সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক বিষয়ঃ

নিজের ধর্ম সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জানুন এবং অন্যকেও জানতে উৎসাহিত করুন।

আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন। আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।
Krishna vs Arjun @ Gita



Bhogoban Krishner Picture
  • For Ad Contact
    0191 22 086 22









  • Bhogoban Krishner Picture
  • For Ad Contact
    0185 977 97 98



  • ধর্ম্ম কি বিজ্ঞান ছাড়া?
    -ডঃ শ্রীমন্ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী

    শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ষোড়শ অধ্যায়ের নাম দৈবাসুর-সম্পদ বিভাগ যোগ। ইহাতে আসুরিক সম্পদের কথা বিশেষভাবে ব্যক্ত হইয়াছে। যাহারা ঈশ্বর মানে না, আত্মা মানে না ও ইন্দ্রিয়সুখভোগই জীবনের সার বলিয়া মনে করে, তাহাদের চিত্তের অবস্থা সুন্দরভাবে প্রকাশ করিয়াছেন ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু পাল্টা জবাব দিয়া এই মতবাদকে খণ্ডন করেন নাই। বস্তুতঃ সমগ্র গীতা গ্রন্থই ইহার জবাব। আসুরিক সম্পদের বিপরীত দৈব-সম্পদের কথা সবিস্তারে বলিয়াছেন (দৈব বিস্তরশঃ প্রোক্ত) বলিয়াই পৃথক উত্তর দানের প্রয়োজন বোধ করেন নাই।

    জড়-বস্তুবাদ (materialism) বর্ত্তমান যুগের বৈশিষ্ট্য ভোগসর্ব্বস্ব এই দানবীয় নিরীশ্বরবাদ প্রবলরূপে দেখা দিয়াছে আমাদের জীবনে। শিক্ষা, সমাজ ও রাষ্ট্র হইতে ধর্ম্ম নির্ব্বাসন লাভ করিয়াছে। ঈশ্বর না মানার একটা সচেতন প্রয়াস এই যুগের লক্ষ্যনীয় বিষয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকৃ্তির যে সকল রহস্য উদ্ঘাটন করিয়াছে, তাহাতে এই ভাব ব্যাপক প্রসার লাভ করিতেছে। ঈশ্বর (God) ও ধর্ম্মকে (religion) বাদ দিয়া কোন রাষ্ট্র প্রভূত উন্নতি করিয়াছে বলিয়া শোনা যাইতেছে। নিরীশ্বর-বাদীগণের পক্ষে ইহা একটি চমৎকার বিজ্ঞাপন।

    বৈজ্ঞানিক সত্য প্রত্যক্ষ। মানুষের জীবনে তাই ইহার প্রভাব খুব বেশী। জড়বিজ্ঞানের দ্বারা সমর্থিত নিরীশ্বর তথা ভোগসর্ব্বস্ববাদ এই যুগের নর-নারীকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করিয়াছে। ধর্ম্ম ও ঈশ্বর-প্রয়োজন জীবনে দিন দিন অকিঞ্চিতৎকর হইয়া যাইতেছে। আধ্যাত্মিক ভাবধারায় পুষ্ট আমাদের এই দেশ ও জাতির মনে বৈপ্লবিক পরিবর্ত্তন আনিয়াছে। দৈব-সম্পদে সম্পন্ন যাঁহারা, তাঁহাদের পক্ষ হইতে ইহার যথাযথ জবাব দেওয়া প্রয়োজন। নতুবা জড়-ভোগবাদের ধাক্কায় আর্য্য-ঋষির বিরাট আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি বিলুপ্ত হইতে পারে। শুধু গীতার নয়, গীতার উপর প্রতিষ্ঠিত আর্য্যধর্ম্মের সুমহান ভাবধারাকে যাহাতে নাশ করিতে না পারে, এজন্য জড় ভোগবাদকে খণ্ডন করা একান্ত আবশ্যক। যুগে যুগে ভারতের মহামানবগণ এই কার্য্য করিয়া গিয়াছেন। বর্তমান যুগ সংকটে তাঁহাদের পদাঙ্ক ধরিয়াই অনুরূপ কার্য্যে ব্রতী হওয়া যাইতেছে।

    ভোগবাদীর কতিপয় যুক্তি-
    ১। প্রকৃ্তি নিয়মের রাজত্ব। সকল নিয়মই প্রাকৃ্ত (natural)। সুতরাং অপ্রাকৃ্ত (supernatural) বা ঈশ্বরেচ্ছা (providential) কিছুই থাকিতে পারে না।

    ২। ক্রমাভিব্যক্তিবাদ (theory of evolution) বিশ্ব সৃষ্টির একমাত্র যুক্তিপূর্ণ ব্যাখা। সুতরাং পৃথক সৃষ্টিকর্তার কল্পনা মিথ্যা।

    ৩। প্রকৃ্তির মধ্যে জীবন-সংগ্রাম চলিতেছে সংগ্রামে যোগ্যই টিকিবে- বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। সুতরাং দুর্ব্বলের স্থান নাই। করুণাময় কোন সৃষ্টিকর্তা থাকিলে, তিনি আগাইয়া আসিতেন অযোগ্যকে, অক্ষমকে রক্ষার জন্য। কিন্তু তা যখন আসেন না, সুতুরাং ঈশ্বর নাই।

    ৪। মানুষের অজ্ঞতা ও ভীতি ঈশ্বর-বিশ্বাসের জনক। বিজ্ঞানের প্রসাদে যতই অজ্ঞতা দূরীভূত হইতেছে, ততই ঈশ্বর-বিশ্বাস দূর হইতেছে।

    ৫। আত্মা বলিয়া কোন বস্তু নাই। উহা জড়েরই একটা বিশেষ প্রকাশ। চৈতন্যময় কোন ঈশ্বরের অংশ আত্মা, ইহা অবৈজ্ঞানিক কথা।

    ৬। জীবনের উদ্দেশ্য বহুজনের কল্যাণসাধন। ঈশ্বর নামক কোন কাল্পনিক বস্তুর লাভ জীবনের লক্ষ নহে। কল্যাণ অর্থ ইন্দ্রিয় ভোগ্য জগৎকে যত বেশী জনের দ্বারা যতদূর সম্ভব ভোগ করা (greatest good for the greatest number)। সুখভোগই কাম্য।

    ৭। ধর্ম্মশাস্ত্রে দুঃখের মহিমা কীর্ত্তন এবং “ত্যাগাৎ শান্তি”- এই সকল শিক্ষা ধনীদের স্বার্থ সম্পদ রক্ষার এক অপকৌশল মাত্র।

    ৮। ধর্ম্মীয় ও দার্শনিক মতবাদ কোন কিছুই চরম সত্য নহে। সকলই দেশকাল-পাত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মানুষ যে পরিবেশে বাস করে ও যেরূপভাবে তাহার খাদ্য দ্রব্যাদি উৎপন্ন ও সরবরাহ হয়, তাহার উপর নির্ভর করে তাহার মতবাদ। কৃষিপ্রধান গ্রীষ্মপ্রধান দেশের দর্শন-চিন্তা ও যন্ত্রপ্রধান, শীতপ্রধান দেশের তত্ত্বচিন্তার মধ্যে মিল থাকিবে না। সুতরাং ধর্ম্মরাজ্যের চরম সত্যের দাবি অযৌক্তিক।

    ৯। কোন নীতিই সর্ব্ব দেশে সর্ব্বকালে সত্য নয়। সকল নীতিই দেশকালাধীন। চরম তত্ত্ব কিছুই নাই।

    ১০। স্বাধীন ইচ্ছা (freedom of will) নাই। সবই প্রকৃ্তির নিয়মে নিয়ন্ত্রিত।

    উপরোক্ত কথাগুলি আমাদের প্রচলিত ধর্ম্ম-বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক ভাবধারার উপর এক প্রচণ্ড আঘাত তুল্য। আমরা এই কথাগুলি ও তাহার কি জবাব আছে, তাহা আলোচনা করব।
    উত্তরঃ-
    ১। জড়ভোগবাদীদের প্রথম কথা হইল প্রকৃ্তির সর্ব্বত্র নিয়মের রাজত্ব। সকল ঘটনাই কার্য্যকারণ শৃঙ্খলা দ্বারা বিধৃত। সুতরাং অতি প্রাকৃ্ত কিছু থাকিতে পারে না।

    এই কথার উত্তরে আমরা জিজ্ঞাসা করি, অপ্রাকৃত কিছু নাই, একথা বলার অধিকার বা যোগ্যতা বিজ্ঞান কোথায় পাইল? কোন বস্তু ‘আছে’ বলা যত সহজ, ‘নাই’ বলা তত সহজ নয়। ‘নাই’ বলিতে সর্ব্বতোমুখী ও সর্ব্বাঙ্গিণ অনুসন্ধানের প্রয়োজন। বিরাট ব্রহ্মাণ্ডের কতটুকু সংবাদ বিজ্ঞান দিয়াছে? বিজ্ঞানের কাছে জানার তুলনায় অজানারাজ্য কল্পনাতীতরূপে অসীম। সুতরাং মহাবিশ্বের রহস্যের অতি সামান্য অকিঞ্চিৎকর জ্ঞান-লাভ করিয়া, অপ্রাকৃ্ত কিছু নাই বলা অনধিকারীর বাগাড়ম্বর তুল্য। অধিকন্তু, বিজ্ঞান কোন চরম সত্য স্বীকার করে না। অনুসন্ধান করিয়া চলাই তার কার্য্য। সুতরাং “অপ্রাকৃ্ত কিছু নাই” –এইরূপ চরম সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানের স্বভাববিরোধী।

    পক্ষান্তরে, অপ্রাকৃত রাজ্যের সংবাদ যাহা অধ্যাত্ম শাস্ত্রের চরম অবদান, তাহা দ্রষ্টা ঋষিদের অনুভূতিলব্ধ সত্য। উহা জড় ইন্দ্রিয়ের গ্রহণীয় নহে। চক্ষু যেমন শোনে না, কান যেমন দেখে না, সেইরূপ জড়-ইন্দ্রিয়, জড় মন বুদ্ধি জড়াতীতের কোন সংবাদ রাখে না। যাঁহারা সাধনা বলে মন বুদ্ধিকে জড়াতীত করিয়াছেন, তাঁহাদের পদাঙ্ক না ধরিলে অপ্রাকৃ্ত রাজ্যের সন্ধান পাওয়া সম্ভব নয়। মাতৃস্তন্যে জলৌকা দংশনে রক্ত ক্ষরণই হয়। একমাত্র সন্তানের অধর স্পর্শেই দুগ্ধের দেখা মিলে।

    ২। ভোগবাদী বলেন,- অভিব্যক্তিবাদই সৃষ্টির এক মাত্র বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। এজন্য স্রষ্টার কোন প্রয়োজন নাই। জলন্ত অগ্নিকুণ্ডরূপে পৃথিবী সৃষ্টি হইবার পর বহু বৎসর চলিয়া গিয়াছে। ক্রমে পৃথিবী পৃষ্ঠ শীতল হইলে তৃণগুল্মলতা ও জীবজন্তুর সৃষ্টি। ক্রমাভিব্যক্তিতে জড় প্রকৃ্তি হইতে বৃক্ষ এবং বৃক্ষরাজ্য হইতে কীটপতঙ্গ ও প্রাণী আসিল। প্রাণীর মেরুদণ্ড ক্রমে উন্নত হইতে হইতে শ্রেষ্ঠতম প্রাণী মানবের উদ্ভব। প্রকৃতির স্বাভাবিক গতিতেই এই ক্রমবিকাশ। প্রকৃ্তির অতীত কোন স্রষ্টা-পরিকল্পনার কোন হেতু নাই। স্রষ্টার কারুণ্যের ত কোন প্রসঙ্গই নাই।

    এই কথার উত্তর দেওয়া যাইতেছে। সৃষ্টি-রহস্য অতীব দুর্জ্ঞেয়। স্রষ্টা ইহাকে আমাদের বোধের সীমার বহু দূরে রাখিয়াছেন। ক্রমাভিব্যক্তি ইহার একমাত্র ব্যাখ্যা, ইহা যুক্তিসহ নহে। সৃষ্টির মধ্যে একটা ক্রম আছে, ঠিকই। কিন্তু জড়বস্তু হইতে প্রাণের উদ্ভব কিছুতেই সম্ভব নয়। তাহা হইলে রসায়নিক দ্রব্য হইতেই গাছপালা, জীবজন্তু সৃষ্টি করা যাইত।

    ক্রমাভিব্যক্তির মধ্যে এক একটি বড় বড় ফাঁক আছে। ধাতু দ্রব্য বর্ধিত হয় না, বৃক্ষাদি চলিতে পারে না, কিন্তু প্রাণী চলে, প্রাণী-জগৎ অতীতের ইতিহাস রাখে না বা ভবিষ্যতের কল্পনা করে না। মানুষ তাহা করে। এই ব্যবধানগুলি এত বড় যে কোনক্রমে সমাধান হয় না। যে-টি জড়ে ছিল না, সে-টি বৃক্ষে আসিল কোথা হইতে? যে-টি বৃক্ষে ছিল না, সে-টি প্রাণীর জগতে আসিল কি প্রকারে? মানুষের অপূর্ব্ব বুদ্ধিবৃত্তি, তাহা ইতর প্রাণীতে নাই। তাহা আসিল কোথা হইতে? বিজ্ঞানী ইহার উত্তরে বলেন যে, ঐ নূতন নূতন গুণ আগন্তুক ধর্ম্ম (emergent virtue)। রাসায়নিক সংযোগে নূতন গুণ আসে, যেমন সোডিয়াম ও ক্লোরিণ মিশাইলে লবণ হয়, কিন্তু উপাদানে কোথাও লবণাক্ত স্বাদ নাই। সমষ্টিবস্তুতে কোথা হইতে উহা আসিল? রসায়ন-শাস্ত্রে এই গুণকে ‘ইমারজেণ্ট’ (emergent) আখ্যা দেওয়া হইয়াছে।

    আমরা বলি, এইরূপ শব্দের দ্বারা অজ্ঞতাকে ঢাকিবার চেষ্টাই প্রকাশ পাইতেছে। নূতন গুণ কোথা হইতে আসিল, এই প্রশ্ন। আপনাদের উত্তর হইল- আসিয়া পড়িল। আমরা বলি যে, ঐ ব্যাপারে অভিব্যক্তির পশ্চাতে যে একজন প্লান-ওয়ালা (Planner) আছেন- ইহাই প্রমাণিত হয়। যখন যেটি প্রয়োজন তিনি তাঁর ভাণ্ডার হইতে পাঠাইয়া দেন।

    ৩। বৈজ্ঞানিক বলেন, ক্রমাভিব্যক্তির মধ্যে একটা ধ্বস্তাধ্বস্তি (struggle) লাগিয়া আছে। ইহাতে যে যোগ্য, সেই টিকিবে। আমরা ইহার বিপরীত কথা বলিতে চাই। মানব আসিবার বহু পূর্ব্বে এই পৃথিবী সৃষ্টি হইয়াছে। যাহাতে মানুষ এখানে বাস করিতে পারে, সেইরূপ পরিকল্পনা করিয়াই স্রষ্টা এখানকার জল, বায়ু, বৃক্ষ, পশু-পক্ষী সৃষ্টি করিয়াছেন। মানুষ বাতাস হইতে অক্সিজেন লয়, ত্যাগ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড। আবার বৃক্ষ ঠিক তার বিপরীত কার্য্য করে। লয় কার্বন, দেয় অক্সিজেন। মানুষের বাঁচার জন্য এখানকার সৃষ্টি-শৃঙ্খলা কত নিখুত। যে যোগ্য, সে-ই টিকিবে, (survival of the fittest) ইহা সত্য নহে। ইহা অপেক্ষা বড় সত্য – fitness of the environment- পরিবেশের মধ্যে মানুষ যাহাতে টিকিতে পারে, তাহার অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি করা। প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিকূলতা করিয়া নয়, সহযোগিতা করিয়াই মানুষ বাঁচিয়া আছে। ইহা স্রষ্টার বিচার, বুদ্ধি ও করুণার দ্যোতনা করে।

    সৃষ্টির মধ্যে যে শত সহস্র অপূর্ব্ব শৃঙ্খলা বিদ্যমান, তাহা আপনা আপনি জড় পরমাণুর গতাগতি হইতে সম্ভব হইতে পারে না। মহাবিশ্বের সুপরিকল্পনা ও সুশৃঙ্খলা দেখিয়া খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক জেমস্ জিনস্ প্রমুখ বিশেষজ্ঞেরা বলেন- অঙ্কশাস্ত্রের বিশেষ জ্ঞান-সম্পন্ন শক্তি ছাড়া এই সৃষ্টিকার্য্য অসম্ভব। অঙ্কের জ্ঞান জড় প্রকৃ্তিতে সম্ভব নয়। সুতরাং বিশ্বের মূলে চেতনাশক্তি আছে। বৈজ্ঞানিকেরা অনেকেই এখন চেতনার স্বীকৃ্তির নিকটবর্তী হইয়াছেন। চেতনা স্বীকৃত হইলেই, জীবাত্মা ও বিশ্বের পরমাত্মা পরমাত্মা স্বীকৃত হইয়া পড়ে। এই দৃষ্টিতে বিজ্ঞানশাস্ত্র ধর্ম্মশাস্ত্রের অনুকূলেই আসিয়া পড়িল। নব্য-বিজ্ঞানের (modern science) আবিষ্কারের ফলে সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার মাতৃসম কারুণ্যই দৃষ্ট হয়। পরমাণুর মধ্যে অসীম শক্তির উৎস আছে। উহার সামান্য অংশ ধ্বংসাত্মক কার্য্যে প্রযুক্ত হইলে পৃথিবীকে অনায়াসে ধ্বংস করিতে পারে। সেই অণু-পরমাণুকে দলবদ্ধ রাখিয়া যে ভাঙ্গিয়া যাইতে দেয় না, ইহা এক প্রকার মাতৃবৎ করুণা। আর ধ্বংসের রূপ দেখিয়া ঈশ্বরকে করুণাশূন্য মনে করা ঠিক নহে। সৃষ্টির বৈচিত্র্য রক্ষার্থে ধ্বংসেরও প্রয়োজন। পেটের মধ্যে ছুরি চালাইয়া দিয়া ডাক্তার রোগীকে বাঁচায়। কোন কোন বৃক্ষের ডালপালা ছাটিয়া কাটিয়া দিলে আবার শতশত নবপল্লবের উদগম হয়।

    ৪। ভোগবাদী বলেন যে, প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ প্রকৃ্তির ধ্বংসাত্মক রূপ দেখিয়া ইহার সম্মুখে নিজেকে অসহায় ভাবিয়াছে। অজ্ঞতা হেতু সে কল্পনা করিয়াছে যে, সৃষ্টির পিছনে বহু শক্তিশালী দেবদেবী আছেন। তাঁহাদের তুষ্টি বিধান করিয়া বাঁচিতে হইবে। এইজন্য তাহারা ঈশ্বর, দেবদেবী, স্বর্গ নরক, পুনর্জন্মবাদ ইত্যাদি বহু পরিকল্পনা করিয়াছে। বর্তমানে বিজ্ঞানের প্রসাদে সত্য আবিষ্কার হইতেছে এবং মানুষের ভীতি ও অজ্ঞতা কাটিতেছে। ভীতি ও অজ্ঞতা-প্রসূত দেবদেবীর বিশ্বাস, পরলক-পরকাল বিশ্বাস দ্রুতগতিতে দূর হইয়া যাইতেছে।

    উত্তরে আমরা বলি যে, এই সকল কথা বলিবার পূর্ব্বে বিজ্ঞানের ভাবনা করা উচিত যে, তাহার সামর্থ্য কতটুকু বা তার কার্য্যের পরিধি কতদূর। বিজ্ঞানের ভিত্তি অঙ্কশাস্ত্রের উপর। বৈজ্ঞানিক সত্য লইয়া যে ভবিষ্যদুক্তি করা যায়, তাহার হেতু বা ভিত্তি অঙ্ক। যে দ্রব্যকে অঙ্কের ফরমূলাতে (formula) পরিণত করা চলে তাহাই বিজ্ঞানের বিষয়। কিন্তু পৃথিবীর সকল বস্তুকে তো অঙ্কে রূপায়িত করা যায় না। সত্য, শান্তি, স্নেহ, দয়া, মায়া, প্রেম, ভালবাসা, উদারতা বা মহানুভবতা প্রভৃতি মহৎ গুণ এ বিশ্বের অতি অমূল্য সম্পদ, কিন্তু ইহাদের কোনটিই অঙ্কের আওতায় আসে না।

    ধর্ম্মের ক্ষেত্রটি প্রধানতঃ গুণের রাজ্য। একজন ধার্মিক ও একজন অধার্মিক ব্যক্তির পার্থক্য গুণগত। এই গুণের রাজ্য বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ আওতার বাহিরে। দেহের রক্ত-কণিকার বিশ্লেষণে চো্র আর সাধুর পার্থক্য ধরা পড়ে না।
    এর অবশিষ্ট অংশ দেখুনঃ-

    আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।

    প্রাসঙ্গিক বিষয়ঃ

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।