বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু শ্লোক
শ্লোক: 86
নিত্য নবনবায়মান
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- নিত্যকাল নব নব বৈশিষ্ট্য সমন্বিত।
শ্লোক: 87
কেশব তুয়া জগৎ বিচিত্র
(ভক্তিবিনোদ ঠাকুর)
অনুবাদঃ- হে কেশব! তোমার সৃষ্ট জগৎ বড়ই বিচিত্র ।
শ্লোক: 88
ভগবান্ ভক্তহৃদিস্থিতঃ
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বদাই তাঁর চরণকমল তাঁর ভক্তদের হৃদয়ে স্থাপন করেন।
শ্লোক: 89
মারবি রাখবি—যো ইচ্ছা তোহারা ।
নিত্যদাস-প্রতি তুয়া অধিকারা ।।
(ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, মানস, দেহ, গেহ ৩)
অনুবাদঃ- হে কৃষ্ণ! আমাকে মার কিংবা রক্ষা কর তা তোমার ইচ্ছা, কেন না আমি তোমার নিত্যদাস। এই দাসের প্রতি তোমার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
শ্লোক: 90
বৃদ্ধকাল আওল সব সুখ ভাগল ।
(ভক্তিবিনোদ ঠাকুর)
অনুবাদঃ- বৃদ্ধকাল সমুপস্থিত হলে জড় সুখভোগ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
শ্লোক: 91
তাতল সৈকতে, বারিবিন্দু সম,
সুত-মিত-রমণী সমাজে
(শ্রীল বিদ্যাপতি ঠাকুর)
অনুবাদঃ- স্ত্রী, বন্ধুবান্ধব ও সন্তান-সন্ততিদের সঙ্গে মিলিত হয়ে যে সুখ পাওয়া যায়, তা মরুভূমিতে একবিন্দু জলের মতো।
শ্লোক: 92
মাংস খাদতি ইতি মাংসঃ
(মনু সংহিতা)
অনুবাদঃ- আমি এখন তোমাকে খাচ্ছি কিন্তু ভবিষ্যতে তুমি আমাকে হত্যা করে খেতে পারবে।
শ্লোক: 93
ঘুটে পোড়ে গোবর হাসে
(বাংলা প্রবাদ)
অনুবাদঃ- গোবরের শুকনো ঘুটে যখন আগুনে পোড়ে, কাঁচা নরম গোবর তখন হাসে।
শ্লোক: 94
কমলদলজল, জীবন টলমল,
(ভজহুঁ রে মন, শ্রীনন্দনন্দন ৩)
অনুবাদঃ- কমলদলের উপর এক বিন্দু জলের ন্যায় জীবন টলমল ।
(গোবিন্দ দাস কবিরাজ গোস্বামী)
শ্লোক: 95
অনাদি করম-ফলে, পড়ি’ ভবার্ণব-জলে,
তরিবারে না দেখি উপায়।
এ বিষয়-হলাহলে, দিবানিশি হিয়া জ্বলে,
মন কভু সুখ নাহি পায় ।।
(ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, গীতাবলী)
অনুবাদঃ- আমার অতীত কর্মের ফলে আমি এখন অজ্ঞানতার সমুদে পতিত হয়েছি। এই সমুদ্র থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার কোন উপায় দেখছি না। এই সমুদ্রটি বাস্তবিকই একটি বিষের সমুদ্রের মতো। আমরা ইন্দ্রিয়ভোগের মাধ্যমে সুখী হওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ইন্দ্রিয়ভোগ হচ্ছে উত্তপ্ত খাদ্যের মতো যা হৃদয়ে জ্বালার সৃষ্টি করে।
শ্লোক: 96
সংসার-দাবানল-লীঢ় লোক
ত্রাণায় কারুণ্যঘনাঘনত্বম্ ।
প্রাপ্তস্য কল্যাণ-গুণার্ণবস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ।।
(বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর, শ্রীশ্রীগুর্বষ্টক ১)
অনুবাদঃ- সংসার-দাবানল-সন্তপ্ত লোক সকলের পরিত্রাণের জন্য যিনি কারুণ্য-বারিবাহ তরলত্ব প্রাপ্ত হয়ে কৃপাবারি বর্ষণ করেন, আমি সেই কল্যাণ গুণনিধি শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম বন্দনা করি।
শ্লোক: 97
হয় ‘মায়াদাস’ করে নানা অভিলাষ ।
(বাংলা গান)
অনুবাদঃ- মায়ার দাস হয়ে জীব নানা রকমের জড় অভিলাষে অভিভূত হয়ে পড়ে।
শ্লোক: 98
আত্মবৎ মন্যতে জগৎ
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- জড়-জাগতিক জীবনে প্রত্যেকেই মনে করে যে, অন্যদের অবস্থাও তার মতোই। (মানুষ মনে করে সকলেই বুঝি তার মতো চিন্তা করে। )
শ্লোক: 99
ভগবদ্ভক্তিহীনস্য জাতিঃ শাস্ত্রং জপস্তপঃ ।
অপ্রাণস্যেব দেহস্য মণ্ডনং লোকরঞ্জনম্ ।।
(হরিভক্তিসুধোদয় ৩/১১/১২)
অনুবাদঃ- ভগবদ্ভক্তিহীন ব্যক্তির উচ্চকুলে জন্ম, শাস্ত্রজ্ঞান, জপ ও তপ, মৃতদেহের অলঙ্কারের মতো কোন কাজেরই নয়, কেবল লোকরঞ্জন মাত্র।
শ্লোক: 100
এ-ও ত’ এক কলির চেলা ।
মাথা নেড়া, কপ্নি পরা, তিলক নাকে, গলায় মালা ।
সহজ-ভজন করছেন মামু, সঙ্গে ল’য়ে পরের বালা ।।
(ভক্তিবিনোদ ঠাকুর)
অনুবাদঃ- এ-ও তো একজন কলির প্রতিনিধি। সে মাথা নেড়া করেছে (এবং বৈষ্ণব ত্যাগীর মতো বেশ ধারণ করেছে)। কৌপীন পরিহিত হয়ে, নাকে তিলক ধারণ করে এবং গলায় কণ্ঠিমালা পরে সে খুব সহজভাবে কৃষ্ণভজন করছে। কিন্তু তার আসল উদ্দেশ্য শুধু পরস্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধ জীবন যাপন করা।
শ্লোক: 101
সৎসঙ্গ ছাড়ি কৈনু অসতে বিলাস ।
তে কারণে লাগিল যে কর্মবন্ধ ফাঁস ।।
(নরোত্তম দাস ঠাকুর, প্রার্থনা)
অনুবাদঃ- সৎসঙ্গ ছেড়ে আমি ক্ষণস্থায়ী বিলাসিতায় মগ্ন হয়েছি। তাই আমি আমার কর্মফলের ফাঁসিতে আবদ্ধ হয়ে গেছি।
শ্লোক: 102
দিনকা ডাকিনী রাতকা বাঘিনী
পলক পলক লহু চুষে ।
দুনিয়া সব বউর হোয়ে
ঘর ঘর বাঘিনী পূজে ।।
(হিন্দী কবি তুলসী দাস)
অনুবাদঃ- ভোগাসক্ত পত্নী দিনের বেলায় একটি ডাকিনীর মতো এবং রাত্রিতে একটি বাঘিনীর মতো—প্রতিমুহূর্তে তার কাজই হচ্ছে কারও না কারও রক্ত শোষণ করা। সমগ্র জগৎ উন্মত্ত হয়ে ঘরে ঘরে এই বাঘিনীর পূজা করছে।
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন=
দশাবতার স্তোত্র
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।