সনাতন ধর্মের সুনির্বাচিত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু শ্লোকঃ-

জ্ঞান-ই শক্তি ! নিজের ধর্ম সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জানুন এবং অন্যকেও জানতে উৎসাহিত করুন।

আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।

শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত অন্ত্য ১৬, শ্রীকৃষ্ণের অধরামৃত

  • শ্লোক: 1
    বন্দে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যং কৃষ্ণভাবামৃতং হি যঃ ।
    আস্বাদ্যাস্বাদয়ন্ ভক্তান্ প্রেমদীক্ষামশিক্ষয়ৎ ।। ১ ।।

  • অনুবাদঃ- যিনি কৃষ্ণপ্রেমামৃত স্বয়ং আস্বাদন করে এবং ভক্তদের আস্বাদন করিয়ে, প্রেম দীক্ষা বিষয়ক দিব্য জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেই শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুকে আমি বন্দনা করি।

  • শ্লোক: 2
    জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ ।
    জয়াদ্বৈতচন্দ্র জয় গৌরভক্তবৃন্দ ।। ২ ।।

  • শ্লোকার্থ- শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জয় ! শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর জয় ! শ্রীঅদ্বৈত আচার্য প্রভুর জয় ! এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সমস্ত ভক্তবৃন্দের জয় !

  • শ্লোক: 3
    এইমত মহাপ্রভু রহেন নীলাচলে ।
    ভক্তগণ-সঙ্গে সদা প্রেম-বিহ্বলে ।। ৩ ।।

  • অনুবাদঃ- এইভাবে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সর্বদা ভগবৎ-প্রেমে বিহ্বল হয়ে ভক্তদের সঙ্গে নীলাচলে অবস্থান করছিলেন ।

  • শ্লোক: 4
    বর্ষান্তরে আইলা সব গৌড়ের ভক্তগণ ।
    পূর্ববৎ আসি’ কৈল প্রভুর মিলন ।। ৪।।

  • অনুবাদঃ- পরের বছর, যথারীতি, গৌড়ের সমস্ত ভক্তরা জগন্নাথপুরীতে এলেন, এবং পূর্ববৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সঙ্গে তাঁদের মিলন হল ।

  • শ্লোক: 5
    তাঁ-সবার সঙ্গে আইল কালিদাস নাম ।
    কৃষ্ণনাম বিনা তেঁহো নাহি কহে আন ।। ৫ ।।

  • অনুবাদঃ- তাঁদের সঙ্গে কালিদাস নামক একজন ভক্ত এসেছিলেন। কৃষ্ণনাম ব্যতীত তাঁর মুখে আর অন্য কোন বাণী ছিল না।

  • শ্লোক: 6
    মহাভাগবত তেঁহো সরল উদার।
    কৃষ্ণনাম-‘সঙ্কেতে’ চালায় ব্যবহার ।। ৬ ।।

  • অনুবাদঃ- কালিদাস ছিলেন মহাভাগবত, এবং তাঁর ব্যবহার ছিল অত্যন্ত সরল এবং উদার। তিনি তাঁর ব্যবহারিক কার্যকলাপ কৃষ্ণনাম করতে করতে সম্পাদন করতেন।

  • শ্লোক: 7
    কৌতুকেতে তেঁহো যদি পাশক খেলায় ।
    ‘হরে কৃষ্ণ’ ‘কৃষ্ণ’ করি’ পাশক চালায় ।। ৭ ।।

  • অনুবাদঃ- কৌতুক ছলে তিনি যদি কখনও পাশা খেলতেন, তখন ‘হরেকৃষ্ণ’ ‘কৃষ্ণ’ বলে পাশা চালাতেন।

  • শ্লোক: 8
    রঘুনাথ-দাসের তেঁহো হয় জ্ঞাতি-খুড়া ।
    বৈষ্ণবের উচ্ছিষ্ট খাইতে তেঁহো হৈল বুড়া ।। ৮ ।।

  • অনুবাদঃ- কালিদাস ছিলেন রঘুনাথ দাস গোস্বামীর জ্ঞাতি-খুড়া। তিনি সারাজীবন, এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও, বৈষ্ণবের উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করার চেষ্টা করতেন।

  • শ্লোক: 9
    গৌড়দেশে হয় যত বৈষ্ণবের গণ।
    সবার উচ্ছিষ্ট তেঁহো করিল ভোজন ।। ৯ ।।
  • অনুবাদঃ- তিনি বঙ্গদেশের সমস্ত বৈষ্ণবদের উচ্ছিষ্ট ভোজন করেছিলেন।

  • শ্লোক: 10
    ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণব যত-ছোট, বড় হয় ।
    উত্তম-বস্তু ভেট লঞা তাঁর ঠাঞি যায় ।। ১০ ।।
  • অনুবাদঃ- ছোট, বড় যত ব্রাহ্মণ এবং বৈষ্ণব ছিলেন, অতি উত্তম সমস্ত উপহার নিয়ে তিনি তাঁদের কাছে যেতেন।

  • শ্লোক: 11
    তাঁর ঠাঞি শেশ-পাত্র লয়েন মাগিয়া ।
    কাঁহা না পায়, তবে রহে লুকাঞা ।। ১১।।
  • অনুবাদঃ- তারপর তাঁদের খাইয়ে তিনি তাঁদের উচ্ছিষ্ট ভিক্ষা করতেন, এবং কেউ যদি তাঁকে উচ্ছিষ্ট দিতে অস্বীকার করতেন, তিনি তখন লুকিয়ে থাকতেন।

  • শ্লোক: 12
    ভোজন করিলে পাত্র ফেলাঞা যায়া ।
    লুকাঞা সেই পাত্র আনি’ চাটি’ খায় ।। ১২ ।।
  • অনুবাদঃ- সেই বৈষ্ণব যখন ভোজনের পর তাঁর পাত্র ফেলে দিয়ে যেতেন, তখন কালিদাস লুকিয়ে সেই পাত্র এসে চেটে উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করতেন।

  • শ্লোক: 13
    শূদ্র-বৈষ্ণবের ঘরে যায় ভেট লঞা ।
    এইমত তাঁর উচ্ছিষ্ট খায় লুকাঞা ।। ১৩ ।।
  • অনুবাদঃ- কালিদাস শূদ্র-কুলোদ্ভূত বৈষ্ণবদের গৃহে উপহার নিয়ে যেতেন, এবং এইভাবে লুকিয়ে তাঁদের উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করতেন।

  • শ্লোক: 14
    ভুঁইমালি-জাতি, ‘বৈষ্ণব’—‘ঝড়ু’ তাঁর নাম।
    আম্রফল লঞা তেঁহো গেলা তাঁর স্থান ।। ১৪ ।।
  • অনুবাদঃ- ঝড়ু ঠাকুর নামক এক মহান বৈষ্ণব ছিলেন, যিনি ‘ভুঁইমালি’ কুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কালিদাস আম নিয়ে তাঁর কাছে গেলেন।

  • শ্লোক: 15
    আম্র ভেট দিয়া তাঁর চরণ বন্দিলা ।
    তাঁর পত্নীরে তবে নমস্কার কৈলা ।। ১৫।।
  • অনুবাদঃ- কালিদাস ঝড়ু ঠাকুরকে সেই আম উপহার দিয়ে তাঁর চরণ বন্দনা করলেন, এবং তারপর তাঁর পত্নীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন।

  • শ্লোক: 16
    পত্নী-সহিত তেঁহো আছেন বসিয়া ।
    বহু সম্মান কৈলা কালিদাসেরে দেখিয়া ।। ১৬।।
  • অনুবাদঃ- ঝড়ু ঠাকুর তখন তাঁর পত্নীর সঙ্গে বসে ছিলেন, কালিদাসকে দেখে তিনি তাঁর বহু সম্মান করলেন।

  • শ্লোক: 17 & 18
    ইষ্টগোষ্ঠী কতক্ষণ করি’ তাঁর সনে ।
    ঝড়ু-ঠাকুর কহে তাঁরে মধুর বচনে ।। ১৭।।
    “আমি—নীচজাতি, তুমি—অতিথি সর্বোত্তম ।
    কোন্ প্রকারে করিমু আমি তোমার সেবন ? ১৮।।
  • অনুবাদঃ- কালিদাসের সঙ্গে কিছুক্ষণ কৃষ্ণকথা আলোচনা করার পর, ঝড়ু ঠাকুর তাঁকে মধুর বচনে বললেন, “আমি অত্যন্ত নীচ কুলোদ্ভূত, আর আপনি সর্বোত্তম অতিথি। কিভাবে আমি আপনার সেবা করতে পারি ?”

  • শ্লোক: 19
    আজ্ঞা দেহ’,-- ব্রাহ্মণ-ঘরে অন্ন লঞা দিয়ে ।
    তাঁহা তুমি প্রসাদ পাও, তবে আমি জীয়ে ।।” ১৯।।
  • অনুবাদঃ- “আপনি যদি আমাকে আদেশ দেন, তাহলে আমি কোন ব্রাহ্মণের গৃহে অন্ন পাঠিয়ে দেব, এবং সেখানে আপনি প্রসাদ পাবেন। আপনি যদি তা করেন, তাহলে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব।”

  • শ্লোক: 20
    কালিদাস কহে, --“ঠাকুর, কৃপা কর মোরে ।
    তোমার দর্শনে আইনু মুই পতিত পামরে ।। ২০।।
  • অনুবাদঃ- কালিদাস তার উত্তরে বললেন, “ঠাকুর, আমাকে আপনি কৃপা করুন। আমি অত্যন্ত অধঃপতিত পাপী, তথাপি আমি আপনাকে দর্শন করতে এসেছি।”

  • শ্লোক: 21
    পবিত্র হইনু মুই পাইনু দরশন ।
    কৃতার্থ হইনু, মোর সফল জীবন ।। ২১ ।।
  • অনুবাদঃ- “কেবল আপনাকে দর্শন করার ফলে আমি পবিত্র হয়েছি। আমি কৃতার্থ হলাম, এবং আমার জীবন সফল হল।”

  • শ্লোক: 22
    এক বাঞ্ছা হয়, --যদি কৃপা করি’ কর।
    পাদরজ দেহ’, পাদ মোর মাথে ধর ।।” ২২।।
  • অনুবাদঃ- “আমার একটি বাসনা রয়েছে। দয়া করে আমার প্রতি কৃপা পরবশ হয়ে আপনি আপনার পা আমার মাথায় রাখুন, যাতে আমি আপনার পদধূলি লাভ করতে পারি।”

  • শ্লোক: 23
    ঠাকুর কহে,-- “ঐছে বাত্ কহিতে না যুয়ায় ।
    আমি –নীচজাতি, তুমি –সুসজ্জন রায় ।।” ২৩।।
  • অনুবাদঃ- ঝড়ু ঠাকুর তার উত্তরে বললেন, “আপনার এইভাবে কথা বলা উচিত নয়। আমি অত্যন্ত নীচ-জাতি, আর আপনি অতি সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যক্তি।”

  • শ্লোক: 24
    তবে কালিদাস শ্লোক পড়ি’ শুনাইল ।
    শুনি’ ঝড়ু-ঠাকুরের বড় সুখ হইল ।। ।২৪।।
  • অনুবাদঃ- তখন কালিদাস কয়েকটি শ্লোক পড়ে শোনালেন, এবং তা শুনে ঝড়ু-ঠাকুর অত্যন্ত আনন্দিত হলেন।

  • শ্লোক: 25
    ন মেহভক্তশ্চতুর্বেদী মদ্ভক্তঃ শ্বপচঃ প্রিয়ঃ ।
    তস্মৈ দেয়ং ততো গ্রাহ্যং স চ পূজ্যো যথা হ্যহম্ ।। ২৫।।
  • অনুবাদঃ- অনুবাদ “ চতুর্বেদ পাঠী অর্থাৎ চতুর্বেদী ব্রাহ্মণ হলেই এ যে ভক্ত হয়, এমন নয়। আমার ভক্ত চণ্ডাল কুলে জন্মগ্রহণ করলেও আমার অত্যন্ত প্রিয়। তাকেই দান করা উচিত; এবং তাঁর প্রসাদই গ্রহণ করা উচিত। আমার ভক্ত আমারই মতো পূজ্য। ” তাৎপর্য – হরিভক্তিবিলাসের এই শ্লোকটি পরমেশ্বর ভগবানের উক্তি ।

  • এরপর দেখুন= চৈতন্য চরিতামৃত থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

  • Add_6

    আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।

    সুনির্বাচিত শ্লোকঃ-

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।

    Say something

    Please enter name.
    Please enter valid email adress.
    Please enter your comment.