সুনির্বাচিত কবিতা-
ছাই নেবে,ছাই?
নিত্যানন্দ চক্রবর্তী, সভাপতি _ গীতাসংঘ বাংলাদেশ।
-----------------------------------
....ছাই নেবে ছাই?
প্রভাত না হ'তে হ'তে কোথা থেকে হাঁক একটাই-
ছাই নেবে, ছাই?
নগরীর শুন্য পথে নগ্ন পায়ে মলিন বসন
রমনী চলেছে এক, পদে পদে করি অন্বেষণ
দিনান্তের দু’টি অন্ন। পরিবর্তে পণ্যটি তাহার
নিকৃষ্ঠ সবার চেয়ে, মূল্যহীন ছাই নাম যার।
ধীরে নামিলাম পথে, জিজ্ঞাসিনু, কি নাম তোমার?
শীর্ণকায়, কৃষ্ণ কান্তি হেসে বলে,“নূরুন্নাহার”।
বলিলাম, “কে তোমারে কোন প্রাণে এমন প্রভাতে
পাঠিয়েছে নগরীরতে মূলহীন ছাই ভান্ড হতে?
দু’ফোটা অশ্রুর সাথে উত্তরিল নূরুন্নাহার,
“ছাই ছাড়া কিছু নেই ঘুরে দেখ জগৎ সংসার।”
কী বুঝাতে চায় নারী, দীনা-হীনা নূরুন্নাহার?
অর্থহীন ধন- মান? ছাইয়ে ভরা জগৎ সংসার?
ছাইয়ের পসরা করে তাই সব ছাই হেন গণে!
ভাবিতে ভাবিতে আমি ফিরিলাম আপন ভুবনে।
কণ্ঠে সুর বাজে একটাই-
নূরুন্নাহার হাঁকে, “ছাই নেবে? নেবে কেউ ছাই?”
দৃষ্টি যার দূরপানে: কত কত রম্য অট্টালিকা
বিত্ত-অর্থ-রজত ও মণিময় সুবর্ণ থালিকা
গিরিশৃঙ্গসম কত অমূল্য রতনরাশি আর
জগৎ ভরিয়া আছে দূর্মূল্য এ সম্পদ সম্ভার।
তারে অবহেলি কন্যা সগর্বে বলিল মোর ঠাঁই
জগৎ ঘুরিয়া পাবে আর কিছু নয়,শুধু ছাই!!
অন্তরে সন্ধান করি, কী গভীর মর্মব্যথাভার
আমার বুকের মাঝে রেখে গেল নূরুন্নাহার !
জ্ঞানদৃষ্টে চেয়ে দেখি, জগতের যত ধনমান
পরিণামে মূল্যহীন, অসার সে ভস্মেরই সমান!
কামনার অর্জনেরে ছাই করে পর ইর্ষা, হায়!
বাসনার রস যত তৃষ্ণা-মরু বালুতে শুকায়।
যশ-খ্যাতি-মান যত মৃত্যুর নির্মম প্রহরণে
ভষ্ম সম উড়ে যায় বিশ্ব ছাড়ি অবর্ণ গগনে।
এই দেহ, এই গেহ, এই মায়া-মোহের বন্ধন
মুহূর্তে পুড়িয়া ভষ্ম মৃত্য মাঝে, শুধুই ক্রন্দন।
যদি বলি “চাই চির সুখ-শান্তি, ধন-মান চাই”
নিত্য-সত্য হেসে বলে,“ওসব এ পৃথিবীতে নাই”।
যে চাহে না ধন-মান, যশ ঐশ্বর্য্য, জগৎ-সংসার
হাত শুন্য করে যে বা ঠাঁই নেয় জগৎ-স্রষ্টার
ভষ্ম সম জ্ঞান করে জগৎ প্রপঞ্চ যাহা আছে
সেই ভষ্ম নেয় তারে পরিণামে সে স্রষ্টার কাছে।
নূরুন্নাহারের পণ্য কম কিছু নয় তাই দামে
“ছাই’ আর ‘মনিমুক্তা’ পৃথক শুধুই তার নামে।
আবার শুনিনু কণ্ঠ, দূর পানে বিষ্ময়ে তাকাই:
নূরুন্নাহার হাঁকে, “ছাই নেবে, নেবে কেউ ছাই?
প্রকৃতি ছলনাময়ী, এ ছলনা কে বুঝিতে পারে?
এ বিশ্বভূবন জুড়ে ছলনার খেলা এ সংসারে।
সকলেরে মুগ্ধ করে মিথ্যা সে বেসাতি বেঁচে যায়।
চড়া দামে সেই ছাই কিনে যে বা ভোগের আশায়
শেষ পুরুস্কার তার শুধু ছাই, ছলনার ডালি,
দিনশেষে সঞ্চয়ের পাত্রখানি চেয়ে দেখে,খালি।
যাহা ছিল মনোলোভা,ক্ঞ্চনের দামী অলংকার
মিথ্যাই আশ্বাস শুধু, সে তো নয় তার আপনার।
কন্টকের বেড়া সে যে, অশান্তির নিষ্ঠুর সে ফাঁদ-
মূল্যবান জীবনের মূল্যহীন নির্দয় প্রসাদ!
বিশ্বের সৃষ্টির পথ ছলনায় রেখেছে ঢেকে, কে সে?
নিষ্ঠুর দু’হাতে তার শুধু ছাই, বিষয়ের বেশে।
যে সয়েছে এ ছলনা, জীবনের শেষে পুরুস্কার-
তারই প্রাপ্য, শানিÍ শুধু তারই কণ্ঠহার!
বিশ্বব্যাপী শুনি যেন নূরুন্নাহারে কণ্ঠটাই,
গভীর দর্শনে ভরা মর্মভেদী, ছাই নেবে, ছাই?
|