অভক্ত সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
শ্লোক: 16
অসত্যমপ্রতিষ্ঠং তে জগদাহুরনীশ্বরম্ ৷
অপরস্পরসম্ভূতং কিমন্যৎ কামহৈতুকম্ ॥
(গীতা ১৬/৮)
অনুবাদঃ- আসুরিক স্বভাববিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলে যে, এই জগৎ মিথ্যা, অবলম্বনহীন ও ঈশ্বরশূন্য৷ কামবশত এই জগৎ উৎপন্ন হয়েছে এবং কাম ছাড়া আর অন্য কোন কারণ নেই।
শ্লোক: 17
এতাং দৃষ্টিমবষ্টভ্য নষ্টাত্মানোহল্পবুদ্ধয়ঃ ৷
প্রভবন্ত্ত্যগ্রকর্মাণঃ ক্ষয়ায় জগতোহহিতাঃ ॥
(গীতা ১৬/৯)
অনুবাদঃ- এই প্রকার সিন্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্ত্ব-জ্ঞানহীন, অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন, উগ্রকর্মা ও অনিষ্টকারী অসুরেরা জগৎ ধ্বংসকারী কার্যে প্রভাব বিস্তার করে।
শ্লোক: 18
তানহং দ্বিষতঃ ক্রূরান্ সংসারেষু নরাধমান্ ।
ক্ষিপাম্যজস্রমশুভানাসুরীষ্বেব যোনিষু ॥
(গীতা ১৬/১৯)
অনুবাদঃ- সেই বিদ্বেষী, ক্রূর ও নরাধমদের আমি এই সংসারেই অশুভ আসুরী যোনিতে অবিরত নিক্ষেপ করি।
শ্লোক: 19
আসুরীং যোনিমাপন্না মুঢ়া জন্মনি জন্মনি ।
মামপ্রাপ্যৈব কৌন্তেয় ততো যান্ত্যধমাং গতিম্ ॥
(গীতা ১৬/২০)
অনুবাদঃ- হে কৌন্তেয় ! জন্মে জন্মে অসুরযোনি প্রাপ্ত হয়ে, সেই মুঢ় ব্যক্তিরা আমাকে লাভ করতে অক্ষম হয়ে তার থেকেও অধম গতি প্রাপ্ত হয়।
শ্লোক: 20
সৎসঙ্গ ছাড়ি কৈনু অসতে বিলাস ।
তে কারণে লাগিল যে কর্মবন্ধ ফাঁস ।।
(নরোত্তম দাস ঠাকুর, প্রার্থনা)
অনুবাদঃ- সৎসঙ্গ ছেড়ে আমি ক্ষণস্থায়ী বিলাসিতায় মগ্ন হয়েছি। তাই আমি আমার কর্মফলের ফাঁসিতে আবদ্ধ হয়ে গেছি।
শ্লোক: 21
ঈশ্বরোহহমহং ভোগী সিদ্ধোহহং বলবান্ সুখী ।
(গীতা ১৬/১৪)
অনুবাদঃ- আমিই ঈশ্বর, আমি ভোক্তা৷ আমিই সিদ্ধ, বলবান ও সুখী।
শ্লোক: 22
মতির্ন কৃষ্ণে পরতঃ স্বতো বা
মিথোহভিপদ্যেত গৃহব্রতানাম্ ।
অদান্তগোভির্বিশতাং তামিস্রং
পুনঃ পুনশ্চর্বিতচর্বণানাম্ ।।
(ভাগবত ৭/৫/৩০)
অনুবাদঃ- ইন্দ্রিয়গুলি অসংযত হওয়ার ফলে, জড় ভোগে অত্যধিক আসক্ত ব্যক্তিরা নারকীয় জীবনের পথে এগিয়ে যায় এবং পুনঃপুনঃ চর্বিত বস্তুর চর্বণ করে। অন্যের উপদেশে বা নিজের চেষ্টায়, কিংবা উভয় পক্ষের সংযুক্ত প্রচেষ্টায় – কোনভাবেই কখনও তাদের শ্রীকৃষ্ণে মতি হয় না।
শ্লোক: 23
দিনকা ডাকিনী রাতকা বাঘিনী
পলক পলক লহু চুষে ।
দুনিয়া সব বউর হোয়ে
ঘর ঘর বাঘিনী পূজে ।।
(হিন্দী কবি তুলসী দাস)
অনুবাদঃ- ভোগাসক্ত পত্নী দিনের বেলায় একটি ডাকিনীর মতো এবং রাত্রিতে একটি বাঘিনীর মতো—প্রতিমুহূর্তে তার কাজই হচ্ছে কারও না কারও রক্ত শোষণ করা। সমগ্র জগৎ উন্মত্ত হয়ে ঘরে ঘরে এই বাঘিনীর পূজা করছে।
শ্লোক: 24
স্বজনাখ্যদস্যুভিঃ
(ভাগবত ৮/২২/৯)
অনুবাদঃ- স্বজন নামে পরিচিত লোকগুলি আসলে দস্যুর মতো। দস্যুরা যেমন বলপূর্বক ধন হরণ করে, স্বজনেরাও দেহসুখ ভোগের জন্য অর্থব্যয় করে। যে ধন দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা যেত, তা তারা হরণ করে। এই স্বজনরূপ দস্যুর কি প্রয়োজন?
শ্লোক: 25
যস্যাত্মবুদ্ধিঃ কুপণে ত্রিধাতুকে
স্বধীঃ কলত্রাদিষু ভৌম ইজ্যধীঃ ।
যত্তীর্থবুদ্ধিঃ সলিলে ন কর্হিচিজ্
জনেষ্বভিজ্ঞেষু স এব গোখরঃ ।।
(ভাগবত ১০/৮৪/১৩)
অনুবাদঃ- যে ব্যক্তি কফ, পিত্ত ও বায়ু – এই ত্রিধাতু-বিশিষ্ট দেহরূপ থলিটিকে আত্মা বলে মনে করে, স্ত্রী-পুত্রাদিকে স্বজন বলে মনে করে, জন্মভূমিকে পূজ্য বলে মনে করে, তীর্থে গিয়ে তীর্থের জলকেই তীর্থ বলে মনে করে তাতে স্নান করে অথচ তীর্থবাসী অভিজ্জ সাধুদের সঙ্গ করে না, সে একটি গরু বা গাধা থেকে কোন অংশেই উৎকৃষ্ট নয়।
শ্লোক: 26
তৎ সাধু মন্যেহসুরবর্য দেহিনাং
সদা সমুদ্বিগ্নধিয়ামসদ্ গ্রহাৎ ।
হিত্বাত্মপাতং গৃহমন্ধকূপং
বনং গতো যদ্ধরিমাশ্রয়েত ।।
(ভাগবত ৭/৫/৫)
অনুবাদঃ- হে অসুরশ্রেষ্ঠ রাজা! আমি আমার গুরু থেকে যতদূর শিখেছি তা হচ্ছে এই যে, এই ক্ষণস্থায়ী দেহ ও গৃহজীবনকে যে ব্যক্তি আমি ও আমার বলে গ্রহণ করে, সে নিশ্চিতরূপে সর্বদা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় নিমগ্ন থাকে, কারণ সে একটি জলহীন অন্ধকূপে পতিত হয়েছে। তার এই আত্মপাতকারী গৃহ ছেড়ে বনে যাওয়া কর্তব্য। বিশেষত বৃন্দাবনে গিয়ে কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করে শ্রীহরির চরণকে আশ্রয় করাই তার কর্তব্য।
(প্রহ্লাদ মহারাজ)
শ্লোক: 27
দ্বৌ ভূতসর্গৌ লোকেহস্মিন্ দৈব আসুর এব চ ।
বিষ্ণুভক্তঃ স্মৃতো দৈব আসুরস্তদ্বিপর্যয়ঃ ।।
(পদ্ম পুরাণ)
অনুবাদঃ- এই জগতে দৈব ও অসুর ভেদে দুই প্রকার মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে এক প্রকার মানুষ দৈব ভাবযুক্ত, আর এক প্রকার মানুষ আসুরিক স্বভাবযুক্ত। বিষ্ণুভক্তেরা সুর এবং যারা বিষ্ণুভক্ত নয়, তারা তার বিপরীত অর্থাৎ অসুর।
শ্লোক: 28
সর্পঃ ক্রূরঃ খলঃ ক্রূরঃ সর্পাৎ ক্রূরতরঃ খলঃ ।
মন্ত্রৌষধিবশঃ সর্পঃ খলঃ কেন নিবার্যতে ।।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- সাপ ভয়ঙ্কর, দুষ্টলোকও ভয়ঙ্কর, তবে এই দুয়ের মধ্যে খল বা দুষ্ট ব্যক্তি বিষধর সাপের থেকেও ভয়ঙ্কর। মন্ত্র ও ওষুধের দ্বারা সাপকে বশীভূত করা যায়। কিন্তু খল ব্যক্তিকে কিভাবে নিবারণ করা যায়?
শ্লোক: 29
অবৈষ্ণব মুখোদ্ গীর্ণং পূতং হরিকথামৃতং ।
শ্রবণং নৈব কর্তব্যং সর্পোচ্ছিষ্টং যথা পয়ঃ ।।
(পদ্ম পুরাণ)
অনুবাদঃ- অবৈষ্ণবের মুখ থেকে উদ্গীর্ণ হরিকথা শ্রবণ করা উচিত নয়। সর্পোচ্ছিষ্ট দুধ যেমন বিষাক্ত হয়ে যায়, তেমনই হরিকথা পবিত্র হলেও, অবৈষ্ণবের মুখ থেকে নির্গত হলে তা বিষাক্ত হয়ে যায়।
শ্লোক: 30
পয়ঃপানং ভুজঙ্গানাং কেবলং বিষবর্ধনম্ ।
উপদেশো হি মূর্খানাং প্রকোপায় না শান্তয়ে ।।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- সাপ যখন দুধ পান করে, সে শুধু তার বিষই বর্ধন করে। তেমনই মূর্খকে সদুপদেশ দান করলে তা শুধু তার ক্রোধই উৎপন্ন করে। উপদেশে তাদের মন শান্ত হয় না।
শ্লোক: 31
ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ যাবজ্জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ ।
ভস্মীভূতস্য দেহস্য কুতঃ পুনরাগমনো ভবেৎ ।।
(চার্বাক মুনি)
অনুবাদঃ- যতদিন বাঁচবে সুখে বাঁচবে, তার জন্য প্রয়োজন হলে ঋণ করেও যত খুশি ঘি খাবে। মৃত্যুর পরে দেহ যখন ভস্মীভূত হয়ে যায়, তখন তার পুনর্জন্ম আর কি করে সম্ভব?
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন=
আত্মা ও পরমাত্মা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।