শ্রী শ্রী গীতার জ্ঞান সহজে উপলব্ধির উপায় বা গীতার জ্ঞান বুঝতে হলে যে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

পৃষ্ঠা - ১   ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,   ১০   ,   ১১   ,   ১২   ,   ১৩   ,   ১৪

  • হরেকৃষ্ণ।
    শ্রীল প্রভুপাদ রচিত গীতার মুখবন্ধ -

    ওঁ অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জনশলাকয়া ।
    চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ ।।
    শ্রীচৈতন্যমনোহভীষ্টং স্থাপিতং যেন ভূতলে।
    স্বয়ং রূপঃ কদা মহ্যং দদাতি স্বপদান্তিকম্ ।।

    অজ্ঞতার গভীরতম অন্ধকারে আমার জন্ম হয়েছিল এবং আমার গুরুদেব জ্ঞানের আলোকবর্তিকা দিয়ে আমার চক্ষু উন্মীলিত করেছেন। তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।

    শ্রীল রূপ গোস্বামী প্রভুপাদ, যিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অভিলাস পূর্ণ করবার জন্য এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন, আমি তাঁর শ্রীপাদপদ্মের আশ্রয় লাভ কবে করতে পারব?

    বন্দেহহং শ্রীগুরোঃ শ্রীযুতপদকমলং শ্রীগুরূন্ বৈষ্ণবাংশ্চ
    শ্রীরূপং সাগ্রজাতং সহগণরঘুনাথান্বিতং তং সজিবম্ ।
    সাদ্বৈতং সাবধূতং পরিজনসহিতং কৃষ্ণচৈতন্যদেবং
    শ্রীরাধাকৃষ্ণপাদান্ সহগণললিতা-শ্রীবিশাখান্বিতংশ্চ।।

    আমি আমার গুরুদেবের পাদপদ্মে ও সমস্ত বৈষ্ণববৃন্দের শ্রীচরণে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। আমি শ্রীরূপ গোস্বামী, তাঁর অগ্রজ শ্রীসনাতন গোস্বামী, শ্রীরঘুনাথ দাস, শ্রীরঘুনাথ ভট্ট, শ্রীগোপাল ভট্ট ও শ্রীল জীব-গোস্বামীর চরণ কমলে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। আমি শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, শ্রীনিত্যানন্দ, শ্রীঅদ্বৈত আচার্য, শ্রীগদাধর, শ্রীবাস ও অন্যান্য পার্ষদবৃন্দের পাদপদ্মে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। আমি শ্রীমতী ললিতা ও বিশাখা সহ শ্রীমতি রাধারাণী ও শ্রীকৃষ্ণের চরণ কমলে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।

    হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধো দীনবন্ধো জগৎপতে।
    গোপেশ গোপিকাকান্ত রাধাকান্ত নমোহস্তু তে।।

    হে আমার প্রিয় কৃষ্ণ! তুমি করুণার সিন্ধু, তুমি দীনের বন্ধু, তুমি সমস্ত জগতের পতি, তুমি গোপীদের ঈশ্বর এবং শ্রীমতি রাধারাণীর প্রেমাষ্পদ। আমি তোমার পাদপদ্মে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।

    তপ্তকাঞ্চনগৌরাঙ্গি রাধে বৃন্দাবনেশ্বরি।
    বৃষভানুসুতে দেবি প্রণমামি হরিপ্রিয়ে।।

    শ্রীমতি রাধারাণী, যাঁর অঙ্গকান্তি তপ্তকাঞ্চনের মতো, যিনি বৃন্দাবনের ঈশ্বরী, যিনি মহারাজ বৃষভানুর দুহিতা এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সী, তাঁর চরণকমলে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। বাঞ্ছাকল্পতরুভ্যশ্চ কৃপাসিন্ধ্যুভ্য এব চ।
    পতিতানাং পাবনেভ্যো বৈষ্ণবেভ্যো নমো নমঃ।।

    সমস্ত বৈষ্ণব-ভক্তবৃন্দ, যাঁরা বাঞ্ছাকল্পতরুর মতো সকলের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে পারেন, যাঁরা কৃপার সাগর ও পতিতপাবন, তাঁদের চরণকমলে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ।
    শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌরভক্তবৃন্দ।।

    শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, প্রভু নিত্যানন্দ, শ্রীঅদ্বৈত আচার্য, শ্রীগদাধর ও শ্রীবাস আদি গৌরভক্তবৃন্দের চরণকমলে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।

    হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
    হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

    ভগবত গীতার আর এক নাম গীতোপনিষদ্। এটি বৈদিক দর্শনের সারমর্ম এবং বৈদিক সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপনিষদ্। এই গীতোপনিষদ্ বা ভগবদ্ গীতার বেশ কয়েকটি ইংরেজি ভাষ্য ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ভগবদ্ গীতার আরো একটি ইংরেজি ভাষ্যের কি দরকার? তাই ভগবদ্ গীতার এই সংস্করণ সম্বন্ধে দুই-একটি কথা আমকে বলতে হয়। ইদানিং একজন আমেরিকান ভদ্রমহিলা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “ভগবদ্ গীতার কোন ইংরেজি অনুবাদে ভগবদ্ গীতার প্রকৃত ভাবকে যথাযথভাবে প্রকাশ করা হয়েছে? ” আমেরিকাতে ভগবদ্ গীতার বহু ইংরেজি সংস্করণ পাওয়া যায়, কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি এমন একটি ভগবদ্ গীতা পেলাম না ভগবদ্ গীতার যথার্থ ভাবকে বজায় রেখে তাঁর অনুবাদ করা হয়েছে। শুধু আমেরিকাতেই নয়, ভারতবর্ষেও ভগবদ্ গীতার ইংরেজী অনুবাদের সেই একই অবস্থা। তার কারণ হচ্ছে, ভাষ্যকারেরা ভগবদ্ গীতার মূল ভাব বজায় না রেখে তাঁদের নিজেদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে তার ব্যাখ্যা করেছেন।

    ভগবদ্ গীতাতেই ভগবদ্ গীতার মূল ভাব ব্যক্ত হয়েছে। এটি ঠিক এই রকম- আমরা যখন কোন ঔষধ খাই, তখন যেমন আমরা আমাদের ইচ্ছামতো সেই ঔষধ খেতে পারি না, ডাক্তারের নির্দেশ বা ঔষধের শিশিতে দেওয়া নির্দেশ অনুসারে সেই ঔষধ খেতে হয়, তেমনই ভগবদ্ গীতাকে গ্রহণ করতে হবে ঠিক যেভাবে তার বক্তা তাঁকে গ্রহণ করবার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। ভগবদ্ গীতার বক্তা হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভগবদ্ গীতার প্রতিটি পাতায় বলা হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। ভগবান শব্দটি অবশ্য কখনও কখনও কোন শক্তিমান পুরুষ অথবা কোন দেব-দেবীর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়। এখানে ভগবান্ শব্দটির দ্বারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে মহাপুরুষ রূপে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে আমাদের জ্ঞাত হওয়া উচিত যে, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণই যে পরমেশ্বর তা স্বীকার করেছেন সমস্ত সত্যদ্রষ্টা ও ভগবৎ-তত্ত্ববেত্তা আচার্যেরা- যেমন, শঙ্করাচার্য, রামানুজাচার্য, মধ্বাচার্য, নিম্বাকাচার্য, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আদি ভারতের প্রতিটি মহাপুরুষ। শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ভগবদ্ গীতাতে বলে গেছেন যে, তিনিই হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান ।ব্রহ্মসংহিতা ও সব কয়টি পুরাণে, বিশেষ করে ভাগবত-পুরাণ শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবানরূপে বর্ণনা করা হয়েছে (কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্)। তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেমনভাবে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, ঠিক তেমনভাবে ভগবদ্ গীতাকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে। ভগবদ্ গীতার চতুর্থ অধ্যায়ে (৪/১-৩) ভগবান বলেছেন- ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবানহমব্যয়ম্ ।
    বিবস্বান্মনবে প্রাহ মনুরিক্ষ্বাকবেহব্রবীৎ ।।

    এবং পরম্পরাপ্রাপ্তমিমং রাজর্ষয়ো বিদুঃ ।
    স কালেনেহ মহতা যোগো নষ্টঃ পরন্তপ ।।

    স এবায়ং ময়া তেহদ্য যোগঃ প্রোক্তঃ পুরাতনঃ ।
    ভক্তোহসি মে সখা চেতি রহস্যং হ্যেতদুত্তমম্ ।।

    এখানে ভগবান অর্জুনকে বলেছেন যে, এই যোগ ভগবদ্ গীতা প্রথমে তিনি সূর্যদেবকে বলেন, সূর্যদেব তা বলেন মনুকে, মনু ইক্ষাকুকে এবং এভাবে গুরু-পরম্পরাক্রমে গুরুদেব থেকে শিষ্যতে এই জ্ঞান ধারাবাহিকভাবে প্রবাহিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এক সময় এই পরম্পরা ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে আমরা এই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তাই ভগবান কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে নিজে এসে আবার এই জ্ঞান অর্জুনের মাধ্যমে দান করলেন।

    তিনি অর্জুনকে বললেন, “তুমি আমার ভক্ত ও সখা, তাই রহস্যাবৃত এই পরম জ্ঞান আমি তোমাকে দান করছি। ” এই কথার তাৎপর্য হচ্ছে যে, ভগবদ্ গীতার জ্ঞান কেবল ভগবানের ভগবানের ভক্তই আহরণ করতে পারে। অধ্যাত্মবাদীদের সাধারণত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যথা- জ্ঞানী, যোগী ও ভক্ত, অথবা নির্বিশেষবাদী, ধ্যানী ও ভক্ত। এখানে ভগবান স্পষ্টভাবে অর্জুনকে বলেছেন যে, পূর্বের পরম্পরা নষ্ট হয়ে যাবার ফলে তিনি তাঁকে দিয়ে পুনরায় সেই পুরাতন যোগের প্রচার করলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে, অর্জুন এই জ্ঞানকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করে তার প্রচার করবেন। আর এই কাজের জন্য তিনি অর্জুনকেই কেবল মনোনীত করলেন, কারণ অর্জুন ছিলেন তাঁর ভক্ত, তাঁর অন্তরঙ্গ সখা ও তাঁর প্রিয় শিষ্য। তাই ভগবানের ভক্ত না হলে অর্থাৎ ভক্তি ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাঁর অন্তরঙ্গ সান্নিধ্যে না এলে ভগবানের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারা সম্ভব নয়। পরবর্তী পৃষ্ঠা
  • Add_6

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।