শ্রীমদ্ভগবত গীতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
শ্রীমদ্ভগবদগীতার অধ্যায়গুলো
১ম
২য়
৩য়
৪র্থ
৫ম
৬ষ্ঠ
৭ম
৮ম
৯ম
১০ম
১১শ
১২শ
১৩শ
১৪শ
১৫শ
১৬শ
১৭শ
১৮শ
শ্লোক: 1
যদ্ যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ ।
স যৎ প্রমাণং কুরুতে লোকস্তদনুবর্ততে ॥"
অনুবাদ:- শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যে ভাবে আচরণ করেন, সাধারণ মানুষেরা তার অনুকরণ করে। তিনি যা প্রমাণ বলে স্বীকার করেন, সমগ্র পৃথিবী তারই অনুসরণ করে।
শ্লোক: 2
জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ ।
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি ॥
(গীতা ২/২৭)"
অনুবাদ:- যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদন করার সময় তোমার শোক করা উচিত নয়।
শ্লোক: 3
অন্তকালে চ মামেব স্মরন্মুক্ত্বা কলেবরম্ ।
যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ ॥
(গীতা ৮/৫) "
অনুবাদঃ- মৃত্যুর সময় যিনি আমাকে স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি তৎক্ষণাৎ আমার ভাবই প্রাপ্ত হন। এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
শ্লোক: 4
যং যং বাপি স্মরন্ ভাবং ত্যজত্যন্তে কলেবরম্ ।
তং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদ্ভাবভাবিতঃ ॥
(গীতা ৮/৬) "
অনুবাদঃ- অন্তিমকালে যিনি যে ভাব স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি সেই ভাবে ভাবিত তত্ত্বকেই লাভ করেন।
শ্লোক: 5
মাত্রাস্পর্শাস্তু কৌন্তেয় শীতোষ্ণসুখদুঃখদাঃ ।
আগমাপায়িনোহনিত্যাস্তাংস্তিতিক্ষস্ব ভারত ॥
(গীতা ২/১৪) "
অনুবাদঃ- হে কৌন্তেয় ! ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগের ফলে অনিত্য সুখ ও দুঃখের অনুভব হয় ৷ সেগুলি ঠিক যেন শীত এবং গ্রীষ্ম ঋতুর গমনাগমনের মতো । হে ভরতকুল-প্রদীপ ! সেই ইন্দ্রিয়্জাত অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সেগুলি সহ্য করার চেষ্টা কর।
শ্লোক: 6
যং হি ন ব্যথয়ন্ত্যেতে পুরুষং পুরুষর্ষভ ।
সমদুঃখসুখং ধীরং সোহমৃতত্বায় কল্পতে ॥
(গীতা ২/১৫) "
অনুবাদঃ- হে পুরুষশ্রেষ্ঠ (অর্জুন) ! যে জ্ঞানী ব্যক্তি সুখ ও দুঃখকে স মান জ্ঞান ক রেন এবং শীত ও উষ্ণ আদি দ্বন্দ্বে বিচলিত হন না, তিনিই মুক্তি লাভের প্রকৃত অধিকারী।
শ্লোক: 7
যং লব্ধ্বা চাপরং লাভং মন্যতে নাধিকং ততঃ
যস্মিন্ স্থিতো ন দুঃখেন গুরুণাপি বিচাল্যতে ॥
(গীতা ৬/২২) "
অনুবাদঃ- পারমার্থিক চেতনায় অবস্থিত হলে যোগী আর আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান থেকে বিচলিত হন না এবং তখন আর অন্য কোন কিছু লাভই এর থেকে অধিক বলে মনে হয় না।
শ্লোক: 8
উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েৎ ৷
আত্মৈব হ্যত্মনো বন্ধুরাত্মৈব রিপুরাত্মনঃ ॥৫॥
(গীতা ৬/৫) "
অনুবাদঃ- মানুষের কর্তব্য তার মনের দ্বারা নিজেকে জড় জগতের বন্ধন থেকে উদ্ধার করা, মনের দ্বারা আত্মাকে অধঃপতিত করা কখনই উচিত নয়। মনই জীবের অবস্থা ভেদে বন্ধু ও শত্রু হয়ে থাকে ।
শ্লোক: 9
চঞ্চলং হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবদ্দৃঢ়ম্ ৷
তস্যাহং নিগ্রহং মন্যে বায়োরিব সুদুষ্করম্ ॥৩৪॥
(গীতা ৬/৩৪) "
অনুবাদঃ- হে কৃষ্ণ ! মন অত্যন্ত চঞ্চল, শরীর ও ইন্দ্রিয় আদির বিক্ষেপ উৎপাদক, দুর্দমনীয় এবং অত্যন্ত বলবান, তাই তাকে নিগ্রহ করা বায়ুকে বশীভূত করার থেকেও অধিকতর কঠিন বলে আমি মনে করি৷
শ্লোক: 10
অসংশয়ং মহাবাহো মনো দুর্নিগ্রহং চলম্ ৷
অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে ॥৩৫॥
(গীতা ৬/৩৫) "
অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে মহাবাহো ! মন যে দুর্দমনীয় ও চঞ্চল তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু হে কৌন্তেয় ! ক্রমশ অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে বশীভূত করা যায়।
শ্লোক: 11
যঃ ইদং পরমং গুহ্যং মদ্ভক্তেষ্বভিধাস্যতি ।
ভক্তিং ময়ি পরাং কৃত্বা মামেবৈষ্যত্যসংশয়ঃ ॥
(গীতা ১৮/৬৮) "
অনুবাদঃ- যিনি আমার ভক্তদের মধ্যে এই পরম গোপনীয় গীতাবাক্য উপদেশ করেন, তিনি অবশ্যই পরা ভক্তি লাভ করে নিঃসংশয়ে আমার কাছে ফিরে আসবেন।
শ্লোক: 12
ন চ তস্মান্মনুষ্যেষু কশ্চিন্মে প্রিয়কৃত্তমঃ ।
ভবিতা ন চ মে তস্মাদন্যঃ প্রিয়তরো ভুবি ।
(গীতা ১৮/৬৯) "
অনুবাদঃ- এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তাঁর থেকে অধিক প্রিয়কারী আমার কেউ নেই এবং তাঁর থেকে অন্য কেউ আমার প্রিয়্তর হবে না।
শ্লোক: 13
মৎচ্চিত্তা মদ্ গতপ্রাণা বোধয়ন্তঃ পরস্পরম্ ।
কথয়ন্তশ্চ মাং নিত্যং তুষ্যন্তি চ রমন্তি চ ॥
(গীতা ১0/৯) "
অনুবাদঃ- যাঁদের চিত্ত ও প্র্রাণ সম্পূর্ণরূপে আমাতে সমর্পিত, তাঁরা পরস্পরের মধ্যে আমার কথা সর্বদাই আলাচনা করে এবং আমার সম্বন্ধে পরস্পরকে বুঝিয়ে পরম সন্তোষ ও অপ্রাকৃত আনন্দ লাভ করেন।
শ্লোক: 14
মৎচ্চিত্তা মদ্ গতপ্রাণা বোধয়ন্তঃ পরস্পরম্ ।
কথয়ন্তশ্চ মাং নিত্যং তুষ্যন্তি চ রমন্তি চ (গীতা ১০/৯) "
অনুবাদঃ- যাঁদের চিত্ত ও প্র্রাণ সম্পূর্ণরূপে আমাতে সমর্পিত, তাঁরা পরস্পরের মধ্যে আমার কথা সর্বদাই আলাচনা করে এবং আমার সম্বন্ধে পরস্পরকে বুঝিয়ে পরম সন্তোষ ও অপ্রাকৃত আনন্দ লাভ করেন।
শ্লোক: 15
চতুর্বিধা ভজন্তে মাং জনাঃ সুকৃতিনোহর্জুন ।
আর্তো জিজ্ঞাসুরর্থার্থী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ ।।
(গীতা ৭/১৬) "
অনুবাদঃ- হে ভরতশ্রেষ্ঠ অর্জুন ! আর্ত, অর্থাথী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী- এই চার প্রকার পুণ্যকর্মা ব্যক্তিগণ আমার ভজনা করেন।
শ্লোক: 16
যত্র যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণো যত্র পার্থো ধনুর্ধরঃ ।
তত্র শ্রীর্বিজয়ো ভূতির্ধ্রুবা নীতির্মতির্মম ॥৭৮॥
(গীতা ১৮/৭৮) "
অনুবাদঃ- যেখানে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এবং যেখানে ধনুর্ধর পার্থ, সেখানেই নিশ্চিতভাবে শ্রী, বিজয়, অসাধারণ শক্তি ও নীতি বর্তমান থাকে৷ সেটিই আমার অভিমত।
শ্লোক: 17
বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি ।
শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ॥
(গীতা ৫/১৮) "
অনুবাদঃ- জ্ঞানবান পণ্ডিতেরা বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, গাভী, হস্তী, কুকুর ও চণ্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শী হন।
শ্লোক: 18
ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি ।
সমঃ সর্বেষু ভূতেষু মদ্ভক্তিং লভতে পরাম্ ॥
(গীতা ১৮/৫৪) "
অনুবাদঃ- ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত প্রসন্নচিত্ত ব্যক্তি কোন কিছুর জন্য শোক করেন না বা আকাঙ্ক্ষা করেন না৷ তিনি সমস্ত প্রাণীর প্রতি সমদর্শী হয়ে আমার পরা ভক্তি লাভ করেন।
শ্লোক: 19
সুখমাত্যন্তিকং যত্তদ্ বুদ্ধি গ্রাহ্যমতীন্দ্রিয়ম্ ৷
বেত্তি যত্র ন চৈবায়ং স্থিতশ্চলতি তত্ত্বতঃ ॥
(গীতা ৬/২১) "
অনুবাদঃ- এই অবস্থায় শুদ্ধ অন্তঃকরণ দ্বারা আত্মাকে উপলব্ধি করে যোগী আত্মাতেই পরম আনন্দ আস্বাদন করেন। সেই আনন্দময় অবস্থায় অপ্রাকৃত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অপ্রাকৃত সুখ অনুভূত হয়। এই পারমার্থিক চেতনায় অবস্থিত হলে যোগী আর আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান থেকে বিচলিত হন না।
শ্লোক: 20
যো মাং পশ্যতি সর্বত্র সর্বং চ ময়ি পশ্যতি ৷
তস্যাহং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি ॥
(গীতা ৬/৩০) "
অনুবাদঃ- যিনি সর্বত্র আমাকে দর্শন করেন এবং আমাতেই সমস্ত বস্তু দর্শন করেন, আমি কখনও তাঁর দৃষ্টির অগোচর হই না এবং তিনিও আমার দৃষ্টির অগোচর হন না ।
শ্লোক: 21
মা চ যোহব্যভিচারেণ ভক্তিযোগেন সেবতে।
স গুণান্ সমতীত্যৈতান্ ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ॥
(গীতা ১৪/২৬) "
অনুবাদঃ- যিনি ঐকান্তিক ভক্তিযোগ সহকারে আমার সেবা করেন, তিনি প্রকৃতির সমস্ত গুণকে অতিক্রম করে ব্রহ্মভূত স্তরে উন্নীত হন।
শ্লোক: 22
ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্বলোকমহেশ্বরম্ ।
সুহৃদং সর্বভূতানাং জ্ঞাত্বা মাং শান্তিমৃচ্ছতি ॥
(গীতা ৫/২৯)"
অনুবাদঃ- আমাকে সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যার পরম ভোক্তা, সর্বলোকের মহেশ্বর এবং সমস্ত জীবের সুহৃদরূপে জেনে যোগীরা জড় জগতের দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি লাভ করেন।
শ্লোক: 23
ভক্ত্যা ত্বনন্যয়া শক্য অহমেবংবিধোহর্জুন ।
জ্ঞাতুং দ্রষ্টুং চ তত্ত্বেন প্রবেষ্টুং চ পরন্তপ ॥
(গীতা ১১/৫৪)"
অনুবাদঃ- হে অর্জুন ! হে পরন্তপ ! অনন্য ভক্তির দ্বারাই কিন্তু এই প্রকার আমাকে তত্ত্বত জানতে, প্রত্যক্ষ করতে এবং আমার চিন্ময় ধামে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।
শ্লোক: 24
নেহাভিক্রমনাশোহস্তি প্রত্যবায়ো ন বিদ্যতে ।
স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ ॥
(গীতা ২/৪০)"
অনুবাদঃ- ভক্তিযোগের অনুশীলন কখনও ব্যর্থ হয় না এবং তার কোনও ক্ষয় নেই। তার সল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররূপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।
শ্রীমদ্ভাগবত গীতার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক শ্রীমদ্ভগবদগীতার অধ্যায়গুলো
১ম
২য়
৩য়
৪র্থ
৫ম
৬ষ্ঠ
৭ম
৮ম
৯ম
১০ম
১১শ
১২শ
১৩শ
১৪শ
১৫শ
১৬শ
১৭শ
১৮শ
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।