ভক্তিমূলক সেবা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
শ্লোক: 31
স বৈ মনঃ কৃষ্ণপদারবিন্দয়ো-
র্বচাংসি বৈকুণ্ঠগুণানুবর্ণনে ।
করৌ হরের্মন্দিরমার্জনাদিষু
শ্রুতিং চকারাচ্যুতসৎকথোদয়ে ।।
(ভাগবত ৯/৪/১৮) অনুবাদঃ- মহারাজ অম্বরীষ সর্বদা তাঁর মনকে কৃষ্ণের পাদপদ্মে, তাঁর বাক্যকে পরমেশ্বর ভগবানের গুণ বর্ণনায়, তাঁর হস্তাদি হরিমন্দির মার্জনাদিতে, তাঁর কর্ণকে কৃষ্ণকথা শ্রবণে নিযুক্ত করেছিলেন।
শ্লোক: 32
মুকুন্দলিঙ্গালয়দর্শনে দৃশৌ
তদ্ভৃত্যগাত্রস্পর্শেহঙ্গসঙ্গমম্ ।
ঘ্রাণং চ তৎপাদসরোজসৌরভে
শ্রীমত্তুলস্যা রসনাং তদর্পিতে ।।
(ভাগবত ৯/৪/১৯) অনুবাদঃ- তিনি (মহারাজ অম্বরীষ) তাঁর চক্ষুদ্বয়কে মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের শ্রীবিগ্রহ দর্শনে, তাঁর স্পর্শেন্দ্রিয় বৈষ্ণবদের শ্রীপাদপদ্মে স্পর্শ এবং আলিঙ্গন করায়, তাঁর ঘ্রাণেন্দ্রিয় শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্মে নিবেদিত তুলসীর ঘ্রাণ গ্রহণে, তাঁর জিহ্বাকে শ্রীকৃষ্ণে নিবেদিত প্রসাদ আস্বাদনে নিযুক্ত করেছিলেন ।
শ্লোক: 33
পাদৌ হরেঃ ক্ষেত্রপদানুসর্পণে
শিরো হৃষীকেশপদাভিবন্দনে ।
কামং চ দাস্যে ন তু কামকাম্যয়া
যথোত্তমশ্লোকজনাশ্রয়া রতিঃ ।।
(ভাগবত ৯/৪/২০) অনুবাদঃ- তিনি (মহারাজ অম্বরীষ) তাঁর পদদ্বয়কে ভগবানের লীলাভূমি বৃন্দাবন, মথুরা আদি তীর্থে অথবা ভগবানের মন্দিরে গমনে, তাঁর মস্তককে ভগবানের শ্রীপাদপদ্মে প্রণতি নিবেদনে এবং কামরহিত দাস্যে কাম এমনভাবে নিযুক্ত করেছিলেন যে, তাঁর হৃদয়ে শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তি জাগ্রত হয়েছিল।
শ্লোক: 34
স বৈ পুংসাং পরো ধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে ।
অহৈতুক্যপ্রতিহতা যয়াত্মা সুপ্রসীদতি।।
(ভাগবত ১/২/৬) অনুবাদঃ- সমস্ত মানুষের পরম ধর্ম হচ্ছে সেই ধর্ম যার দ্বারা ইন্দ্রিয়জাত জ্ঞানের অতীত শ্রীকৃষ্ণে অহৈতুকী ও অপ্রতিহতা ভক্তি লাভ কারা যায়। সেই ভক্তি-বলে অনর্থ নিবৃত্তি হয়ে আত্মা যথার্থ প্রসন্নতা লাভ করে।
শ্লোক: 35
শ্রবণং কীর্তনং বিষ্ণোঃ স্মরণং পাদসেবনম্ ।
অর্চনং বন্দনং দাস্যং সখ্যমাত্মনিবেদনম্ ।।
ইতি পুংসার্পিতা বিষ্ণৌ ভক্তিশ্চেন্নবলক্ষণা ।
ক্রিয়েত ভগবত্যদ্ধা তন্মন্যেহধীতমুত্তমম্ ।।
(ভাগবত ৭/৫/২৩-২৪) অনুবাদঃ- শ্রীকৃষ্ণের শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পাদসেবন, অর্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্য, আত্মনিবেদন- এই নব লক্ষণ-সম্পন্ন ভক্তি শ্রীকৃষ্ণে অর্পিত হয়ে সাধিত হলে সর্বসিদ্ধি লাভ হয়। এটিই শাস্ত্রের নির্দেশ।
শ্লোক: 36
যেষাং ত্বন্তগতং পাপং জনানাং পুণ্যকর্মণাম্ ।
তে দ্বন্দ্বমোহনির্মুক্তা ভজন্তে মাং দৃঢ়ব্রতাঃ ॥
(গীতা ৭/২৮) অনুবাদঃ- যে সমস্ত পুণ্যবান ব্যক্তির পাপ সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়েছে এবং যাঁরা দ্বন্দ্বমোহ থেকে মুক্ত হয়েছেন, তাঁরা দৃঢ় নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ভজনা করেন।
শ্লোক: 37
পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি ।
তদহং ভক্ত্যুপহৃতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ ॥
(গীতা ৯/২৬) অনুবাদঃ- যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে এমনকি পত্র, পুষ্প, ফল ও জলও অর্পণ করেন, আমি তাঁর সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি।
শ্লোক: 38
যৎকরোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ ।
যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তৎকুরুষ্ব মদর্পণম্ ॥
(গীতা ৯/২৭) অনুবাদঃ- হে কৌন্তেয় ! তুমি যা অনুষ্ঠান কর, যা আহার কর, যা হোম কর, যা দান কর এবং যে তপস্যা কর, সেই সমস্তই আমাকে সমর্পণ কর।
শ্লোক: 39
চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠো হরিভক্তিপরায়ণঃ ।
হরিভক্তিবিহীনশ্চ দ্বিজোহপি শ্বপচাধমঃ ।।
(অজ্ঞাত উৎস, শাস্ত্র নির্দেশ)
অনুবাদঃ- চণ্ডালকুলে জন্ম হলেও, কোন ব্যক্তি যদি হরিভক্তি-পরায়ণ হন, তা হলে তিনিও শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণে পরিণত হন। কিন্তু হরিভক্তি-বিহীন ব্যক্তি যদি ব্রাহ্মণও হন, তিনি কুকুরভোজী চণ্ডাল থেকেও অধম।
শ্লোক: 40
ভক্ত্যাহমেকয়া গ্রাহ্যঃ শ্রদ্ধয়াত্মা প্রিয়ঃ সতাম্ ।
ভক্তিঃ পুনাতি মন্নিষ্ঠা শ্বপাকানপি সম্ভবাৎ ।।
(ভাগবত ১১/১৪/২১)
অনুবাদঃ- সাধু এবং ভক্তদের অত্যন্ত প্রিয় আমি, ঐকান্তিক শ্রদ্ধাজনিত ভক্তির দ্বারাই আমি প্রাপ্ত হই। আমার প্রতি জীবের নিষ্ঠা বর্ধনকারী ভক্তি নীচ কুলোদ্ভূত মানুষদেরও জন্ম আদি দোষ থেকে পরিত্রাণ করে। অর্থাৎ, ভক্তিযোগের পন্থা অবলম্বন করার মাধ্যমে প্রত্যেকেই চিন্ময় স্তরে উন্নীত হতে পারে। (উদ্ধবের প্রতি শ্রীকৃষ্ণ)
শ্লোক: 41
ভিদ্যতে হৃদয়গ্রন্থিশ্ছিদ্যন্তে সর্বসংশয়াঃ ।
ক্ষীয়ন্তে চাস্য কর্মাণি দৃষ্ট এবাত্মনীশ্বরে ।।
(ভাগবত ১/২/২১)
অনুবাদঃ- আত্মার আত্মা পরমাত্মা ভগবানকে দর্শন হলে হৃদয়গ্রন্থি ছিন্ন হয়, সমস্ত সংশয় দূর হয় এবং সমস্ত কর্মফল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
শ্লোক: 42
কেচিৎ কেবলয়া ভক্ত্যা বাসুদেবপরায়ণাঃ ।
অঘং ধুন্বন্তি কার্ৎস্ন্যেন নিহারমিব ভাস্করঃ ।।
(ভাগবত ৬/১/১৫)
অনুবাদঃ- সেই সব বিরল শুদ্ধ ভক্তরা যাঁরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অহৈতুকী ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হয়েছেন, কেবল তাঁরাই তাঁদের সমস্ত পাপ- বাসনাকে এমনভাবে নির্মূল করতে সক্ষম যে, তাদের আর পুনর্জাগরিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। শুধুমাত্র ভক্তিমূলক সেবা সম্পাদনের মাধ্যমেই তিনি তা করতে পারেন, ঠিক যেমন সূর্য তার রশ্মিচ্ছটায় তৎক্ষণাৎ কুয়াশাকে দূর করতে পারে।
(শুকদেব গোস্বামী)
শ্লোক: 43
সমাশ্রিতা যে পদপল্লবপ্লবং
মহৎপদং পুণ্যযশো মুরারেঃ ।
ভবাম্বুধির্বৎসপদং পরং পদং
পদং পদং যদ্বিপদং ন তেষাম্ ।।
(ভাগবত ১০/১৪/৫৮)
অনুবাদঃ- মহৎ-তত্ত্বের আশ্রয় এবং মুরারি নামে খ্যাত শ্রীভগবানের পদ-পল্লবরূপ নৌকাকে যাঁরা আশ্রয় করেছেন, তাঁদের কাছে এই ভবসাগর গোষ্পদের মতো ক্ষুদ্র হয়ে যায়। পরম পদ বৈকুণ্ঠ লাভই তাঁদের লক্ষ্য। পদে পদে বিপদসঙ্কুল এই জড় জগৎ তাঁদের জন্য নয়। (শ্রীল শুকদেব গোস্বামী)
শ্লোক: 44
মুক্তিপ্রদাতা সর্বেষাং বিষ্ণুরেব ন সংশয়ঃ ।
(শিব)
অনুবাদঃ- ভগবান শ্রীবিষ্ণুই যে সকলের মুক্তি-প্রদাতা, এতে কোন সংশয় নেই।
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন=
ভক্তিমূলক সেবা সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।