আবহমানকালের সুনির্বাচিত বাণী
অনাবৃষ্টে রাজ্য মজে, পাপে মজে ধর্ম।
কোটালে গৃহস্থ মজে, আলস্যে মজে কর্ম।
অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর,
অতি বড় সুন্দরী না পায় বর।
অজ্ঞানে করে পাপ, জ্ঞান হলে সরে,
সজ্ঞানে করে পাপ, কভু না সে ফেরে।
কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ,
পাকলে করে টাশ টাশ।
অগ্নি ব্যাধি ঋণ,
তিনের রেখো না চিন।
(আগুন নিভিয়ে ফেলা, রোগ সারিয়ে ফেলা ও ঋণ শোধ করে ফেলা কর্তব্য। )
অতি চালাকের গলায় গড়ি
অতি বোকার পায়ে বেড়ি।
অজ্ঞানের কালে জানে না,
অমানুষের কালে মানে না।
(শিশু বুঝতে পারে না বলেই দোষ করে, কিন্তু মনুষ্যত্বহীন লোক দোষকে দোষ বলে জেনেও তা গ্রাহ্য করে না।)
অতি প্রণয় যেখানে;
নিত্য যাবে না সেখানে;
যদি যাবে নিত্য
ঘটবে একটা কীর্তি।
অতি বাড় বেড়ো নাকো ঝড়ে ভেঙে যাবে।
অতি ছোট হয়ো নাকো ছাগলে মুড়ে খাবে।
অনেক কালের ছিল পাপ,
ছেলে হল সতীনের বাপ।
অল্প দেখে দেবে ঘি,
পাত্র দেখে দেবে ঝি।
অন্ন নাই যার ঘরে,
তার মানে কিবা করে।
অন্নের জ্বালা বড় জ্বালা !
অবাক কল্লে না নাকের নথে,
কাজ কি আমার কানবালাতে।
অবোধারে মারে বোধায়,
বোধারে মারে খোদায়।
অভাগা চোর যে বাড়ি যায়।
হয় কুকুর ডাকে- নয় রাত পোহায়।
অভাগার ঘোড়া মরে।
ভাগ্যবানের স্ত্রী মরে।
অভাগিনীর দুটো পুত,
একটা কানা, একটা ভূত।
অরাধুনির হাতে পড়ে রুই মাছ কাঁদে,
না জানি রাঁধুনি মোর কেমন করে রাধে।
অলক্ষ্মীর নিদ্রা বেশি, কাঙালের ক্ষুধা বেশি।
অল্প বৃষ্টিতে কাদা হয়,
বেশি বৃষ্টিতে সাদা হয়।
অশ্বথের ছায়াই ছায়া,
মায়ের মায়াই মায়া।
আগে আপন সামাল কর,
শেষে পরকে গিয়ে ধর।
আগে না বুঝলে বাছা যৌবনের ভরে,
পশ্চাতে কাঁদিতে হবে নয়নের ঝোরে।
আগে ভাল ছিল জেলে জাল দড়া বুনে,
কী কাজ করিল জেলে এঁড়ে গরু কিনে।
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।
অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।
আন সতীনে নাড়ে চড়ে,
বোন সতীনে পুড়িয়ে মারে।
(বোন যদি সতীন হয় তা হলে যন্ত্রণার শেষ থাকে না।
)
নিম তিত, নিশিন্দে তিত, তিত মাকাল ফল,
তার চেয়ে তিত কন্যে বোন সতীনের ঘর।
আপন কোটে পাই, চিড়ে কুটে খাই।
(হাতের নাগালে পেলে শাস্তি দেওয়া সহজ।
)
আপনার চেয়ে পর ভাল,
পরের চেয়ে জঙ্গল ভাল।
আপন বুদ্ধিতে ফকির হই,
পর বুদ্ধিতে বাদশা নই।
আপন বেলা চাপন চোপন,
পরের বেলা ঝুরঝুরে মাপন।
আপনার মান আপনি রাখ,
কাটা কান চুল দিয়ে ঢাক।
আপনার হাত জগন্নাথ,
পরের হাত এঁটো পাত।
আপনার ছেলেটি খায় এতটি, বেড়ায় যেন ঠাকুরটি,
পরের ছেলেটা খায় এতটা, বেড়ায় যেন বাঁদরটি।
আপন ধন পরকে দিয়ে,
দৈবকী মরে মাথায় হাত দিয়ে।
আম শুকোলে আমসি,
বয়স গেলে কাঁদতে বসি।
আমি করি ভাই ভাই,
দাদার কিন্তু মনে নাই।
আমি কি নাচতে জানিনে,
মাজার ব্যথায় পারিনে।
আশার চেয়ে নিরাশা ভাল,
হয়ে গেল তো, হয়ে গেল।
ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে মরে,
সাপ এসে দখল করে।
বাহিরে কোচার পত্তন,
ভিতরে ছুঁচোর কেত্তন।
উই, ইঁদুর, কুজন, ডাল ভাঙে তিনজন,
সুচ, সোহাগা, সুজন, ভাল করে তিনজন।
উচিত কথায় দেবতা তুষ্ট,
উচিত কথায় মানুষ রুষ্ট।
উপোস করলে যাবে দিন,
ধার করলে হবে ঋণ।
এঁটে ধরলে চিচি করে,
ছেড়ে দিলে লম্ফ মারে।
এক কলসি জল তুলে কাকালে দিলে হাত,
এই মুখে খাবে তুমি বাগদিনীর ভাত।
এক কাটে ভারে, আর কাটে ধারে।
এক কান কাটা শহরের বার দে যায়,
দু’কান কাটা গায়ের ভিতর দে যায়।
এককাল ঠেকেছে, তিনকাল গিয়ে,
তবু আবার করবে বিয়ে।
এক গাঁয়ের কুকুর, আর গাঁয়ের ঠাকুর।
একচোখো মাসি, কারে ভালোবাসি।
এক ছেলের মা, ভয়ে কাঁপে গা।
এক টানেতে মাছ বেঁধে না, সে-ই বা কেমন বড়শি
এক ডাকেতে সাড়া দেয় না, সে-ই বা কেমন পড়শি।
এক পয়সা নাই থলিতে
লাফিয়ে বেড়ায় গলিতে।
এক পাগলে রক্ষা নেই, সাত পাগলের মেলা।
এক পুতের আশ, নদীর কুলে বাস;
ভাবনা বারো মাস।
এক লাউ-এর বিচি
কেউবা বলে কচর কচর, কেউবা বলে কচি।
এক হেঁসেলে তিন রাধুনি,
পুড়ে মরে তার ফেন গালুনি।
এ কী বিধির লীলাখেলা,
কাকের গলায় তুলসীর মালা।
একে তো হনুমান,
তায় আবার রামের বাণ।
একে গুন্ গুন্ দুয়ে পাঠ,
তিনে গোলমাল, চারে হাট।
এত যদি সুখ কপালে,
তবে কেন তোর কাঁথা বগলে?
ঔষধার্থে সুরাপান
পান না বাড়ালেই থাকে মান।
কইতে কইতে মুখ বাড়ে,
খাইতে খাইতে পেট বাড়ে।
পয়সা দিয়ে কিনব দই,
গোয়ালিনী মোর কিসের সই?
কড়ি লবে গুনে, পথ চলবে জেনে।
কতই-বা দেখব আর, ছুঁচোর গলায় চন্দ্রহার।
কুপুত্র যদ্যাপি, কু-মাতা কখনো নয়।
কৃপণের ধন বর্বরে খায়,
কৃপণ করে হায় হায়।
কোনো কালে নাইক গাই,
চালুনি নিয়ে দুইতে যাই।
ক্ষমার বড় গুণ নাই, দানের বড় পুণ্য নাই।
খাওয়াবে রাজভোগ,
দেখাবে বাঘের চোখ।
খাবার আছে চাবার নেই,
নেবার আছে দেবার নেই।
খাবার বেলায় মস্ত,
উলু দেবার বেলায় মুখে ঘা।
খায়দায় পাখিটি, বনের দিকে আঁখিটি।
খায় না খায় সকালে নায়
হয় না হয় দুবার যায়
তার কড়ি কি বৈদ্যে খায়?
খেতে পায় না পচা পুঁটি
হাতে পরে হীরের আংটি।
খোঁয়াড়ে পড়লে হাতি
চামচিকেতেও মারে লাথি।
গঙ্গার জল গঙ্গায় বইল,
পিতৃ পুরুষ উদ্ধার হল।
গব্য থাকলে আগে পাছে,
কী করবে তার শাকে মাছে।
গরু, জরু (স্ত্রী), ধান রাখ বিদ্যমান।
গাইতে গাইতে গায়েন, বাজাতে বাজাতে বায়েন।
গাঙ্গে গাঙ্গে দেখা হয়, বোনে বোনে দেখা নয়।
গাছ থেকে পড়ে গেল জন পাঁচ-সাত,
যার যেখানে ব্যথা তার সেখানে হাত।
গাছে ওঠে পড়তে, জামিন হয় মরতে।
গাজনের নেই ঠিক-ঠিকানা,
ডেকে বলে ঢাক বাজানা।
গাধা সকল বইতে পারে,
ভাতের কাঠি বইতে নারে।
গিন্নির ওপর গিন্নিপনা
ভাঙা পিড়েয় আলপনা।
গুটিপোকা গুট করে, নিজের ফাঁদে নিজে পড়ে।
গৃহ স্থির আগে করে,
গৃহিণী স্থির তার পরে।
গোঁফ নেইকো কোনো কালে,
দাড়ি রেখেছেন তোবড়া গালে।
ঘটির তলায় দিয়ে আঠা,
যোগেযাগে কাল কাটা।
ঘন দুধের ফোঁটা, বড় মাছের কাঁটা।
মাছের মা; আর শাকের ছা।
ঘরজামায়ের পোড়া মুখ
মরা-বাঁচা সমান সুখ।
ঘরদোর নেই যার, আগুনে কী ভয় তার?
ঘরে নেই ভাত, কেঁচা তিন হাত।
ঘরে থাকতে নানা বিধি,
খেতে দেয় না দারুণ নিধি।
গরে নেই ঘটিবাটি, কোমরে মেলাই চাবিকাঠি।
ঘরে বসিয়ে মাইনে দেয়
এমন মনিব কোথায় পায়।
ঘরে বাইরে এক মন, তবে হয় কৃষ্ণ ভজন।
ঘি দিয়ে ভাজ নিমের পাতা,
তবু যায় না জাতের তিতা।
ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে; তোমার একদিন আছে শেষে।
চক্ষে দেখলে শুনতে চায়,
এমন বোকা আছে কোথায়?
চন্দ্র-সূর্য অস্ত গেল, জোনাকি ধরে বাতি।
মুঘল পাঠান হদ্দ হল ফারসি পড়ে তাঁতি।
চুরি বিদ্যে বড় বিদ্যে, যদি না পড়ে ধরা,
যদি পড়ে ধরা, তবে হাতে-পায়ে কড়া।
চোর ছ্যাঁচড় চোপায় দড়,
আগে দৌড়ায় ঠাকুর ঘর।
চোর-ডাকাতের ভয়, পেটে পুরলে রয়।
ছাগলে বলে আলুনি খেলাম
গেরস্ত বলে পরানে মলাম।
ছিঁড়ে ছিঁড়ে কাটুনি, পুড়ে পুড়ে রাঁধুনি।
ছুঁচোয় যদি আতর মাখে,
তবু কি তার গন্ধ ঢাকে?
ছুঁচোর গোলাম চামচিকে,
তার মাইনে চৌদ্দ সিকে।
ছোট কাঁটাটি ফুটে পায়,
তুলে ফেল নইলে দায়।
ছোট শরাটি ভেঙে গেছে, বড় শরাটি আছে,
নাচ কোদ কেন বউ আমার হাতের আন্দাজ আছে।
জম, জামাই, ভাগনা–তিন নয় আপনা।
জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে– তিন বিধাতা নিয়ে।
জপ তপ কর কি, মরতে জানলে ডর কী?
জল জল বৃষ্টির জল, বল বল বাহুর বল।
জলের শক্র পানা, আর মানুষের শত্রু কামনা।
জামায়ের জন্য মারে হংস,
গুষ্টিসুদ্ধ খায় মাংস।
জিব পুড়ল আপন দোষে
কী করবে মোর হরিহর দাসে।
জোছনাতে ফটিক ফোটে,
চোরের মায়ের বুক ফাটে।
জ্বালা দিতে নেই ঠাঁই,
জ্বালা দেয় সতীনের ভাই।
ঝাঁটা দিয়ে বিষ (ভূত) ঝাড়ানো;
ঝিকে মেরে বউকে শেখানো।
ঝি জব্দ কিলে, বউ জব্দ শিলে,
পাড়া-পড়শি জব্দ হয় চোখে আঙুল দিলে।
ঝোলে ঝালে অম্বলে
বেগুন সব ঠাঁই চলে।
টকের জ্বালায় দেশ ছাড়লাম,
তেঁতুল তলায় বাসা বাঁধলাম।
টাকা তুমি যাচ্ছ কোথা? পিরিতি যথা,
আসিবে কবে? বিচ্ছেদ যবে।
ঠাকুরকে দেখিয়ে কলা,
নৈবিদ্যি নে’ ছুটে পালা।
ঠেটা লোকের মুখে আট,
বাইরে থেকে কাটে গাঁট।
ডাকলে ডাক, বসলে ক্রোশ,
পথ বলে মোর কিসের দোষ?
ডুব দিয়ে খাই পানি,
আল্লাহ জানে আর আমি জানি।
ঢেঁকিশালে যদি মানিক পাই
তবে কেন পর্বতে যাই।
তাঁতি রাগে কাপড় ছেড়ে
আপনার ক্ষতি আপনি করে।
তাল, তেঁতুল, মাদার,
তিনে দেখায় আঁধার।
তাল বাড়ে ঝোপে,
আর খেজুর বাড়ে কোপে।
তিন মাথা যার, বুদ্ধি নেবে তার।
তুফানে যে হাল ধরে না, সেই বা কেমন নেয়ে,
কথা পাড়লে বুঝতে পারে না, সে-ই কেমন মেয়ে।
মূলে নেই লক্ষ্মীপূজা একেবারে দশভুজা।
তেলা মাথায় ঢাল তেল,
রুক্ষ মাথায় ভাঙ বেল।
তোমারে বধিবে যে,
গোকুলে বাড়িছে সে।
তোর পায় গড় না,
তোর কাজের পায়ে গড়।
তোর শিল, তোর নোড়া
তোরই ভাঙ্গব দাঁতের গোড়া।
থাকরে কুকুর আমার পাশে,
ভাত দেব সেই পৌষ মাসে।
দক্ষিণদ্বারী ঘরের রাজা, পূর্ব দ্বারী তার প্রজা,
পশ্চিমদ্বারীর মুখে ছাই, উত্তরদ্বারীর খাজনা নাই।
দয়া আছে মায়া আছে গলা ধরে কাঁদি,
আধ পয়সার আটটি কলা পরান গেলে না দি।
দয়া করে দেয় নুন, ভাত মারে তিনগুণ।
দল ভাঙলে যে, কৈ খাবে সে।
দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।
দশে যারে বলে ছি, তারে বাঁচায় কাজ কী?
দশের মুখে জয়, দশের মুখে ক্ষয়।
দাড়িকে মাঝি করা, মরা গাঙ্গে ডুবে মরা।
দাওয়া মারা যতদিন, বাপ খুড়ো ততদিন।
দায়ে বালি, কুড়লে খিল,
ভাল মানুষকে ভাল কথা, বজ্জাতকে কিল।
দিন গেল আলে ডালে,
রাত হলে বৌ চেরাগ জ্বালে ।
দিনে বাতি যার ঘরে, তার ভিটায় ঘুঘু চরে।
দিল্লিকা লাডডু, যো খায়া সো পস্তায়া,
যো নেহি খায়া সো ভি পস্তায়া।
দুই সতীনের ঘরকন্না,
ঘরের গিন্নি ভাত পান না।
দুই স্ত্রী যার, বড় দুঃখ তার।
দুধ কলা দাও যত,
সাপের বিষ বাড়ে তত।
ধর্ম হয় না করলেই উপাস,
কোদাল পাড়লেই হয় না চাষ।
ধর্মের কল বাতাসে (আপনি) নড়ে
পাপ করলে ধরা পড়ে।
ধীরে রাধে ধীরে খায়, তবে খাওয়ার মজা পায়।
নখে কাটে কচি কালে, ঝুনো হলে দাঁত না চলে।
নদী, নারী, শৃঙ্গধারী–এ তিনে না বিশ্বাস করি।
না দেওয়ার চাল, আজ না কাল।
না দেখে চলে যায়, পায় পায় হোঁচট খায়।
না বুঝে ছিলাম ভালো, অর্ধেক বুঝে পরান গেল।
নামে ডাকে গুরুমশাই,
লেজা মুডোর জ্ঞান নাই।
নারীর বল, চোখের জল।
নিতে পারি, খেতে পারি, দিতে পারি নে,
বলতে পারি, কইতে পারি, সইতে পারি নে।
নিত্য চাষার ঝি,
বেগুন ক্ষেত দেখে বলে, এ আবার কী?
নীরোগ শরীর যার, বৈদ্যে করবে কী।
পরের ভাতে বেগুন পোড়া, পান্তাভাতে ঘি।
নেকা, বোকা, ঢিলে (ঢলঢল) কাছা,
তিনে প্রত্যয় না করো বাছা।
নেবার বেলা পরিপাটি, দেবার বেলা ফাটাফাটি।
লেবু কচলাবে যত, তেতো হবে তত।
নেভবার আগে ক্ষণেক তরে,
দীপ জ্বলে ধপ করে।
পড়ল কথা সভার মাঝে,
যার কথা তার গায়ে বাজে।
পড়েছি মোগলের হাতে,
খানা খেতে হবে সাথে।
পতির পায়ে থাকে মতি,
তবে তারে বলে সতী।
পরে তসর- খায় ঘি, তার আবার ভাবনা কী?
পরের কথায় লাথি চাপড়,
নিজের কথায় ভাত কাপড়।
পরের ঘরে খায় আয়,
আঠারো মাসে বছর যায়।
পরের জন্য গর্ত খোড়ে, আপনি তাতে পড়ে মরে।
পরের জন্য ফাঁদ পাতে,
আপনি পড়ে মরে তাতে।
পরের দুধে দিয়ে ফুঁ, পুড়িয়ে এলেন আপন মু’।
পরের দেখে তোলে হাই, যা আছে তাও নাই।
পরের ধনে পোদ্দারি, লোকে বলে লক্ষ্মীশ্বরী।
পরের পিঠে, বড় মিঠে।
পরের মাথায় দিয়ে হাত, কিরা করে নির্ঘাত।
পরের লেজে পড়লে পা তুলোপানা ঠেকে,
নিজের লেজে পড়লে পা কেঁক করে ডাকে।
পরের সোনা দিও না কানে,
কেড়ে নেবে হ্যাঁচকা টানে।
পরের হাতে ধন, পেতে কতক্ষণ।
পথ পাগলের ঘর,
খোদায় রক্ষা কর।
পাগল কি গাছে ফলে,
আক্কেলেতে পাগল বলে।
মার আর ধর আমি পিঠে বেঁধেছি কুলো।
বকো আর ঝকো, আমি কানে দিয়েছি তুলো।
পিসি বল, মাসি বল, মার বড় নাই,
পিঠে বল, মিঠে বল, ভাতের বড় নাই।
পুঁটি মাছের প্রাণ, দেখতে দেখতে যান।
পুতুল যেমন পুতুল কাঁচে,
যেমন নাচায় তেমনি নাচে।
পুরান বসন ভাতি, অবলাজনের জাতি।
পুরুষের দশ দশা, কখনো হাতি কখনো মশা।
পূর্বে হাঁস, পশ্চিমে বাঁশ,
উত্তরে কলা, দক্ষিণে মেলা।
পেট জ্বলে ভাতের তরে,
সোনার আংটি হাতে পরে।
পোড়া কপালে সুখ নাই,
বিয়ে বাড়িতে ভাত নাই।
ফকিরে ফকিরে ভাই ভাই,
ফকিরের রাজত্ব সব ঠাঁই।
ফাল্গুনে আগুন, চৈতে মাটি,
বাঁশ রেখে বাঁশের ঠাকুরদাকে কাটি।
ফুটনির মামা, ভিতরে কপিল উপরে জামা।
ফুরাল বাগানের আম, কী খাবিরে হনুমান।
বউ-এর রাগ বিড়ালের উপর,
বিড়ালের রাগ বেড়ার উপর।
বউ ভাঙলে সরা, গেল পাড়া পাড়া,
গিন্নি ভাঙলে নাদা, ও কিছু নয় দাদা।
ফেন দিয়ে ভাত খায়; গল্পে মারে দই,
মেটে হুঁকোয় তামাক খায় গুড়গুড়িটা কই?
বড়র পিরিতি বালির বাঁধ,
ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণেকে চাঁদ।
বন পোড়ে সবাই দেখে, মন পোড়ে কেউ না দেখে।
বল বুদ্ধি ভরসা, তিন তিরিশে ফরসা।
বসতে জায়গা পেলে, শোবার জায়গা মেলে।
করে খেলে ফুরোয় না,
বসে খেলে রাজার ভান্ডারও কুলোয় না ।
বাইরে হাসিখুশি ভেতরে গরল বাঁশি।
বাঘ ভালুকের রাজ্যে থাকি,
মনের কথা মনেই রাখি।
বাঘে মহিষে যুদ্ধ হয়, নল খাগড়ার প্রাণ যায়।
বাছার আমার এত বাড়,
ছ’ আনার কাপড়ে ন’ আনার পাড়।
বড় গাছের তলায় বাস,
ডাল ভাঙলেই সর্বনাশ।
বাড়িতে পায় না শাক সজিনা,
ডাক দিয়ে বলে ঘি আন না।
বাপকা বেটা সেপাইকা ঘোড়া,
কুচ নেহি তো থোড়া থোড়া।
বাপের জন্মে নেই কো চাষ,
ধানকে বলে দূর্বাঘাস।
বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান,
এইবার ঘুঘু তোমার বধিব পরান।
বারো রাজপুত্রের তেরো হাঁড়ি,
কেউ খায় না কারো বাড়ি।
বিধি যদি বিপরীত, কেবা করে কার হিত।
বিধির লিখন, না যায় খণ্ডন।
বিপদে শিবের গোঁড়া, সম্পদে শিবত নোড়া।
বিয়ে ফুরোলে বাজনা, কিস্তি ফুরোলে খাজনা।
বুঝতে নারি সেকরার ঠার, বলে এক করে আর।
বুদ্ধিগুণে হা-ভাত, বুদ্ধিগুণে খা ভাত।
বুনলাম ধান হল তিল,
ফলল রুদ্রাক্ষ খেলাম কিল।
বেদে কি জানে কর্পূরের গুণ,
শুঁকে শুঁকে বলে সৈন্ধব নুন।
বেহায়ার নাহি লাজ, নাহি অপমান,
সুজনকে এক কথা মরণ সমান।
বৈষ্ণব হইতে মোর ছিল বড় সাধ,
তৃণাদপি শ্লোকেতে পড়ে গেল বাদ।
ভক্তিহীন ভজন, আর লবণহীন ব্যঞ্জন।
ভগবানের মার দুনিয়ার বার।
ভাঁড়ে নেই ঘি, ঠকঠকালে হবে কী?
ভাগাড়ে মড়া পড়ে, শকুনের টনক নড়ে।
ভাগের ভাগ পেলে, না খেয়েও চিবিয়ে ফেলে।
ভাগ্যবানের দুটি পুত,
একটি বাঁদর, একটি ভূত।
ভাঙা ঘরে জোছনার আলো,
যেদিন যায় সেদিন ভালো।
ভাত পায় না কুঁড়ের নাগর,
আমানি খেয়ে পেটটা ডাগর।
ভাত রোচে না রোচে মোয়া
মণ্ডা রোচে পোয়া পোয়া।
ভাবে ডগমগ তেলাকুচো,
হেসে মল কালো ছুঁচো।
ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ গেল শল্য হল রথী,
চন্দ্র, সূর্য, অস্ত গেল জোনাকির পাছায় বাতি।
মন চায় বাদশা হতে, খোদা দেয় না মেগে খেতে।
মনটি শখের বটে, হাতে কিন্তু পয়সা নাই।
জোনাকি পোকার আলো দেখে গ্যাসবাতির শখ মিটাই।
মরা মালঞ্চে ফুটল ফুল,
টেকো মাথায় উঠল চুল।
মা পায় না কাঁথা সেলাই করবার সুতা,
ব্যাটার পায়ে দ্যাখো চৌদ্দ সিকের জুতা।
মায়ের গলায় দিয়ে দড়ি,
বউকে পরাই ঢাকাই শাড়ি।
মায়ের পোড়ে না, মাসির পোড়ে,
পাড়া-পড়শির ধবলা ওড়ে।
মূর্খ লোকে কেনে বই- জ্ঞানবানে পড়ে,
ধনবানে কেনে ঘোড়া, বুদ্ধিমানে চড়ে।
মেগে এনে বিলিয়ে খায়, হাতে হাতে স্বর্গ পায়।
যখন যার কপাল খোলে,
শুকনো ডাঙায় ডিঙি চলে।
সকল পথ দৌড়াদৌড়ি, খেয়া ঘাটে গড়াগড়ি।
যদি থাকে আগে পিছে, কী করে শাকে মাছে।
যদি হয় সুজন, তেঁতুল পাতায় ন’জন।
যদু ধোপা, মধু ধোপা, সব ধোপারই এক চোপা।
যার দৌলতে চুয়া চন্দন,
তারি পাতে খোলার ব্যঞ্জন।
যার নুন খাই তার গুণ গাই।
যারে না বামুন বলি, তার গায় নামাবলী।
যেখানে আঁটাআঁটি
সেখানেই লাঠালাঠি।
যেমন সরা তেমনি হাঁড়ি, গড়ে রেখেছে কুমার বাড়ি।
রাজার রাজ্যপাট, গরিবের শাকভাত।
লাউ শাকের বালি আর অন্তরের কালি।
লাভ-লোকসান জেনে,
চাষ করে না বেনে।
লিখিব পড়িব মরিব দুঃখে,
মৎস্য মারিব খাইব সুখে।
সজনে শাক বলে আমি সকল শাকের হেলা,
আমার খোঁজ করে কেবল টানাটানির বেলা।
শঠের মায়া, তালের ছায়া।
শসা বেচুনি বেচে শসা, তার হয়েছে সুখের দশা।
শাক অম্বল পান্তা–তিন ওষুধের হন্তা।
শুয়ে শুয়ে লেজ নাড়ে, সেই বাঘে মানুষ মারে।
সখা যার সুদর্শন, তার সঙ্গে কি সাজে রণ?
সঙ্গ দোষে কী না হয়,
ছুঁচো ছুঁলে গন্ধ হয়।
সতী হল কবে?
সে মরেছে যবে।
সব কাজে যার হুঁশ, তারেই কয় মানুষ।
সন্নাসীর অল্প ছিদ্র গায় সর্বজন,
শুভ্রবস্ত্রে মসীবিন্দু দেখায় যেমন।
সময়ে সব হয়, বোন ভাগনা ভাই,
ঘরের স্ত্রী আপন নয়, যখন গাঁটে পয়সা নাই।
সাত ভাই তাঁত বোনে, আপন কোলে সবাই টানে।
সাত সতীনে নড়ি চড়ি, বেরা আগুনে পুড়ে মরি।
সারাদিন থাকব নায়, কখন দিব খরম পায়?
সারাদিন বড়শি হাতে, সন্ধেবেলা আমড়া ভাতে।
সারাদিন যায় হেসে খেলে,
সন্ধেবেলা বৌ কপাল ডলে।
সুজন-পিরিত সোনা, ভেঙে গড়া যায়।
কুজন-পিরিত কাঁচ, ভাঙিলে ফুরায়।
সুদিনে বারো ভাই, দুর্দিনে কেউ নাই।
সেই মন খসালি, তবে কেন লোক হাসালি।
স্বামী নাই, পুত্র নাই, কপাল ভরা সিঁদুর
চাল নাই, ধান নাই, গোলা ভরা ইঁদুর।
স্বামীর মা শাশুড়ি, তারে বড় মানি
কোথা হতে এলেন আমার খুড় শাশ ঠাকুরানি।
হাতি চড়ে ভিক্ষা মাঙ্গি,
ইচ্ছেয় না দাও ঘর ভাঙ্গি।
হাতে কড়ি পায় বল, তবে যাই নীলাচল।
হাল যদি ধরে ঠেসে, যায় কি তরী তুফানে ভেসে?
হেলায় কার্য নষ্ট, বুদ্ধি নষ্ট নির্ধনে।
হরি বাঁচান প্রাণ, বৈদ্যের বাড়ে মান।