শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৭ম অধ্যায়:- জ্ঞানযোগ-এর সার সংক্ষেপ:-
লেখক-
শ্রী স্বপন কুমার রায়
মহা ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ব্যাংক৷
সাধারণ সম্পাদক, শ্রী শ্রী গীতাসংঘ, মতিঝিল শাখা, ঢাকা৷
--------------------------------------
সপ্তম অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জ্ঞান ও বিজ্ঞান সহ ভগবানের স্বরূপকে উপলব্ধি করার উপদেশ দিয়েছেন অধ্যায়ের প্রথমভাগেই। প্রকৃতপক্ষে ভগবানের স্বরূপতত্ত্বই জ্ঞান এবং উহা অনুভবের বিষয়টিই হলো বিজ্ঞান। এ অধ্যায়ে এই দু’টি বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে বলেই অধ্যায়টির নাম জ্ঞান-বিজ্ঞান-যোগ রাখা হয়েছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর স্বরূপতত্ত্ব বলতে গিয়ে অর্জুনকে জানালেন যে, জগতের অষ্টপ্রকার জড় প্রকৃতি যেমন পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহংকার হচ্ছে ভগবানের অপরা প্রকৃতি এবং এসকল কিছুর মধ্যে যে চৈতন্যসত্ত্বা নিহিত আছে তা হচ্ছে তাঁর পরাপ্রকৃতি। কাজেই তিনি অর্জুনকে শুধালেন যে সমস্ত ভূত এই দুষ্ট প্রকৃতি হতে জাত আর তিনি হচ্ছেন
নিখিল জগতের উৎপত্তি ও লয়ের কারণ।
সুতরাং তিনি প্রকৃতপক্ষে জগতেরই কারণ। এভাবে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর স্বরূপ ব্যাপক বিস্তৃতির কথা বলে অতপর তিনি ব্যক্ত করলেন যে তাঁর এই স্বরূপ তত্ত্বতঃ সাধারণ মানুষ জানতে পারেনা, কারণ সাধারণ মানুষ স্বভাবতই ত্রিগুণময় (সত্ত্ব, রজো ও তমো) ভাবের দ্বারা আচ্ছন্ন ও মোহিত থাকে। কিন্তু তাঁর অক্ষয় আনন্দ স্বরূপ জানতে হলে মানুষকে অবশ্যই ত্রিগুণাতীত স্তরে উন্নীত হতে হবে সাধনবলে। সেটা সম্ভব জ্ঞানী ভক্তগণের পক্ষে। কারণ, জ্ঞানী ভক্তগণ অনেক জন্মের পর ‘বাসুদেবই যে সবকিছু’ এরূপ জ্ঞান লাভ করে তাকে প্রাপ্ত হন। অবশ্য অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন সাধারণ ভক্তগণ জাগতিক সামান্য সুখ-সমৃদ্ধি লাভের আশায় নানা দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা করে তাদের কাম্যবস্তু লাভ করে থাকেন বটে, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকে শুধু সেসব জ্ঞানী ভক্তগণই লাভ করে থাকেন যারা কৃষ্ণ বিনে অন্যকিছু যাচনা করেন না। এভাবেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জ্ঞানী ভক্তগণ কিভাবে দুষ্কর মায়া পরিত্যাগপূর্বক তাঁকে সর্বস্ব জেনে ভজনা করে পরিণামে তাঁকে লাভ করেন তার বর্ণনা প্রদান করে অধ্যায়ের উপসংহার টানেন।
জয় শ্রীকৃষ্ণ ।।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৮ম অধ্যায়: অক্ষরব্রহ্মযোগ- এর সার সংক্ষেপ দেখুন