কিভাবে দেব দেবীগণকে সম্মান জানাতে হয়?
একজন কৃষ্ণভক্ত জানেন যে দেবদেবীগণ সকলেই শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞানুবর্তী সেবক-সেবিকা। এঁদের প্রত্যেককেই বিশেষ বিশেষ সেবাভার বা কার্যভার দেওয়া হয়েছে।
কৃষ্ণভক্ত দেবদেবীগণকে কখনই অসম্মান করেন না, তিনি সকল দেবদেবীগণকে শ্রীকৃষ্ণর বিরাট-রূপের বা বিশ্বরূপের অবিচ্ছেদ্য অংশ রূপে দর্শন করেন এবং তাঁদেরকে সম্মান করেন, প্রণাম করেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। অবশ্য, কৃষ্ণভক্ত তাঁদের কাছ থেকে কোন জড়-লাভ, প্রতিষ্ঠা কামনা করেন না। যখন একজন কৃষ্ণভক্ত শ্রীগণেশকে প্রণাম ও প্রার্থনা করেন, তিনি বলেন, “হে প্রভু! কৃষ্ণের কাছে ফিরে যাওয়ার পথে যে সব বাধা-বিঘ্ন রয়েছে, কৃপাপূর্বক আপনি সেগুলি দূর করুন।” যখন তিনি শিবের নিকট প্রার্থনা করেন, তিনি বলেন, “আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব। কৃপা করে আমাকেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একজন প্রেমানুরক্ত ভক্ত হবার আশীর্বাদ করুন, যাতে আমি নিত্যকাল তাঁর সেবায় নিয়োজিত হতে পারি।” তিনি সরস্বতীর নিকট প্রার্থনা করেন, “হে মাতা সরস্বতী। আমাকে কৃপাশীষ প্রদান করুন, যাতে আমি এই শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করে উপলদ্ধি করতে পারি এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হতে পারি।”
এই হচ্ছে দেবদেবীদের প্রতি ভক্তের মনোভাব। ভগবদ্ভক্ত সকল জড়-অভিপ্রায়-শূন্য হয়ে নিরন্তর কেবল শ্রীকৃষ্ণের সেবা করতে আগ্রহী। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং তাঁর অনন্য ভক্তের সকল প্রয়োজন পূরণ করেন (যোগক্ষেম বহামি অহম্ – ভ.গী.-৯/২২)। একজন কৃষ্ণভক্ত কোন জড় বাসনা পূরণের জন্য কোন দেব-দেবীর নিকটে যাবার কথা এমনকি স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না। বৃন্দাবনের গোপিকাগণ যখন কাত্যায়ণী ব্রত করে কাত্যায়ণী দেবীর (যোগমায়া) নিকট প্রার্থনা করতেন, তাদের প্রার্থনা ছিল এই যে কৃষ্ণকে যেন তাঁরা স্বামীরূপে লাভ করতে পারেন। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণের একজন অনন্যচিত্ত শুদ্ধ ভক্ত হওয়ার জন্যই আমাদের আকাঙ্ক্ষিত হওয়া উচিত। “জয় শ্রীকৃষ্ণ”।।
সূত্রঃ ভগবদগীতার সারতত্ব ছয় পর্বের প্রাথমিক পাঠক্রম।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তরশত নাম
জয় জয় গোবিন্দ গোপাল গধাধর।
কৃষ্ণচন্দ্র কর কৃপা করুণাসাগর।।
জয় জয় গোবিন্দ গোপাল বনমালী।
শ্রীরাধার প্রাণধন মুকুন্দ মুরারি।।
হরিনাম বিনে রে গোবিন্দনাম বিনে।
বিফলে মনুষ্য জন্ম যায় দিনে দিনে।।
দিন গেল মিছা কাজে রাত্রি গেল নিদ্রে।
না ভজিনু রাধাকৃষ্ণ-চরণারবিন্দে।।
কৃষ্ণ ভজিবার তরে সংসারে আইনু।
মিছা-মায়ায় বদ্ধ হ’য়ে বৃক্ষসম হইনু।।
ফলরূপে পুত্র-কন্যা ডালভাঙ্গি’ পড়ে।
কালরূপে সংসারেতে পক্ষী বাসা করে।।
যখন কৃষ্ণ জন্ম নিল দৈবকী উদরে।
মথুরাতে দেবগণ পুষ্পবৃষ্টি করে।।
বসুদেব রাখি’ আইল নন্দের মন্দিরে।
নন্দের আলয়ে কৃষ্ণ দিনে দিনে বাড়ে।।
শ্রীনন্দ রাখিল নাম ‘নন্দের নন্দন’।
যশোদা রাখিল নাম ‘যাদু বাছাধন’।।
উপানন্দ নাম রাখে ‘সুন্দর গোপাল’।
ব্রজবালক নাম রাখে ‘ঠাকুর রাখাল’।।
সুবল রাখিল নাম ‘ঠাকুর কানাই’।
শ্রীদাম রাখিল নাম ‘রাখালরাজা-ভাই’।।
‘ননীচোরা’ নাম রাখে যতেক গোপিনী।
‘কালোসোনা’ নাম রাখে রাধাবিনোদিনী।।
চন্দ্রাবলী নাম রাখে ‘মোহন-বংশীধারী’।
কুব্জা রাখিল নাম ‘পতিতপাবন হরি’।।
‘অনন্ত’ রাখিল নাম অন্ত না পাইয়া।
‘কৃষ্ণ’ নাম রাখে গর্গ ধ্যানেতে জানিয়া।।
কন্বমুনি রাখে নাম ‘দেব চক্রপাণি’।
‘বনমালী’ নাম রাখে বনের হরিণী।।