বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু শ্লোক
শ্লোক: 66
জন্মে জন্মে সবে পিতামাতা পায় ।
কৃষ্ণ-গুরু নাহি মিলে ভজহ হিয়ায় ।।
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- জন্মে জন্মে সকলেই পিতা-মাতা লাভ করে। কিন্তু প্রতি জন্মে কৃষ্ণ বা গুরু লাভ হয় না। সুতরাং, এই দুর্লভ গুরু বা শ্রীকৃষ্ণ সেবার সুযোগ লাভ হলে হৃদয় দিয়ে তাঁদের ভজনা করা উচিত।
শ্লোক: 67
মূকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম্ ।
যৎকৃপা তমহং বন্দে শ্রীগুরুং দীন তারিণম্ ।।
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- যাঁর কৃপা বোবাকে বাচাল করতে পারে এবং পঙ্গুকে গিরি লঙ্ঘন করাতে পারে, সেই পতিত জীবদের উদ্ধারকারী শ্রীগুরুদেবকে আমি বন্দনা করি।
শ্লোক: 68
যথা কাঞ্চনতাং যাতি কাংস্যং রসবিধানতঃ ।
তথা দীক্ষাবিধানেন দ্বিজত্বং জায়তে নৃণাম্ ।।
(হরিভক্তিবিলাস ২/১২)
অনুবাদঃ- ঠিক যেমন কাঁসার সঙ্গে পারদের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে কাঁসাকে সোনায় রূপান্তরিত করা যায়, তেমনই সদগুরুর দ্বারা যিনি যথাযথভাবে দীক্ষা ও শিক্ষা লাভ করেছেন, তিনি তৎক্ষণাৎ ব্রাহ্মণরূপে রূপান্তরিত হন।
শ্লোক: 69
চতুর্বিধ-শ্রীভগবৎপ্রসাদ-
স্বাদন্নতৃপ্তান্ হরিভক্তসঙ্ঘান্ ।
কৃত্বৈব তৃপ্তিং ভজতঃ সদৈব
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ।।
(শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর, গুর্বষ্টক-৪)
অনুবাদঃ- যিনি শ্রীকৃষ্ণভক্তবৃন্দকে চর্ব্য, দূষ্য, লেহ্য ও পেয়- এ চতুর্বিধ রসসমন্বিত সুস্বাদু প্রসাদান্ন দ্বারা পরিতৃপ্ত করে (অর্থাৎ প্রসাদ-সেবন জনিত প্রপঞ্চ-নাশ ও প্রেমানন্দের উদয় করিয়ে) স্বয়ং তৃপ্তি লাভ করেন, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।
শ্লোক: 70
ওঁ অজ্ঞান-তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন-শলাকয়া
চক্ষুরুন্মীলিয়তং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।
(গৌতমীয় তন্ত্র, শ্রীগুরু প্রণাম)
অনুবাদঃ- অজ্ঞানের অন্ধকারের দ্বারা আমার চক্ষুদ্বয় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যিনি জ্ঞানের আলোকের দ্বারা তা উন্মীলিত করেছেন, সেই আমার গুরুদেবকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
শ্লোক: 71
হরি হরি ! বিফলে জনম গোঙাইনু ।
মনুষ্য-জনম পাইয়া, রাধাকৃষ্ণ না ভজিয়া,
জানিয়া শুনিয়া বিষ খাইনু ।।
(নরোত্তম দাস ঠাকুর, প্রার্থনা)
অনুবাদঃ- হে শ্রীহরি ! হে শ্রীহরি ! বৃথাই এই জন্ম কাটালাম। এই দুর্লভ মনুষ্যজন্ম পেয়েও শ্রীশ্রীরাধা-কৃষ্ণের ভজনা না করে আমি শুধু জেনে শুনে বিষ পান করলাম।
শ্লোক: 72
প্রবৃত্তিরেষা ভূতানাং নিবৃত্তিস্তু মহাফলম্ ।
(মনু সংহিতা)
অনুবাদঃ- এই জড় জগতে সকলেই প্রবৃত্তি মার্গের প্রতি আসক্ত হয়, কিন্তু নিবৃত্তি মার্গের অনুগমন করেই মহত্তম সম্পদ লাভ করা যায়।
শ্লোক: 73
ওঁ অথাতো ব্রহ্মজিজ্ঞাসা
(বেদান্তসূত্র ১/১/১)
অনুবাদঃ-
অতএব, এখনই ব্রহ্ম-জিজ্ঞাসা (পরমেশ্বর সম্পর্কে) কর্তব্য ।
শ্লোক: 74
যস্য প্রভা প্রভবতো জগদণ্ডকোটি-
কোটিষ্বশেষবসুধাদিবিভূতিভিন্নম্ ।
তদ্ ব্রহ্ম নিষ্কলমনন্তমশেষভূতং
গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
(ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪০)
অনুবাদঃ- অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ডে অনন্ত বসুধাদি বিভূতির দ্বারা যিনি ভেদপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেই পূর্ণ, নিরবচ্ছিন্ন এবং অশেষভূত ব্রহ্ম যাঁর প্রভা, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
শ্লোক: 75
বিদ্যা দদাতি বিনয়ম্
(হিতোপদেশ)
অনুবাদঃ- বিদ্যা বিনয় দান করে।
শ্লোক: 76
বুদ্ধিঃ যস্য বলং তস্য
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- বুদ্ধি যার বল তার ।
শ্লোক: 77
তর্কাপ্রতিষ্ঠানাৎ
(বেদান্তসূত্র ২/১/১১)
অনুবাদঃ- চিন্ময় তত্ত্ব যুক্তি তর্কের দ্বারা উপলব্ধি বা প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
শ্লোক: 78
কর্মকাণ্ড, জ্ঞানকাণ্ড, কেবল বিষের ভাণ্ড,
‘অমৃত’ বলিয়া যেবা খায় ।
নানা যোনি সদা ফিরে, কদর্থ ভক্ষণ করে,
তা’র জন্ম অধঃপাতে যায় ।।
(নরোত্তম দাস ঠাকুর, প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা)
অনুবাদঃ-
শ্লোক: 79
জড়বিদ্যা যত মায়ার বৈভব,
তোমার ভজনে বাধা।
(ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, বিদ্যার বিলাসে-৩)
অনুবাদঃ- সমস্ত জাগতিক জ্ঞান ভগবানের মায়াশক্তির বৈভব এবং তা ভগবৎ-সেবার বিঘ্নস্বরূপ ।
শ্লোক: 80
অসমোর্ধ্ব
(অজ্ঞাত উৎস)
অসম—যাঁর সমান কেউ নেই; ঊর্ধ্ব—কিংবা যাঁর ঊর্ধ্বে কেউ নেই।
অনুবাদঃ- কেউ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সমান বা তাঁর থেকে বড় নয়।
শ্লোক: 81
একং ব্রহ্ম দ্বিতীয়ং নাস্তি
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- ভগবান একজনই, দুজন নন।
শ্লোক: 82
সঃ ভগবান্ স্বয়ং কৃষ্ণ
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- সেই শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান।
শ্লোক: 83
সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- জড় ও চেতন – সব কিছুই পরমেশ্বর ভগবান তথা পরব্রহ্ম থেকে অভিন্ন ।
শ্লোক: 84
নারায়ণ পরোহব্যক্তাৎ
(শঙ্করাচার্য/গীতা-ভাষ্য)
অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান নারায়ণ হচ্ছেন ব্যক্ত ও অব্যক্ত জড় সৃষ্টির অতীত।
শ্লোক: 85
ওঁ আনন্দময়োহভ্যাসাৎ
(বেদান্তসূত্র ১/১/১২)
অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান স্বভাবতই আনন্দময় ।
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) =
বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।