শ্রীকৃষ্ণ নামের শ্রেষ্ঠত্ব
মহাদেব পার্বতীকে বলেছেন, “এক রামনামই সহস্র (এক হাজার) বিষ্ণুনামের সমতুল্য” (বৃহৎবিষ্ণু সহস্রনামস্তোত্র-৭২/৩৩৫)। আবার ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে বলা হয়েছে- “শ্রীবিষ্ণুর পবিত্র সহস্রনাম তিনবার পাঠ করলে যে ফল লাভ হয়, মাত্র একবার কৃষ্ণনাম উচ্চারণ করলেই সে ফল লাভ হয়ে থাকে।” সুতরাং, এক কৃষ্ণনাম তিন রামনামের সমান অথবা তিনসহস্র (তিন হাজার ) বিষ্ণু নামের সমান। শ্রীহরিনামচিন্তামণি গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ উচ্চারণের ফলে আমরা অনায়াসেই নিম্ন উল্লেখিত ফলগুলো লাভ করতে পারি; বিশ্বাস, পাপকর্মের ফল নাশ, কলির প্রভাব নাশ, মুক্তিলাভ, সর্বরোগের নিরাময় হয়, সমস্ত শঙ্কা ও ভয় দূর করে শান্তি নিয়ে আসে, ভূত-প্রেত দানব-পিশাচসহ গ্রহের কুপ্রভাব থেকে মুক্তি, অনর্থ নাশ ও চতুর্বর্গ লাভ, প্রারব্ধ কর্ম নাশ ও নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি ও দিব্যানন্দ লাভ।
সুতরাং, আমাদের বুঝতে হবে, নিষ্ঠা ও একাগ্রচিত্তে সেবা মনোভাব নিয়ে এই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র উচ্চারণ করলে এ জগতের যা দরকার তা অনায়াসেই লাভ হবে এবাং নামের কৃপায় অন্তিমে আমরা শ্রীকৃষ্ণের নিত্যধামে ফিরে যেতে পারব।
. . . . . . . . . . . . . .
শিব-ব্রহ্মাদি দেবগণ কর্তৃক হরিনামের আশ্রয় গ্রহণ
এই দিব্যনামের এমনই মহিমা যে, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা নিজে নামাচার্য হরিদাসরূপে এসে জপমালায় প্রতিদিন তিন লক্ষ নাম জপ করতেন। চৈতন্য চরিতামৃত (অন্ত্য ৩য় অধ্যায়ে) উল্লেখ আছে যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অবতরণে শুধু ব্রহ্মাই নয়- শিব, চতুঃসন, নারদ, প্রহ্লাদ, দেবরাজ ইন্দ্র প্রমুখ মহাজনগণ সকলেই কৃষ্ণপ্রেম পাওয়ার জন্য এই পৃথিবীতে মনুষ্যরূপে জন্মগ্রহণ করে কৃষ্ণনাম কীর্তন করেছিলেন। এমনকি মায়াদেবী দুর্গা পর্যন্ত ক্রন্দন করতে করতে এই কলিযুগে হরিদাস ঠাকুরের কাছে কৃষ্ণনাম পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করেন। তখন হরিদাস ঠাকুর দুর্গাদেবীকে ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ জপ করার নির্দেশ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দীক্ষা দান করেন। অন্যদের কি কথা, এমনকি ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ নিজেও ভক্তভাব অঙ্গীকার করে গৌরাঙ্গরূপে এ জগতে অবতীর্ণ হয়ে নামপ্রেম-রস আস্বাদন করেছিলেন। এভাবে তাঁরা সকলকে নিষ্ঠাসহকারে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করার শিক্ষা দিয়েছেন।
. . . . . . . . . . . . . .
শ্রীহরিনামের মহিমা
এই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ সম্পূর্ণভাবে চিন্ময়। হরিভক্তিবিলাস (১১/১৮৬) উল্লেখ আছে, যদি কেউ সূর্যগ্রহণের সময় কোটি গাভী দান করেন, গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গমস্থলে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বাস করেন, অথবা যজ্ঞে ব্রাহ্মণদের পর্বতসমান স্বর্ণ দান করেন, তবুও তিনি হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার এক শতাংশ ফলও অর্জন করতে পারেন না। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের শব্দবিগ্রহ ও শব্দাবতার। হরিনাম জপ শ্রীকৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করার সবচেয়ে সহজ সাধ্য উপায়। এটি হচ্ছে নিত্যপ্রভুর কাছে নিত্যদাসের সমস্ত দুঃখের পরিত্রাণ ও সেবা লাভের সবচেয়ে সহজ, সরল ও ঐকান্তিক প্রার্থনা। একটি শিশু যেভাবে তার মায়ের জন্য ব্যাকুল ভাবে ক্রন্দন করে ঠিক সেই ভাব নিয়ে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করলে খুব সহজে আমরা কৃষ্ণের উপস্থিতি অনুভব করতে পারব। প্রাথমিক অবস্থায় বিষয়চিন্তা আসতেই পারে, তাই নিরাশ না হয়ে অধ্যাবসায় ও নিষ্ঠার সাথে নাম গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে। এ সম্বন্ধে শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, - “এ হরেকৃষ্ণ জপের অর্থ হল, তৎক্ষণাৎ সাক্ষাৎ কৃষ্ণসঙ্গ লাভ করা। যদি তুমি অপরাধ শুন্য হয়ে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে থাক, তবে কৃষ্ণের প্রত্যক্ষ সঙ্গ লাভ করবে ।” শ্রীমদ্ভাগবতে (১২/৩/৫১) শ্রীল শুকদেব গোস্বামী পরীক্ষিত মহারাজকে বলেছেন “হে রাজন কলির সীমাহীন দোষ সত্ত্বেও এর একটি মহান গুণ দেখতে পাওয়া যায় যে, শুধু ‘হরেকৃষ্ণ’ মহামন্ত্র জপ করার মাধ্যমে মানুষ জড়বন্ধন থেকে মুক্তু হয়ে পরমধামে উন্নীত হবেন।” – হরেকৃষ্ণ
এর পর দেখুনঃ ধর্ম কি বিজ্ঞান ছাড়া ? ভোগবাদীদের কতিপয় যুক্তি!
আপনার পছন্দমত
যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।