শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৩য় অধ্যায়:- কর্মযোগ-এর সার সংক্ষেপ:-
লেখক-
শ্রী স্বপন কুমার রায়
মহা ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ব্যাংক৷
সাধারণ সম্পাদক, শ্রী শ্রী গীতাসংঘ, মতিঝিল শাখা, ঢাকা৷
--------------------------------------
৪৩ টি মন্ত্র বিশিষ্ট তৃতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে অজুর্নের জিজ্ঞাসা দিয়ে। পূর্ববর্তী অধ্যায়ের শেষার্ধে শ্রীকৃষ্ণের মুখে ব্রহ্মজ্ঞান,
ব্রাহ্মিস্থিতি ও নিষ্কাম কর্মের কথা শ্রবণ করে অর্জুন যেন কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়লেন। তিনি যেন ঠিক বুঝতে পারলেন না যে ব্রহ্মজ্ঞান ও নিষ্কামকর্ম –এ দু’য়ের মধ্যে কোন্ টি অধিকতর গ্রহণীয়। অর্জুনের এ দ্বিধা দুর করার জন্য
শ্রীকৃষ্ণ বেদের দুটি প্রধান পথ- একটি জ্ঞান, অপরটি নিষ্কাম কর্ম সম্পর্কে ব্যাখ্যা করলেন। তিনি বললেন, আজীবন ব্রহ্মচর্যে ব্রতী ব্যক্তিগণই জ্ঞান পথের অধিকারী। এতে কঠোর যোগসাধনার প্রয়োজন। অতি অল্প লোকই এ
পথ অনুসরণ করে সিদ্ধি লাভ করে। সে কারণে সাধারণ গৃহীদের নিষ্কাম কর্মের পথানুসরণই শ্রেয়ঃ। নিষ্কাম কর্মযোগ অবলম্বনে কর্মীর জ্ঞানও বিশুদ্ধ হয়ে থাকে।
তাছাড়া জীব কখনও কর্মহীন থাকতে পারে না। জীবনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রতিটি জীবকেই সর্বদা কর্ম করতে হয়।
তবে সে কর্ম যখন কামনাবিহীন হয় তখন তা কোন বন্ধনের কারণ হয় না, অর্থাৎ সে কর্মের দায়ভার নিষ্কামকর্মীর উপর বর্তায় না। নিষ্কাম কর্মযোগী পরিণামে ব্রহ্মপদই লাভ করে থাকে। তাই শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে সম্পূর্ণ অনাসক্তভাবে কর্তব্যবোধে কর্ম করার জন্য বললেন। তিনি আরও উপদেশ দিলেন যে স্বধর্ম কিঞ্চিৎ দোষযুক্ত হলেও ইহা উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। স্বধর্মে নিধনও কল্যাণকর, কিন্তু পরধর্ম গ্রহণ করা ভয়াবহ। অর্জুন পুনরায় জানতে চাইলেন যে, লোকে কার দ্বারা প্রযুক্ত হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেন বলপূর্বক নিয়োজিত হয়েই পাপাচার করে থাকে? তদুত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে, জ্ঞানীগণের নিত্যশত্রু দুষ্পূরণীয় অগ্নিতুল্য কামদ্বারা জ্ঞান আচ্ছন্ন থাকে বলেই লোকে কখনোকখনো অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাপাচারে লিপ্ত হয়। আর একারণেই অগ্রে ইন্দ্রিয়গণকে বশীভূত করে জ্ঞান বিনাশী কামকে বিনষ্ট বা পরিত্যাগ করা প্রয়োজন। মানুষের বুদ্ধি বা শুদ্ধবিবেক-ই মনকে বশ করে কামরূপ দুর্জয় শক্রকে বিনাশ করতে সক্ষম।
জয় শ্রীকৃষ্ণ ।।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৪র্থ অধ্যায় জ্ঞানযোগ- এর সার সংক্ষেপ দেখুন