বর্ণাশ্রম সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
শ্লোক: 1
চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ ।
তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্ ।।
(গীতা ৪/১৩)
অনুবাদঃ- প্রকৃতির তিনটি গুণ ও কর্ম অনুসারে আমি মানব-সমাজে চারটি বর্ণবিভাগ সৃষ্টি করেছি । আমি এই প্রথার স্রষ্টা হলেও আমাকে অকর্তা এবং অব্যয় বলে জানবে।
শ্লোক: 2
যস্য যল্লক্ষণং প্রোক্তং পুংসো বর্ণাভিব্যঞ্জকম্ ।
যদন্যত্রাপি দৃশ্যেত তত্তেনৈব বিনির্দিশেৎ ।।
(ভাগবত ৭/১১/৩৫)
অনুবাদঃ- কোনও ব্যক্তি যদি ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্রের উপরোক্ত লক্ষণগুলি প্রদর্শন করে, তা হলে সে যদি অন্য বর্ণেও জাত হয়, তবুও তাকে ওই সমস্ত লক্ষণ অনুসারেই বিশেষ বর্ণের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করতে হবে।
(মহারাজ যুধিষ্ঠিরের প্রতি নারদ মুনির উক্তি)
শ্লোক: 3
শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ ।
জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম্ ॥
(গীতা ১৮/৪২)
অনুবাদঃ- শম, দম, তপ, শৌচ, ক্ষান্তি, সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য- এগুলি ব্রাহ্মণদের স্বভাবজাত কর্ম।
শ্লোক: 4
শৌর্যং তেজো ধৃতির্দাক্ষ্যং যুদ্ধে চাপ্যপলায়নম্ ।
দানমীশ্বরভাবশ্চ ক্ষাত্রং কর্ম স্বভাবজম্ ॥
(গীতা ১৮/৪৩)
অনুবাদঃ- শৌর্য, তেজ, ধৃতি, দক্ষতা, যুদ্ধে অপলায়্ন, দান ও শাসন ক্ষমতা- এগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম ।
শ্লোক: 5
কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম্ ।
পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বভাবজম্ ॥
(গীতা ১৮/৪৪)
অনুবাদঃ- কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য এই কয়েকটি বৈশ্যের স্বভাবজাত কর্ম এবং পরিচর্যাত্মক কর্ম শূদ্রের স্বভাবজাত ।
শ্লোক: 6
স্বে স্বে কর্মণ্যভিরতঃ সংসিদ্ধিং লভতে নরঃ ।
স্বকর্মনিরতঃ সিদ্ধিং যথা বিন্দতি তচ্ছৃণু ॥
(গীতা ১৮/৪৫)
অনুবাদঃ- নিজ নিজ কর্মে নিরত মানুষ সিদ্ধি লাভ করে থাকে৷স্বীয় কর্মে যুক্ত মানুষ যেভাবে সিদ্ধি লাভ করে, তা শ্রবণ কর।
শ্লোক: 7
যতঃ প্রবৃত্তির্ভূতানাং যেন সর্বমিদং ততম্ ।
স্বকর্মণা তমভ্যর্চ্য সিদ্ধিং বিন্দতি মানবঃ ॥
(গীতা ১৮/৪৬)
অনুবাদঃ- যাঁর থেকে সমস্ত জীবের পূর্ব বাসনারূপ প্রবৃত্তি হয়, যিনি এই সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্ত আছেন, তাঁকে মানুষ তার নিজের কর্মের দ্বারা অর্চন করে সিদ্ধি লাভ করে।
শ্লোক: 8
বর্ণাশ্রমাচারবতা পুরুষেণ পর পুমান্ ।
বিষ্ণুরারাধ্যতে পন্থা নান্যত্তত্তোষকারণম্ ।।
(বিষ্ণু পুরাণ ৩/৮/৯)
অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান বিষ্ণু বর্ণধর্ম ও আশ্রমধর্মের আচারযুক্ত পুরুষদের দ্বারা আরাধিত হন। বর্ণাশ্রম আচার ব্যতীত তাঁকে পরিতুষ্ট করার অন্য কোন উপায় নেই।
শ্লোক: 9
য এষাং পুরুষং সাক্ষাদাত্মপ্রভবমীশ্বরম্ ।
ন ভজন্ত্যবজানন্তি স্থানাদ্ ভ্রষ্টাঃ পতন্ত্যধঃ ।।
(ভাগবত ১১/৫/৩)
অনুবাদঃ- এই চার বর্ণাশ্রমের মধ্যে যারা তাদের প্রভু ভগবান বিষ্ণুর সাক্ষাৎ ভজন না করে, নিজের নিজের বর্ণ ও আশ্রমের অহংকারে তাঁর ভজনে অবজ্ঞা করে, তারা স্থান ভ্রষ্ট হয়ে অধঃ পতিত হয়।
শ্লোক: 10
ধর্মঃ স্বনুষ্ঠিতঃ পুংসাং বিষ্বক্ সেনকথাসু যঃ ।
নোৎপাদয়েদ্ যদি রতিং শ্রম এব হি কেবলম্ ।।
(ভাগবত ১/২/৮)
অনুবাদঃ- স্বীয় বৃত্তি অনুসারে বর্ণাশ্রম পালনরূপ স্বধর্ম অনুষ্ঠান করার ফলেও যদি পরমেশ্বর ভগবানের মহিমা শ্রবণ-কীর্তনে আসক্তির উদয় না হয়, তা হলে তা বৃথা শ্রম মাত্র।
(সূত গোস্বামী)
শ্লোক: 11
অতঃ পুম্ভির্দ্বিজশ্রেষ্ঠা বর্ণাশ্রমবিভাগশঃ ।
স্বনুষ্ঠিতস্য ধর্মস্য সংসিদ্ধির্হরিতোষণম্ ।।
(ভাগবত ১/২/১৩)
অনুবাদঃ- হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! তাই সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে, স্বীয় প্রবণতা অনুসারে বর্ণাশ্রম-ধর্ম পালন করার মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরির সন্তুষ্টি-বিধান করাই হচ্ছে স্বধর্মের চরম ফল।
শ্লোক: 12
বিপ্রাদ্ দ্বিষড়্ গুণযুতাদরবিন্দনাভ-
পাদারবিন্দবিমুখাৎ শ্বপচং বরিষ্ঠম্ ।
মন্যে তদর্পিতমনোবচনেহিতার্থ-
প্রাণং পুনাতি স কুলং ন তু ভূরিমানঃ ।।
(ভাগবত ৭/৯/১০)
অনুবাদঃ- যাঁর মন, বচন, চেষ্টা, অর্থ ও প্রাণ শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্মে অর্পিত হয়েছে, তিনি যদি চণ্ডাল কুলেও জন্মগ্রহণ করে থাকেন, তা হলেও তিনি কৃষ্ণ-পাদপদ্ম বিমুখ দ্বাদশ গুণবিশিষ্ট ব্রাহ্মণের থেকেও শ্রেষ্ঠ বলে আমি মনে করি, কেন না তিনি (শ্বপচ কুলোদ্ভূত) স্বীয় কুল পবিত্র করেন। কিন্তু অতি গর্বিত অভক্ত ব্রাহ্মণ তা করতে পারেন না।
শ্লোক: 13
কামং ববর্ষ পর্জন্যঃ সর্বকামদুঘা মহী ।
সিষিচুঃ স্ম ব্রজান্ গাবঃ পয়সোধস্বতীর্মুদা ।।
(ভাগবত ১/১০/৪)
অনুবাদঃ- মহারাজ যুধিষ্ঠিরের রাজত্বকালে মেঘরাজি মানুষের প্রয়োজন মতো যথেষ্ট বারি বর্ষণ করত এবং পৃথিবী মানুষের সমস্ত প্রয়োজনই পর্যাপ্তভাবে পূর্ণ করত। দুগ্ধবতী প্রফুল্লমনা গাভীদের স্ফীত স্তন থেকে ক্ষরিত দুগ্ধে গোচারণভূমি সিক্ত হত।
(সূত গোস্বামী)
শ্লোক: 14
মুচি হয়ে সূচি হয়- যদি কৃষ্ণ ভজে ।
সূচি হয়ে মুচি হয়- যদি কৃষ্ণ ত্যজে ।।
অনুবাদঃ-
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) =
অভক্ত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।