শ্রীমদ্ভাগবতের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
শ্লোক: 136
মুনয়ঃ সাধু পৃষ্টোহহং ভবদ্ভির্লোকমঙ্গলম্ ।
যৎকৃতঃ কৃষ্ণসংপ্রশ্নো যেনাত্মা সুপ্রসীদতি ।।
(ভাগবত ১/২/৫)
অনুবাদঃ- হে ঋষিগণ ! আপনারা আমাকে যথার্থ প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করেছেন। আপনাদের প্রশ্নগুলি অতি উত্তম, কেন না সেগুলি কৃষ্ণ-বিষয়ক এবং তাই তা জগতের মঙ্গল সাধন করে। এই ধরনের পরিপ্রশ্নের দ্বারাই কেবল আত্মা সম্পূর্ণরূপে প্রসন্ন হয়।
(সূত গোস্বামী)
শ্লোক: 137
জ্ঞানং পরমগুহ্যং মে যদ্বিজ্ঞানসমন্বিতম্ ।
সরহস্যং তদঙ্গং চ গৃহাণ গদিতং ময়া ।।
(ভাগবত ২/৯/৩১)
অনুবাদঃ- শাস্ত্রে আমার সম্বন্ধে যে জ্ঞান বর্ণিত হয়েছে তা অত্যন্ত গোপনীয় এবং তা ভক্তি সহকারে উপলব্ধি করতে হয়। সেই পন্থার আনুষঙ্গিক অঙ্গসমূহ আমি বিশ্লেষণ করছি, তুমি তা যত্ন সহকারে গ্রহণ কর।
শ্লোক: 138
এতাবদেব জিজ্ঞাস্যং তত্ত্বজিজ্ঞাসুনাত্মনঃ ।
অন্বয়ব্যতিরেকাভ্যাং যৎ স্যাৎ সর্বত্র সর্বদা ।।
(ভাগবত ২/৯/৩৬)
অনুবাদঃ- তত্ত্বজ্ঞান লাভে আগ্রহী ব্যক্তিকে সেই জন্য সর্ব্ব্যাপ্ত সত্যকে জানার জন্য সর্বদা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনুসন্ধান করতে হবে।
(ব্রহ্মার প্রতি শ্রীকৃষ্ণ)
শ্লোক: 139
ন যদ্বচশ্চিত্রপদং হরের্যশো
জগৎপবিত্রং প্রগৃণীত কর্হিচিৎ ।
তদ্বায়সং তীর্থমুশন্তি মানসা
ন যত্র হংসা নিরমন্ত্ত্যশিক্ক্ষয়াঃ ।।
(ভাগবত ১/৫/১০)
অনুবাদঃ- যে বাণী জগৎ পবিত্রকারী ভগবানের মহিমা বর্ণনা করে না, তাকে সন্ত পুরুষেরা কাকেদের তীর্থ বলে বিবেচনা করেন। ভগবৎ-ধামে নিবাসকারী পরমহংসেরা সেখানে কোন রকম আনন্দ অনুভব করেন না।
শ্লোক: 140
তদ্বাগ্বিসর্গো জনতাঘবিপ্লবো
যস্মিন্ প্রতিশ্লোকমবদ্ধত্যপি ।
নামান্যনন্তস্য যশোহঙ্কিতানি যৎ
শৃন্বন্তি গায়ন্তি গৃণন্তি সাধবঃ ।।
(ভাগবত ১/৫/১১)
অনুবাদঃ- পক্ষান্তরে যে সাহিত্য অন্তহীন পরমেশ্বর ভগবানের নাম, রূপ, যশ, লীলা আদির বর্ণনায় পূর্ণ, তা দিব্য শব্দতরঙ্গে পরিপূর্ণ এক অপূর্ব সৃষ্টি, যা এই জগতের উদ্ভ্রান্ত জনসাধারণের পাপ-পঙ্কিল জীবনে এক বিপ্লবের সূচনা করে। এই অপ্রাকৃত সাহিত্য যদি নির্ভুলভাবে রচিত নাও হয়, তবুও তা সৎ ও নির্মল চিত্ত সাধুরা শ্রবণ করেন, কীর্তন করেন এবং গ্রহণ করেন।
শ্লোক: 141
যথা মানতি ভূতানি ভূতষূচ্চাবচেষ্বনু ।
প্রবিষ্টান্যপ্রবিষ্টানি তথা তেষু ন তেষ্বহম্ ।
(ভাগবত ২/৯/৩৫)
অনুবাদঃ- জড় জগতের উপাদান বা মহাভূতসমূহ যেমন সমস্ত প্রাণীর ভিতরে প্রবিষ্ট হয়েও বাহিরে অপ্রবিষ্টরূপে স্বতন্ত্র বর্তমান থাকে, তেমনই আমিও সমস্ত জড় সৃষ্টির মধ্যে প্রবিষ্ট হয়েও তার মধ্যে অবস্থিত নই।
শ্লোক: 142
ন হ্যস্য কর্হিচিদ্রাজন্ পুমান্ বেদ বিধিৎসিতম্ ।
যদ্বিজিজ্ঞাসয়া যুক্তা মুহ্যন্তি কবয়োহপি হি ।।
(ভাগবত ১/৯/১৬)
অনুবাদঃ- হে রাজন্, পরমেশ্বরের (শ্রীকৃষ্ণের) পরিকল্পনা কেউই জানতে পারে না। এমন কি, মহান দার্শনিকেরাও বিশদ অনুসন্ধিৎসা সহকারে নিয়োজিত থেকেও কেবলই বিভ্রান্ত হন।
(যুধিষ্ঠিরের প্রতি ভীষ্মদেবের উক্তি)
শ্লোক: 143
নায়ং সুখাপো ভগবান্ দেহিনাং গোপিকাসুতঃ ।
জ্ঞানিনাং চাত্মভূতানাং যথা ভক্তিমতামিহ ।।
(ভাগবত ১০/৯/২১)
অনুবাদঃ- যশোদা পুত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাগানুগাভক্তি-পরায়ণ ভক্তদের কাছে যেমন সুলভ, মনোধর্মী জ্ঞানী, ব্রত ও তপস্যা-পরায়ণ আত্মারাম অথবা দেহাত্মবুদ্ধি পরায়ণ ব্যক্তিদের কাছে তেমন সুলভ নন।
(শ্রী শুকদেব গোস্বামী )
শ্লোক: 144
এতদীশনমীশস্য প্রকৃতিস্থোহপি তদগুণৈঃ ।
ন যুজ্যতে সদাত্মস্থৈর্যথা বুদ্ধিস্তদাশ্রয়া ।।
(ভাগবত ১/১১/৩৮)
অনুবাদঃ- জড়া প্রকৃতিতে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও প্রকৃতির গুণের বশীভূত না হওয়াই হচ্ছে ভগবানের ঐশ্বর্য। তেমনই, যাঁরা তাঁর শরণাগত হয়ে তাঁদের বুদ্ধিকে তাঁর মধ্যে স্থির করেন, তাঁরা কখনও প্রকৃতির গুণের দ্বারা প্রভাবিত হন না।
(সূত গোস্বামী)
শ্লোক: 145
হরির্হি নির্গুণঃ সাক্ষাৎ পুরুষঃ প্রকৃতেঃ পরঃ ।
স সর্বদৃগুপদ্রষ্টা তং ভজন্নির্গুণো ভবেৎ ।।
(ভাগবত ১০/৮৮/৫)
অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরি জড়া প্রকৃতির অতীত; তাই তিনি হচ্ছেন সাক্ষাৎ গুণাতীত পুরুষ। অন্তর ও বাইরের সমস্ত বিষয় তিনি দর্শন করতে পারেন। তাই তিনিই হচ্ছেন সমস্ত জীবের পরম অধ্যক্ষ। কেউ যদি তাঁর চরণকমলকে আশ্রয় করে তাঁর ভজনা করেন, তা হলে তিনিও সেই রকম গুণাতীত স্তর লাভ করতে পারেন।
শ্লোক: 146
আত্মারামাশ্চ মুনয়ো নির্গ্রন্থা অপ্যুরুক্রমে ।
কুর্বন্ত্যহৈতুকীং ভক্তিমিত্থম্ভূতগুণো হরিঃ ।।
(ভাগবত ১/৭/১০)
অনুবাদঃ- আত্মাতে যারা রমণ করেন, এরূপ বাসনা-গ্রন্থিশূন্য মুনিরাও অত্যদ্ভূত কার্য সম্পাদনকারী শ্রীকৃষ্ণে অহৈতুকী ভক্তি করেন, কেন না জগতে চিত্তহারী হরির এই রকম একটি গুণ আছে।
শ্লোক: 147
জয়তি জননিবাসো দেবকীজন্মবাদো
যদুবরপরিষৎ স্বৈর্দোর্ভিরস্যন্নধর্মম্ ।
স্থিরচরবৃজিনঘ্নঃ সুস্মিতশ্রীমুখেন
ব্রজপুরবনিতানাং বর্ধয়ন্ কামদেবম্ ।।
(ভাগবত ১০/৯০/৪৮)
অনুবাদঃ- সমস্ত জীবের আশ্রয়স্বরূপ, দেবকীপুত্ররূপে পরিচিত, যদুদের সভাপতি, নিজ বাহুর দ্বারা অধর্ম নাশকারী, স্থাবর-জঙ্গম সমস্ত জীবের অমঙ্গলহারী, মধুর হাস্য মুখের দ্বারা ব্রজবনিতাদের কামবর্ধনকারী শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র জয়যুক্ত হোন।
(শ্রীল শুকদেব গোস্বামী)
শ্লোক: 148
স্বপাদমূলং ভজতঃ প্রিয়স্য
ত্যক্তান্যভাবস্য হরিঃ পরেশঃ ।
বিকর্ম যচ্চোৎপতিতং কথঞ্চিদ্
ধুনোতি সর্বং হৃদি সন্নিবিষ্টঃ ।।
(ভাগবত ১১/৫/৪২)
অনুবাদঃ- যিনি অন্য ভাব পরিত্যাগ করে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্মের পূর্ণ আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, তিনি শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত প্রিয়। তিনি যদি ঘটনাক্রমে কোন পাপ করেও ফেলেন, পরমেশ্বর হৃদয়ে প্রবিষ্ট থেকে তাঁর পাপ বিনষ্ট করে দেন।
শ্লোক: 149
যস্যাহমনুগৃহ্নামি হরিষ্যে তদ্ধনং শনৈঃ ।
(ভাগবত ১০/৮৮/৮)
অনুবাদঃ- আমার ভক্তের প্রতি আমার প্রথম কৃপা হচ্ছে আমি তার সমস্ত জড়-জাগতিক ধনসম্পদ হরণ করি।
শ্লোক: 150
সত্যং দিশত্যর্থিতমর্থিতো নৃণাং
নৈবার্থদো যৎ পুনরর্থিতা যতঃ ।
স্বয়ং বিধত্তে ভজতামনিচ্ছতা-
মিচ্ছাপিধানং নিজপাদপল্লবম্ ।।
(ভাগবত ৫/১৯/২৭)
অনুবাদঃ- কেউ যখন শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ যে তাঁর সেই প্রার্থনা পূর্ণ করেন, সেই কথা সত্য; কিন্তু যা থেকে পুনঃপুনঃ প্রার্থনার উদয় হয়, সেই প্রকার বস্তু তিনি দান করেন না। অন্য কামনাযুক্ত হয়ে কেউ যখন শ্রীকৃষ্ণের ভজনা করেন, তখন তিনি স্বয়ংই তাঁদের অন্য কামনা শান্তিকারী তাঁর শ্রীপাদপদ্মের আশ্রয় দান করেন।
(ভারতবাসীদের উদ্দেশ্যে দেবতাদের উক্তি)
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন=
শ্রীমদ্ভাগবতের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।