ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
শ্লোক: 16
ধ্যেয়ং সদা পরিভবঘ্নমভীষ্টদোহং
তীর্থাস্পদং শিববিরিঞ্চিনুতং শরণ্যম্ ৷
ভৃত্যার্তিহং প্রণতপাল ভবাব্ধিপোতং
বন্দে মহাপুরুষ তে চরণারবিন্দম্ ৷৷ - (ভাগবত 11/5/33)
অনুবাদ:- সর্বদা ধ্যান করার উপযুক্ত ভগবানের চরণকমলে আমরা আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করছি৷ তিনি তাঁর ভক্তদের গ্লানি ধ্বংস করেন৷ তিনি তাঁর ভক্তদের দুঃখ দূর করেন এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত করেন৷ সমস্ত তীর্থের আবাস এবং সমস্ত সাধুদের আশ্রয় সেই চরণকমল শিব এবং ব্রহ্মারও আরাধ্য৷ তিনি দেবতাদের জন্ম-মৃত্যুর সাগর অতিক্রম করার নৌকাস্বরূপ৷ - (চৈঃ চঃ আদি 2/22 তাৎপর্য)
শ্লোক: 17
ষড়ৈশ্বর্যৈঃ পূর্ণো য ইহ ভগবান্ স স্বয়ময়ং - (চৈঃ চঃ আদি 1/3)
অনুবাদ:- তিনিই হচ্ছেন ষড় ঐশ্বর্যে পূর্ণ স্বয়ং ভগবান৷
শ্লোক: 18
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু দয়া কর মোরে
তোমা বিনা কে দয়ালু জগৎ-সংসারে (নরোত্তম দাস ঠাকুর-সাবরণ-শ্রীগৌরপাদপদ্মে-প্রর্থনা-1)
অনুবাদ:- হে প্রিয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু! অনুগ্রহ করে আমাকে দয়া কর, কেন না এই ত্রিজগতের মধ্যে তুমি ছাড়া অধিক দয়ালু আর কে আছে?
শ্লোক: 19
পতিত পাবন হেতু তব অবতার
মো সম পতিত প্রভু না পাইবে আর - (নরোত্তম দাস ঠাকুর-সাবরণ-শ্রীগৌরপাদপদ্মে-প্রর্থনা-2)
অনুবাদ:- শুধুমাত্র দেহবদ্ধ পতিত জীবদের উদ্ধার করার জন্যই আপনার অবতার, কিন্তু আমি আপনাকে নিশ্চিতরূপে বলছি যে, আমার থেকে অধিক উপযুক্ত কোন কৃপাপ্রার্থী আপনি খুঁজে পাবেন না, কেন না আমার মতো পতিত আর কেউ নেই৷
শ্লোক: 20
হা হা প্রভু নিত্যানন্দ প্রেমানন্দ সুখী
কৃপাবলোকন কর আমি বড় দুঃখী- (নরোত্তম দাস ঠাকুর-সাবরণ-শ্রীগৌরপাদপদ্মে-প্রর্থনা-3)
অনুবাদ:- হে প্রিয় নিত্যানন্দ প্রভু! যেহেতু চিন্ময় প্রেমের আনন্দে তুমি সর্বদাই খুব সুখী, তাই অনুগ্রহ করে তোমার কৃপাদৃষ্টি আমার প্রতি নিক্ষেপ কর, কেন না আমি খুব অসুখী (এবং এই কৃপাদৃষ্টি প্রভাবে আমিও সুখী হতে পারি)৷
শ্লোক: 21
নিতাই-পদকমল কোটিচন্দ্র-সুশীতল,
যে ছায়ায় জগৎ জুড়ায় - (নরোত্তম দাস ঠাকুর-মনঃশিক্ষা 1)
অনুবাদ:- ভগবান শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর চরণকমল কোটি কোটি চন্দ্রের জ্যোৎস্নার মতো সুশীতল৷ সেই চরণযুগলের ছায়াতে সমস্ত জগৎবাসী আশ্রয় নিয়ে, সংসার-দাবানল থেকে মুক্ত হয়ে, স্নিগ্ধ হতে পারেন৷
শ্লোক: 22
আর কবে নিতাইচাঁদের করুণা হইবে৷ সংসার বাসনা মোর কবে তুচ্ছ হ'বে৷৷ - (নরোত্তম দাস ঠাকুর-লালসাময়ী প্রার্থনা2)
অনুবাদ:- আর কবে আমি শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর করুণা লাভ করব? তাঁর কৃপায় কবে আমার সংসার-ভোগবাসনা তুচ্ছ বলে অনুভূত হবে?
শ্লোক: 23
অহঙ্কারে মত্ত হৈঞা, নিতাই-পদ পাসরিয়া,
অসত্যেরে সত্য করি' মানি৷ - (নরোত্তম দাস ঠাকুর-মনঃশিক্ষা 3 প্রার্থনা থেকে)
অনুবাদ:- (পোষ-না-মানা বন্য পশুদের মতো মানুষ কেন তাদের দুর্লভ মনুষ্যজন্ম বৃথা নষ্ট করছে?) মিথ্যা দেহচেতনায় আবদ্ধ হয়ে তারা পাগল হয়ে গেছে এবং এভাবেই ভগবান শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর সঙ্গে তাদের নিত্য সম্বন্ধকে তারা ভুলে গেছে৷ সেই রকম বিস্মৃতি পরায়্ণ ব্যক্তিরা মায়াশক্তির অসত্য প্রকাশকে সত্য বলে গ্রহণ করে৷
শ্লোক: 24
ব্রজেন্দ্রনন্দন যেই, শচীসূত হৈল সেই, বলরাম হইল নিতাই৷
দীনহীন য্ত ছিল, হরিনামে উদ্ধারিল, তা'র সাক্ষী জগাই-মাধাই৷৷ - (নরোত্তম দাস ঠাকুর-ইষ্টদেবের বিজ্ঞপ্তি 3, প্রার্থনা থেকে)
অনুবাদ:- ব্রজেন্দ্রনন্দন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শচীসূত ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন৷ আর ভগবান শ্রীবলরাম শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন৷ সবচেয়ে অধঃপতিত দীনহীন ব্যক্তিগণ সকলেই হরিনাম কীর্তনের মাধ্যমে তাঁদের অধঃপতিত অবস্থা থেকে উদ্ধার পেলেন৷ জগাই ও মাধাই-এর কাহিনী এই সত্যের সাক্ষ্যস্বরূপ৷
শ্লোক: 25
বৈরাগ্য-বিদ্যা-নিজভক্তিযোগ- শিক্ষার্থমেকঃ পুরুষঃ পুরাণঃ৷
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যশরীরধারী কৃপাম্বুধির্যস্তমহং প্রপদ্যে৷৷ - (চৈতন্য-চন্দ্রোদয় নাটক 6/74-75)
অনুবাদ:- বৈরাগ্যবিদ্যা ও নিজ ভক্তিযোগ শিক্ষা দেওয়ার জন্য, শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য রূপধারী এক সনাতন পুরুষ আবির্ভূত হয়েছেন, আমি তাঁর নিকট সর্বতোভাবে আত্মনিবেদন করি৷
শ্লোক: 26
গৌরাঙ্গের সঙ্গিগণে, নিত্যসিদ্ধ করি' মানে,
সে যায় ব্রজেন্দ্রসুত পাশ৷ - (নরোত্তম দাস ঠাকুর- সাবরণ-শ্রীগৌর-মহিমা 3, প্রার্থনা থেকে)
অনুবাদ:- গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর পার্ষদগণ যে জড় কলুষ থেকে নিত্যমুক্ত - শুধুমাত্র তা উপলব্ধি করার মাধ্যমে একজন তৎক্ষণাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্য ধামে উন্নীত হতে পারেন৷
শ্লোক: 27
আজানুলম্বিত-ভুজৌ কনকাবদাতৌ
সঙ্কীর্তনৈক-পিতরৌ কমলায়্তাক্ষৌ৷
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্মপালৌ
বন্দে জগৎপ্রিয়্করৌ করুণাবতারৌ৷৷ - (চৈতন্য ভাগবত-1/1)
অনুবাদ:- যাঁদের বাহুদ্বয় হাঁটু পর্যন্ত প্রসারিত, দেহ স্বর্ণাভ উজ্জ্বল জ্যোতি বিকীরণকারী, চক্ষু পদ্মফুলের পাপড়ির মতোই বিস্তৃত, যাঁরা ব্র্রাহ্মণদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, যুগধর্মের পালক, বিশ্বের মহান ভরণপোষণকারী, ভগবানের মহাবদান্য পরম করুণাময় অবতার ও যাঁরা হরিনাম সংকীর্তন যজ্ঞের প্রবর্তক-- সেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি বন্দনা করি৷ - (বৃন্দাবন দাস ঠাকুর)
শ্লোক: 28
বন্দে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যনিত্যানন্দৌ সহোদিতৌ৷
গৌড়োদয়ে পুষ্পবন্তৌ চিত্রৌ শন্দৌ তমোনুদৌ৷৷ - (চৈঃ চঃ আদি 1/2)
অনুবাদ:- গৌড়দেশের পূর্ব দিগন্তে একই সময়ে অতি বিস্ময়করভাবে সূর্য ও চন্দ্রের মতো যাঁরা উদিত হয়েছেন, সেই পরম মঙ্গল প্রদাতা এবং অজ্ঞান ও অন্ধকারনাশক শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু এবং শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি বন্দনা করি৷
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন=জপ-কীর্তন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।