শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৬ষ্ঠ অধ্যায়:- ধ্যানযোগ-এর সার সংক্ষেপ:-
লেখক-
শ্রী স্বপন কুমার রায়
মহা ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ব্যাংক৷
সাধারণ সম্পাদক, শ্রী শ্রী গীতাসংঘ, মতিঝিল শাখা, ঢাকা৷
--------------------------------------
গীতার ষষ্ঠ অধ্যায় ‘অভ্যাস যোগ’ এর অপর নাম ধ্যান যোগ। এ অধ্যায়ে অভ্যাস শব্দটি ধ্যান অভ্যাস অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের উক্তি দিয়েই অধ্যায়টির শুরু। তিনি প্রথমেই ব্যক্ত করেছেন যে, কর্মযোগী ও ধ্যানযোগী বা সন্ন্যাসীর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে তেমন পার্থক্য নেই। কারণ, কর্মযোগী ও সন্ন্যাসী- উভয়েই মূলতঃ ফলাকাঙ্খা পরিহার করে স্বীয়কার্য্ করে থাকেন। অনাসক্তভাবে কর্ম করে কর্মযোগী পরিণামে যে স্থান লাভ করে থাকেন, ধ্যানযোগী সন্ন্যাসীও নিষ্টাযুক্ত ধ্যানের মাধ্যমে একই স্থান লাভে সক্ষম হন। এ ভাবে উভয় যোগের মধ্যে সাদৃশ্য প্রদর্শনপূর্বক শ্রীকৃষ্ণ ধ্যানযোগের প্রক্রিয়া ও ধ্যানযোগীর লক্ষণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বললেন, যোগ অভ্যাসের জন্য কোন পবিত্র স্থানে কুশাসনের উপর মৃগচর্মের আসন অতি উচু কিংবা নীচু না করে স্বাভাবিক ভূমিতে স্থাপন করতঃ সেখানে উপবিষ্ট হয়ে চিত্ত, ইন্দ্রিয় ও ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে চিত্ত শুদ্ধির জন্য মনকে একাগ্র করে যোগ অভ্যাস করবেন। শরীর, মস্তক, গ্রীবাকে সমানভাবে রেখে অন্য দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে, নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশাস্তাত্মা, ভয়শূন্য ও ব্রহ্মচর্য ব্রতে
স্থিত পুরুষ মনকে বিষয় বাসনা থেকে প্রত্যাহার করে একমাত্র তাঁকে জীবনের চরম লক্ষ্যরূপে স্থির করে ধ্যানপূর্বক ধ্যানপূর্বক যোগ অভ্যাস করবেন।
ধ্যানপূর্বক যোগ অভ্যাস করবেন। এভাবে, দেহ, মন ও কার্যকালাপ সংযত হলে যোগী পরমধাম প্রাপ্ত হন।
পরমধাম প্রাপ্ত হন। অতপর শ্রীকৃষ্ণ ধ্যানযোগীর লক্ষণ বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, যোগযুক্ত অবস্থায় শুদ্ধ অন্তঃকরণ দ্বারা আত্মাকে উপলদ্ধি করে যোগী আত্মাতেই পরম আনন্দ আস্বাদন করেন। সে অবস্থায় অপ্রাকৃত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অপ্রাকৃত সুখানুভব হয়। এরূপ পারমার্থিক চেতনায় অবস্থিত হলে যোগী আর আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান থেকে বিচলিত হয় না। জড় জগতের সংযোগ জনিত সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা থেকেই এটাই প্রকৃত মুক্তি। শ্রীকৃষ্ণের নিকট এরূপ যোগতত্ত্ব শ্রবণ করে অর্জুন তাই জিজ্ঞেস করলেন, হে মধুসূদন! তুমি যে মন, ইন্দ্রিয়-ইত্যাদির স্থিরতার কথা বললে, মনের চঞ্চলতা বশতঃ আমি তার স্থায়ী স্থিতি দেখতে পাচ্ছি না। হে কৃষ্ণ! মন অত্যন্ত চঞ্চল, শরীর ও ইন্দ্রিয়াদির বিক্ষেপ উৎপাদক, দুর্দমনীয় এবং অত্যন্ত বলবান। তাই তাকে নিগ্রহ করা বায়ুকে বশীভূত করার চেয়েও অধিক কঠিন বলে মনে করি। তদুত্তোরে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, মন যে চঞ্চল তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু পুনঃ পুনঃ অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা এই মনকে সংযত করা সম্ভব। অর্জুন আবার প্রশ্ন করলেন, কোন যোগী চিত্ত চাঞ্চল্য বশতঃ যোগ্রদ্রষ্ট হলে তার গতি কি হবে? তদুত্তোরে শ্রীকৃষ্ণ তাকে শুধালেন যে, শুভানুষ্ঠানকারী পরমার্থবিদের ইহলোকে ও পরলোকে কোন দুর্গতি হয় না। যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পূণ্যবানদের প্রাপ্য স্বর্গাদিলোকসমূহে বহুকাল বাস করে কোন সদাচারী ব্রাহ্মণের গৃহে অথবা ধনীর গৃহে জন্মলাভ করে পূর্বজন্মকৃত পারমার্থিক চেতনা লাভ করে সিদ্ধি লাভের জন্য পুনরায় যত্নবান হয় এবং সাধনবলে সিদ্ধি লাভ করে পরমধাম লাভ করেন।
জয় শ্রীকৃষ্ণ ।।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৭ম অধ্যায়: জ্ঞানযোগ- এর সার সংক্ষেপ দেখুন