ঈশ্বর সম্বন্ধীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক বিষয়ঃ- দেখতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর ক্লিক করুন-
সত্যিই কি ঈশ্বর আছেন?
-শ্রী পতিত উদ্ধারণ গৌর দাস ব্রহ্মচারী
আমাদের প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। যদি কেউ কোনো সমস্যার সমাধান করতে চায়, তবে তাকে সেই সমস্যার মূল কারণ অথবা সর্ব কারণের পরম কারণ খুঁজে বের করতে হবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সব সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু সর্বকারণের পরম কারণ কি আছে? ধরে নিলাম, সেই পরম কারণ ‘ঈশ্বর’ । কিন্তু সত্যিই কি ঈশ্বর আছেন? আধুনিক সমাজের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এ প্রশ্নটি উঁকি দিয়ে বেড়ায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভগবানকে যদিও মেনে থাকে, তবে এর প্রতি তাদের পূর্ণ বিশ্বাস নেই। আবার, কেউ কেউ আধুনিক নাস্তিক্যবাদের নামে ভগবানের অস্তিত্বহীনতার কথা প্রচার করে বেড়ায়। তবে মূল কথা হচ্ছে তাদের কারোরই এ বিষয়ে পূর্ণ বিশ্বাস নেই। সাধারণত কেউই হলফ করে বলতে পারে না যে, “না, ঈশ্বর বলে কেউ নেই’ অথবা “নিশ্চয়ই ঈশ্বর আছেন”।
এ নিয়ে খুব সুন্দর একটা গল্প আছে।
একবার এক গ্রামের সমস্ত লোক ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানার জন্য এক সাধুর শরণাগত হলো। অনেক অনুরোধের পর সাধু সেই গ্রামে এসে সবাইকে নিয়ে বসলেন।
তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা কি সবাই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন?” কেউ কিছু বলছে না। তিনি আবার করলেন, “আপনারা যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন তারা হাত ওঠান।”
কেউ হাত ওঠাচ্ছে না। তিনি বললেন, “আপনারা কেউই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন না। সুতরাং এখানে আমার বলার কিছু নেই”। -এই বলে তিনি চলে গেলেন। গ্রামবাসী সকলেই খুব হতাশ হলো।
তারা আবার সাধুকে আসতে অনুরোধ করল, “দয়া করে আপনি আসুন এবং আমাদের কিছু বলুন।” পরদিন এসে সাধু আবার একই প্রশ্ন করল। সবাই হাত উঠাল। সাধু বললেন,
“ওহ, আপনারা সবাই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন, তাহলে আমার আর নতুন করে বলার কী আছে?” তিনি চলে গেলেন। গ্রামবাসী দ্বিধাগ্রস্থ হলো, তারা বুঝতে পারছে না কী করবে?
তারপর সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা কেউ হাত তুলবে, কেউ তুলবে না। পরদিন আবার অনুরোধ করে সাধুকে আনা হলো। তারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে বসল।
একপাশে মহিলা, আরেক পাশে পুরুষ।
এবারও সাধু বললেন, “আপনারা যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন, হাত ওঠান।” তখন অর্ধেকে হাত ওঠাল, আর অর্ধেকে নিচেই হাত রাখল। সাধু বললেন, “আপনাদের মধ্যে যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন তারা,
যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন না তাদের বোঝাতে পারেন যে, ঈশ্বর আছেন। সুতরাং এখানেও আমার বলার কিছু নেই।”
আমাদের অবস্থাও এদের মতো প্রায় ৯৯.৯৯ শতাংশ লোক এ রকম, বিশেষ করে ভারতে। যদি তাদের বলা হয়, আপনার বুকে হাত দিয়ে সুদৃঢ়ভাবে বলুনতো, সত্যিই কি ঈশ্বর আছেন? তারা বলবে, “আমার মনে হয় ঈশ্বর বলে কেউ নেই, আবার তিনি থাকতেও পারেন।” আবার কেউ বলবে, সবকিছুই ঈশ্বর, আমি ঈশ্বর, আপনিও ঈশ্বর, কেউ বলবে জীবই ঈশ্বর, আবার কেউ বলবে ঈশ্বর এক প্রকার শক্তি, জ্যোতি, নিরাকার ইত্যাদি। আবার কেউ পুরোপুরি নাস্তিকও নয়।
এক নাস্তিক ডাক্তার ছিলেন। তিনি তার ক্লিনিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বহু লোককে নিমন্ত্রণ করেন এবং সেই সাথে পুজা করার জন্য কয়েকজন ব্রাহ্মণকেও আমন্ত্রণ জানান। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, “আপনিতো নাস্তিক, তাহলে পূজোর আয়োজন কেন করেছেন?” তিনি বলেন, “ এ অনুষ্ঠানে প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে; তাই ভাবলাম পূজোর জন্য সামান্য খরচ করলে তো ক্ষতি নেই। যদি ঈশ্বর থেকেই থাকেন, তাহলে তিনিও সন্তুষ্ট হবেন।” সুতরাং বলা যায় যে, আমাদের অধিকাংশই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে বিশেষত দুটি কারণে- না জানার ভয় এবং দ্বিতীয়ত সমাজের ভয়। আপনি নাস্তিক হলে সমাজে আপনাকে হেয় করে দেখা হবে; আবার যারা ধার্মিক এবং ঈশ্বরকে ভয় করে, তাদের সম্মান দেয়া হয়। অন্যদিকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আমরা কেউ একশতভাগ নিশ্চিত নই, আবার কেউ পুরোপুরি নাস্তিকও নই। আমরা অর্ধসেদ্ধ খাবারের ন্যায়। সুতরাং আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, সত্যিই ঈশ্বর আছেন কি না।
সত্যিই কি ঈশ্বর আছেন?
ঈশ্বর তিনিই, যিনি পরম ভোক্তা কারণ, তিনি সবকিছুর মালিক; তিনি সবকিছুর পরম নিয়ন্তা কারণ, তিনি সবকিছুর পরম উৎস; তিনিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। সাধারণ জ্ঞান বলে, ঈশ্বর বা “সৃষ্টিকর্তা আছেন”; কতিপয় ব্যক্তি বলে “সৃষ্টিকর্তা নেই”। এখানে বিতর্কের মূল বিষয় হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা যে আছেন তার কোনো প্রমাণ নেই। তাই আমরা প্রত্যেকেই বিজ্ঞানসম্মতভাবে জানতে চাই যে, আদৌ ঈশ্বর আছে কি নেই।
সুতরাং এ বিষয়ে মানুষের ধারণা এবং মূল ঘটনা নিয়ে কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।
সৃষ্টির পেছনে স্রষ্টা
সৃষ্টি সর্বদাই স্রষ্টার অস্তিত্ব নির্দেশ করে। সৃষ্টি আছে মানে অবশ্যই স্রষ্টা রয়েছে। আমরা কি বলতে পারি যে, আমাদের ঘরে একদিন হঠাৎ প্রচণ্ড বাতাস সমস্ত টিউবলাইট, সুন্দর এসি এবং ঘরের সব সরঞ্জাম নিয়ে আসে এবং ঘরটি সুন্দরভাবে সাজানো হয়ে যায়। না, এটা অযৌক্তিক, কেউ বিশ্বাস করবে না। একইভাবে, প্রকৃতিতে আমরা যে অপূর্ব সুন্দর সৃষ্টি দেখি, তার পেছনে অবশ্যই স্রষ্টা রয়েছেন। এ অদ্ভূত সৃষ্টি বুদ্ধিমত্তার ইঙ্গিত করে, আর বুদ্ধিমত্তা বুদ্ধিমানের ইঙ্গিত করে। এ সম্পর্কে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের সুন্দর একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে।
এর পর দেখুনঃ বিজ্ঞানী নিউটন কর্তৃক ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণঃ
আপনার পছন্দমত
যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
আপনাদের পোস্টকরা লেখাগুলো দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।