নবগ্রহস্তোত্রম্
|
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।।১
পূজামন্ত্রঃ ওঁ হ্রীং হ্রীং সূর্যায় নমঃ।
|
বঙ্গানুবাদঃ যিনি জবা পুষ্পের ন্যায় রক্তবর্ণ, যিনি কাশ্যপতনয় মহাদ্যুতিযুক্ত, যিনি অন্ধকার বিনাশক এবং সর্বপাপ হন্তা সেই দিবাকরকে নমস্কার করি।
|
ওঁ দিব্যশঙ্খ তুষারাভং ক্ষীরোদার্ণবসম্ভবম্।
নমামি শশিনং ভক্ত্যা শম্ভোর্মুকুটভূষণম্।।২
পূজামন্ত্রঃ ওঁ ঐং ক্লীং সোমায় নমঃ।
|
বঙ্গানুবাদঃ যিনি দধি শঙ্খ তুষারের ন্যায় শূভ্রবর্ণ, যিনি ক্ষীর সাগর হইতে সম্ভূত, যিনি শঙ্করের মুকুট ভূষণরূপে বিরাজমান, সেই চন্দ্রদেবকে নমস্কার করি।
|
ওঁ ধরণীগর্ভসম্ভূতং বিদ্যুৎপুঞ্জসমপ্রভম্।
কুমারং শক্তিহস্তঞ্চ লোহিতাঙ্গং নমাম্যহম্।।৩
পূজামন্ত্রঃ ওঁ হুঁ শ্রীং মঙ্গলায় নমঃ।
|
বঙ্গানুবাদঃ যিনি পৃথিবীর গর্ভজাত, যাঁহার কান্তি বিদ্যুতের ন্যায়, যিনি কৌমারাবস্থা ও শক্তি হস্ত, সেই লোহিতাঙ্গ মঙ্গলকে নমস্কার করি।
|
ওঁ প্রিয়ঙ্গুকলিকাশ্যামং রূপেণাপ্রতিমং বুধম্।
সৌম্যং সর্বগুণোপেতং নমামি শশিনং সুতম্।। ৪
পূজামন্ত্রঃ ওঁ ঐং স্ত্রী শ্রীং বুধায় নমঃ।
|
বঙ্গানুবাদঃ যিনি প্রিয়ঙ্গু কলিকার ন্যায় শ্যামবর্ণ, যাঁহার রূপের তুলনা নাই, যিনি চন্দ্রতনয় এবং সৌম্য গুণাবলিযুক্তু, সেই বুধগ্রহকে নমস্কার করি।
|
ওঁ দেবতানামূষীণাঞ্চ গুরুং কনকসন্নিভম্।
বন্দভূতং ত্রিলোকেশং ত্বং নমামিবৃহস্পতিম্।। ৫
পূজামন্ত্রঃ ওঁ হ্রীং ক্লীং হু বৃহস্পতয়ে নমঃ।
|
বঙ্গানুবাদঃ যিনি দেব ওঁ ঋষিগণের গুরু, যাঁহার কান্তি কনক সদৃশ, যিনি জ্ঞান মূর্তি এবং ত্রিলোকের অধীশ্বর সেই বৃহস্পতিকে নমস্কার করি।
|
ওঁ হিমকুন্দমৃণালাভং দৈত্যানাং পরমঃ গুরুম্।
সর্বশাস্ত্রপ্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্।। ৬
পূজামন্ত্রঃ ওঁ হ্রীং শ্রীং শুক্রায় নমঃ।
|
বঙ্গানুবাদঃ যিনি হিম, কুন্দপুষ্প এবং মৃণালের ন্যায় শুভ্র বর্ণ, যিনি দৈত্যগণের গুরু ও সর্বশাস্ত্র প্রবক্তা, সেই ভার্গব গুরুকে প্রণাম করি।
|
ওঁ নীলাঞ্জনচয়প্রখ্যং রবিসুতং মহাগ্রহম্।
ছায়ায়া গর্ভসম্ভূতং বন্দ্যেভক্ত্যা শনৈশ্চরম্।। ৭
পূজামন্ত্রঃ ওঁ ঐং হ্রীং শ্রীং শনৈশ্চরায় নমঃ।
|
বঙ্গানুবাদঃ যিনি নীলাঞ্জনের ন্যায় কান্তি সম্পন্ন, যিনি রবিনন্দন এবং যিনি যমের অগ্রজ, যিনি ছায়ার গর্ভসম্ভূত, সেই শনিদেবকে প্রণাম করি।
|
ওঁ অর্ধকায়ং মহাঘোরং চন্দ্রাদিত্যবিমর্দকম্।
সিংহিকায়াঃ সুতং রৌদ্রং ত্বং রাহুং প্রণমাম্যহম্।। ৮
পূজামন্ত্রঃ ওঁ ঐং হ্রীং রাহবে নমঃ।
|
বঙ্গানুবাদঃ যিনি অর্ধকায় সম্পন্ন হইয়াও মহাবীর্যবান, চন্দ্র সূর্য বিমর্দক, সিংহিকার গর্ভ-সমুৎপন্ন, সেই রাহুকে প্রণাম করি।
|
ওঁ পলালধুমসঙ্কাশং তারাগ্রহবিমর্দকম্।
রৌদ্রং রৌদ্রাত্মকং ক্রুরং ত্বং কেতুং প্রণমাম্যহম্।। ৯
পূজামন্ত্রঃ ওঁ হ্রীং ঐং কেতবে নমঃ।
|
বঙ্গানুবাদঃ যিনি পলাশ পুষ্পের ন্যায় রক্তবর্ণ, তারকাগ্রহ যাঁহার মস্তক, যিনি অতিভীষণ মূর্তি এবং ক্রুর স্বভাব, সেই কেতুগ্রহকে প্রণাম করি।
|
ওঁ ব্যাসনোক্ত মিদং স্তোত্রং যঃ পঠেৎ প্রযতঃ শুচিঃ।
দিবা বা যদি বা রাত্রৌ শান্তিস্তস্য ন সংশয়ঃ।।
ঐশ্বর্যমতুলঞ্চাপি আরোগ্যং পুষ্টিবর্ধনম্।
নরনারীপ্রিয়ত্বঞ্চ নিত্যং তস্যোপজায়তে।।
তক্ষকোহগ্নির্যমো বায়ুর্য্যোচান্যে গ্রহপীড়কাঃ।
তে সর্বে প্রশমং যান্তি ব্যাসো ব্রূয়ান্নসংশয়ঃ।।
ইতি ব্যসভাষিতং নবগ্রহস্তোত্রং সমাপ্তম্।
|
গায়ত্রী দ্বারা নবগ্রহ শান্তি
নবগ্রহের গায়ত্রী মন্ত্র সাধকের জন্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো। বিষ্ণুধর্মোত্তরে দেখা যায়-
গোচরে বা জন্মকুন্ডলীতে যে গ্রহ অনিষ্টকারক, তার শান্তি করিয়ে প্রসন্নতা লাভ করানো প্রয়োজন। প্রসন্ন হয়ে সেই গ্রহ শুভ ফল প্রদান করেন। গায়ত্রী নবগ্রহ মন্ত্র দ্বারা গ্রহগণের শান্তি অতি শীঘ্র হয়ে থাকে।
|
১। রবি (সূর্য) গ্রহ = ওঁ ভাস্করায় বিদ্মহে মহাতেজায় ধীমহিঃ তন্নঃ সূর্যঃ প্রচোদয়াৎ।
২। সোম (চন্দ্র) গ্রহ = ওঁ ক্ষীরপুত্রায় বিদ্মহে অমৃতত্বায় ধীমহিঃ তন্নঃ চন্দ্রঃ প্রচোদয়াৎ।
৩। মঙ্গল গ্রহ = ওঁ অঙ্গরকায় বিদ্মহে শক্তি হস্তায় ধীমহিঃ তন্নঃ ভৌমঃ প্রচোদয়াৎ।
৪। বুধ গ্রহ = ওঁ সৌম্যরূপায় বিদ্মহে বানেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ বুধ প্রচোদয়াৎ।
৫। বৃহস্পতি গ্রহ = ওঁ আঙ্গিরসায় বিদ্মহে দন্তায় ধায় দীমহিঃ তন্নঃ জীবঃ প্রচোদয়াৎ।
৬। শুক্র গ্রহ = ওঁ ভৃগুসূতায় বিদ্মহে দিব্যদেহায় ধীমহিঃ তন্নঃ শুক্রঃ প্রচোদয়াৎ।
৭। শনি গ্রহ = ওঁ সূর্যপুত্রায় বিদ্মহে মৃত্যুরূপায় ধীমহিঃ তন্নঃ সৌরঃ প্রচোদয়াৎ।
৮। রাহু গ্রহ = ওঁ শিরোরূপায় বিদ্মহে অমৃতেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ রাহুঃ প্রচোদয়াৎ।
৯। কেতু গ্রহ = ওঁ গদাহস্তায় বিদ্মহে অমৃতেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ কেতু প্রচোদয়াৎ।
|
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র-
ॐ त्र्यम्बकं यजामहे सुगन्धिं पुष्टिवर्धनम् ।
उर्वारुकमिव बन्धनान्मृत्योर्मुक्षीय माऽमृतात् ।।
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ । উর্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাত্ ।।
ভাবার্থ --- হে সৃষ্টিকর্তা, ধর্তা ও হর্তা পরমাত্মন! তুমি আমাদের জন্য সুগন্ধিত, পুষ্টিকারক তথা বলবর্ধক ভোগ্য বস্তু দান করো।
প্রভু' তুমি এই জগতের পালক - পোশক
আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভক্তিসহকারে তোমার সাধনা করি। হে দেব! আমরা পূর্ণায়ু ও পূর্ণভোগ করেই যেন এই শরীর রূপী বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারি। আমরা যেন এই জন্ম-মৃত্যু চক্র থেকে মুক্ত হতে পারি, কিন্তু তোমার অমৃতময়ী স্নেহ থেকে যেন বঞ্চিত না হই।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র একটি সর্বরোগ হরণকারী মন্ত্র । এই মন্ত্রটি ভগবান মহাদেবকে স্মরণ করে রচিত । এই মন্ত্রটি ঋগ্বেদেও দৃষ্ট হয় - আবার এই মন্ত্রটি মার্কণ্ডেয় পুরাণেও দৃষ্ট হয় । এই মন্ত্রটি জপ করলে মানুষ সব অশান্তি , রোগপীড়া , ব্যাধি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হয় । নিরাকার মহাদেবই মৃত্যুমুখী প্রাণকে বলপূর্বক জীবদেহে পুণঃ প্রতিষ্ঠিত করেন এবং অপার শান্তিদান করেন । এই মন্ত্রটির সাথে একটি কাহিণী প্রচলিত আছে । সেটি হল - মহর্ষি মৃকন্ডু এবং তাঁর পত্নী মরুদবতী পুত্রহীণ ছিলেন । তারা তপস্যা করেন মহাদেবকে সন্তুষ্ট করেন এবং এক পুত্র লাভ করেন , যার নাম হল মার্কন্ডেয় । কিন্তু মার্কন্ডেয়র বাল্যকালেই মৃত্যুযোগ ছিল । অভিজ্ঞ ঋষিদের কথায় বালক মার্কন্ডেয় শিব লিঙ্গের সামনে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করতে লাগলেন । যথা সময়ে যম রাজ এলেন । কিন্তু মহাদেবের শরণে আসা প্রাণকে কেইবা হরণ করতে পারে ! যমরাজ পরাজিত হয়ে ফিরে গেলেন এবং মার্কন্ডেয় মহাদেবের বরে দীর্ঘায়ু লাভ করলেন । পরে তিনি মার্কন্ডেয় পুরাণ রচনা করলেন ।
মার্কন্ডেয় ঋষি মহাদেবের স্তুতি করলেন মহামৃত্যুঞ্জয় স্তোত্রের মাধ্যমে যেটি মার্কন্ডেয় পুরাণে পাওয়া যায় । (সংগ্রহ- উইকিপিডিয়া)
|