ভক্তিমূলক সেবা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
শ্লোক: 1
যথা তরোর্মূলনিষেচনেন
তৃপ্যন্তি তৎস্কন্ধভুজোপশাখাঃ ।
প্রাণোপহারাচ্চ যথেন্দ্রিয়াণাং
তথৈব সর্বার্হণমচ্যুতেজ্যা ।।
(ভাগবত ৪/৩১/১৪) অনুবাদঃ- গাছের মূলে জল সেচন করলে যেমন সেই গাছের কাণ্ড, ডাল, উপশাখা প্রভৃতি সকলেই তৃপ্তিলাভ করে এবং উদরে আহার্যদ্রব্য প্রদানের দ্বারা যেমন ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি হয়, তেমনই শ্রীকৃষ্ণের পূজা করলে সমস্ত দেবতাদের পূজা হয়ে যায়।।
শ্লোক: 2
মা চ যোহব্যভিচারেণ ভক্তিযোগেন সেবতে।
স গুণান্ সমতীত্যৈতান্ ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ॥
(গীতা ১৪/২৬) অনুবাদঃ- যিনি ঐকান্তিক ভক্তিযোগ সহকারে আমার সেবা করেন, তিনি প্রকৃতির সমস্ত গুণকে অতিক্রম করে ব্রহ্মভূত স্তরে উন্নীত হন।
শ্লোক: 3
দেবর্ষিভূতাপ্তনৃণাং পিতৃণাং
ন কিঙ্করো নায়মৃণী চ রাজন্ ।
সর্বাত্মনা যঃ শরণং শরণ্যং
গতো মুকুন্দং পরিহৃত্য কর্তম্ ।।
(ভাগবত ১১/৫/৪১) অনুবাদঃ- যিনি সমস্ত জাগতিক কর্তব্য পরিত্যাগ করে, সকলের আশ্রয় পরমেশ্বর ভগবানের শরণাগত হন, তখন আর তিনি দেবতাদের কাছে এবং পিতৃপুরুষদের কাছে ঋণী থাকেন না।
শ্লোক: 4
তদা রজস্তমোভাবাঃ কামলোভাদয়শ্চ যে ।
চেত এতৈরনাবিদ্ধং স্থিতং সত্ত্বে প্রসীদতি ।।
(ভাগবত ১/২/১৯) অনুবাদঃ- যখন হৃদয়ে নৈষ্ঠিকী ভক্তির উদয় হয়, তখন রজ ও তমোগুণের প্রভাবজাত কাম, ক্রোধ, লোভ আদি রিপুসমূহ হৃদয় থেকে বিদূরিত হয়ে যায়। তখন ভক্ত সত্ত্বগুণে অধিষ্ঠিত হয়ে সম্পূর্ণরূপে প্রসন্ন হন।
শ্লোক: 5
এবং প্রসন্নমনসো ভগবদ্ভক্তিযোগতঃ ।
ভগবত্তত্ত্ববিজ্ঞানং মুক্তসঙ্গস্য জায়তে ।।
(ভাগবত ১/২/২০) অনুবাদঃ- এভাবেই শুদ্ধ সত্ত্বে অধিষ্ঠিত হয়ে ভক্তিযোগে যুক্ত হওয়ার ফলে যাঁর চিত্ত প্রসন্ন হয়েছে, তিনি সব রকম জড় বন্ধন মুক্ত হয়ে ভগবৎ-তত্ত্ব বিজ্ঞান উপলব্ধি করেন।
শ্লোক: 6
মুক্তিং দদাতি কর্হিচিৎ স্ম ন ভক্তিযোগম্
(ভাগবত ৫/৬/১৮) অনুবাদঃ- যারা ভগবানের কৃপা অভিলাষী, ভগবান অতি সহজেই তাদেরকে মুক্তি দান করেন, কিন্তু তাঁর প্রতি ভক্তিমূলক সেবা সম্পাদনের সুযোগ তিনি খুব সহজে কাউকে দেন না।
শ্লোক: 7
যৎকীর্তনং যৎস্মরণং যদীক্ষণং
যদ্বন্দনং যচ্ছ্রবনং যদর্হণম্ ।
লোকস্য সদ্যো বিধুনোতি কল্মষং
তস্মৈ সুভদ্রশ্রবসে নমো নমঃ ।।
(ভাগবত ২/৪/১৫) অনুবাদঃ- আমি সেই সর্ব মঙ্গলময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করি; যাঁর যশগাথা কীর্তন, স্মরণ, দর্শন, বন্দন, শ্রবণ ও পূজনের ফলে সমস্ত পাপরাশি অচিরেই ধৌত হয়।
শ্লোক: 8
ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্বলোকমহেশ্বরম্ ।
সুহৃদং সর্বভূতানাং জ্ঞাত্বা মাং শান্তিমৃচ্ছতি ॥
(গীতা ৫/২৯) অনুবাদঃ- আমাকে সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যার পরম ভোক্তা, সর্বলোকের মহেশ্বর এবং সমস্ত জীবের সুহৃদরূপে জেনে যোগীরা জড় জগতের দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি লাভ করেন।
শ্লোক: 9
ঈহা যস্য হরের্দাস্যে কর্মণা মনসা গিরা ।
নিখিলাস্বপ্যবস্থাসু জীবন্মুক্ত স উচ্যতে ।।
(ভঃ রঃ সিঃ ১/২/১৮৭) অনুবাদঃ- যিনি তাঁর দেহ, মন ও বাক্য দিয়ে ভগবান শ্রীহরির দিব্য সেবায় নিযুক্ত আছেন, তিনি এই জড় জগতে থাকা কালেও সর্ব অবস্থাতেই মুক্ত থাকেন। তাঁকে জীবন্মুক্ত বলা হয়।
শ্লোক: 10
ভক্ত্যা ত্বনন্যয়া শক্য অহমেবংবিধোহর্জুন ।
জ্ঞাতুং দ্রষ্টুং চ তত্ত্বেন প্রবেষ্টুং চ পরন্তপ ॥
(গীতা ১১/৫৪) অনুবাদঃ- হে অর্জুন ! হে পরন্তপ ! অনন্য ভক্তির দ্বারাই কিন্তু এই প্রকার আমাকে তত্ত্বত জানতে, প্রত্যক্ষ করতে এবং আমার চিন্ময় ধামে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।
শ্লোক: 11
নেহাভিক্রমনাশোহস্তি প্রত্যবায়ো ন বিদ্যতে ।
স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ ॥
(গীতা ২/৪০) অনুবাদঃ- ভক্তিযোগের অনুশীলন কখনও ব্যর্থ হয় না এবং তার কোনও ক্ষয় নেই। তার সল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররূপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।
শ্লোক: 12
ভক্ত্যা মামভিজানাতি যাবান্ যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ ।
ততো মাং তত্ত্বতো জ্ঞাত্বা বিশতে তদনন্তরম্ ॥
(গীতা ১৮/৫৫) অনুবাদঃ- ভক্তির দ্বারা কেবল স্বরূপত আমি যে রকম হই, সেরূপে আমাকে কেউ তত্ত্বত জানতে পারেন৷ এই প্রকার ভক্তির দ্বারা আমাকে তত্ত্বত জেনে, তার পরে তিনি আমার ধামে প্রবেশ করতে পারেন।
শ্লোক: 13
বাসুদেবে ভগবতি ভক্তিযোগঃ প্রয়োজিতঃ ।
জনয়ত্যাশু বৈরাগ্যং জ্ঞানং চ যদহৈতুকম্ ।।
(ভাগবত ১/২/৭) অনুবাদঃ- ভক্তি সহকারে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা হলে অচিরেই শুদ্ধ জ্ঞানের উদয় হয় এবং জড়-জাগতিক বিষয়ের প্রতি অনাসক্তি আসে ।
শ্লোক: 14
জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ ।
ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জুন ।।
(গীতা ৪/৯) অনুবাদঃ- হে অর্জুন ! যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম ও কর্ম যথাযথভাবে জানেন, তাঁকে আর দেহত্যাগ করার পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয় না, তিনি আমার নিত্য ধাম লাভ করেন।
শ্লোক: 15
বীতরাগভয়ক্রোধা মন্ময়া মামুপাশ্রিতাঃ ।
বহবো জ্ঞানতপসা পূতা মদ্ভাবমাগতাঃ ।।
(গীতা ৪/১০) অনুবাদঃ- আসক্তি, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত হয়ে, সম্পূর্ণরূপে আমাতে মগ্ন হয়ে, একান্তভাবে আমার আশ্রিত হয়ে, পূর্বে বহু বহু ব্যক্তি আমার জ্ঞান লাভ করে পবিত্র হয়েছে- এবং এভাবেই সকলেই আমার অপ্র্রাকৃত প্রীতি লাভ করেছে।
শ্লোক: 16
ভক্তিঃ পরেশানুভবো বিরক্তি-
রন্যত্র চৈষ ত্রিক এককালঃ ।
প্রপদ্যমানস্য যথাশ্নতঃ স্যু
স্ত্তষ্টিঃ পুষ্টিঃ ক্ষুদপায়োহনুঘাসম্ ।।
(ভাগবত ১১/২/৪২) অনুবাদঃ- আহার গ্রহণে নিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি গ্রাস অন্ন গ্রহণে যেমন তুষ্টি, পুষ্টি ও ক্ষুন্নিবৃত্তি যুগপৎ ও বর্ধনশীলভাবে লাভ হয়, তেমনই যিনি পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীচরণে প্রপত্তি করেছেন, তাঁর ক্ষেত্রেও ভক্তি, পরমেশ্বর ভগবানের প্রত্যক্ষ অনুভব এবং কৃষ্ণেতর বিষয়ে বিরক্তি- এই তিনটি ফল যুগপৎ লাভ হয়ে থাকে।
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন=
ভক্তিমূলক সেবা সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।