ঈশ্বর সম্বন্ধীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক বিষয়ঃ- দেখতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর ক্লিক করুন-
সত্যিই কি ঈশ্বর আছেন?
-শ্রী পতিত উদ্ধারণ গৌর দাস ব্রহ্মচারী
বিজ্ঞানী নিউটন কর্তৃক ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণঃ
নিউটন ছিলেন আস্তিক, কিন্তু তার অনেক নাস্তিক সহকর্মী ছিল। একদিন নিউটন তার টেবিলে খুব সুন্দর একটি সৌরজগতের মডেল তৈরি করে রেখেছেন। তাতে একটি সূর্য ছিল এবং অন্যান্য গ্রহগুলো তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। টেবিলের নিচে একটি দণ্ড ছিল, দণ্ডটি ঘোরালে গ্রহগুলোও সূর্যকে কেন্দ্র করে তাদের নিজ নিজ কক্ষপথে সুন্দরভাবে ঘুরতে থাকে এবং উপগ্রহগুলো নির্দিষ্ট গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে। একদিন এক বন্ধু এসে নিউটনকে জিজ্ঞেস করে, “বাহ্, মডেলটি তো খুব সুন্দর! তুমি এটি কোথায় পেলে?”
নিউটন বললেন, “একদিন আমি প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলাম, ফিরে আসার পর হঠাৎ এটা আমার সামনে উদ্ভূত হলো।” বন্ধু বলল, “দয়া করে কৌতুক করো না, আমি সত্যিই এ ব্যাপারে জানতে চাই।” নিউটন বললেন, “বিশ্বাস করো, আমিও সত্যি বলছি- এটা এখানে ছিল না। কিন্তু দরজা খুলতেই হঠাৎ এটি উদ্ভূত হলো।” বন্ধু বলল, “না না, তুমি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছ।” তখন নিউটন গম্ভীরভাবে বললেন, “বন্ধু, এই ছোট্ট সৌরমণ্ডলটি যে আকস্মিকভাবে তৈরি হয়েছে তা তুমি বিশ্বাস করছ না। কিন্তু এটা জোর দিয়ে বিশ্বাস করছ যে, প্রকৃত সৌরমণ্ডল কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছাড়াই আপনা থেকে এবং আকস্মিকভাবে উদ্ভূত হয়েছে।” সুতরাং এটা ভাবার বিষয়। মনে করুন, একদিন আপনি সমুদ্রের তীরে হাঁটছেন, হঠাৎ খুব দামী একটা ঘড়ি আপনার চোখে পড়ল। তখন আপনি কি বলবেন যে, সমুদ্রের ঢেউ এসে তীরের বালি উত্তপ্ত করে এবং সেখানে আকস্মিকভাবে এই ঘড়িটি সৃষ্টি হয়?
অযৌক্তিক বিগ ব্যাং থিওরি !
দুর্ভাগ্যবশত আমরা বলি যে, এই সমগ্র মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে বিগব্যাং থেকে, কেউ তা সৃষ্টি করেনি। ‘বিগব্যাং’ তত্ত্বের ধারণা বা হিপোথিসিস অনুসারে এক হাজার চারশো কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের সব পদার্থ ও শক্তি ছিল ঘনীভূত- একটি ‘পয়েন্ট’ অর্থাৎ বিন্দুর মতো অবস্থায়, যে অবস্থাকে বলা হয় ‘সিঙ্গুলারিটি’। এর তাপমাত্রা ছিল অকল্পনীয়। এ সময় এর স্থান-কালের অবমনন (Space-Time Curvature) ছিল শূন্য-‘জিরো ভল্যুম’ এবং ঘনত্ব ছিল প্রায় সীমাহীন। কল্পনা করুন, ১০ হাজার কোটি গ্যালাক্সির এই অকল্পনীয় ‘ম্যাস’, ভরের আয়তন শূন্য। এর পর এতে ঘটনাক্রমে (By Chance) এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে (‘বিগব্যাং’)। শূন্যতা (Nothing)
থেকে বিস্ফোরণে পদার্থগুলো ভয়ংকর গতিবেগে ছুটতে শুরু করল মহাশূন্য দিয়ে। সেই ছুটন্ত পদার্থ ও শক্তি থেকে রচিত হল এক অকল্পনীয় ভারসাম্যে ভরা শৈল্পিক সৃষ্টির –যার মধ্যে সহাবস্থান বিপুল শক্তিধর সূর্য, স্নিগ্ধোজ্জ্বল চন্দ্র,
দিগন্ত-বিস্তৃত জল- তরঙ্গময় মহাসাগর- ঘেরা শ্যামলিমাময় পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু, গ্যালাক্সির। প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য একে অন্যের থেকে আলাদা, অনবদ্য। অনন্ত সৃষ্টিবৈচিত্র কি কেবল একটি বিস্ফোরণে সম্ভব?
বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ফ্রেড হয়েল বলেন, বিস্ফোরণ পদার্থকে কেবল দূরে সরিয়ে দেয়, কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিগব্যাং বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে- পদার্থ সংবদ্ধ হয়ে গ্যালাক্সি-গ্রহ-সূর্য তৈরি করেছে।
এর চেয়ে হিমালয়ের পর্বত-পাদদেশে একটি বিরাট ধ্বস থেকে তৈরি হলো ইমারত-শোভিত এক সদৃশ্য শহর, এই কাহিনীও অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য।
যত তত্ত্বই থাক, মহাবিশ্বের মূল রহস্যের ধারে কাছে এখনো পৌঁছতে পারেনি কোনো বিজ্ঞানী। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তারা মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো কিছুর অস্তিত্ব ধরে নিয়ে এগিয়েছেন।
কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, যখন মহাবিশ্বের কোথাও কোনো কিছু ছিল না, তখন ঐ পদার্থগুলো এলো কোথা থেকে? মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উৎস কী? অসীম ঘনত্ব অথচ শূন্য আয়তনের বিন্দুই কোথা থেকে এলো? অকল্পনীয় তাপ কীভাবে সৃষ্টি হলো? এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর জড়বাদী বিজ্ঞানীরা জানেন না। বিজ্ঞানীরা বলেন, বিগব্যাং হয়েছিল কোয়ান্টাম সূত্রের ফ্রাকচুয়েশানের ফলে। কিন্তু যেখানে শূন্যতা ছাড়া কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না, সেখানে কোয়ান্টাম সূত্র থাকতে যাবে কোন দুঃখে? কেমন নির্বোধ এবং অযৌক্তিক কথা! এগুলোই আবার বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়, আর আমরা নির্দ্বিধায় তা বিশ্বাস করি।
ঐতিহ্যবাহী ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় সহস্রাব্দের শেষ বছরটিতে ১৯৯৯-এর মার্চ এপ্রিল সংখ্যায় ‘সায়েন্স এণ্ড রিলিজিয়ন’ নামের একটি রিপোর্টে একটি অত্যান্ত আকর্ষণীয় খবর ছাপা হয়, যার শিরোনাম ছিল- “Renowned Scientist Contemplate the Evidence of God” অর্থাৎ “প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পাচ্ছেন ঈশ্বরের অস্তিত্বের”। ১২-১৪ এপ্রিল, ১৯৯৯ প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের সঙ্ঘ A.A.A.S. একটি সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে স্মিথোসিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়ামে, যার বিষয়- শিরোনাম ছিল ‘কসমিক কোশ্চেনস’ বা ‘মহাজাগতিক প্রশ্নাবলি’। ‘দি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকা ১৯৯৯ এর ১২ই এপ্রিলের ‘Know How’ নামক বিজ্ঞান বিষয়ক ক্রোড়পত্র খবরটি ফলাও করে ছাপে। সেখানে প্রথম পৃষ্ঠার হেডলাইন ছিল ‘সায়েন্স মিট্স গড’ অর্থাৎ “বিজ্ঞান এখন ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করছে।”
মহাজগতের রহস্য-বিষয়ক ঐ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান বিশ্বের প্রথম সারির স্বনামধন্য বিজ্ঞানীরা, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন নোবেলজয়ী স্টিফেন উইনবার্গ, কোয়ান্টাম-তত্ত্বের প্রবক্তা নোবেলজয়ী স্টিফেন হকিং, কসমোলজিস্ট জোয়েল’প ম্যাক, কণা পদার্থবিদ রকি কোল্ব, SETI ইনস্টিটিউটের জ্যোতির্বিদ জিল টার্টা, জন লেনসি প্রমুখ। তাঁরা স্বীকার করেন যে, বিগ ব্যাং থিওরি যত প্রশ্নের উত্তর দেয়, তার চেয়ে বেশি প্রশ্ন তৈরি করে, যাদের উত্তর বের করা অসম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, ‘আপনা থেকে’, দৈবদুর্ঘটনা-ক্রমে’ বা অ্যাকসিডেন্টালি এই অপূর্ব শৃঙ্খলাপূর্ণ বিশ্বের উদ্ভব এক দূর-কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়, আর এই তত্ত্বের কোনো প্রামাণিক ভিত্তি দান একরকম অসম্ভব।
১২শো কোটি বছর আগের মহাজাগতিক ঘটনার ‘প্রমাণ’ উপস্থাপন করার চেষ্টা করাই মহাজাগতিক বোকামির নামান্তর, কেবল অনুমান, অনুমান এবং অনুমান। ‘দি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটিতে বিগ ব্যাং থিওরির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে- “ This universe, most of the scientists believe, sprang from nothingness in a cataclysmic burst of energy around 12 billion years ago; ” ‘Believe’ বা বিশ্বাস শব্দটি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন- বিজ্ঞানীরা ‘বিশ্বাস’ করেন, অর্থাৎ ‘অনুমান’ বা ‘কল্পনা’ করেন, তার অর্থ কিছু অংশ করেন না। -অর্থাৎ এই তত্ত্ব যুক্তিগ্রাহ্য নয় বলেই সেটি সর্বজন-স্বীকৃত নয়।
আপনার পছন্দমত
যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
আপনাদের পোস্টকরা লেখাগুলো দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।