিত দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছি এবং আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়েছি ৷এই অবস্থায় আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি, এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর, তা আমাকে বল। এখন আমি তোমার শিষ্য এবং সর্বতোভাবে তোমার শরণাগত ৷ দয়া করে তুমি আমাকে নির্দেশ দাও । শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 8: ন হি প্রপশ্যামি মমাপনুদ্যাদ্ যচ্ছোকমুচ্ছোষণমিন্দ্রিয়ানাম্ । অবাপ্য ভূমাবসপত্নমৃদ্ধং রাজ্যং সুরাণামপি চাধিপত্যম্ ॥৮॥ ন, হি, প্রপশ্যামি, মম, অপনুদ্যাৎ, যৎ, শোকম্, উচ্ছোষণম্, ইন্দ্রিয়ানাম্, অবাপ্য, ভূমৌ, অসপত্নম্, ঋদ্ধম্, রাজ্যম্, সুরাণাম্, অপি, চ, আধিপত্যম্ ॥৮॥ |
অনুবাদ : আমার ইন্দ্রিয়গুলিকে শুকিয়ে দিচ্ছে যে শোক, তা দূর করবার কোন উপায় আমি খুঁজে পাচ্ছি না ৷ এমন কি স্বর্গের দেবতাদের মতো আধিপত্য নিয়ে সমৃদ্ধিশালী, প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন রাজ্য এই পৃথিবীতে লাভ করলেও আমার এই শোকের বিনাশ হবে না। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 9: সঞ্জয় উবাচ এবমুক্ত্বা হৃষীকেশং গুড়াকেশঃ পরন্তপঃ । ন য্যোৎস্য ইতি গোবিন্দমুক্ত্বা তূঞ্চীং বভূব হ ॥৯॥ এবম্, উক্ত্বা, হৃষীকেশম্, গুড়াকেশঃ, পরন্তপঃ, ন, য্যোৎস্যে, ইতি, গোবিন্দম্, উক্ত্বা, তূঞ্চীম্, বভূব, হ, ॥৯॥ |
অনুবাদ : সঞ্জয় বললেন- এভাবে মনোভাব ব্যক্ত করে গুড়াকেশ অর্জুন তখন হৃষীকেশকে বললেন, "হে গোবিন্দ ! আমি যুদ্ধ করব না" , এই বলে তিনি মৌন হলেন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 10: তমুবাচ হৃষীকেশঃ প্রহসন্নিব ভারত ॥ সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে বিষীদন্তমিদং বচঃ ॥১০॥ তম্, উবাচ, হৃষীকেশঃ, প্রহসন্, ইব, ভারত,॥ সেনয়োঃ, উভয়োঃ, মধ্যে,, বিষীদন্তম্, ইদম্, বচঃ ॥১০॥ |
অনুবাদ : হে ভরতবংশীয় ধৃতরাষ্ট্র ! সেই সময় স্মিত হেসে, শ্রীকৃষ্ণ উভয় পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে বিষাদগ্রস্ত অর্জুনকে এই কথা বললেন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 11: শ্রীভগবানুবাচ অশোচ্যানন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে । গতাসূনগতাসূংশ্চ নানুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ ॥১১॥ অশোচ্যান্, অনু-অশোচঃ, ত্বম্, প্রজ্ঞাবাদান্, চ, ভাষসে, গত-অসূন, অগত-অসূন্, চ, ন, অনুশোচন্তি, পণ্ডিতাঃ ॥১১॥ |
অনুবাদ : পরমেশ্বর ভগবান বললেন- তুমি প্রাজ্ঞের মতো কথা বলছ, অথচ যে বিষয়ে শোক করা উচিত নয়, সে বিষয়ে শোক করছ। যাঁরা যথার্থই পণ্ডিত তাঁরা কখনও জীবিত অথবা মৃত কারও জন্যই শোক করেন না। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 12: ন ত্বেবাহং জাতু নাসং ন ত্বং নেমে জনাধিপাঃ। ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়মতঃপরম্ ॥১২॥ ন, তু, এব, অহম্, জাতু, ন, আসম্, ন, ত্বং, ন, ইমে, জনাধিপাঃ, ন, চ, এব, ন, ভবিষ্যামঃ, সর্বে, বয়ম্, অতঃ, পরম্, ॥১২॥ |
অনুবাদ : এমন কোন সময় ছিল না যখন আমি, তুমি ও এই সমস্ত রাজারা ছিলেন না এবং ভবিষ্যতেও কখনও আমাদের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে না । শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 13: দেহিনোহস্মিন্ যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা । তথা দেহান্তরপ্রাপ্তির্ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি ॥১৩॥ দেহিনঃ, অস্মিন্, যথা, দেহে, কৌমারম্, যৌবনম্, জরা, তথা, দেহ-অন্তর-প্রাপ্তিঃ, ধীরঃ, তত্র, ন, মুহ্যতি ॥১৩॥ |
অনুবাদ : দেহীর দেহ যেভাবে কৌমার, যৌবন ও জরার মাধ্যমে তার রূপ পরিবর্তন করে চলে, মৃত্যুকালে তেমনই ঐ দেহী ( আত্মা ) এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহান্তরিত হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা কখনও এই পরিবর্তনে মুহ্যমান হন না । শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 14: মাত্রাস্পর্শাস্তু কৌন্তেয় শীতোষ্ণসুখদুঃখদাঃ । আগমাপায়িনোহনিত্যাস্তাংস্তিতিক্ষস্ব ভারত ॥১৪॥ মাত্রাস্পর্শা, তু, কৌন্তেয়, শীত-উষ্ণ-সুখ-দুঃখদাঃ, আগম-অপায়িনঃ, অনিত্যাঃ, তান্, তিতিক্ষস্ব, ভারত ॥১৪॥ |
অনুবাদ : হে কৌন্তেয় ! ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগের ফলে অনিত্য সুখ ও দুঃখের অনুভব হয় ৷ সেগুলি ঠিক যেন শীত এবং গ্রীষ্ম ঋতুর গমনাগমনের মতো । হে ভরতকুল-প্রদীপ ! সেই ইন্দ্রিয়্জাত অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সেগুলি সহ্য করার চেষ্টা কর। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 15: যং হি ন ব্যথয়ন্ত্যেতে পুরুষং পুরুষর্ষভ । সমদুঃখসুখং ধীরং সোহমৃতত্বায় কল্পতে ॥১৫॥ যম্, হি, ন, ব্যথয়ন্তি, এতে, পুরুষম্, পুরুষর্ষভ, সমদুঃখসুখম্, ধীরম্, সঃ, অমৃতত্বায়, কল্পতে ॥১৫॥ |
অনুবাদ : হে পুরুষশ্রেষ্ঠ (অর্জুন) ! যে জ্ঞানী ব্যক্তি সুখ ও দুঃখকে সমান জ্ঞান করেন এবং শীত ও উষ্ণ আদি দ্বন্দ্বে বিচলিত হন না, তিনিই মুক্তি লাভের প্রকৃত অধিকারী। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 16: নাসতো বিদ্যতে ভাবো নাভাবো বিদ্যতে সতঃ । উভয়োরপি দৃষ্টোহন্তস্ত্বনয়োস্তত্ত্বদর্শিভিঃ ॥১৬॥ ন, অসতঃ, বিদ্যতে, ভাবঃ, ন, অভাবঃ, বিদ্যতে সতঃ, উভয়োঃ, অপি, দৃষ্টঃ, অন্তঃ, তু, অনয়োঃ, তত্ত্বদর্শিভিঃ ॥১৬॥ |
অনুবাদ : যাঁরা তত্ত্বদ্রষ্টা তাঁরা সিদ্ধান্ত করেছেন যে, অনিত্য জড় বস্তুর স্থায়িত্ব নেই এবং নিত্য বস্তু আত্মার কখনও বিনাশ হয় না। তাঁরা উভয় প্রকৃতির যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 17: অবিনাশি তু তদ্বিদ্ধি যেন সর্বমিদং ততম্ । বিনাশমব্যয়স্যাস্য ন কশ্চিৎ কর্তুমর্হতি ॥১৭॥ অবিনাশি, তু, তৎ, বিদ্ধি, যেন, সর্বম্, ইদম্, ততম্ । বিনাশম্, অব্যয়স্য, অস্য, ন, কশ্চিৎ, কর্তুম্, অর্হতি ॥১৭॥ |
অনুবাদ : যা সমগ্র শরীরে পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে, তাকে তুমি অবিনাশী বলে জানবে৷ সেই অব্যয় আত্মাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 18: অন্তবন্ত ইমে দেহা নিত্যস্যোক্তাঃ শরীরিণঃ । অনাশিনোহপ্রমেয়স্য তস্মাদ্ যুধ্যস্ব ভারত ॥১৮॥ অন্তবন্তঃ, ইমে, দেহাঃ, নিত্যস্য, উক্তাঃ, শরীরিণঃ, অনাশিনঃ, অপ্রমেয়স্য, তস্মাৎ, যুধ্যস্ব, ভারত ॥১৮॥ |
অনুবাদ : অবিনাশী, অপরিমেয় ও শাশ্বত আত্মার জড় দেহ নিঃসন্দেহে বিনাশশীল৷ অতএব হে ভারত ! তুমি শাস্ত্রবিহিত স্বধর্ম পরিত্যাগ না করে যুদ্ধ কর। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 19: য এনং বেত্তি হন্তারং যশ্চৈনং মন্যতে হতম্ । উভৌ তৌ ন বিজানীতো নায়ং হন্তি ন হন্যতে ॥১৯॥ যঃ, এনম্, বেত্তি, হন্তারম্, যঃ, চ, এনম্, মন্যতে, হতম্, উভৌ, তৌ, ন, বিজানীতঃ, ন, অয়ম্, হন্তি, ন, হন্যতে ॥১৯॥ |
অনুবাদ : যিনি জীবাত্মাকে হন্তা বলে মনে করেন কিংবা যিনি একে নিহত বলে ভাবেন, তাঁরা উভয়েই আত্মার প্রকৃত স্বরূপ জানেনা না। কারণ আত্মা কাউকে হত্যা করেন না এবং কারও দ্বারা নিহতও হন না। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 20: ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্ নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ । অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে ॥২০॥ ন, জায়তে, ম্রিয়তে, বা, কদাচিৎ, ন, অয়ম্, ভূত্বা, ভবিতা, বা, ন, ভূয়ঃ, অজঃ, নিত্যঃ, শাশ্বতঃ, অয়ম্, পুরাণঃ, ন, হন্যতে, হন্যমানে, শরীরে ॥২০॥ |
অনুবাদ : আত্মার কখনও জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না, অথবা পুনঃ পুনঃ তাঁর উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না৷ তিনি জন্মরহিত শাশ্বত, নিত্য এবং পুরাতন হলেও চিরনবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনও বিনষ্ট হয় না। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 21: বেদাবিনাশিনং নিত্যং য এনমজমব্যয়ম্। কথং স পুরুষঃ পার্থ কং ঘাতয়তি হন্তি কম্ ॥২১॥ বেদ, অবিনাশিনম্, নিত্যম্, যঃ, এনম্, অজম্, অব্যয়ম্, কথম্, স, পুরুষঃ, পার্থ, কম্, ঘাতয়তি, হন্তি, কম্ ॥২১॥ |
অনুবাদ : হে পার্থ ! যিনি এই আত্মাকে অবিনাশী, শাশ্বত, জন্মরহিত ও অক্ষয় বলে জানেন, তিনি কিভাবে কাউকে হত্যা করতে বা হত্যা করাতে পারেন ? শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 22: বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি । তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য- ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ॥২২॥ বাসাংসি, জীর্ণানি, যথা, বিহায়, নবানি, গৃহ্ণাতি, নরঃ, অপরাণি, তথা, শরীরাণি, বিহায়, জীর্ণানি, অন্যানি, সংযাতি, নবানি, দেহী ॥২২॥ |
অনুবাদ : মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, দেহীও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করেন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 23: নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ । ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ ॥২৩॥ ন, এনম্, ছিন্দন্তি, শস্ত্রাণি, ন, এনম্, দহতি, পাবকঃ, ন, চ, এনম্, ক্লেদয়ন্তি, আপঃ, ন, শোষয়তি, মারুতঃ ॥২৩॥ |
অনুবাদ : আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পোড়ান যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানোও যায় না। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 24: অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয়মক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ । নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুরচলোহয়ং সনাতনঃ ॥২৪॥ অচ্ছেদ্যঃ, অয়ম্, অদাহ্যঃ, অয়ম্, অক্লেদ্যঃ, অশোষ্যঃ, এব, চ, নিত্যঃ, সর্বগতঃ, স্থাণুঃ, অচলঃ, অয়ম্, সনাতনঃ ॥২৪॥ |
অনুবাদ : এই আত্মা অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, অক্লেদ্য ও অশোষ্য। তিনি চিরস্থায়ী, সর্বব্যপ্ত, অপরিবর্তনীয়, অচল ও সনাতন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 25: অব্যক্তোহয়মচিন্ত্যোহয়মবিকার্যোহয়মুচ্যতে । তস্মাদেবং বিদিত্বৈনং নানুশোচিতুমর্হসি ॥২৫॥ অব্যক্তঃ, অয়ম্, অচিন্ত্যঃ, অয়ম্, অবিকার্যঃ, অয়ম্, উচ্যতে, তস্মাৎ, এবম্, বিদিত্বা, এনম্, ন, অনুশোচিতুম্, অর্হসি ॥২৫॥ |
অনুবাদ : এই আত্মা অব্যক্ত, অচিন্ত্য ও অবিকারী বলে শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে। অতএব এই সনাতন স্বরূপ অবগত হয়ে দেহের জন্য তোমার শোক করা উচিত নয় । শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 26: অথ চৈনং নিত্যজাতং নিত্যং বা মন্যসে মৃতম্ । তথাপি ত্বং মহাবাহো নৈনং শোচিতুমর্হসি ॥২৬॥ অথ, চ, এনম্, নিত্যজাতম্, নিত্যম্, বা, মন্যসে, মৃতম্, তথাপি, ত্বম্, মহাবাহো, ন, এনম্, শোচিতুম্, অর্হসি ॥২৬॥ |
অনুবাদ : হে মহাবাহো ! আর যদি তুমি মনে কর যে, আত্মার বারবার জন্ম হয় এবং মৃত্যু হয়, তা হলেও তোমার শোক করার কোন কারণ নেই। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 27: জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ । তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি ॥২৭॥ জাতস্য, হি, ধ্রুবঃ, মৃত্যুঃ, ধ্রুবম্, জন্ম, মৃতস্য, চ, তস্মাৎ, অপরিহার্যে, অর্থে, ন, ত্বম্, শোচিতুম্, অর্হসি ॥২৭॥ |
অনুবাদ : যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদন করার সময় তোমার শোক করা উচিত নয়। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 28: অব্যক্তাদীনি ভূতানি ব্যক্তমধ্যানি ভারত । অব্যক্তনিধনান্যেব তত্র কা পরিদেবনা ॥২৮॥ অব্যক্ত-আদীনি, ভূতানি, ব্যক্তমধ্যানি, ভারত, অব্যক্ত-নিধনানি, এব, তত্র, কা, পরিদেবনা ॥২৮॥ |
অনুবাদ : হে ভারত ! সমস্ত সৃষ্ট জীব উৎপন্ন হওয়ার আগে অপ্রকাশিত ছিল, তাদের স্থিতিকালে প্রকাশিত থাকে এবং বিনাশের পর আবার অপ্রকাশিত হয়ে যায়। সুতরাং, সেই জন্য শোক করার কি কারণ ? শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 29: আশ্চর্যবৎ পশ্যতি কশ্চিদেনম্ আশ্চর্যবদ্ বদতি তথৈব চান্যঃ । আশ্চর্যবচ্চৈনমন্যঃ শৃণোতি শ্রুত্বাপ্যেনং বেদ ন চৈব কশ্চিৎ ॥২৯॥ আশ্চর্যবৎ, পশ্যতি, কশ্চিৎ, এনম্, আশ্চর্যবৎ, বদতি, তথা, এব, চ, অন্যঃ, আশ্চর্যবৎ, চ, এনম্, অন্যঃ, শৃণোতি, শ্রুত্বা, অপি, এনম্, বেদ, ন, চ, এব, কশ্চিৎ ॥২৯॥ |
অনুবাদ : কেউ এই আত্মাকে আশ্চর্যবৎ দর্শন করেন, কেউ আশ্চর্যভাবে বর্ণনা করেন এবং কেউ আশ্চর্য জ্ঞানে শ্রবণ করেন, আর কেউ শুনেও তাকে বুঝতে পারেন না। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 30: দেহী নিত্যমবধ্যোহয়ং দেহে সর্বস্য ভারত ॥ তস্মাৎ সর্বাণি ভূতানি ন ত্বং শোচিতুমর্হসি ॥৩০॥ দেহী, নিত্যম্, অবধ্যঃ, অয়ম্, দেহে, সর্বস্য, ভারত, তস্মাৎ, সর্বাণি, ভূতানি, ন, ত্বম্, শোচিতুম্, অর্হসি ॥৩০॥ |
অনুবাদ : হে ভারত ! প্রাণীদের দেহে অবস্তিত আত্মা সর্বদাই অবধ্য। অতএব কোন জীবের জন্য তোমার শোক করা উচিত নয়। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 31: স্বধর্মমপি চাবেক্ষ্য ন বিকম্পিতুমর্হসি । ধর্ম্যাদ্ধি যুদ্ধাচ্ছ্রেয়োহন্যৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে ॥৩১॥ স্বধর্মম্, অপি, চ, অবেক্ষ্য, ন, বিকম্পিতুম্, অর্হসি, ধর্ম্যাৎ, হি, যুদ্ধাৎ, শ্রিয়ঃ, অন্যৎ, ক্ষত্রিয়স্য, ন, বিদ্যতে ॥৩১॥ |
অনুবাদ : ক্ষত্রিয়রূপে তোমার স্বধর্ম বিবেচনা করে তোমার জানা উচিত যে, ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করার থেকে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মঙ্গলকর আর কিছুই নেই। তাই, তোমার দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া উচিত নয়। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 32: যদৃচ্ছয়া চোপপন্নং স্বর্গদ্বারমপাবৃতম্ । সুখিনঃ ক্ষত্রিয়াঃ পার্থ লভন্তে যুদ্ধমীদৃশম্ ॥৩২॥ যদৃচ্ছয়া, চ, উপপন্নম্, স্বর্গদ্বারম্, অপাবৃতম্, সুখিনঃ, ক্ষত্রিয়াঃ, পার্থ, লভন্তে, যুদ্ধম্, ঈদৃশম্ ॥৩২॥ |
অনুবাদ : হে পার্থ ! স্বর্গদ্বার উন্মোচনকারী এই প্রকার ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না চাইতেই যে সব ক্ষত্রিয়ের কাছে আসে, তাঁরা সুখী হন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 33: অথ চেত্বমিমং ধর্ম্যং সংগ্রামং ন করিষ্যসি । ততঃ স্বধর্মং কীর্তিং চ হিত্বা পাপমবাপ্স্যসি ॥৩৩॥ অথ, চেৎ, ত্বম্, ইমম্, ধর্ম্যম্, সংগ্রামম্, ন, করিষ্যসি ততঃ, স্বধর্মম্, কীর্তিম্, চ, হিত্বা, পাপম্, অবাপ্স্যসি ॥৩৩॥ |
অনুবাদ : কিন্ত্ত, তুমি যদি এই ধর্মযুদ্ধ না কর, তা হলে তোমার স্বীয় ধর্ম এবং কীর্তি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পাপ ভোগ করবে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 34: অকীর্তিং চাপি ভূতানি কথয়িষ্যন্তি তেহব্যয়ম্ । সম্ভাবিতস্য চাকীর্তির্মরণাদতিরিচ্যতে ॥৩৪॥ অকীর্তিম্, চ, অপি, ভূতানি, কথয়িষ্যন্তি, তে, অব্যয়ম্, সম্ভাবিতস্য, চ, অকীর্তিঃ, মরণাৎ, অতিরিচ্যতে ॥৩৪॥ |
অনুবাদ : সমস্ত লোক তোমার কীর্তিহীনতার কথা বলবে এবং যে-কোন মর্যাদাবান লোকের পক্ষেই এই অসম্মান মৃত্যু অপেক্ষাও অধিকতর মন্দ। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 35: ভয়াদ্ রণাদুপরতং মংস্যন্তে ত্বাং মহারথাঃ । যেষাং চ ত্বং বহুমতো ভূত্বা যাস্যসি লাঘবম্ ॥৩৫॥ ভয়াৎ, রণাৎ, উপরতম্, মংস্যন্তে, ত্বাম্, মহারথাঃ, যেষাম্, চ, ত্বম্, বহুমতঃ, ভূত্বা, যাস্যসি, লাঘবম্, ॥৩৫॥ |
অনুবাদ : সমস্ত মহারথীরা মনে করবেন যে, তুমি ভয় পেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেছ এবং তুমি যাদের কাছে সম্মানিত ছিলে, তারাই তোমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য জ্ঞান করবে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 36: অবাচ্যবাদাংশ্চ বহূন্ বদিষ্যন্তি তবাহিতাঃ । নিন্দন্তস্তব সামর্থ্যং ততো দুঃখতরং নু কিম্ ॥৩৬॥ অবাচ্য-বাদান্, চ, বহূন্, বদিষ্যন্তি, তব, অহিতাঃ, নিন্দন্তঃ, তব, সামর্থ্যম্, ততঃ, দুঃখতরম্, নু, কিম্ ॥৩৬॥ |
অনুবাদ : তোমার শত্রুরা তোমার সামর্থ্যের নিন্দা করে বহু অকথ্য কথা বলবে। তার চেয়ে অধিকতর দুঃখদায়ক তোমার পক্ষে আর কি হতে পারে ? শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 37: হতো বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম্ । তস্মাদুত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃতনিশ্চয়ঃ ॥৩৭॥ হতঃ, বা, প্রাপ্স্যসি, স্বর্গম্, জিত্বা, বা, ভোক্ষ্যসে, মহীম্ । তস্মাৎ, উত্তিষ্ঠ, কৌন্তেয়, যুদ্ধায়, কৃতনিশ্চয়ঃ ॥৩৭॥ |
অনুবাদ : হে কুন্তীপুত্র ! এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্বর্গ লাভ করবে, আর জয়ী হলে পৃথিবী ভোগ করবে ৷ অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ়সংকল্প হয়ে উত্থিত হও। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 38: সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ । ততো যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপমবাপ্স্যসি ॥৩৮॥ সুখদুঃখে, সমে, কৃত্বা, লাভ-অলাভৌ, জয়-অজয়ৌ, ততঃ, যুদ্ধায়, যুজ্যস্ব, ন, এবম্, পাপম্, অবাপ্স্যসি ॥৩৮॥ |
অনুবাদ : সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি ও জয়-পরাজয়কে সমান জ্ঞান করে তুমি যুদ্ধের নিমিত্ত যুদ্ধ কর, তা হলে তোমাকে পাপভাগী হতে হবে না। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 39: এষা তেহবিহিতা সাংখ্যে বুদ্ধির্যোগে ত্বিমাং শৃণু । বুদ্ধ্যা যুক্তো যয়া পার্থ কর্মবন্ধং প্রহাস্যসি ॥৩৯॥ এষা, তে, অভিহিতা, সাংখ্যে, বুদ্ধিঃ, যোগে, তু, ইমাম্, শৃণু , বুদ্ধ্যা, যুক্তঃ, যয়া, পার্থ, কর্মবন্ধম্, প্রহাস্যসি ॥৩৯॥ |
অনুবাদ : হে পার্থ ! আমি তোমাকে সাংখ্য-যোগের কথা বললাম ৷ এখন ভক্তিযোগ সম্বন্ধিনী বুদ্ধির কথা শ্রবণ কর, যার দ্বারা তুমি কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারবে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 40: নেহাভিক্রমনাশোহস্তি প্রত্যবায়ো ন বিদ্যতে । স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ ॥৪০॥ ন, ইহ, অভিক্রমনাশঃ, অস্তি, প্রত্যবায়ঃ, ন, বিদ্যতে, স্বল্পম্, অপি, অস্য, ধর্মস্য, ত্রায়তে, মহতঃ, ভয়াৎ ॥৪০॥ |
অনুবাদ : ভক্তিযোগের অনুশীলন কখনও ব্যর্থ হয় না এবং তার কোনও ক্ষয় নেই। তার সল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররূপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 41: ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিরেকেহ কুরুনন্দন । বহুশাখা হ্যনন্তাশ্চ বুদ্ধয়োহব্যবসায়িনাম্ ॥৪১॥ ব্যবসায়াত্মিকা, বুদ্ধিঃ, একা, ইহ, কুরুনন্দন, বহুশাখাঃ, হি, অনন্তাঃ, চ, বুদ্ধয়ঃ, অব্যবসায়িনাম্ ॥৪১॥ |
অনুবাদ : যারা এই পথ অবলম্বন করেছে তাদের নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি একনিষ্ঠ। হে কুরুনন্দন, অস্থিরচিত্ত সকাম ব্যক্তিদের বুদ্ধি বহু শাখাবিশিষ্ট ও বহুমুখী। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 42: যামিমাং পুষ্পিতাং বাচং প্রবদন্ত্যবিপশ্চিতঃ । বেদবাদরতাঃ পার্থ নান্যদস্তীতি বাদিনঃ ॥৪২॥ যাম্, ইমাম্, পুষ্পিতাম্, বাচম্, প্রবদন্তি, অবিপশ্চিতঃ, বেদবাদরতাঃ, পার্থ, ন, অন্যৎ, অস্তি, ইতি, বাদিনঃ, ॥৪২॥ |
অনুবাদ : বিবেকবর্জিত লোকেরাই বেদের পুষ্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে স্বর্গসুখ ভোগ, উচ্চকুলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ আদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে, তার ঊর্ধ্বে আর কিছুই নেই। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 43: কামাত্মানঃ স্বর্গপরা জন্মকর্মফলপ্রদাম্ । ক্রিয়াবিশেষবহুলাং ভোগৈশ্বর্যগতিং প্রতি ॥৪৩॥ কাম-আত্মানঃ, স্বর্গপরাঃ, জন্ম-কর্ম-ফল-প্রদাম্, ক্রিয়াবিশেষ-বহুলাম্, ভোগ-ঐশ্বর্য-গতিম্, প্রতি ॥৪৩॥ |
|
শ্লোক: 44: ভোগৈশ্বর্যপ্রশক্তানাং তয়াপহৃতচেতসাম্। ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিঃ সমাধৌ ন বিধীয়তে ॥৪৪॥ ভোগ-ঐশ্বর্য-প্রশক্তানাম্, তয়া, অপহৃত-চেতসাম্, ব্যবসায়াত্মিকা, বুদ্ধিঃ, সমাধৌ, ন, বিধীয়তে ॥৪৪॥ |
অনুবাদ : যারা ভোগ ও ঐশ্বর্যসুখে একান্ত আসক্ত, সেই সমস্ত বিবেকবর্জিত মূঢ় ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থাৎ ভগবানে একনিষ্ঠতা লাভ হয় না। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 45: ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা নিস্ত্রৈগুণ্যো ভবার্জুন । নির্দ্বন্দ্বো নিত্যসত্ত্বস্থো নির্যোগক্ষেম আত্মবান্ ॥৪৫॥ ত্রৈগুণ্য-বিষয়াঃ, বেদাঃ, নিঃ-ত্রৈগুণ্যঃ, ভব, অর্জুন, নিঃ-দ্বন্দ্বঃ, নিত্য-সত্ত্বস্থঃ, নিঃ-যোগক্ষেমঃ, আত্মবান্ ॥৪৫॥ |
অনুবাদ : বেদে প্রধানত জড়া প্রকৃতির তিনটি গুণ সম্বন্ধেই আলোচনা করা হয়েছে। হে অর্জুন ! তুমি সেই গুণগুলিকে অতিক্রম করে নির্গুণস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ-ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে অধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 46: যাবানর্থ উদপানে সর্বতঃ সংপ্লুতোদকে । তাবান্ সর্বেষু বেদেষু ব্রাহ্মণস্য বিজানতঃ ॥৪৬॥ যাবান্, অর্থঃ, উদপানে, সর্বতঃ, সংপ্লুত-উদকে, তাবান্, সর্বেষু, বেদেষু, ব্রাহ্মণস্য, বিজানতঃ ॥৪৬॥ |
অনুবাদ : ক্ষুদ্র জলাশয়ে যে সমস্ত প্রয়োজন সাধিত হয়, সেগুলি বৃহৎ জলাশয় থেকে আপনা হতেই সাধিত হয়ে যায়। তেমনই, ভগবানের উপাসনার মাধ্যমে যিনি পরব্রহ্মের জ্ঞান লাভ করে সব কিছুর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করেছেন, তাঁর কাছে সমস্ত বেদের উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 47: কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন । মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি ॥৪৭॥ কর্মণি, এব, অধিকারঃ, তে, মা, ফলেষু, কদাচন, মা, কর্মফলহেতুঃ, ভূঃ, মা, তে, সঙ্গঃ, অস্তু, অকর্মণি ॥৪৭॥ |
অনুবাদ : স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নেই। কখনও নিজেকে কর্মফলের হেতু মনে করো না, এবং কখনও স্বধর্ম আচরণ না করার প্রতিও আসক্ত হয়ো না। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 48: যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি সঙ্গং ত্যক্ত্বা ধনঞ্জয় । সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোঃ সমো ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে ॥৪৮॥ যোগস্থঃ, কুরু, কর্মাণি, সঙ্গম্, ত্যক্ত্বা, ধনঞ্জয়, সিদ্ধ-অসিদ্ধ্যোঃ, সমঃ, ভূত্বা, সমত্বম্, যোগঃ, উচ্যতে ॥৪৮॥ |
অনুবাদ : হে অর্জুন ! ফলভোগের কামনা পরিত্যাগ করে ভক্তিযোগস্থ হয়ে স্বধর্ম-বিহিত কর্ম আচরণ কর। কর্মের সিদ্ধি ও অসিদ্ধি সম্বন্ধে যে সমবুদ্ধি, তাকেই যোগ বলা হয়। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 49: দূরেণ হ্যবরং কর্ম বুদ্ধিযোগাদ্ধনঞ্জয় । বুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণাঃ ফলহেতবঃ ॥৪৯॥ দূরেণ, হি, অবরম্, কর্ম, বুদ্ধিযোগাৎ, ধনঞ্জয়, বুদ্ধৌ, শরণম্, অনু-ইচ্ছ, কৃপণাঃ, ফলহেতবঃ ॥৪৯॥ |
অনুবাদ : হে ধনঞ্জয় ! বুদ্ধিযোগ দ্বারা ভক্তির অনুশীলন করে সকাম কর্ম থেকে দূরে থাক এবং সেই চেতনায় অধিষ্ঠিত হয়ে ভগবানের শরণাগত হও ৷ যারা তাদের কর্মের ফল ভোগ করতে চায়, তারা কৃপণ। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 50: বুদ্ধিযুক্তো জহাতীহ উভে সুকৃতদুষ্কৃতে । তস্মাদ্ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসু কৌশলম্ ॥৫০॥ বুদ্ধিযুক্তঃ, জহাতি, ইহ, উভে, সুকৃতদুষ্কৃতে, তস্মাৎ, যোগায়, যুজ্যস্ব, যোগঃ, কর্মসু, কৌশলম্ ॥৫০॥ |
অনুবাদ : যিনি ভগবদ্ভক্তির অনুশীলন করেন, তিনি এই জীবনেই পাপ ও পুণ্য উভয় থেকেই মুক্ত হন। অতএব, তুমি নিষ্কাম কর্মযোগের অনুষ্ঠান কর৷ সেটিই হচ্ছে সর্বাঙ্গীণ কর্মকৌশল। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 51: কর্মজং বুদ্ধিযুক্তা হি ফলং ত্যক্ত্বা মনীষিণঃ । জন্মবন্ধবিনির্মুক্তাঃ পদং গচ্ছন্ত্যনাময়ম্॥৫১॥ কর্মজম্, বুদ্ধিযুক্তাঃ, হি, ফলম্, ত্যক্ত্বা, মনীষিণঃ । জন্মবন্ধ-বিনির্মুক্তাঃ, পদম্, গচ্ছন্তি, অনাময়ম্ ॥৫১॥ |
অনুবাদ : মনীষিগণ ভগবানের সেবায় যুক্ত হয়ে কর্মজাত ফল ত্যাগ করে জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হন। এভাবে তাঁরা সমস্ত দুঃখ-দুর্দশার অতীত অবস্থা লাভ করেন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 52: যদা তে মোহকলিলং বুদ্ধির্ব্যতিতরিষ্যতি । তদা গন্তাসি নির্বেদং শ্রোতব্যস্য শ্রুতস্য চ ॥৫২॥ যদা, তে, মোহকলিলম্, বুদ্ধিঃ, ব্যতিতরিষ্যতি, তদা, গন্তাসি, নির্বেদম্, শ্রোতব্যস্য, শ্রুতস্য, চ ॥৫২॥ |
অনুবাদ : এভাবে পরমেশ্বর ভগবানে অর্পিত নিষ্কাম কর্ম অভ্যাস করতে করতে য্খন তোমার বুদ্ধি মোহরূপ গভীর অরণ্যকে সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করবে, তখন তুমি যা কিছু শুনেছ এবং যা কিছু শ্রবণীয়, সেই সবের প্রতি সম্পূর্ণরূপে নিরপেক্ষ হতে পারবে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 53: শ্রুতিবিপ্রতিপন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা । সমাধাবচলা বুদ্ধিস্তদা যোগমবাপ্স্যসি ॥৫৩॥ শ্রুতি-বিপ্রতিপন্না, তে, যদা, স্থাস্যতি, নিশ্চলা, সমাধৌ, অচলা, বুদ্ধিঃ, তদা, যোগম্, অবাপ্স্যসি ॥৫৩॥ |
অনুবাদ : তোমার বুদ্ধি যখন বেদের বিচিত্র ভাষার দ্বারা আর বিচলিত হবে না এবং আত্ম-উপলদ্ধির সমাধিতে স্থির হবে, তখন তুমি দিব্যজ্ঞান লাভ করে ভক্তিযোগে অধিষ্ঠিত হবে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 54: অর্জুন উবাচ স্থিতপ্রজ্ঞস্য কা ভাষা সমাধিস্থস্য কেশব । স্থিতধীঃ কিং প্রভাষেত কিমাসীত ব্রজেত কিম্ ॥৫৪॥ স্থিতপ্রজ্ঞস্য, কা, ভাষা, সমাধিস্থস্য, কেশব, স্থিতধীঃ, কিম্, প্রভাষেত, কিম্, আসীত, ব্রজেত, কিম্ ॥৫৪॥ |
অনুবাদ : অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে কেশব ! স্থিতপ্রজ্ঞ অর্থাৎ অচলাবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের লক্ষণ কি ? তিনি কিভাবে কথা বলেন, কিভাবে অবস্থান করেন এবং কিভাবেই বা তিনি বিচরণ করেন ? শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 55: শ্রীভগবানুবাচঃ প্রজহাতি যদা কামান্ সর্বান্ পার্থ মনোগতান্ । আত্মন্যেবাত্মনা তুষ্টঃ স্থিতপ্রজ্ঞস্তদোচ্যতে ॥৫৫॥ প্রজহাতি, যদা, কামান্, সর্বান্, পার্থ, মনোগতান্, আত্মনি, এব, আত্মনা, তুষ্টঃ, স্থিতপ্রজ্ঞঃ, তদা, উচ্যতে ॥৫৫॥ |
অনুবাদ :পরমেশ্বর ভগবান বললেন-- হে পার্থ ! জীব যখন মানসিক জল্পনা-কল্পনা থেকে উদ্ভূত সমস্ত মনোগত কাম পরিত্যাগ করে এবং তার মন যখন এভাবে পবিত্র হয়ে আত্মাতেই পূর্ণ পরিতৃপ্তি লাভ করে, তখনই তাকে স্থিতপ্রজ্ঞ বলা হয়। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 56: দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ । বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে ॥৫৬॥ দুঃখেষু, অনুদ্বিগ্নমনাঃ, সুখেষু, বিগতস্পৃহঃ, বীত-রাগ-ভয়-ক্রোধঃ, স্থিতধীঃ, মুনিঃ, উচ্যতে ॥৫৬॥ |
অনুবাদ : ত্রিতাপ দুঃখ উপস্থিত হলেও যাঁর মন উদ্বিগ্ন হয় না, সুখ উপস্থিত হলেও যাঁর স্পৃহা হয় না এবং যিনি রাগ, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত, তিনিই স্থিতধী অর্থাৎ স্থিতপ্রজ্ঞ। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 57: যঃ সর্বত্রানভিস্নেহস্তত্তৎ প্রাপ্য শুভাশুভম্ । নাভিনন্দতি ন দ্বেষ্টি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৫৭॥ যঃ, সর্বত্র, অনভিস্নেহঃ, তৎ, তৎ, প্রাপ্য, শুভ-অশুভম্, ন, অভিনন্দতি, ন, দ্বেষ্টি, তস্য, প্রজ্ঞা, প্রতিষ্ঠিতা ॥৫৭॥ |
অনুবাদ : জড় জগতে যিনি সমস্ত জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত, যিনি প্রিয় বস্তু লাভে আনন্দিত হন না এবং অপ্রিয় বিষয় উপস্থিত হলে দ্বেষ করেন না, তিনি পূর্ণ জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 58: যদা সংহরতে চায়ং কূর্মোহঙ্গানীব সর্বশঃ । ইন্দ্রিয়াণীন্দ্রিয়ার্থেভ্যস্তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৫৮॥ যদা, সংহরতে, চ, অয়ম্, কূর্মঃ, অঙ্গানি, ইব, সর্বশঃ, ইন্দ্রিয়াণি, ইন্দ্রিয়ার্থেভ্যঃ, তস্য, প্রজ্ঞা, প্রতিষ্ঠিতা ॥৫৮॥ |
অনুবাদ : কূর্ম যেমন তার অঙ্গসমূহ তার কঠিন বহিরাবরণের মধ্যে সঙ্কুচিত করে, তেমনই যে ব্যক্তি তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন, তাঁর চেতনা চিন্ময় জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 59: বিষয়া বিনিবর্তন্তে নিরাহারস্য দেহিনঃ । রসবর্জং রসোহপ্যস্য পরং দৃষ্ট্বা নিবর্ততে ॥৫৯॥ বিষয়াঃ, বিনিবর্তন্তে, নিরাহারস্য, দেহিনঃ, রসবর্জম্, রসঃ, অপি, অস্য, পরম্, দৃষ্ট্বা, নিবর্ততে ॥৫৯॥ |
অনুবাদ : দেহবিশিষ্ট জীব ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ থেকে নিবৃত হতে পারে, কিন্তু তবুও ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের আসক্তি থেকে যায়। কিন্তু উচ্চতর স্বাদ আস্বাদন করার ফলে তিনি সেই বিষয়তৃষ্ণা থেকে চিরতরে নিবৃত্ত হন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 60: যততো হ্যপি কৌন্তেয় পুরুষস্য বিপশ্চিতঃ । ইন্দ্রিয়াণি প্রমাথীনি হরন্তি প্রসভং মনঃ ॥৬০॥ যততঃ, হি, অপি, কৌন্তেয়, পুরুষস্য, বিপশ্চিতঃ, ইন্দ্রিয়াণি, প্রমাথীনি, হরন্তি, প্রসভম্, মনঃ ॥৬০॥ |
অনুবাদ : হে কৌন্তেয় ! ইন্দ্রিয়সমূহ এতই বলবান এবং ক্ষোভকারী যে, তারা অতি যত্নশীল বিবেকসম্পন্ন পুরুষের মনকেও বলপূর্বক বিষয়াভিমুখে আকর্ষণ করে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 61: তানি সর্বাণি সংযম্য যুক্ত আসীত মৎপরঃ । বশে হি যস্যেন্দ্রিয়াণি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৬১॥ তানি, সর্বাণি, সংযম্য, যুক্তঃ, আসীত, মৎপরঃ, বশে, হি, যস্য, ইন্দ্রিয়াণি, তস্য, প্রজ্ঞা, প্রতিষ্ঠিতা ॥৬১॥ |
অনুবাদ : যিনি তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পূর্ণরূপে সংযত করে আমার প্রতি উত্তমা ভক্তিপরায়ণ হয়ে তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পূর্ণরূপে বশীভূত করেছেন, তিনিই স্থিতিপ্রজ্ঞ। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 62: ধ্যায়তো বিষয়ান্ পুংসঃ সঙ্গস্তেষূপজায়তে । সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে কামঃ কামাৎ ক্রোধোহভিজায়তে ॥৬২॥ ধ্যায়তঃ, বিষয়ান্, পুংসঃ, সঙ্গঃ, তেষূ, উপজায়তে, সঙ্গাৎ, সঞ্জায়তে, কামঃ, কামাৎ, ক্রোধঃ, অভিজায়তে ॥৬২॥ |
অনুবাদ : ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহ সম্বন্ধে চিন্তা করতে করতে মানুষের তাতে আসক্তি জন্মায়, আসক্তি থেকে কাম উৎপন্ন হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উৎপন্ন হয় । ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতিবিভ্রম, স্মৃতিবিভ্রম থেকে বুদ্ধিনাশ এবং বুদ্ধিনাশ হওয়ার ফলে সর্বনাশ হয়। অর্থাৎ, মানুষ পুনরায় জড় জগতের অন্ধকূপে অধঃপতিত হয়। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 63: ক্রোধাদ্ ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ । স্মৃতিভ্রংশাদ্ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি ॥৬৩॥ ক্রোধাৎ, ভবতি, সম্মোহঃ, সম্মোহাৎ, স্মৃতিবিভ্রমঃ, স্মৃতিভ্রংশাৎ, বুদ্ধিনাশঃ, বুদ্ধিনাশাৎ, প্রণশ্যতি ॥৬৩॥ |
|
শ্লোক: 64: রাগদ্বেষবিমুক্তৈস্তু বিষয়ানিন্দ্রিয়ৈশ্চরন্ । আত্মবশ্যৈর্বিধেয়াত্মা প্রসাদমধিগচ্ছতি ॥৬৪॥ রাগ-দ্বেষ-বিমুক্তৈঃ, তু, বিষয়ান্, ইন্দ্রিয়ৈঃ, চরন্, আত্মবশ্যৈঃ, বিধেয়াত্মা, প্রসাদম্, অধিগচ্ছতি ॥৬৪॥ |
অনুবাদ : সংযতচিত্ত মানুষ প্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক আসক্তি ও অপ্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে, তাঁর বশীভূত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ভগবদ্ভক্তির অনুশীলন করে ভগবানের কৃপা লাভ করেন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 65: প্রসাদে সর্বদুঃখানাং হানিরস্যোপজায়তে । প্রসন্নচেতসো হ্যাশু বুদ্ধিঃ পর্যবতিষ্ঠতে ॥৬৫॥ প্রসাদে, সর্বদুঃখানাম্, হানিঃ, অস্য, উপজায়তে, প্রসন্নচেতসঃ, হি, আশু, বুদ্ধিঃ, পর্যবতিষ্ঠতে ॥৬৫॥ |
অনুবাদ : চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে তখন আর জড় জগতের ত্রিতাপ দুঃখ থাকে না ; এভাবে প্রসন্নতা লাভ করার ফলে বুদ্ধি শীঘ্রই স্থির হয়। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 66: নাস্তি বুদ্ধিরযুক্তস্য ন চাযুক্তস্য ভাবনা । ন চাভাবয়তঃ শান্তিরশান্তস্য কুতঃ সুখম্ ॥৬৬॥ ন, অস্তি, বুদ্ধিঃ, অযুক্তস্য, ন, চ, অযুক্তস্য, ভাবনা, ন, চ, অভাবয়তঃ, শান্তিঃ, অশান্তস্য, কুতঃ, সুখম্ ॥৬৬॥ |
অনুবাদ : যে ব্যক্তি কৃষ্ণ ভাবনায় যুক্ত নয়, তার চিত্ত সংযত নয় এবং তার পারমার্থিক বুদ্ধি থাকতে পারে না। আর পরমার্থ চিন্তাশূন্য ব্যক্তির শান্তি লাভের কোন সম্ভাবনা নেই৷এই রকম শান্তিহীন ব্যক্তির প্রকৃত সুখ কোথায় ? শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 67: ইন্দ্রিয়াণাং হি চরতাং যন্মনোহনুবিধীয়তে । তদস্য হরতি প্রজ্ঞাং বায়ুর্নাবমিবাম্ভসি ॥৬৭॥ ইন্দ্রিয়াণাম্, হি, চরতাম্, যৎ, মনঃ, অনু, বিধীয়তে, তৎ, অস্য, হরতি, প্রজ্ঞাম্, বায়ুঃ, নাবম্, ইব, অম্ভসি ॥৬৭॥ |
অনুবাদ : প্রতিকূল বায়ু নৌকাকে যেমন অস্থির করে, তেমনই সদা বিচরণকারী যে কোন একটি মাত্র ইন্দ্রিয়ের আকর্ষণেও মন অসংযত ব্যক্তির প্রজ্ঞাকে হরণ করতে পারে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 68: তস্মাদ্ যস্য মহাবাহো নিগৃহীতানি সর্বশঃ । ইন্দ্রিয়াণীন্দ্রিয়ার্থেভ্যস্তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৬৮॥ তস্মাৎ, যস্য, মহাবাহো, নিগৃহীতানি, সর্বশঃ, ইন্দ্রিয়াণি, ইন্দ্রিয়ার্থেভ্যঃ, তস্য, প্রজ্ঞা, প্রতিষ্ঠিতা ॥৬৮॥ |
অনুবাদ : সুতরাং, হে মহাবাহো ! যাঁর ইন্দ্রিয়গুলি ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে সর্বপ্রকারে নিবৃত্ত হয়েছে, তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 69: যা নিশা সর্বভূতানাং তস্যাং জাগর্তি সংযমী । যস্যাং জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশ্যতো মুনেঃ ॥৬৯॥ যা, নিশা, সর্বভূতানাম্, তস্যাম্, জাগর্তি, সংযমী, যস্যাম্, জাগ্রতি, ভূতানি, সা, নিশা, পশ্যতঃ, মুনেঃ ॥৬৯॥ |
অনুবাদ : সমস্ত জীবের পক্ষে যা রাত্রিস্বরূপ, স্থিতপ্রজ্ঞ সেই রাত্রিতে জাগরীত থেকে আত্ম-বুদ্ধিনিষ্ঠ আনন্দকে সাক্ষাৎ অনুভব করেন। আর যখন সমস্ত জীবেরা জেগে থাকে, তত্ত্বদর্শী মুনির নিকট তা রাত্রিস্বরূপ। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 70: আপূর্যমাণমচলপ্রতিষ্ঠং সমুদ্রমাপঃ প্রবিশন্তি যদ্বৎ । তদ্বৎ কামা যং প্রবিশন্তি সর্বে সঃ শান্তিমাপ্নোতি ন কামকামী ॥৭০॥ আপূর্যমাণম্, অচলপ্রতিষ্ঠম্, সমুদ্রম্, আপঃ, প্রবিশন্তি, যদ্ বৎ, তদ্ বৎ, কামাঃ, যম্, প্রবিশন্তি, সর্বে, সঃ, শান্তিম্, আপ্নোতি, ন, কামকামী ॥৭০॥ |
অনুবাদ : বিষয়কামী ব্যক্তি কখনো শান্তি লাভ করে না। জলরাশি যেমন সদা পরিপূর্ণ এবং স্থির সমুদ্রে প্রবেশ করেও তাকে ক্ষোভিত করতে পারে না, কামসমূহও তেমন স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিতে প্রবিষ্ট হয়েও তাঁকে বিক্ষুব্ধ করতে পারে না, অতএব তিনিই শান্তি লাভ করেন৷ শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 71: বিহায় কামান্ যঃ সর্বান্ পুমাংশ্চরতি নিঃস্পৃহঃ । নির্মমো নিরহঙ্কারঃ স শান্তিমধিগচ্ছতি ॥৭১॥ বিহায়, কামান্, যঃ, সর্বান্, পুমান্, চরতি, নিঃস্পৃহঃ, নির্মমঃ, নিরহঙ্কারঃ, সঃ, শান্তিম্, অধিগচ্ছতি ॥৭১॥ |
অনুবাদ : যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে জড় বিষয়ের প্রতি নিস্পৃহ, নিরহঙ্কার ও মমত্ত্ববোধ রহিত হয়ে বিচরণ করেন, তিনিই প্রকৃত শান্তি লাভ করে। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
শ্লোক: 72: এষা ব্রাহ্মী স্থিতিঃ পার্থ নৈনাং প্রাপ্য বিমুহ্যতি । স্থিত্বাস্যামন্তকালেহপি ব্রহ্মনির্বাণমৃচ্ছতি ॥৭২॥ এষা, ব্রাহ্মী, স্থিতিঃ, পার্থ, ন, এনাম্, প্রাপ্য, বিমুহ্যতি, স্থিত্বা, অস্যাম্, অন্তকালে, অপি, ব্রহ্মনির্বাণম্, ঋচ্ছতি ॥৭২॥ |
অনুবাদ :এই প্রকার স্থিতিকেই ব্রাহ্মীস্থিতি বলে। হে পার্থ ! যিনি এই স্থিতি লাভ করেন, তিনি মোহপ্রাপ্ত হন না । জীবনের অন্তিম সময়ে এই স্থিতি লাভ করে, তিনি এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে ভগবৎ-ধামে প্রবেশ করেন। শ্লোকের তাৎপর্য ও পাঠকের মতামত |
ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে 'সাংখ্যযোগো' নাম দ্বিতীয়োঽধ্যায়ঃ ॥২॥ |
=> যেকোন পরামর্শ anup02an@gmail.com , সকলকে ধন্যবাদ @ এডমিন => www.anupamasite.com
পরমপিতা সকলের মঙ্গল করুন ।