কর্তব্য সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
শ্লোক: 1
কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন ।
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি ॥
(গীতা ২/৪৭)
অনুবাদঃ- স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নেই। কখনও নিজেকে কর্মফলের হেতু মনে করো না, এবং কখনও স্বধর্ম আচরণ না করার প্রতিও আসক্ত হয়ো না।
শ্লোক: 2
ন হি কশ্চিৎ ক্ষণমপি জাতু তিষ্টত্যকর্মকৃৎ ।
কার্যতে হ্যবশঃ কর্ম সর্বঃ প্রকৃতিজৈর্গুণৈঃ ॥
(গীতা ৩/৫)
অনুবাদঃ- সকলেই মায়াজাত গুণসমূহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অসহায়ভাবে কর্ম করতে বাধ্য হয়; তাই কর্ম না করে কেউই ক্ষণকালও থাকতে পারে না।
শ্লোক: 3
নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ ।
শরীরযাত্রাপি চ তে ন প্রসিদ্ধ্যেদকর্মণ ॥
(গীতা ৩/৮)
অনুবাদঃ- তুমি শাস্ত্রক্তো কর্মের অনুষ্ঠান কর, কেন না কর্মত্যাগ থেকে কর্মের অনুষ্ঠান শ্রেয়। কর্ম না করে কেউ দেহযাত্রাও নির্বাহ করতে পারে না।
শ্লোক: 4
যজ্ঞার্থাৎ কর্মণোহন্যত্র লোকোহয়ং কর্মবন্ধনঃ ।
তদর্থং কর্ম কৌন্তেয় মুক্তসঙ্গঃ সমাচর ॥
(গীতা ৩/৯)
অনুবাদঃ- বিষ্ণুর প্রীতি সম্পাদন করার জন্য কর্ম করা উচিত; তা না হলে কর্মই এই জড় জগতে বন্ধনের কারণ। তাই, হে কৌন্তেয় ! ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই কেবল তুমি তোমার কর্তব্যকর্ম অনুষ্ঠান কর এবং এভাবেই তুমি সর্বদাই বন্ধন থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।
শ্লোক: 5
অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ ।
ন তু মামভিজানন্তি তত্ত্বেনাতশ্চ্যবন্তি তে ॥
(গীতা ৯/২৪)
অনুবাদঃ- আমিই সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভু। কিন্তু যারা আমার চিন্ময় স্বরূপ জানে না, তারা আবার সংসার সমুদ্রে অধঃপতিত হয়।
শ্লোক: 6
যজ্ঞশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ ।
ভুঞ্জতে তে ত্বঘং পাপা যে পচন্ত্যাত্মকারণাৎ ॥
(গীতা ৩/১৩)
অনুবাদঃ- ভগবাদ্ভক্তেরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারণ তাঁরা যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নাদি গ্রহন করেন। যারা কেবল স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির জন্য অন্নাদি পাক করে, তারা কেবল পাপই ভোজন করে।
শ্লোক: 7
নাচতে উঠে ঘোমটা টানা
(বাংলা প্রবাদ)
অনুবাদঃ- নাচার উদ্দেশ্যে মঞ্চে উঠে কোন মেয়ে যদি আত্মীয়স্বজনদের দেখে লজ্জায় ঘোমটা টানে, তা হাস্যকর।
শ্লোক: 8
ন হি সুপ্তস্য সিংহস্য প্রবিশন্তি মুখে মৃগাঃ ।
(হিতোপদেশ)
অনুবাদঃ- প্রত্যেকেকেই কাজ করতে হবে। এমন কি একটি সিংহও যদি এই প্রত্যাশা নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে যে, তার মুখে হরিণ বা কোন পশু আপনা থেকেই প্রবেশ করবে, তা হলে তার খাদ্য জুটবে না।
শ্লোক: 9
অন্নাদ্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাদন্নসম্ভবঃ ।
যজ্ঞাদ্ ভবতি পর্জন্যো যজ্ঞঃ কর্মসমুদ্ভবঃ ॥
(গীতা ৩/১৪)
অনুবাদঃ- অন্ন খেয়ে প্রাণীগণ জীবন ধারণ করে৷ বৃষ্টি হওয়ার ফলে অন্ন উৎপন্ন হয় ৷ যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে বৃষ্টি উৎপন্ন হয় এবং শাস্ত্রোক্ত কর্ম থেকে যজ্ঞ উৎপন্ন হয়।
শ্লোক: 10
বিখ্যাত মনিষীদের সুনির্বাচিত বাণী
"সুখলাভের প্রকৃত পন্থা হইল অপরকে সুখী করা৷ দুনিয়াকে যেমন পাইয়াছ তাহার চেয়ে একটু শ্রেয়স্কর রাখিয়া যাইতে চেষ্টা করো, যেন তোমার মৃত্যুর পালা যখন আসিবে তখন সানন্দে মৃত্যুবরণ করিতে পার, এই অনুভূতি লইয়া যে তুমি অন্তত তোমার জীবন নষ্ট কর নাই; বরং সাধ্যমতো উহার সদ্ব্যবহার করিয়াছ৷ এভাবে সুখে বাঁচিতে ও সুখে মরিতে প্রস্তুত থাকো৷ সর্বদা তোমার 'স্কাউট প্রতিশ্রুতি' আঁকড়াইয়া থাকো-বাল্যকাল চলিয়া গেলেও সৃষ্টিকর্তা তোমার এই কার্যে সহায় হউন । "
লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল
শ্লোক: 11
যজ্ঞদানতপঃকর্ম ন ত্যাজং কার্যমেব তৎ ।
যজ্ঞো দানং তপশ্চৈব পাবনানি মনীষিণাম্ ॥
(গীতা ১৮/৫)
অনুবাদঃ- যজ্ঞ, দান ও তপস্যা ত্যাজ্য নয়, তা অবশ্যই করা কর্তব্য ৷ যজ্ঞ, দান ও তপস্যা মনীষীদের পর্যন্ত পবিত্র করে।
শ্লোক: 12
ক্বচিন্নিবর্ততেহভদ্রাৎ ক্বচিচ্চরতি তৎ পুনঃ ।
প্রায়শ্চিত্তমথোহপার্থং মন্যে কুঞ্জরশৌচবৎ ।।
(ভাগবত ৬/১/১০)
অনুবাদঃ- পাপকর্ম না করার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ব্যক্তিও কখনও কখনও পুনরায় পাপকর্মে লিপ্ত হয়, তাই আমি এই প্রায়শ্চিত্তের পন্থাকে হস্তীস্নানের মতো নিরর্থক বলে মনে করি। কারণ হস্তী স্নান করার পর ডাঙ্গায় উঠে এসেই তার মাথায় ও গায়ে ধূলি নিক্ষেপ করে।
শ্লোক: 13
কর্মণা কর্মনির্হারো ন হ্যাত্যন্তিকঃ ইষ্যতে ।
অবিদ্বদধিকারিত্বাৎ প্রায়শ্চিত্তং বিমর্শনম্ ।।
(ভাগবত ৬/১/১১)
অনুবাদঃ- (বেদব্যাস-নন্দন শ্রীল শুকদেব গোস্বামী উত্তর দিলেন—) হে রাজন! যেহেতু পাপকর্মের ফল নিষ্ক্রিয় করার এই পন্থাটিও সকাম কর্ম, তাই তার দ্বারা কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। যারা প্রায়শ্চিত্তের বিধি অনুসরণ করে, তারা মোটেই বুদ্ধিমান নয়। প্রকৃতপক্ষে, তারা তমোগুণের দ্বারা আচ্ছন্ন। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ তমোগুণের প্রভাব থেকে মুক্ত না হয়, ততক্ষণ একটি কর্মের দ্বারা অন্য কর্মের প্রতিকারের চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়, কেন না তার ফলে কর্মবাসনা সমূলে উৎপাটিত হয় না। আপাতদৃষ্টিতে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের পুণ্যবান বলে মনে হলেও তারা পুনরায় পাপকর্মে লিপ্ত হবে, সেই সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই। তাই প্রকৃত প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে বেদান্তের পূর্ণজ্ঞান লাভ করা, যার দ্বারা পরম সত্য পরমেশ্বর ভগবানকে হৃদয়ঙ্গম করা যায়।
শ্লোক: 14
যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ
(অজ্ঞাত উৎস) অনুবাদঃ- ভগবান শ্রীবিষ্ণু আর যজ্ঞ হচ্ছে অভিন্ন ।
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন=
গুরু / শিষ্য সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।