34) দরবারে রাজবৈদ্য নিয়োগ
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারে রাজবৈদ্য নিয়োগ দেওয়া হবে। দেশদেশান্তর থেকে চিকিৎসকেরা এলেন যোগ দিতে। গোপালকে রাজা দায়িত্ব দিলেন চিকিৎসক নির্বাচনের। গোপাল খুশিমনে বসলেন তাঁদের মেধা পরীক্ষায়। —আপনার চিকিৎসালয়ের আশপাশে ভূতের উপদ্রব আছে? —জি আছে। প্রচুর ভূত। ওদের অত্যাচারে ঠিকমতো চিকিৎসা পর্যন্ত করতে পারি না। দিন দিন ওদের সংখ্যা বাড়ছেই। এবার দ্বিতীয় চিকিৎসকের পালা। —আপনার চিকিৎসালয়ের আশপাশে ভূতের উপদ্রব কেমন? —আশ্চর্য, আপনি জানলেন কীভাবে! ওদের জ্বালায় আমি অস্থির। দিন দিন ওদের সংখ্যা বাড়ছেই। এভাবে দেখা গেল সবার চিকিৎসালয়ের আশপাশেই ভূতের উপদ্রব আছে। একজনকে শুধু পাওয়া গেল, যাঁর কোনো ভূতসংক্রান্ত ঝামেলা নেই। গোপাল তাঁকে রাজবৈদ্য নিয়োগ দিলেন। পরে দেখা গেল এই চিকিৎসকই সেরা। রাজাও খুশি। একদিন রাজা ধরলেন গোপালকে। গোপাল বললেন, ‘আজ্ঞে মহারাজ, দেখুন, সবার চিকিৎসাকেন্দ্রের আশপাশে ভূতের উপদ্রব শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। এর অর্থ হলো, তাঁদের রোগী মরে আর ভূতের সংখ্যা বাড়ে…আর যাঁকে নিলাম, তাঁর ওখানে কোনো ভূতের উপদ্রব নেই…অর্থাৎ তাঁর রোগী একজনও মরেনা।
14) সত্যিই বুদ্ধি বটে !
গোপাল একবার দূর দেশে বেড়াতে যাবে বহুদিন ভাড়াটে বাড়িতে রয়েছে, একে একে অনেক আসবাবপত্র জমা হয়েছে। সে সব আসবাব সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব, অথচ বেচে যেতেই ইচ্ছে নেই। বেচে গেলে টাকা পয়সা যা পাওয়া যাবে এখন, তাতে ফিরে এলে সে টাকায় তো আর খরিদ করা যাবে না, ভালো ভালো আসবাবপত্র প্রায় সব গোপাল সকলের কাছ থেকে দান হিসাবে পেয়েছে তা তো বেচা উচিত নয়। তাহলে লোকে কি বলবে? তাই কি করা যায় এ কথাই বার বার ভাবছে। আবার আসবাবপত্র রেখে যাওয়ার জন্যে ওই ভাড়া বাড়িটা বজায় রাখার কোনো মানে হয় না। কারণ অনেক টাকা ভাড়া গুনতে হবে। ভেবে ভেবে অবশেষে একটা ফন্দী বের করলে। গোপাল একটা বড় বন্ধকী দোকানে আসবাবগুলো নিয়ে গিয়ে বন্ধক দিলে। অনেক টাকা দামের আসবাবগুলো নিয়ে গিয়ে বন্ধক দিলে মাত্র চারশো টাকায়। দোকানদার ওইসব আসবাব রেখে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে রাজি ছিল। কিন্তু গোপাল ভাবল টাকার চেয়ে জিনিস রাখারই গরজ তার। যত কম টাকা নেওয়া যায়, সুদ টানতে হবে তত কম। সেজন্য হিসেব করে দেখলে- চারশো টাকার দরুন মাসে তার যে সুদ দিতে হবে, একটা ঘর ভাড়া করে জিনিসগুলো রেখে যেতে তাকে মাসে মাসে অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হবে। গোপাল বেশ কিছুদিন পর ফিরে এসে টাকা দিয়ে আবার আসবাবগুলো ফেরত নিল। সত্যিই বুদ্ধি বটে !
18) সে বছর আমায় ডেকেছিলে কেন?
গোপালের দোতলা বাড়ি তৈরি হলে সে তার প্রতিবেশী এক ভাইপোকে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগলো, “রাখাল, ও রাখাল, কী করছিস ওখানে?” রাখাল বুঝলো, কাকা দোতলা বাড়ি দেখাচ্ছে। তাই সে কোন কথা বলল না। এর বহুদিন পর রাখালও নিজের চেষ্টায় ছোটখাট একটা দোতলা বাড়ি তৈরি করল। তারপর ছাদে উঠে ডাকতে লাগল, “কাকা কাকা, সে বছর আমায় ডেকেছিলে কেন?”
7) লোকজন জানুক আমি মোড়ল হয়েছি-
গোপাল একবার গ্রামের মোড়ল হয়েছিল। তো একদিন ভোরবেলায় এক লোক এসে ডাকতে লাগল, ‘গোপাল? গোপাল?’ গোপাল ভাঁড় কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়েই রইল। এবার লোকটা চিৎকার করে ডাকতে লাগল, ‘মোড়ল সাহেব, মোড়ল সাহেব।’ এবারও গোপাল কোনো কথা না বলে মটকা মেরে শুয়ে রইল। গোপালের বউ ছুটে এসে বলল, ‘কী ব্যাপার, লোকটা মোড়ল সাহেব মোড়ল সাহেব বলে চেঁচিয়ে পড়া মাত করছে, তুমি কিছুই বলছ না!’ গোপাল কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, ‘আহা, ডাকুক না কিছুক্ষণ, পাড়ার লোকজন জানুক আমি মোড়ল হয়েছি।’
5) রামনাম জপলে ভূত ছাড়ে
একবার রাজা মশাই শক্ত করে গোপাল ভাঁড়ের হাত আঁকড়ে ধরে বললেন, কী গোপাল, বুদ্ধির জোরে কি আর সব হয়? মাঝে গায়ের জোরও লাগে। পারলে হাতখানা ছোটাও দেখি বাপু। দেখি, কেমন তোমার শক্তি! রাজা ভেবেছিলেন, গোপাল ভাঁড় হয়তো হাত ধরে টানাহেঁচড়া করবে, মোচড়ামুচড়ি করবে। রাজাকে অবাক করে দিয়ে সে এসবের কিছুই করল না! শুধু বিড়বিড় করে রাম রাম বলতে লাগল। রাজা মশাই: কী হলো, অত রাম রাম করছ কেন? গোপাল বলল, রাজা মশাই, গুরুজনের মুখে শুনেছি, রামনাম জপলে ভূত ছাড়ে! রাজা সঙ্গে সঙ্গে গোপালের হাত ছেড়ে দিলেন!
15) আগেই মেরে দিলাম। সাবধান থাকবে।’
রামবাবুর সাথে গল্প করতে করতে গোপালের খুব তেষ্টা পেয়েছে। সে ওর ভৃত্যকে ডেকে ঠাস ঠাস তিনটে চড় লাগিয়ে দিয়ে বলল, ‘যা এক ঘটি জল নিয়ে আয়! ঘটি যেন না ভাঙে।’ ব্যাপার দেখে রামবাবু বললেন, ‘গোপাল, ঘটি ভাঙার আগেই ওকে চড় মেরে বসলে যে?’ গোপাল জবাব দিলো, ‘আরে ভেঙে ফেলার পর মেরে কি আর লাভ আছে? এর চেয়ে আগেই মেরে দিলাম। সাবধান থাকবে।’