শ্রীমৎ আচার্য বিবেকানন্দ গোস্বামী
এম.এ.(ট্রিপল), সপ্ততীর্থ, বি.সি.এস (শিক্ষা) প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক (দর্শন) বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ । প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ সেবাশ্রম। -এর স্বহস্তে লিখিত গ্রন্থ
মৃত্যু হতে অমৃতলোকে
For Ad Contact
0183 45 45 989
তপস্যা
দান যেমন অবশ্য কর্তব্য, তপস্যাও তেমন অবশ্য করতে হবে। যার দান করার শক্তি আদৌ নাই, অর্থাৎ দীন দরিদ্র নিতান্ত গরীব, এরূপ ব্যক্তি তপস্যা করলে,
দান ধর্ম্ম ব্যতীত সম্পূর্ণ ফললাভ করবেন। যার যেমন অবস্থা এবং অবস্থানুরূপ যে পরিমাণ দান করার শক্তি আছে তাঁর যথাসাধ্য অন্নবস্ত্র, অর্থাদি দানযোগ্য
বস্তু দান এবং শাস্ত্রসম্মত তপস্যা করবেন। মোট কথা দান ও তপস্যা দুই-ই আবশ্যক।
এখন বক্তব্য এই যে তপস্যা বলে কাকে? অনেকেই হয়তো তপস্যার নাম শুনে শিহরিয়া উঠবেন আর বলবেন সত্যযুগে বায়ু ভক্ষন করে অনাহারে থেকে
তপস্যা করত এখন (কলিযুগ) তা কি হয়? এ কথা প্রায় লোকমুখে শুনতে পাওয়া যায়, তপস্যার নাম শুনলে লোক যেমন ভয় পায় বাস্তবিক তপস্যা ততটা
ভয়ানক জিনিস নয়। যারা অর্থকে সার করে অর্থ পাওয়ার আশায় কত প্রকার মন্দ কার্য্য করছেন তাদের নিকট তপস্যা ভয়ানক অরুচিকর ও অতৃপ্তিজনক;
কিন্তু তপস্যা দ্বারা অর্থ ও সুখাদি সমস্ত লাভ করা যায় তা আদৌ বুঝেন না।
বর্তমানে কালের সংঘর্ষনে বিজাতীয় শিক্ষার প্রচলনে আজকাল অনেকেই শাস্ত্রবাক্য অবহেলা করে নিজেরা মত অনুসারে তপস্যা বা সাধন করতে প্রয়াসী।
এখন নব্যবাবুর দল নিজের ধর্ম কর্ম জানে না জাতীয় রীতি নীতি মানে না, নিজেরা শাস্ত্রপাঠ করেন না, সমাজের কোন সমাচার রাখেন না এবং জাতীয়
চালচলন ছেড়ে পরের ভাবে বিভোর হয়েছেন এজন্য বর্তমান সময়ে নানারূপ নিজের মত প্রবর্তক আসুরীক প্রকৃতির অনেক লোক দেখা যায় কিন্তু নিজের
কল্পিত অশাস্ত্রীয় তপস্যা বা সাধনাকারীগণকে স্বয়ং ভগবান কি বলেছেন, তাহা হিন্দুমাত্রেই সর্বদা স্মরণ রাখা কর্তব্য ভগবান বলেছেন-
অশাস্ত্রবিহিতং ঘোরং তপ্যন্তে যে.....................নিশ্চয়ান। (গীতা-১৭/অঃ)
ভগবান শাস্ত্রানুসরন করতে বারং বার উপদেশ দিয়েছেন। অশাস্ত্রীয় তপস্যা বা সাধন করতে ভগবানের নিষেধ। আজকাল নব্যবাবুদের মনগড়া ও খামখেয়ালী
উপাসনা কিছুই নহে। জাতীয় ধর্মানুসারে উপাসনা বা তপস্যা করা সকলের কর্তব্য।
আমাদের বেদ, স্মৃতি, তন্ত্র, পুরান সমুদয় শাস্ত্রই তপস্যার মহিমার বিষয় বলেছেন। মহামতি মনু বলেছেন- দেব এবং মানবের যে সমস্ত সুখশান্তি লাভ হয়,
সকলের মূল তপস্যা। স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতাল যে কোন স্থানে অবস্থিতি বল, নীরোগ হওয়া বল, যে কোন বিদ্যা বল- তপস্যা বলে সকলই সাধিত হয়। পাপ, মহাপাপ,
উপপাপাদি যত গুরুতর হোক না কেন সুতপ্ত তপস্যা কর্তৃক সকল নষ্ট হয়ে যায়। সংসারে যা কিছু দুষ্কর, দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ হোক না তপস্যা বলে সাধিত না হয়,
এমন কিছুই নাই। দেবতা ও মানব প্রভৃতি জীব জন্তুগণের সমুদয় দৃষ্টাদৃষ্ট তপোবলে সাধিত হতেছে দেখে দেবতারা জগৎকে তপোমূল বলেছেন।
(১৮)
জয় রাধে শ্যাম