শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৪র্থ অধ্যায়:- জ্ঞানযোগ- এর সার সংক্ষেপ:-
লেখক-
শ্রী স্বপন কুমার রায়
মহা ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ব্যাংক৷
সাধারণ সম্পাদক, শ্রী শ্রী গীতাসংঘ, মতিঝিল শাখা, ঢাকা৷
--------------------------------------
অধ্যায়টির নাম থেকে মনে হতে পারে যে এখানে হয়তো শুধু জ্ঞানের কথাই আলোচিত হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এ অধ্যায়ে জ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয় যেমন অবতার তত্ত্ব, চতুর্বর্ণের উৎপত্তি তত্ত্ব, নিষ্কাম কর্ম তত্ত্ব - ইত্যাদিও আলোচিত হয়েছে। ভগবান অবতার রূপে কেন ধরাধামে আসেন সে বিষয়ে বলতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে যখনি ধর্মের গ্লানি হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে তখনই দুষ্টদিগের বিনাশ সাধনের মাধ্যমে সাধুগণের পরিত্রাণ এবং ধর্মকে পুনঃসংস্থাপনের উদ্দেশ্যে যুগে যুগে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। তিনি জন্ম রহিত হওয়া সত্ত্বেও স্বীয় প্রকৃতিতে অধিষ্ঠান করে আত্মমায়ায় আবির্ভূত হন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই দিব্য জন্ম ও কর্মের বিষয়টি যিনি তত্ত্বত জানেন তিনি মুক্তি লাভ করে দেহান্তে তাঁকেই প্রাপ্ত হন। অতপর, শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন যে জগতে গুণ ও কর্ম অনুসারে চতুর্বর্ণের সৃষ্টি তিনি-ই করেছেন। কিন্ত্ত সৃষ্টির রচনাদি কর্মের কর্তা হবার পরও তাঁকে অকর্তা বা অবিনাশী পরমেশ্বর বলেই জানতে উপদেশ দিলেন। নিষ্কাম কর্ম প্রসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে কর্ম করতে হলে সে কর্মের স্বরূপ জানা প্রয়োজন।
কর্মের স্বরূপ জানতে হলে আবার কর্ম, অকর্ম ও বিকর্ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন, কারণ কর্মের গতি দুর্জ্ঞেয়। লোকে কর্তব্য বোধে যা কিছু করে -তাই কর্ম। কিন্তু কর্মী যখন ফলের ফলাকাংখা করে
কিন্তু কর্মী যখন ফলের ফলাকাংখা করেন না তখন ঐ কর্ম মূলত অকর্মে রূপান্তরিত হয়। আর শাস্ত্র বিরুদ্ধ যে কর্ম তাকেই বিকর্ম বলা হয়। কর্মের এই প্রকৃত স্বরূপ জানাই কর্ম বিষয়ক জ্ঞান। এই জ্ঞানের অধিকারী হলেই কেবল লোকে যথাযথ ভাবে কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে ভগবৎ কৃপা লাভ করতে পারে। তাই শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে, যিনি কর্মে অকর্ম এবং অকর্মে কর্ম দর্শন করেন, মনুষ্যের মধ্যে তিনিই বুদ্ধিমান এবং তিনি যোগী এবং সমস্ত কর্মের সম্পাদনকারী। এভাবে কর্ম সম্পাদনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করতে করতে শ্রীকৃষ্ণ জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে অর্জুনকে উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন যে কর্মফলাকাঙ্খীগণ নানাবিধ ফল কামনার্থে নানাবিধ যজ্ঞ করে থাকেন,যেমন- দ্রব্যদানরূপযজ্ঞ, তপঃযজ্ঞ, স্বাধ্যায় যজ্ঞ ইত্যাদি। কিন্তু এসকল যজ্ঞের মধ্যে জ্ঞানযজ্ঞই শ্রেষ্ঠ। কারণ ফলসমেত সমস্ত কর্ম নিঃশেষে জ্ঞানে পরিসমাপ্ত হয়। ইহলোকে জ্ঞানের ন্যায় পবিত্র আর কিছু নেই, কেননা জ্ঞান উপযুক্ত কালে আপনি নিষ্কাম কর্মযোগীর অন্তরে উদ্ভাসিত হয়। কর্মযোগী তখন আত্মজ্ঞান লাভ করে শিঘ্রই পরম শান্তি লাভ করে থাকে। এভাবে চতুর্থ অধ্যায়ে মোট ৪২ টি শ্লোকের মাধ্যমে অবতারতত্ত্ব, বর্ণতত্ত্ব, কর্ম ও জ্ঞান বিষয়ক ৪টি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ প্রসংগ আলোচিত হয়েছে।
জয় শ্রীকৃষ্ণ ।।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৫ম অধ্যায়: কর্মসন্যাসযোগ- এর সার সংক্ষেপ দেখুন