সনাতন ধর্মের সুনির্বাচিত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু শ্লোকঃ-

জ্ঞান-ই শক্তি ! নিজের ধর্ম সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জানুন এবং অন্যকেও জানতে উৎসাহিত করুন।

আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।

মায়া সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

  • শ্লোক: 1

    অপ্রারব্ধফলং পাপং কূটং বীজং ফলোন্মুখম্ ।
    ক্রমেনৈব প্রলীয়তে বিষ্ণুভক্তি-রতাত্মনাম্ ।।
    (পদ্মপুরাণ)
  • অনুবাদঃ- পাপময় জীবনে পাপকর্মের সুপ্ত প্রতিক্রিয়াগুলির বিভিন্ন স্তর রয়েছে । কিছু প্রতিক্রিয়া প্রায় ফলোন্মুখ, কিছু প্রতিক্রিয়া আরও সুপ্ত (কূট) কিংবা কিছু রয়েছে একেবারে বীজ আকারে । তবে সর্ব অবস্থাতেই, বিষ্ণুভক্তিতে রত ব্যক্তির সমস্ত প্রকার পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া ক্রমে ক্রমে লয় প্রাপ্ত হয় ।

  • শ্লোক: 2

    লোকে ব্যবায়ামিষমদ্যসেবা
    নিত্যা হি জন্তোর্ন হি তত্র চোদনা ।
    ব্যবস্থিতিস্তেষু বিবাহযজ্ঞ
    সুরাগ্রহৈরাসু নিবৃত্তিরিষ্টা ।।
    (ভাগবত ১১/৫/১১)
  • অনুবাদঃ- এই জড় জগতে বদ্ধ জীবেরা সর্বদাই কাম উপভোগ, মাংসাহার ও মদ্যপানের প্রবণতা-সম্পন্ন। সুতরাং ধর্মীয় শাস্ত্র কখনও এগুলিকে উৎসাহ দেয় না। যদিও শাস্ত্রে বিবাহ যজ্ঞের মাধ্যমে কামভোগ, পশুযজ্ঞের মাধ্যমে মাংসাহার এবং সুরাগ্রহ যজ্ঞের মাধ্যমে মদ্যপানের নির্দেশ রয়েছে- কিন্তু এই সমস্ত যজ্ঞের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ সমস্ত ভোগ থেকে নিবৃত্তি লাভ করা।

  • শ্লোক: 3

    শরীর অবিদ্যা-জাল, জড়েন্দ্রিয় তাহে কাল,
    জীবে ফেলে বিষয়-সাগরে।
    তা'র মধ্যে জিহ্বা অতি, লোভময় সুদুর্মতি,
    তা'কে জেতা কঠিন সংসারে ।।
    (ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, প্রসাদ-সেবায় ১)
  • অনুবাদঃ- শরীর একটি অবিদ্যার জাল, ইন্দ্রিয়গুলি যেন কালশত্রু, কেন না সেগুলি জীবকে বিষয় ভোগের সাগরে নিক্ষেপ করে। ওই সমস্ত ইন্দ্রিয়ের মধ্যে জিহ্বা হচ্ছে সবচেয়ে লোলুপ, অসংযত ও দুর্মতিবিশিষ্ট। এই সংসারে জিহ্বাকে জয় করা খুবই কঠিন।

  • শ্লোক: 4

    তে তং ভুক্ত্বা স্বর্গলোকং বিশালং
    ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্যলোকং বিশন্তি ।
    এবং ত্রয়ীধর্মমনুপ্রপন্না
    গতাগতং কামকামা লভন্তে ॥
    (গীতা ৯/২১)
  • অনুবাদঃ- তাঁরা সেই বিপুল স্বর্গসুখ উপভোগ করে পুণ্য ক্ষয় হলে মর্তলোকে ফিরে আসেন। এভাবেই ত্রিবেদোক্ত ধর্মের অনুষ্ঠান করে ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের আকাঙ্ক্ষী মানুষেরা সংসারে কেবলমাত্র বারংবার জন্ম-মৃত্যু লাভ করে থাকেন।

  • শ্লোক: 5

    কর্মণা দৈবনেত্রেণ জন্তুর্দেহোপপত্তয়ে।
    স্ত্রীয়াঃ প্রবিষ্ট উদরং পুংসো রেতঃকণাশ্রয়ঃ।।
    (ভাগবত ৩/৩১/১)
  • অনুবাদঃ- পরমেশ্বরের অধ্যক্ষতায় জীবাত্মা তার পূর্বকৃ্ত কর্মের ফল অনুসারে, বিশেষ প্রকার শরীর ধারণের জন্য, পুরুষের রেতকণা আশ্রয় করে স্ত্রীর গর্ভে প্রবেশ করে।

  • শ্লোক: 6

    পুরুষঃ প্রকৃতিস্থো হি ভুঙ্ ক্তে প্রকৃতিজান্ গুণান্ ।
    কারণং গুণসঙ্গোহস্য সদসদ্ যোনিজন্মসু ॥
    (গীতা ১৩/২২)
  • অনুবাদঃ- জড়া প্রকৃ্তিতে অবস্তিত হয়ে জীব প্রকৃতিজাত গুণসমূহ ভোগ করে। প্রকৃতির গুণের সঙ্গবসতই তার সৎ ও অসৎ যোনিসমূহে জন্ম হয়।

  • শ্লোক: 7

    নূনং প্রমত্তঃ কুরুতে বিকর্ম
    যদিন্দ্রিয়প্রীতয় আপৃণোতি।
    ন সাধু মন্যে যত আত্মনোহয়-
    মসন্নপি ক্লেশদ আস দেহঃ ।।
    (ভাগবত ৫/৫/৪)
  • অনুবাদঃ- যখন কোন ব্যক্তি ইন্দ্রিয়সুখ ভোগকেই জীবনের লক্ষ্য বলে গণ্য করে, সে নিঃসন্দেহে জড়বাদী জীবনধারায় প্রমত্ত হয়ে ওঠে এবং সমস্ত প্রকার পাপকর্মে লিপ্ত হয়। সে জানে না যে, তার অতীত পাপকর্মের ফলে সে ইতিমধ্যেই একটি দেহ পেয়েছে, যা ক্ষণস্থায়ী হওয়া সত্ত্বেও তার দুঃখের কারণ। আসলে এই জড় গ্রহণ করা জীবের উচিত হয়নি, কিন্তু ইন্দ্রিয়-ভোগের জন্যই জীবকে এই জড় দেহ প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি এভাবেই পুনরায় ইন্দ্রিয়ভোগে লিপ্ত হয়ে একের পর এক জড় দেহ লাভ করা বুদ্ধিমান ব্যক্তির পক্ষে উপযুক্ত নয়।

  • শ্লোক: 8

    পরাভবস্তাবদবোধজাতো
    যাবন্ন জিজ্ঞাসত আত্মতত্ত্বম্ ।
    যাবৎ ক্রিয়াস্তাবদিদং মনো বৈ
    কর্মাত্মকং যেন শরীরবন্ধঃ ।।
    (ভাগবত ৫/৫/৫)
  • অনুবাদঃ- যতদিন পর্যন্ত জীব আত্মতত্ত্ব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা না করে, ততদিন পর্যন্তই সে জড় প্রকৃতির প্রভাবে পরাস্ত হয়ে অবিদ্যাজাত দুঃখ-কষ্টের শিকার হয়। পাপই হোক আর পুণ্যই হোক- কর্ম মাত্রই ফল উৎপাদন করে। কোন না কোন কর্মে রুচি থাকলেই মন কর্মাত্মক হয়, অর্থাৎ সকাম কর্মের দ্বারা তার মন কলুষিত থাকে। মন যতদিন কলুষিত থাকে, চেতনাও ততদিন আচ্ছাদিত থাকে এবং যতদিন পর্যন্ত কোন ব্যক্তি সকাম কর্মে মগ্ন থাকে, ততদিন তাকে জড় দেহ গ্রহণ করতেই হবে।

  • শ্লোক: 9

    কৃষ্ণ-বহির্মুখ হঞা ভোগ-বাঞ্ছা করে।
    নিকটস্থ মায়া তারে জাপটিয়া ধরে।।
    (জগদানন্দ পণ্ডিত, প্রেমবিবর্ত)
  • অনুবাদঃ- যেই মুহূর্তে কেউ কৃষ্ণের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ে ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের বাসনা করে, সেই মুহুর্তেই ভগবানের মায়াশক্তি তাকে জড় বন্ধনে আবদ্ধ করে।

  • শ্লোক: 10

    কৃষ্ণ ভুলি' সেই জীব অনাদি- বহির্মুখ ।
    অতএব মায়া তারে দেয় সংসার-দুঃখ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ২০/১১৭)
  • অনুবাদঃ- শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে জড়া প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে রয়েছে। তাই মায়া তাকে এই জড় জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে ।

  • শ্লোক: 11

    আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি-বাঞ্ছা- -তারে বলি, 'কাম' ।
    কৃষ্ণেন্দ্রিয়প্রীতি-ইচ্ছা ধরে 'প্রেম' নাম ।।
    (চৈঃ চঃ আদি ৪/১৬৫)
  • অনুবাদঃ- নিজের ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির বাসনাকে বলা হয় কাম, আর শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয়ের প্রীতি সাধনের ইচ্ছাকে বলা হয় প্রেম ।

  • শ্লোক: 12

    বিষয় ছাড়িয়া কবে শুদ্ধ হবে মন ।
    কবে হাম হেরব শ্রীবৃন্দাবন ।।
    (নরোত্তম দাস ঠাকুর, গৌরাঙ্গ বলিতে)
  • অনুবাদঃ- সেদিন আমার কবে হবে যখন আমার মন বিষয় বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে শুদ্ধ হবে, আমি শ্রীবৃন্দাবন ধামে শ্রীশ্রীরাধা-কৃষ্ণের মাধুর্যপ্রেম উপলব্ধি করতে সক্ষম হব এবং আমার পারমার্থিক জীবন পূর্ণরূপে সাফল্যমণ্ডিত হবে।

  • শ্লোক: 13

    'কাম' কৃষ্ণ-কর্মার্পণে, 'ক্রোধ' ভক্তদ্বেষি-জনে,
    'লোভ' ইষ্টলাভ বিনে, 'মদ' কৃষ্ণগুণগানে,
    নিযুক্ত করিব যথা তথা ।।
    (নরোত্তম দাস ঠাকুর, অন্য অভিলাষ ছাড়ি)
  • অনুবাদঃ- আমার কর্মফল কৃষ্ণকে নিবেদন করার মাধ্যমে আমি কামকে নিযুক্ত করব। ভক্তবিদ্বেষীদের প্রতি আমার ক্রোধ প্রদর্শন করব। সাধুসঙ্গে হরিকথা শ্রবণ করার জন্য আমি আমার লোভকে নিযুক্ত করব। এই মুহূর্তে আমি আমার আরাধ্য ভগবানক লাভ করতে পারলাম না- এই চিন্তায় আমি মোহগ্রস্ত হব । শ্রীকৃষ্ণের গুণকীর্তনের মধ্যেই আমার মত্ততা প্রকাশিত হবে। এভাবেই এদের আমি কৃষ্ণসেবায় নিযুক্ত করব।

  • শ্লোক: 16

    পিশাচী পাইলে যেন মতিচ্ছন্ন হয়।
    মায়াগ্রস্ত জীবের হয় সে-ভাব উদয় ।।
  • অনুবাদঃ- জীব যখন মায়াগ্রস্ত হয়, তখন তার অবস্থা ঠিক যেন পিশাচীর আক্রমণগ্রস্ত একজন ব্যক্তির মতো ।

  • (সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন= মায়া সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

  • Add_6

    আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।

    সুনির্বাচিত শ্লোকঃ-

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।

    Say something

    Please enter name.
    Please enter valid email adress.
    Please enter your comment.