সনাতন ধর্মের সুনির্বাচিত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু শ্লোকঃ-

জ্ঞান-ই শক্তি ! নিজের ধর্ম সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জানুন এবং অন্যকেও জানতে উৎসাহিত করুন।

আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।

মায়া সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

  • শ্লোক: 17

    ত্রিভির্গুণময়ৈর্ভাবৈরেভিঃ সর্বমিদং জগৎ ।
    মোহিতং নাভিজানাতি মামেভ্যঃ পরমব্যয়ম্ ॥
    (গীতা ৭/১৩)
  • অনুবাদঃ- (সত্ত্ব, রজ ও তম) তিনটি গুণের দ্বারা মোহিত হওয়ার ফলে সমগ্র জগৎ এই সমস্ত গুণের অতীত ও অব্যয় আমাকে জানতে পারে না।

  • শ্লোক: 18

    প্রকৃতেঃ ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ ।
    অহঙ্কারবিমূঢ়াত্মা কর্তাহমিতি মন্যতে ॥
    (গীতা ৩/২৭)
  • অনুবাদঃ- অন্ধকারে মোহাচ্ছন্ন জীব জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণ দ্বারা ক্রিয়মাণ সমস্ত কার্যকে স্বীয় কার্য বলে মনে করে 'আমি কর্তা'- এই রকম অভিমান করে।

  • শ্লোক: 19

    ভক্তিযোগেন মনসি সম্যক্ প্রণিহিতেহমলে ।
    অপশ্যৎপুরুষং পূর্ণং মায়াং চ তদপাশ্রয়ম্ ।।
    (ভাগবত ১/৭/৪)
  • অনুবাদঃ- এভাবেই তাঁর মনকে একাগ্র করে জড় কলুষ থেকে সর্বতোভাবে মুক্ত হয়ে তিনি যখন পূর্ণরূপে ভক্তিযোগে যুক্ত হয়েছিলেন, তখন তিনি পরমেশ্বর ভগবানকে তাঁর মায়াশক্তি সহ দর্শন করেছিলেন, যে মায়া পূর্ণরূপে তাঁর বশীভূত ছিল।

  • শ্লোক: 20

    যয়া সম্মোহিতো জীব আত্মানং ত্রিগুণাত্মকম্ ।
    পরোহপি মনুতেহনর্থং তৎকৃতং চাভিপদ্যতে ।।
    (ভাগবত ১/৭/৫)
  • অনুবাদঃ- এই বহিরঙ্গা শক্তির প্রভাবে জীব প্রকৃতির তিনটি গুণের অতীত হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে জড়া প্রকৃতি সম্ভূত বলে মনে করে এবং তার ফলে জড় জগতের দুঃখ-ভোগ করে।

  • শ্লোক: 21

    অহন্যহনি ভূতানি গচ্ছন্তীহ যমালয়ম্ ।
    শেষাঃ স্থাবরমিচ্ছন্তি কিমাশ্চর্যমতঃ পরম্ ।।
    (মহাভারত, বনপর্ব, ৩১৩/১১৬)
  • অনুবাদঃ- প্রতিদিন শত সহস্র লক্ষ জীব যমালয়ে গমন করে। তবুও, যারা এখনও অবশিষ্ট রয়েছে তারা এখানে স্থায়ীভাবে বাস করতে চায়। এর থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় আর কি হতে পারে?

  • শ্লোক: 22

    দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া ।
    মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ॥
    (গীতা ৭/১৪)
  • অনুবাদঃ- আমার এই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমণীয়া। কিন্তু যাঁরা আমাতে প্রপত্তি করেন, তাঁরাই এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারেন।

  • শ্লোক: 23

    সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয়সাধনশক্তিরেকা
    ছায়েব যস্য ভুবনানি বিভর্তি দুর্গা ।
    ইচ্ছানুরূপমপি যস্য চ চেষ্টতে সা
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৪)
  • অনুবাদঃ- স্বরূপশক্তি বা চিৎ-শক্তির ছায়াস্বরূপা প্রাপঞ্চিক জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-সাধিনী মায়াশক্তিই ভুবন-পূজিতা দুর্গা। তিনি যাঁর ইচ্ছানুরূপ চেষ্টা করেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।

  • শ্লোক: 24

    ভোগৈশ্বর্যপ্রসক্তানাং তয়াপহৃতচেতসাম্ ।
    ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিঃ সমাধৌ ন বিধীয়তে ।।
    (গীতা ২/৪৪)
  • অনুবাদঃ- যারা ভোগ ও ঐশ্বর্যসুখে একান্ত আসক্ত, সেই সমস্ত বিবেকবর্জিত মূঢ় ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থাৎ ভগবানে একনিষ্ঠতা লাভ হয় না।

  • শ্লোক: 25

    ধ্যায়তো বিষয়ান্ পুংসঃ সঙ্গস্তেষূপজায়তে ।
    সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে কামঃ কামাৎ ক্রোধোহভিজায়তে ॥
    (গীতা ২/৬২)
  • অনুবাদঃ- ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহ সম্বন্ধে চিন্তা করতে করতে মানুষের তাতে আসক্তি জন্মায়, আসক্তি থেকে কাম উৎপন্ন হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উৎপন্ন হয় ।

  • শ্লোক: 26

    ক্রোধাদ্ ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ ।
    স্মৃতিভ্রংশাদ্ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি ॥
    (গীতা ২/৬৩)
  • অনুবাদঃ- ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতিবিভ্রম, স্মৃতিবিভ্রম থেকে বুদ্ধিনাশ এবং বুদ্ধিনাশ হওয়ার ফলে সর্বনাশ হয়। অর্থাৎ, মানুষ পুনরায় জড় জগতের অন্ধকূপে অধঃপতিত হয়।

  • শ্লোক: 27

    ইন্দ্রিয়াণাং হি চরতাং যন্মনোহনুবিধীয়তে ।
    তদস্য হরতি প্রজ্ঞাং বায়ুর্নাবমিবাম্ভসি ॥
    (গীতা ২/৬৭)
  • অনুবাদঃ- প্রতিকূল বায়ু নৌকাকে যেমন অস্থির করে, তেমনই সদা বিচরণকারী যে কোন একটি মাত্র ইন্দ্রিয়ের আকর্ষণেও মন অসংযত ব্যক্তির প্রজ্ঞাকে হরণ করতে পারে।

  • শ্লোক: 28

    কাম এষ ক্রোধ এষ রজোগুণসমুদ্ভবঃ ।
    মহাশনো মহাপাপ্মা বিদ্ধ্যেনমিহ বৈরিণম্ ॥
    (গীতা ৩/৩৭)
  • অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে অর্জুন ! রজোগুণ থেকে সমুদ্ভূত কামই মানুষকে এই পাপে প্রবৃত্ত করে এবং এই কামই ক্রোধে পরিণত হয়। কাম সর্বগ্রাসী ও পাপাত্মক; কামকেই জীবের প্রধান শত্রু বলে জানবে।

  • শ্লোক: 29

    ইন্দ্রিয়াণি পরাণ্যাহুরিন্দ্রিয়েভ্যঃ পরং মনঃ ।
    মনসস্তু পরা বুদ্ধির্যো বুদ্ধেঃ পরতস্ত্ত সঃ ॥
    (গীতা ৩/৪২)
  • অনুবাদঃ- স্থূল জড় পদার্থ থেকে ইন্দ্রিয়গুলি শ্রেয়; ইন্দ্রিয়গুলি থেকে মন শ্রেয়; মন থেকে বুদ্ধি শ্রেয়; আর তিনি (আত্মা) সেই বুদ্ধি থেকেও শ্রেয়।

  • শ্লোক: 30

    যে হি সংস্পর্শজা ভোগা দুঃখযোনয় এব তে ।
    আদ্যন্তবন্তঃ কৌন্তেয় ন তেষু রমতে বুধঃ ॥
    (গীতা ৫/২২)
  • অনুবাদঃ- বিবেকবান পুরুষ দুঃখের কারণ যে ইন্দ্রিয়জাত বিষয়ভোগ তাতে আসক্ত হন না। হে কৌন্তেয় ! এই ধরনের সুখভোগ আদি ও অন্তবিশিষ্ট৷ তাই, জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাতে প্রীতি লাভ করেন না।

  • শ্লোক: 31

    তস্যৈব হেতোঃ প্রয়তেত কোবিদো
    ন লভ্যতে যদ্ভ্রমতামুপর্যধঃ ।
    তল্লভ্যতে দুঃখবদন্যতঃ সুখং
    কালেন সর্বত্র গভীররংহসা ।।
    (ভাগবত ১/৫/১৮)
  • অনুবাদঃ- যে সমস্ত মানুষ যথার্থই বুদ্ধিমান এবং পরমার্থ বিষয়ে উৎসাহী, তাদের কর্তব্য হচ্ছে সেই চরম লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য প্রয়াস করা, যা এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ লোক (ব্রহ্মলোক) থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন লোক (পাতাল লোক) পর্যন্ত ভ্রমণ করেও লাভ করা যায় না । ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে লব্ধ যে জড় সুখ, তা কালের প্রভাবে আপনা থেকেই লাভ হয়, ঠিক যেমন আকাঙ্ক্ষা না করলেও কালক্রমে আমরা দুঃখভোগ করে থাকি।

  • শ্লোক: 32

    জীব জাগ, জীব জাগ, গোরাচাঁদ বলে ।
    কত নিদ্রা যাও মায়া-পিশাচীর কোলে ।।
    (ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, অরুণোদয় কীর্তন ২)
  • অনুবাদঃ- গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু ডেকে বলছেন। হে ঘুমন্ত জীবসকল! উঠ, জেগে উঠ। মায়া পিশাচীর কোলে অনেক ঘুমিয়েছ। আর কত ঘুমাবে?

  • (সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন= মায়া সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

  • Add_6

    আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।

    সুনির্বাচিত শ্লোকঃ-

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।