জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী বিদুষী বাঙালি নারী খনা'র বচন বা উপদেশ | |||
স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু গণনা ( কে আগে মারা যাবে) |
|||
অক্ষর দ্বিগুণ, চৌগুন মাত্রা (কার)। নামে নামে করি সমতা ।। তিন দিয়ে হরে আন। তাহে মরা-বাঁচা জান।। একে-শূন্যে মরে পতি। দু'য়ে মরে যুবতি।। উদাহরণঃ-স্বামীর নামঃ তপন কুমার সরকার = অক্ষর= ১০x২ = ২০, মাত্রা= ৩x৪=১২, যোগফল = ২০+১২ = ৩২।স্ত্রীর নামঃ আমোদিনী সরকার = অক্ষর= ৮x২ = ১৬, মাত্রা= ৬x৪=২৪, যোগফল = ১৬+২৪ = ৪০। অবশিষ্ট অংশ পাশের কলামে দেখুন |
_________________ নামে নামে করি সমতা = অর্থাৎ দুইটা নামের যোগফল = ৩২+৪০= ৭২। তিন দিয়ে হরে আন= অর্থাৎ প্রাপ্ত সংখ্যাকে তিন দিয়ে ভাগ করতে হবে। একে -শূন্যে মরে পতি। দু'য়ে মরে যুবতি । অর্থাৎ ভাগশেষ যদি ১ অথবা ০ হয় তবে স্বামী আগে মারা যাবে। অন্যথা অর্থাৎ ২ হলে স্ত্রী আগে মারা যাবে। এখানে ভাগশেষ থাকে ০ অতএব স্বামী আগে মারা যাবে। |
||
গর্ভস্থ সন্তান পরীক্ষা |
|||
যত মাসের গর্ভ নারীর নাম যত অক্ষর। যত জন শুনে পক্ষ দিয়ে এক কর।। সাতে হরি চন্দ্র নেত্র বাণ যদি রয়। ইথে পুত্র পরে কন্যা জানিহ নিশ্চয়।। বাণের পৃষ্ঠে দিয়ে বাণ। পেটের ছেলে গণে আন।। নামে মাসে করি এক। আটে হরি সন্তান দেখ।। এক তিন থাকে বাণ। তবে নারীর পুত্র জান।। দুই চারি থাকে ছয়। অবশ্য তার কন্যা হয়।। যদি থাকে শূন্য সাত। তবে নারীর গর্ভপাত।। গ্রাম গর্ভিণীর ফলে যুতা। তিন দিয়ে হর পুতা।। একে সুত দুয়ে সুতা। শূন্য হলে গর্ভ মিথ্যা।। এ কথা যদি মিথ্যা হয়। সে ছেলে তার বাপের নয়।। নামে মাসে করি এক। তার দ্বিগুণ করে সন্তান দেখ।। সাতে পূরি আটে হরি। সমে পুত্র বিষমে নারী।। |
এই পর্যন্ত ব্যাখ্যা করা গেল ।হরি = ভাগ করি চন্দ্র = এক নেত্র = তিন বাণ = পাঁচ সুত = ছেলে সুতা = মেয়ে |
||
কৃষি ও চাষাবাদ সম্পর্কে খনার বচন বা উপদেশ |
|||
ষোল চাষে মুলা, তার অর্ধেক তুলা, তার অর্ধেক ধান, বিনা চাষে পান ।। খনা বলে শুনে যাও নারিকেল মুলে চিটা দাও, গাছ হয় তাজা মোটা তাড়াতাড়ি ধরে গোটা। সুপারীতে গোবর, বাশে মাটি, অফলা নারিকেল শিকড় কাটি৷ গাছ-গাছালি ঘন রোবে না, গাছ হবে তাতে ফল হবে না। গরু ছাগলের মুখে বিষ, চারা না খায় রাখিস দিশ । ডাক ছেড়ে বলে রাবণ, কলা রোবে আষাঢ় শ্রাবণ। উঠান ভরা লাউ শশা, ঘরে তার লক্ষ্মীর দশা। আউশ ধানের চাষ, লাগে তিন মাস। বাঁশের ধারে হলুদ দিলে, খনা বলে দ্বিগুণ বাড়ে। দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ, কমে না বাড়ে বারো মাস। কি কর শ্বশুর মিছে খেটে, ফাল্গুনে এঁটে পোত কেটে। বেড়ে যাবে ঝাড়কি ঝাড়, কলা বইতে ভাংগে ঘাড়। খনা বলে শোন ভাই, তুলায় তুলা অধিক পাই। ঘন সরিষা পাতলা রাই, নেংগে নেংগে কার্পাস পাই। শোনরে বাপু চাষার পো, সুপারী বাগে মান্দার রো৷ মান্দার পাতা পঁচলে গোড়ায়, ফড়ফড়াইয়া ফল বাড়ায়৷ কলা রুয়ে না-কেটো পাত, তাতে কাপড় তাতেই ভাত। ভাদরে করে কলা রোপন, স্ববংশে মরিল রাবণ। আমে ধান, তেঁতুলে বান। |
চাষী আর চষা মাটি এ দু'য়ে হয় দেশ খাঁটি। যদি থাকে টাকা করবার গোঁ। চৈত্র মাসে ভুট্টা দিয়ে রো।। আষাঢ়ে পনের শ্রাবণে পুরো ধান লাগাও যত পারো। তিন শাওনে পান এক আশ্বিনে ধান। চালায় চালায় কুমুড় পাতা লক্ষ্মী বলেন আছি তথা। পটল বুনলে ফাগুনে ফলন বাড়ে দ্বিগুণে। খনা ডেকে বলে যান রোদে ধান ছায়ায় পান হাত বিশ করি ফাঁক আম কাঁঠাল পুঁতে রাখ গাঁ গড়ানে ঘন পা। যেমন মা তেমন ছা।। থেকে বলদ না বয় হাল, তার দু:খ সর্ব্বকাল। ভাদ্রের চারি, আশ্বিনের চারি কলাই করি যত পারি। খরা ভুয়ে ঢালবি জল সারাবছর পাবি ফল। ডাঙ্গা নিড়ান বান্ধন আলি তাতে দিও নানা শালি। কাঁচা রোপা শুকায় ভুঁইয়ে ধান ভুঁইয়ে লুটায়। হালে নড়বড়, দুধে পানি লক্ষ্মী বলে ছাড়লাম আমি। শুনরে বাপু চাষার বেটা মাটির মধ্যে বেলে যেটা তাতে যদি বুনিস পটল তাতে তোর আশার সফল। বারো পুত তেরো নাতি। তবে করো বোরো খেতি।। গো নারিকেল নেড়ে রো আম টুকরা কাঁঠাল ভো। তাল বাড়ে ঝোপে খেজুর বাড়ে কোপে। |
||
বৃষ্টি বা বন্যার পূর্বাভাস সম্পর্কে খনার বচন বা উপদেশ |
|||
ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, শীঘ্র হবে বৃষ্টি জান। যদি হয় চৈতে বৃষ্টি, তবে হবে ধানের সৃষ্টি। পূর্ব আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়, সেই বছর বন্যা হয়। যদি বর্ষে মাঘের শেষ , ধন্যি রাজা পুণ্যি দেশ। যদি বর্ষে ফাগুনে, চিনা কাউন দ্বিগুনে। মেঘ করে রাত্রে হয় জল, তবে মাঠে যাওয়াই বিফল। জ্যৈষ্ঠে খরা, আষাঢ়ে ধারা, শস্যের ভার না সহে ধরা। |
জ্যৈষ্ঠতে তারা ফুটে, তবে জানবে বর্ষা বটে। আষাঢ় মাসে বান্ধে আইল, তবে খায় বহু শাইল। যদি না হয় আগনে বৃষ্টি, তবে না হয় কাঁঠালের সৃষ্টি। গাছে গাছে আগুন জ্বলে, বৃষ্টি হবে খনায় বলে। আকাশে কোদালীর বাউ, ওগো শ্বশুড় মাঠে যাও। মাঠে গিয়া বাঁধো আলি, বৃষ্টি হবে আজি কালি। মাঘ মাসে বর্ষে দেবা, রাজ্য ছেড়ে প্রজার সেবা। |
||
গরু বা গাভীর যত্ন সম্পর্কে খনার বচন বা উপদেশ |
|||
যে চাষা খায় পেট ভরে, গরুর পানে চায় না ফিরে। গরু না পায় ঘাস পানি, ফলন নাই তার হয়রানি। গরুর পিঠে তুললে হাত, গিরস্থে কভু পায় না ভাত। গাই দিয়া বায় হাল, দু:খ তার চিরকাল। |
সবলা গরু সুজন পুত, রাখতে পারে খেতের জুত। গরু-জরু-ক্ষেত-পুতা, চাষীর বেটার মূল সুতা। সবল গরু, গভীর চাষ, তাতে পুরে চাষার আশ। গাই পালে মেয়ে, দুধ পড়ে বেয়ে। | ||
খনার অন্যান্য বচন বা উক্তি |
|||
যত জ্বালে ব্যঞ্জন মিষ্ট, তত জ্বালে ভাত নষ্ট৷ পুত্র ভাগ্যে যশ, কন্যা ভাগ্যে লক্ষী৷ |
যে না শোনে খনার বচন, সংসারে তার চির পচন৷ চৈত্রে দিয়া মাটি, বৈশাখে কর পরিপাটি। | ||
খনার বিবিধ বচন বা উপদেশ |
|||
সকাল শোয় সকাল ওঠে, তার কড়ি না বৈদ্য লুটে। বারো মাসে বারো ফল, না খেলে যায় রসাতল। ফল খেয়ে খায় জল, তার দুঃখ চিরকাল। |
উত্তর দুয়ারি ঘরের রাজা, দক্ষিণ দুয়ারি তাহার প্রজা। পূর্ব দুয়ারির খাজনা নাই, পশ্চিম দুয়ারির মুখে ছাই।। আলো হাওয়া বেঁধো না, রোগে ভোগে মরো না। মংগলে উষা বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা। |