1) ‘গোপাল, এর পর তোমার পালা।’
ছোটবেলা গোপাল ভাঁড় কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে বুড়োরা তাকে ক্ষেপাত আর হাসত, ‘গোপাল, এর পর তোমার পালা।’ শুনে গোপালের খুব রাগ হত। বুড়োদের কিভাবে জব্দ করা যায়, সেই পথ খুঁজতে লাগল এবং এক সময় পেয়ে গেল। শবদাহ আর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে গিয়ে ঐসব বুড়োদের বলতে লাগল,‘এর পর তোমার পালা!’
2) মেলায় ছেলেকে হারিয়ে ফেলে
গোপাল ভাঁড় একবার তার ছেলেকে নিয়ে মেলায় বেড়াতে গিয়ে ছেলেকে হারিয়ে ফেলে। ছেলে তখন একটুও না ঘাবড়ে ‘গোপাল, গোপাল’ বলে চেঁচাতে থাকে। ছেলের চিৎকার শুনে গোপাল ছুটে এসে ধমক দেয় ছেলেকে, ‘ছিঃ ছিঃ, আমার নাম ধরে ডাকছিস,বাবা বলে ডাকতে পারিস না?’ ছেলে তখন বলল, ‘হুঁ, বাবা বলে ডাকি আর মেলার সব লোক ছুটে আসুক!’
3) গাধারাই তামাক খায়না'
একদিন সকালে রাজা কৃ্ষ্ণচন্দ্র মজুমদার প্রাতঃ ভ্রমনে বের হলেন গোপাল ভাড়কে নিয়ে। গোপাল তামাক খাচ্ছিলো দেখে রাজা খুবই বিরক্ত হলেন। পথে দেখলেন, তামাক বাগানে একটা গাধা আগাছা খাচ্ছে, কিন্তু তামাক পাতায় মুখও দিচ্ছেনা। রাজা গোপালকে বললেন, 'দেখেছো হে গোপাল, গাধা ঘাস খায় ঠিকই, কিন্তু তামাক মুখেও নেয়না।' হেসে গোপাল বলে, 'রাজামশাই ঠিকই বলেছেন। কেবল গাধারাই তামাক খায়না'
4) ঠিক আমার বলদের মতোই।
গোপালের তখন বয়স হয়েছে। চোখে ভালো দেখতে পারে না। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, কী গোপাল, গতকাল আসনি কেন? আজ্ঞে চোখে সমস্যা হয়েছে। সবকিছু দুটো দেখি। কাল এসেছিলাম। এসে দেখি দুটো দরবার। কোনটায় ঢুকব, ভাবতে ভাবতেই। এ তো তোমার জন্য ভালোই হলো। তুমি বড়লোক হয়ে গেলে। আগে দেখতে তোমার একটা বলদ, এখন দেখবে দুটো বলদ। ঠিকই বলেছেন মহারাজ। আগে দেখতাম আপনার দুটো পা, এখন দেখছি চারটা পা ঠিক আমার বলদের মতোই।
5) রামনাম জপলে ভূত ছাড়ে
একবার রাজা মশাই শক্ত করে গোপাল ভাঁড়ের হাত আঁকড়ে ধরে বললেন, কী গোপাল, বুদ্ধির জোরে কি আর সব হয়? মাঝে গায়ের জোরও লাগে। পারলে হাতখানা ছোটাও দেখি বাপু। দেখি, কেমন তোমার শক্তি! রাজা ভেবেছিলেন, গোপাল ভাঁড় হয়তো হাত ধরে টানাহেঁচড়া করবে, মোচড়ামুচড়ি করবে। রাজাকে অবাক করে দিয়ে সে এসবের কিছুই করল না! শুধু বিড়বিড় করে রাম রাম বলতে লাগল। রাজা মশাই: কী হলো, অত রাম রাম করছ কেন? গোপাল বলল, রাজা মশাই, গুরুজনের মুখে শুনেছি, রামনাম জপলে ভূত ছাড়ে! রাজা সঙ্গে সঙ্গে গোপালের হাত ছেড়ে দিলেন!
6) তফাত মাত্র দেড় হাত
একদিন গোপাল ভাঁড় রাজসভাতে ঢুকতেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, 'গোপাল তুমি এখন থেকে আমায় বেশ সম্মান করে চলবে । তোমার আর আমার তফাত কত জানো' ? গোপাল চট করে তার আসন ছেড়ে উঠে মহারাজের আসন ও নিজের আসনের ব্যবধান মেপে বলল, 'খুব বেশি তফাত নয় হুজুর,মাত্র দেড় হাত' ।
7) লোকজন জানুক আমি মোড়ল হয়েছি-
গোপাল একবার গ্রামের মোড়ল হয়েছিল। তো একদিন ভোরবেলায় এক লোক এসে ডাকতে লাগল, ‘গোপাল? গোপাল?’ গোপাল ভাঁড় কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়েই রইল। এবার লোকটা চিৎকার করে ডাকতে লাগল, ‘মোড়ল সাহেব, মোড়ল সাহেব।’ এবারও গোপাল কোনো কথা না বলে মটকা মেরে শুয়ে রইল। গোপালের বউ ছুটে এসে বলল, ‘কী ব্যাপার, লোকটা মোড়ল সাহেব মোড়ল সাহেব বলে চেঁচিয়ে পড়া মাত করছে, তুমি কিছুই বলছ না!’ গোপাল কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, ‘আহা, ডাকুক না কিছুক্ষণ, পাড়ার লোকজন জানুক আমি মোড়ল হয়েছি।’
8) ছেলের কিছু টাকা পয়সা বাঁচবে।
একটি লোকের কাছ থেকে গোপাল কিছু টাকা ধার নিয়েছিল ।লোকটার সাথে গোপালের দেখা হলেই-আজ দেব, কাল দেব-বলে গোপাল কাটিয়ে দিত । একদিন লোকটা গোপালকে চেপে ধরলো । বললো, গোপাল ; আজ যদি টাকা না দিস ,তাহলে আমি তোর শ্রাদ্ধ করবো ।তখন গোপাল বললো -তাহলে তো ভালই হল । আমার ছেলের বদলে না হয় আপনিই আমার শ্রাদ্ধ করবেন ।এতে ছেলের কিছু টাকা পয়সা বাঁচবে।
9) কী নিয়ে এত ঝগড়া হচ্ছে শুনি?
গোপাল ভাঁড়ের ভাইপো আর তার স্ত্রীর মধ্যে ভীষণ ঝগড়া বেধেছে। মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে গেলেন গোপাল। বললেন, বলি কী নিয়ে এত ঝগড়া হচ্ছে শুনি? গোপালের ভাইপো বলল, দেখুন তো কাকা, আমি আগামী বছর একটা দুধেল গাই কিনব বলেছি । আর আমার স্ত্রী বলছে, সে নাকি গাইয়ের দুধ দিয়ে পায়েস রাঁধবে। ভাইপোর স্ত্রীও সমান তেজে চেঁচিয়ে উঠল। দু হাত তুলে দুজনকে থামতে ইঙ্গিত করে গোপাল বললেন , আস্তে আস্তে! গাধা নাকি তোরা? দুজন একটু ঠান্ডা হলে গোপাল ভাইপোকে বললেন, আরে গাধা, তোর বউয়ের পায়েস রাঁধা তো পরের কথা। আমি যে বাড়ির পেছনে সবজির বাগান করেছি, সেসব যে তোর গরু খাবে, সে খেয়াল আছে?