শ্রী শ্রী গীতার জ্ঞান সহজে উপলব্ধির উপায় বা গীতার জ্ঞান বুঝতে হলে যে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

পৃষ্ঠা - ১   ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,   ১০   ,   ১১   ,   ১২   ,   ১৩   ,   ১৪

  • হরেকৃষ্ণ।
    শ্রীল প্রভুপাদ রচিত -

    পূর্ববর্তী পৃষ্ঠা'র পর -
    আমরা যখন জড়ের প্রভাবে কলুষিত থাকি, তখন আমাদের সেই অবস্থাকে বলা হয় বদ্ধ অবস্থা। এই বদ্ধ অবস্থায় আমাদের চেতনা বিকৃত হয়ে থাকে এবং তার ফলে আমরা মনে করি যে, জড় পদার্থ থেকে আমরা উদ্ভূত হয়েছি। এরই নাম অহংকার। যে মানুষ তার দেহগত চিন্তায় মগ্ন, সে কখনো তার স্বরূপ জানতে পারে না। ভগবান ভগবদ্ গীতায় বলেছিলেন, যাতে মানুষ তার দেহগত ভাবনাকে অতিক্রম করে তার স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে। ভগবানের কাছ থেকে এই জ্ঞান লাভ করার জন্য অর্জুন নিজেকে সেই অবস্থায় উপস্থাপিত করেছিলেন। দেহাত্মবুদ্ধি থেকে অবশ্যই মুক্তি লাভ করতে হবে; অধ্যাত্মবাদীদের সেটিই প্রাথমিক কর্তব্য। এই জড় বন্ধন থেকে যে মুক্ত হতে চায়, তাকে প্রথমে জানতে হবে যে, তার প্রকৃত স্বরূপ তার জড় দেহটি নয়। মুক্তির অর্থই জড় চেতনা থেকে মুক্ত হওয়া। শ্রীমদ্ভাগবতেও মুক্তির অর্থ ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, মুক্তির্হিত্বান্যথারূপং স্বরূপেণ ব্যবস্থিতিঃ- মুক্তির অর্থ হচ্ছে এই জগতের কলুষিত চেতনা থেকে মুক্ত হয়ে শুদ্ধ চেতনার স্তরে অবস্থিত হওয়া। ভগবদ্ গীতার প্রতিটি নির্দেশেই এই প্রবিত্র শুদ্ধ চেতনার স্তরে অবস্থিত হওয়ার কথা বলছে এবং তাই আমরা দেখতে পাই যে, ভগবদ্গীতার শেষ পর্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জিজ্ঞেস করছেন যে, তাঁর চেতনা কলুষমুক্ত হয়ে পবিত্র হয়েছে কি না। পবিত্র বা বিশুদ্ধ চেতনা বলতে বোঝায় ভগবানের নির্দেশ অনুসারে কর্ম করা। এই হচ্ছে বিশুদ্ধ চেতনার মর্মার্থ। আমরা যেহেতু ভগবানের অপরিহার্য অংশ, তাই আমরা চেতন, কিন্তু জড়া প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার ফলে প্রকৃতির তিনটি গুণের দ্বারা আমাদের চেতনা প্রভাবান্বিত হয়ে পড়ে। কিন্তু ভগবান যেহেতু পরমেশ্বর, তাই তিনি কখনোই এর দ্বারা প্রভাবান্বিত হন না। ক্ষুদ্র স্বতন্ত্র জীব ও ভগবানের মধ্যে এটিই হচ্ছে পার্থক্য।

    এই চেতনা বলতে কি বোঝায়? এই চেতনা হচ্ছে “আমি আছি।” তারপর আমি কি ? কলুষিত চেতনায় এই আমি মানে, “আমি হচ্ছি সমস্ত জগতের অধীশ্বর। আমি হচ্ছি ভোক্তা। ” এই জগৎ প্রতিনিয়তই আবর্তিত হচ্ছে, কারণ প্রত্যেকটি জীবসত্তা মনে করে যে, সে হচ্ছে এই জড় জগতের স্রষ্টা ও অধীশ্বর। জড় চেতনার দুটি প্রকাশ হয়। তার একটির প্রভাবে জীব মনে করে সে হচ্ছে স্রষ্টা এবং অন্যটির প্রভাবে সে মনে করে সে হচ্ছে ভোক্তা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পরমেশ্বর ভগবানই হচ্ছেন সবকিছুর স্রষ্টা ও ভোক্তা, আর জীব ভগবানের অপরিহার্য অংশ হবার ফলে সে স্রষ্টাও নয়, ভোক্তাও নয়, সে হচ্ছে সহায়ক। সে হচ্ছে সৃষ্ট ও ভোগ্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, একটি যন্ত্রের একটি অংশ যেমন সমগ্র যন্ত্রটির পরিচালনায় সহযোগিতা করে, ঠিক তেমনই ভগবানের অংশ হবার ফলে জীবের একমাত্র কর্তব্য হচ্ছে ভগবানের কাজে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা।

    হাত, পা, চোখ, মুখ আদি হচ্ছে দেহের অংশ, কিন্তু তারা কখনই ভোক্তা নয়। ভোক্তা হচ্ছে উদর, এগুলি সমষ্টিগত ভাবে কাজ করে উদরকে ভোগ করতে সাহায্য করে। যেমন পা দেহকে বহন করে নিয়ে চলে, হাত খাদ্য সংগ্রহ করে, দাঁত চর্বণ করে। এভাবে সমস্ত দেহই উদরকে ভোগ করতে সহযোগিতা করে। কারণ উদর তুষ্ট হলে সমস্ত দেহ পুষ্ট হয়। তাই সবকিছু উদরকে দেওয়া হয় এবং তারফলে সমস্ত দেহ বলিষ্ঠ ও সক্রিয় হয়। গাছের গোড়ায় জল দিলে যেমন সমস্ত গাছটিকে জল দেওয়া হয়, উদরকে খাদ্য দিলে যেমন দেহকে খাদ্য দেওয়া হয়, ঠিক তেমনই পরম স্রষ্টা ও পরম ভোক্তা ভগবানের সৃষ্টিকার্যে ও ভোগের কার্যে সহযোগিতা করাই আমাদের কর্তব্য। এভাবে তাঁকে তুষ্ট করার ফলেই আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য সফল হয়। যদি হাতের আঙ্গুল মনে করে, উদরকে না দিয়ে সে নিজেই সব কিছু খাবে, তা হলে তাকে নিরাশ হতে হবে। ঠিক তেমনই জীব যদি মনে করে, ভগবানকে বাদ দিয়ে নিজেই সুখী হবে, তবে তাকে নিরাশ হতে হবে।

    ভগবান সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই হচ্ছেন একমাত্র ভোক্তা, আর সমস্ত জীব হচ্ছে তাঁর সহায়ক। ভগবানের সহায়তা করার মাধ্যমে জীব তাঁর অস্তিত্বের সার্থকতা উপলব্ধি করতে পারে এবং তার ফলেই সে আনন্দ উপভোগ করতে পারে। ভগবানের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক হচ্ছে প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক। প্রভু যদি সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট হয়, তবে ভৃত্যও সন্তুষ্ট হয়। সেই রকম, পরমেশ্বর ভগবানকে সন্তুষ্ট করা উচিত। যদিও সৃষ্টিকর্তা হওয়ার প্রবণতা এবং জড় জগৎ উপভোগের প্রবণতা জীবদের মধ্যেও রয়েছে, কেন না প্রকাশমান জগতের সৃষ্টিকর্তা পরমেশ্বর ভগবানের মধ্যে সেই একই প্রবণতা বিদ্যমান। পরবর্তী পৃষ্ঠা
  • Add_6

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।