বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু শ্লোক
শ্লোক: 36
নারীস্তনা ভারং নাভিদেশং
দৃষ্ট্বা মা গা মোহ বেশ্যাম্ ।
এতাং মাংস বাসাদি বিকারা
মনসি বিচিন্তায় ভারং ভারম্ ।
(শঙ্করাচার্য)
অনুবাদঃ- নারীদের স্তনভার ও সরু নাভিদেশের তথাকথিত সৌন্দর্য দর্শন করে মোহগ্রস্ত বা উত্তেজিত হয়ো না। কারণ, এই আকর্ষণীয় অঙ্গগুলি শুধু চর্বি, মাংস আদি জঘন্য বস্তুর সমন্বয় মাত্র। এই কথা মনে মনে গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করা উচিত।
শ্লোক: 37
শ্রুতিমপরে স্মৃতিমিতরে ভারতমন্যে ভজন্তু ভবভীতাঃ ।
অহমিহ নন্দং বন্দে যস্যালিন্দে পরং ব্রহ্ম ।।
(পদ্যাবলী ১২৬)
অনুবাদঃ- সংসার ভয়ে ভীত মানুষেরা কেউ শ্রুতিকে, কেউ স্মৃতিকে, কেউ বা মহাভারতকে ভজনা করুন; আমি কিন্তু কেবল শ্রীনন্দেরই বন্দনা করি – যাঁর অলিন্দে শ্রীকৃষ্ণ খেলা করেন। (রঘুপতি উপাধ্যায়/ রূপ গোস্বামী)
শ্লোক: 38
তুমি ত ঠাকুর, তোমার কুক্কুর,
বলিয়া জানহ মোরে।
(ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, শরণাগতি)
অনুবাদঃ- তুমি তো পরমেশ্বর ভগবান, অনুগ্রহ করে আমাকে তোমার পোষা কুকুর বলে গণ্য করবে।
শ্লোক: 39
কীটজন্ম হউ যথা তুয়া দাস ।
বহির্মুখ ব্রহ্মজন্মে নাহি আশ ।।
(ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, মানস দেহ গেহ ৫)
অনুবাদঃ- তোমার ভক্ত হয়ে, যেখানে তোমার ভক্তদের বাস, সেখানে কীটরূপে জন্ম নিতেও আমি প্রস্তুত। তবে তোমার প্রতি ভক্তিহীন হয়ে ব্রহ্মার জন্ম লাভ করার ইচ্ছাও আমার নেই।
শ্লোক: 40
হা হা প্রভু নন্দসুত, বৃষভানুসুতাযুত,
করুণা করহ এইবার ।
নরোত্তমদাস কয়, না ঠেলিহ রাঙ্গা পায়,
তোমা বিনা কে আছে আমার।।
(নরোত্তম দাস ঠাকুর)
অনুবাদঃ- হে শ্রীকৃষ্ণ! হে নন্দসুত! হে বৃষভানুর কন্যা শ্রীমতি রাধার সঙ্গী! আমাকে এবার করুণা কর। অবশেষে আমি তোমার রাঙ্গাচরণ পেলাম। কৃপা করে আমাকে সেখান থেকে ঠেলে দিও না। তুমি ছাড়া আমার আশ্রয় আর কে আছে?
শ্লোক: 41
বিষ্ণু অস্য দেবতা ইতি বৈষ্ণবঃ ।
(অজ্ঞাত উৎস)
অনুবাদঃ- যিনি ভগবান বিষ্ণুকে তাঁর আরাধ্যদেব রূপে গ্রহণ করেছেন, তিনিই বৈষ্ণব ।
শ্লোক: 42
নানাশাস্ত্র-বিচারণৈক-নিপুণৌ সদ্ধর্ম-সংস্থাপকৌ
লোকানাং হিতকারিণৌ ত্রিভুবনে মানৌ শরণ্যাকরৌ ।
রাধাকৃষ্ণ-পদারবিন্দভজনানন্দেন মত্তালিকৌ
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ।।
(শ্রীশ্রীষড়্ গোস্বামী-অষ্টক-২)
অনুবাদঃ- যাঁরা বিবিধ শাস্ত্র-বিচারে পরম নিপুণ, সৎ-ধর্মের স্থাপনকর্তা, মানবগণের পরম মঙ্গলকারী, ত্রিভুবন-পূজ্য, আশ্রয়দাতা ও শ্রীরাধা-গোবিন্দের পদারবিন্দ ভজনানন্দে প্রমত্ত মধুকর-সদৃশ আমি বারবার সেই শ্রীরূপ, সনাতন, রঘুনাথ ভট্ট, গোপাল ভট্ট, রঘুনাথ দাস ও শ্রীজীব গোস্বামীপাদগণের বন্দনা করি।
(শ্রীনিবাস আচার্য)
শ্লোক: 43
ত্যক্ত্বা তূর্ণমশেষ-মণ্ডলপতিশ্রেণীং সদা তুচ্ছবৎ
ভূত্বা দীনগণেশকৌ করুণয়া কৌপীন-কন্থাশ্রিতৌ ।
গোপীভাব-রসামৃতাব্ধিলহরী-কল্লোল-মগ্নৌমুহু-
র্বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ।।
(শ্রীশ্রীষড়্ গোস্বামী-অষ্টক-৪)
অনুবাদঃ- যাঁরা অসংখ্য মণ্ডলপতিদের সহবাস ঝটিতি তুচ্ছবৎ পরিত্যাগ করে কৃপাপূর্বক দীনহীনগণের পতি হয়ে কৌপীনকন্থা অবলম্বন করেছিলেন এবং যাঁরা গোপীপ্রেম-রসামৃত-সিন্ধু-তরঙ্গে সদাই নিমগ্ন ছিলেন, আমি বারবার সেই শ্রীরূপ, সনাতন, রঘুনাথ ভট্ট, গোপাল ভট্ট, রঘুনাথ দাস ও শ্রীজীব গোস্বামীপাদগণের বন্দনা করি।
(শ্রীনিবাস আচার্য)
শ্লোক: 44
সংখ্যাপূর্বক-নাম-গান-নতিভিঃ কালাবসানীকৃতৌ
নিদ্রাহার-বিহারকাদি-বিজিতৌ চাতন্ত্যদীনৌ চ যৌ ।
রাধাকৃষ্ণ-গুণ-স্মৃতের্মধুরিমানন্দেন সম্মোহিতৌ
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ।।
(শ্রীশ্রীষড়্ গোস্বামী-অষ্টক-৬)
অনুবাদঃ- যাঁরা সংখ্যাপূর্বক নাম-জপ, কীর্তন ও প্রণাম করে সময় অতিবাহিত করতেন, যাঁরা আহার-বিহার-নিদ্রা আদি জয় করেছিলেন, যাঁরা অত্যন্ত দীন-হীনের মতো বিচরণ করতেন এবং যাঁরা শ্রীশ্রীরাধা-গোবিন্দের গুণ-মাধুর্য স্মরণ করে পরমানন্দে বিভোর হতেন, আমি বারবার সেই শ্রীরূপ, সনাতন, রঘুনাথ ভট্ট, গোপালভট্ট, রঘুনাথ দাস ও শ্রীজীব গোস্বামীপাদগণের বন্দনা করি।
(শ্রীনিবাস আচার্য)
শ্লোক: 45
হে রাধে ব্রজদেবিকে চ ললিতে হে নন্দসূনো কুতঃ
শ্রীগোবর্ধন-কল্পপাদপ-তলে কালিন্দী-বন্যে কুতঃ ।
ঘোষন্তাবিতি সর্বতো ব্রজপুরে খেদৈর্মহাবিহ্বলৌ
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ।।
(শ্রীশ্রীষড়্ গোস্বামী-অষ্টক-৮)
অনুবাদঃ- “হে ব্রজদেবী রাধে! তুমি কোথায়? হে ললিতে! তুমি কোথায়? হে কৃষ্ণ! তুমি কোথায়? তোমরা কি শ্রীগোবর্ধনের কল্পতরুতলে, না কালিন্দী-কূলস্থ বনমধ্যে,”- এভাবেই বলতে বলতে যাঁরা নিরতিশয় শোকাতুর হয়ে ব্রজভূমির সর্বত্র ব্যাকুলভাবে পরিভ্রমণ করতেন, আমি বার-বার সেই শ্রীরূপ, সনাতন, রঘুনাথ ভট্ট, গোপাল ভট্ট, রঘুনাথ দাস ও শ্রীজীব গোস্বামীপাদগণের বন্দনা করি।
(শ্রীনিবাস আচার্য)
শ্লোক: 46
নাহং বিপ্রো ন চ নরপতির্নাপি বৈশ্যো ন শূদ্রো
নাহং বর্ণী ন চ গৃহপতির্নো বনস্থো যতির্বা ।
কিন্তু প্রোদ্যন্নিখিলপরমানন্দপূর্ণামৃতাব্ধে-
র্গোপীভর্তুঃ পদকমলয়োর্দাসদাসানুদাসঃ ।।
(পদ্যাবলী ৭৪)
অনুবাদঃ- আমি ব্রাহ্মণ নই, ক্ষত্রিয় রাজা নই, বৈশ্য বা শূদ্র নই, ব্রহ্মচারী নই, গৃহস্থ নই, বাণপ্রস্থ নই, সন্ন্যাসীও নই। কিন্তু আমি নিত্য স্বতঃ প্রকাশমান নিখিল পরমানন্দপূর্ণ অমৃত-সমুদ্ররূপ শ্রীকৃষ্ণের পদকমলের দাসের অনুদাসের দাস। (রূপ গোস্বামী)
শ্লোক: 47
চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠো হরিভক্তিপরায়ণঃ ।
হরিভক্তিবিহীনশ্চ দ্বিজোহপি শ্বপচাধমঃ ।।
(অজ্ঞাত উৎস, শাস্ত্র নির্দেশ)
অনুবাদঃ- চণ্ডালকুলে জন্ম হলেও, কোন ব্যক্তি যদি হরিভক্তি-পরায়ণ হন, তা হলে তিনিও শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণে পরিণত হন। কিন্তু হরিভক্তি-বিহীন ব্যক্তি যদি ব্রাহ্মণও হন, তিনি কুকুরভোজী চণ্ডাল থেকেও অধম।
শ্লোক: 48
মুক্তিপ্রদাতা সর্বেষাং বিষ্ণুরেব ন সংশয়ঃ ।
(শিব)
অনুবাদঃ- ভগবান শ্রীবিষ্ণুই যে সকলের মুক্তি-প্রদাতা, এতে কোন সংশয় নেই।
শ্লোক: 49
ভক্তিস্ত্বয়ি স্থিরতরা ভগবন্ যদি স্যাদ্
দৈবেন নঃ ফলতি দিব্যকিশোরমূর্তিঃ ।
মুক্তি স্বয়ং মুকুলিতাঞ্জলি সেবতেহস্মান্
ধর্মার্থকামগতয়ঃ সময়প্রতীক্ষাঃ ।।
(কৃষ্ণকর্ণমৃত)
অনুবাদঃ- হে ভগবান! কেউ যদি স্থিরভাবে তোমার প্রতি শুদ্ধ ভক্তমূলক সেবা সম্পাদনে নিযুক্ত হন, তা হলে তুমি তাঁর কাছে তোমার দিব্য কিশোররূপে প্রকটিত হও। মুক্তিদেবী স্বয়ং অঞ্জলিবদ্ধ হয়ে শুদ্ধ ভক্তের সেবা করার জন্য অপেক্ষা করেন। ধর্ম, অর্থ ও কাম তখন পৃথক চেষ্টা ছাড়াই স্বতস্ফূর্তভাবে লাভ করা যায়।
(বিল্বমঙ্গল ঠাকুর)
শ্লোক: 50
স্থানাভিলাষী তপসি স্থিতোহহং
ত্বাং প্রাপ্তবান্ দেবমুনীন্দ্রগুহ্যম্ ।
কাচং বিচিন্বন্নপি দিব্যরত্নং
স্বামিন্ কৃতার্থোহস্মি বরং ন যাচে ।।
(হরিভক্তিসুধোদয় ৭/২৮)
অনুবাদঃ- (ভগবান যখন ধ্রুব মহারাজকে বর দিচ্ছিলেন, তখন ধ্রুব মহারাজ বলেছিলেন--) “হে ভগবান, জড়-জাগতিক ঐশ্বর্য এবং পদের কামনা নিয়ে আমি কঠোর তপস্যায় স্থিত হয়েছিলাম। এখন আমি শ্রেষ্ঠ দেবতা এবং মুনিদেরও দুর্লভ আপনাকে লাভ করেছি। আমি এক টুকরো ভাঙ্গা কাঁচের অনুসন্ধান করছিলাম। আমি দিব্যরত্ন লাভ করেছি। তাই আমি এতই কৃতার্থ বোধ করছি যে, আপনার কাছে কোন বর আমি চাই না। ”
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) =
বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।