সনাতন ধর্মের সুনির্বাচিত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু শ্লোকঃ-

জ্ঞান-ই শক্তি ! নিজের ধর্ম সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জানুন এবং অন্যকেও জানতে উৎসাহিত করুন।

আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।

চৈতন্য চরিতামৃত থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

  • শ্লোক: 19

    ভারত-ভূমিতে হৈল মনুষ্য-জন্ম যার ।
    জন্ম সার্থক করি’ কর পর-উপকার ।।
    (চৈঃ চঃ আদি ৯/৪১)
  • অনুবাদঃ- ভারতবর্ষে যিনি মনুষ্য দেহ পেয়েছেন, তিনি যেন নিজের জীবন সার্থক করে পরোপকার করেন।

  • শ্লোক: 20

    যারে দেখ, তারে কহ ‘কৃষ্ণ’-উপদেশ ।
    আমার আজ্ঞায় গুরু হঞা তার’ এই দেশ ।।

    (চৈঃ চঃ মধ্য ৭/১২৮)
  • অনুবাদঃ- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ও ভাগবতে যেমনটি রয়েছে, অবিকৃতভাবে কৃষ্ণের সেই সব আদেশ সকলকে পালন করতে উপদেশ দাও। এভাবেই গুরু হয়ে আমার আজ্ঞায় এই দেশের প্রত্যেককে ত্রাণ কর।

  • শ্লোক: 21

    এইমত ভক্তভাব করি’ অঙ্গীকার ।
    আপনি আচরি’ ভক্তি করিল প্রচার ।।
    (চৈঃ চঃ আদি ৪/৪১)
  • অনুবাদঃ-

  • শ্লোক: 22

    কলিকালের ধর্ম—কৃষ্ণনাম-সঙ্কীর্তন ।
    কৃষ্ণ-শক্তি বিনা নহে তার প্রবর্তন ।।
    (চৈঃ চঃ অন্ত্য ৭/১১)
  • অনুবাদঃ- শ্রীকৃষ্ণের নাম-সঙ্কীর্তনই কলিকালের মূল ধর্ম, শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা শক্ত্যাবিষ্ট না হলে এই সংকীর্তন আন্দোলন প্রচার করা যায় না।

  • শ্লোক: 23

    জগাই মাধাই হৈতে মুঞি সে পাপিষ্ঠ ।
    পুরীষের কীট হৈতে মুঞি সে লঘিষ্ঠ ।।
    (চৈঃ চঃ আদি ৫/২০৫)
  • অনুবাদঃ- আমি জগাই-মাধাই থেকেও পাপিষ্ঠ এবং এমন কি বিষ্ঠার কীট থেকেও অধম। (কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী)

  • শ্লোক: 24

    মোর নাম শুনে যেই তার পূণ্য ক্ষয় ।
    মোর নাম লয় যেই তার পাপ হয় ।।
    (চৈঃ চঃ আদি ৫/২০৬)
  • অনুবাদঃ- যিনি আমার নাম শুনেন, তাঁর পূণ্য ক্ষয় হয়ে যায়। যিনি আমার নাম উচ্চারণ করেন, তাঁর পাপ হয়। (কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী)

  • শ্লোক: 25

    প্রেমের স্বভাব—যাঁহা প্রেমের সম্বন্ধ ।
    সেই মানে,-- ‘কৃষ্ণে মোর নাহি প্রেম-গন্ধ’ ।।
    (চৈঃ চঃ অন্ত্য ২০/২৮)
  • অনুবাদঃ- শ্রীকৃষ্ণের প্রতি যদি কোনও ভক্তের প্রকৃত প্রেম জাগ্রত হয়, সেই প্রেমের স্বভাবই এই রকম যে, সেই ভক্ত নিজেকে ভক্ত বলেই গণ্য করেন না। বরং, তিনি সর্বদাই মনে করেন যে, শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমের গন্ধমাত্রও আমার নেই। (কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী)

  • শ্লোক: 26

    ধর্মাচারি-মধ্যে বহুত ‘কর্মনিষ্ঠ’ ।
    কোটি-কর্মনিষ্ঠ-মধ্যে এক ‘জ্ঞানী’ শ্রেষ্ঠ ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ১৯/১৪৭)
  • অনুবাদঃ- বৈদিক জ্ঞানের অনুগামীদের মধ্যে অধিকাংশই সকাম কর্মের অনুষ্ঠান করছেন এবং ভাল ও মন্দ কর্মের পার্থক্য নিরূপণ করছেন। সেই রকম নিষ্ঠাবান কোটি সংখ্যক সকাম কর্মীর মধ্যে কদাচিৎ একজন জ্ঞানী ব্যক্তি থাকতে পারেন, যিনি সকাম কর্মীদের থেকে শ্রেষ্ঠ।

  • শ্লোক: 27

    কোটিজ্ঞানী-মধ্যে হয় একজন ‘মুক্ত’ ।
    কোটিমুক্ত-মধ্যে ‘দুর্লভ’ এক কৃষ্ণ-ভক্ত ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ১৯/১৪৮)
  • অনুবাদঃ- সেই রকম কোটি সংখ্যক জ্ঞানীর মধ্যে কদাচিৎ একজন বস্তুত মুক্তি লাভ করেন। সেই রকম কোটি সংখ্যক মুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একজন শুদ্ধ ভক্ত অত্যন্ত দুর্লভ।

  • শ্লোক: 28

    যেই ভজে সেই বড়, অভক্ত – হীন, ছার ।
    কৃষ্ণভজনে নাহি জাতি-কুলাদি-বিচার ।।
    (চৈঃ চঃ অন্ত্য ৪/৬৭)
  • অনুবাদঃ- যিনি কৃষ্ণভক্তিমূলক সেবার পন্থা গ্রহণ করেছেন, তিনিই মহিমান্বিত। আর অভক্ত সর্বদাই নিন্দনীয় এবং জঘন্য গুণসম্পন্ন। এই জন্য কৃষ্ণভজনে জাতি ও কুলাদির বিচার করা হয় না। (সনাতন গোস্বামীর প্রতি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু)

  • শ্লোক: 29

    স্থাবর-জঙ্গম দেখে, না দেখে তার মূর্তি ।
    সর্বত্র হয় নিজ ইষ্টদেব-স্ফূর্তি ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ৮/২৭৪)
  • অনুবাদঃ- মহাভাগবত স্থাবর-জঙ্গম দর্শন করেন, কিন্তু তিনি তাদের রূপ দর্শন করেন না। পক্ষান্তরে, তিনি সর্বত্র পরমেশ্বর ভগবানকে দর্শন করেন। (রায় রামানন্দের প্রতি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু)

  • শ্লোক: 30

    কৈবল্যং নরকায়তে ত্রিদশপুরাকাশপুষ্পায়তে
    দুর্দান্তেন্দ্রিয়কালসর্পপটলী প্রোৎখাতদংষ্ট্রায়তে ।
    বিশ্বং পূর্ণসুখায়তে বিধিমহেন্দ্রাদিশ্চ কীটায়তে
    যৎ কারুণ্যকটাক্ষবৈভববতাং তং গৌরমেব স্তুমঃ ।।
    (চৈতন্যচন্দ্রামৃত)
  • অনুবাদঃ- যাঁর করুণাকটাক্ষ রূপ সম্পদ প্রাপ্ত হলে নিরাকার ব্রহ্মসাযুজ্য মুক্তি নরকের মতো মনে হয়, স্বর্গকে আকাশকুসুম বলে মনে হয়; দুর্দান্ত ইন্দ্রিয়গুলি বিষদাঁত ভাঙা কালো সর্পের মতো নির্বিষ হয়ে যায়। সমস্ত বিশ্ব সুখময় হয়ে ওঠে এবং ব্রহ্ম ও ইন্দ্রের পদও কীটতুল্য তুচ্ছ মনে হয়, আমরা সেই শ্রীগৌরসুন্দরের স্তব করি। (প্রবোধানন্দ সরস্বতী)

  • শ্লোক: 31

    নীচ জাতি, নীচ-সঙ্গী, পতিত অধম ।
    কুবিষয়-কূপে পড়ি’ গোঙাইনু জনম ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ২০/৯৯)
  • অনুবাদঃ- “অত্যন্ত নীচকুলে আমার জন্ম হয়েছিল, আমার সঙ্গীরা অত্যন্ত অধঃপতিত। পাপে পূর্ণ বিষয়রূপ কূপে পতিত হয়ে আমি আমার জীবন কাটিয়েছি।”

  • শ্লোক: 32

    আপনার হিতাহিত কিছুই না জানি ।
    গ্রাম্য-ব্যবহারে পণ্ডিত, তাই সত্য মানি ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ২০/১০০)
  • অনুবাদঃ- কি করলে যে আমার ভাল হবে এবং কি করলে আমার খারাপ হবে, সেই সম্বন্ধে কোন জ্ঞানই আমার নেই। কিন্তু তবুও, জাগতিক ব্যবহারে লোকেরা আমাকে পণ্ডিত বলে মনে করে এবং আমিও মনে করি যেন তা সত্যি ।

  • শ্লোক: 33

    প্রভু কহে—“মায়াবাদী কৃষ্ণে অপরাধী।”
    (চৈঃ চঃ মধ্য ১৭/১২৯)
  • অনুবাদঃ- শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বললেন, “মায়াবাদীরা শ্রীকৃষ্ণের চরণে অপরাধী।”

  • শ্লোক: 34

    মায়াবাদী ভাষ্য শুনিলে হয় সর্বনাশ ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ৬/১৬৯)
  • অনুবাদঃ- কেউ যদি মায়াবাদী-ভাষ্য শোনে, তা হলে তার সর্বনাশ হয়।

  • শ্লোক: 35

    সিদ্ধান্ত বলিয়া চিত্তে না কর অলস ।
    ইহা হইতে কৃষ্ণে লাগে সুদৃঢ় মানস ।।
    (চৈঃ চঃ আদি ২/১১৭)
  • অনুবাদঃ- আলস্যবশত পাঠক যেন এই সমস্ত সিদ্ধান্তের আলোচনা শ্রবণ করার ব্যাপারে কখনও অবহেলা না করেন, কেন না এই সমস্ত আলোচনার মাধ্যমে মন সুদৃঢ়ভাবে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠে।

  • শ্লোক: 36

    ‘দ্বৈতে’ ভদ্রাভদ্র-জ্ঞান, সব—‘মনোধর্ম’ ।
    ‘এই ভাল, এই মন্দ’, -- এই সব ‘ভ্রম’ ।।
    (চৈঃ চঃ অন্ত্য ৪/১৭৬)
  • অনুবাদঃ- জড় জগতে ভাল ও মন্দের ধারণা হচ্ছে মনোধর্ম-প্রসূত। তাই, ‘এটি ভাল এবং এটি মন্দ’ এই ধারণাটি ভ্রান্ত।
    (সনাতন গোস্বামীর প্রতি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর উক্তি)

  • (সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন= চৈতন্য চরিতামৃত থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

  • Add_6

    আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।

    সুনির্বাচিত শ্লোকঃ-

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।