শ্রীমৎ আচার্য বিবেকানন্দ গোস্বামী
এম.এ.(ট্রিপল), সপ্ততীর্থ, বি.সি.এস (শিক্ষা) প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক (দর্শন) বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ । প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ সেবাশ্রম। -এর স্বহস্তে লিখিত গ্রন্থ
মৃত্যু হতে অমৃতলোকে
For Ad Contact
0183 45 45 989
মৃত্যু
বক্ষ ভাসাচ্ছে আর নিজের করে শিরে চপেটাঘাত করে অদৃষ্টকে ধিক্কার দিতেছে; কখনও বা বিধির বিধানের নিন্দা করছে।
আহ! ওদের আশা ভরসার আকাঙ্ক্ষা যুবকের যৌবনান্ত না হতে জীবনান্ত হয়েছে। যে মৃত্যু শিশুদিগের মুখের দিকে না চেয়ে ওদের অন্নদাতা জন্মদাতাকে গ্রহণ করেছে
উপযুক্ত আহার অভাবে শিশুগণ শীঘ্র হয়তো সেই মৃত্যুর অধীন হবে; এরূপ প্রত্যহ দিনরাত কত কত মর্মান্তিক ঘটনা দৃষ্টিপথে পতিত হতেছে কিন্তু নির্দ্দয় মৃত্যুর হৃদয়ে দয়ার সঞ্চার হয় না। মৃত্যু শোক,
তাপ, সময় অসময় কিছুই গ্রাহ্য করে না, কোন বাধা বিঘ্ন মানে না।
কখন কোন ভাবে এসে গ্রাস করবে তার নিশ্চয়তা নাই; কিন্তু একদিন সকলকেই যে মৃত্যুর অধীন হতে হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। প্রকৃতপক্ষে জগতে এমন কিছুই নাই ও মানুষের এমন কোন সাধ্য নাই যা
দ্বারা ভীষণ বিভীষিকাময় মৃত্যুর গতিরোধ করা যায়। অতএব যখন একদিন মরতেই হবে তখন কতোদিন পরে জীবনসঙ্গিনী সহধর্ম্মিনী ও প্রানাধিক পুত্র-কন্যা ছেলে ধনজনপূর্ণ সুখের সংসার ফেলে শমন
ভবনে যেতে হবে, তা কার না জানতে ইচ্ছা হয়?
এক বৎসর কি ছয় মাস পরে মৃত্যু হবে তা জানতে পারলে সাংসারিক ও বৈষয়িক কার্য্যের বিশেষ সুবিধা হয় এবং নাবালক পুত্র কন্যাদের ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষনের একটা সুবন্দোবস্ত করা যায়। আর
কতদিন পরে সুখের সংসারের সমস্ত ছেড়ে যেতে হবে জানতে পারলে ঐহ্যিক সকল কার্য্যের সুবিধা হোক না হোক কিন্তু আর একটি কার্য্যের বিশেষ সুবিধা হয়, সেই কার্য্য এই-
  পারলৌকিক  
নানাবিধ ভোগবিলাস বিজড়িত অনন্ত সুখ দুঃখ পূর্ণ সংসারে লোক সকল ইহলোকে কেহ আনন্দে ভাসছে, কেহ দুঃখে ডুবছে, কেহ নানা সুখ ভোগ করছে, কেহ দুঃখ দুর্দ্দশায় কষ্ট পাচ্ছে, কেহ হয়তো ধনীর
গৃহে জন্মগ্রহণ করে আজীবন আমোদ-প্রমোদে, সুখ স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাচ্ছে। কেহ হয়তো বৃক্ষলতাবাসী হয়ে দ্বারে দ্বারে ভ্রমণ করে ভিক্ষা দ্বারা উদর পূরণ করছে। কারো হয়তো দুধে চিনি, আবার কারো
হয়তো শাকের উপর নুন জোটে না। এরূপ নানা বৈষম্য নিত্য চক্ষে প্রত্যক্ষ হচ্ছে। এ বৈষম্যের কারণ কি? সুখে-সম্পদে, রোগে-শোকে সকলেই ভাগ্য বা অদৃষ্টের দোহাই দিতেছে। আবার কেহ বা পরম
দয়াবান ভগবানের অবিচার বলে সমস্ত দোষ ভগবানের স্কন্ধে চাপাচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবিক কি ভগবানের দোষ? ভগবান কি কাউকে সুখী কাউকে দুঃখী করেছে? কখনই নহে; অনন্ত করুণানিদান ন্যায়বান পক্ষপাত পরিশূন্য। তিনি রাজা প্রজা ধনী গরীব সুখী পণ্ডিত মূর্খ
সকলকেই সমান চক্ষে দেখে সমান স্নেহ বিতরণ করে থাকেন।
জয় রাধে শ্যাম