" কুন্তীদেবীর শিক্ষা " সুধি ভগবদ্ভক্তগণ কর্তৃক অতি সমাদৃত এই গ্রন্থ

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক মূল সংস্কৃত শ্লোক, অনুবাদ এবং বিশদ তাৎপর্যসহ ইংরেজি Teachings of Queen Kunti গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ । অনুবাদক : শ্রীমদ্ সুভগ স্বামী মহারাজ

  • সবচেয়ে বিদুষী নারী

    শ্লোক: ৩
    তথা পরমহংসানাং মুনীনামমলাত্মনাম্ ।
    ভক্তিযোগবিধানার্থং কথং পশ্যেমহি স্ত্রিয়ঃ ॥ ৩ ॥
  • অনুবাদ : জড় ও চেতনের পার্থক্য নিরূপণের মাধ্যমে যাঁরা পবিত্র হয়েছেন , সেই পরমহংসদের ও মনোধর্মী দার্শনিকদের হৃদয়ে ভক্তিযোগের বিজ্ঞান প্রদানের উদ্দেশ্যে তুমি স্বয়ং অবতরণ করেছ । অতএব স্ত্রীকুল আমাদের পক্ষে তোমার সম্যক স্বরূপজ্ঞান উপলব্ধি কিরূপে সম্ভব ? ( ভাঃ ১/৮/২০ )
  • তাৎপর্যঃ- সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক মনীষীদেরও মনের অগোচর এই পরমেশ্বর ভগবান । উপনিষদে বলা হয়েছে যে , পরম সত্য পরম পুরুষ ভগবান সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিকদেরও চিন্তার অতীত । মেধা বা বিদ্যার মাধ্যমে তাঁকে জানা যায় না । ভগবৎ - কৃপাপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছেই তিনি নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন । অন্যেরা বহু বছরব্যাপী তাঁর সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারে , কিন্তু তিনি তাদের কাছে অজ্ঞাতই থেকে যান । এই সত্যটি নিষ্কলুষ রানী কুন্তীদেবী যথার্থ বলে প্রমাণ করেন । দার্শনিকদের মতো স্ত্রীলোকেরা মননশীল নয় , কিন্তু তারা ভগবৎ - আশীর্বাদ - প্রাপ্ত , কারণ তারা অবিলম্বেই ভগবানের পরমেশ্বরত্ব ও সর্বময় ক্ষমতায় দৃঢ় বিশ্বাস করে এবং এইজন্য নির্দ্বিধায় ও বিনাসর্তে ভগবানের শ্রীচরণে প্রণাম নিবেদন করে । পরম করুণাময় ভগবান শ্রীহরি কেবল বড় দার্শনিককেই বিশেষ কৃপা প্রদান করেন না । তিনি তার ঐকান্তিক উদ্দেশ্যকে বুঝতে পারেন । এই কারণেই যে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিরাট সংখ্যক স্ত্রীলোকের সমাবেশ হয় । প্রত্যেক দেশে ও প্রত্যেক ধর্মসম্প্রদায়ে পুরুষের চেয়ে স্ত্রীলোকদের ভগবৎ বিষয়ে বেশি আগ্রহী দেখা যায় । এই রকম সরল অস্তকরণে ভগবানের আনুগত্য স্বীকার অসরল লৌকিক ধর্মোদ্দীপনা থেকে অনেক বেশি ফলপ্রদ ।

       কুণ্ডীদেবীর শিক্ষা কুন্তীদেবী ভগবানের কাছে অতি দীনভাবে প্রার্থনা করেন এবং এই দৈন্যভাবই বৈষ্ণবের লক্ষণ । ভগবান কৃষ্ণ কুন্তীদেবীর পদধুলি গ্রহণের মাধ্যমে তাকে প্রণাম জানাতে আগমন করেন । কৃষ্ণ কুন্তীদেবী কে তাঁর পিসিমা বিবেচনা করায় তার পাদস্পর্শ করতেন । কার্যত কৃষ্ণের মাতা যশোদা মায়ের সমপর্যায়ের একজন সর্বোত্তমা মহিয়সী ভগবদ্ভক্ত হলেও অত্যস্ত দৈন্যভাবে কুন্তীদেবী বন্দনা করেন , “ কৃষ্ণ , একমাত্র মহাভাগবত পরমহংসকুলই তোমাকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন , কিন্তু এক নগণ্য স্ত্রীলোক আমি তোমাকে কিভাবে উপলব্ধি করব ? ”

       বৈদিক প্রথা অনুযায়ী সমাজ চার ভাগে বিভক্ত ( চাতুর্বর্ণং ময়া সৃষ্টম্ ) । সমাজের সর্বোচ্চ বর্ণ হচ্ছে যারা সবচেয়ে বুদ্ধিমান অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা এবং তারপর ক্ষত্রিয়রা ( সেনানী ও শাসকরা ) , তারপর বৈশ্যরা ( কৃষক ও বণিকরা ) এবং পরিশেষে শূদ্ররা ( সাধারণ শ্রমিক ) । গুণকর্ম অর্থাৎ কারোর গুণ ও কর্ম অনুসারে এই সমাজ ব্যবস্থায় তার স্থান নিরূপিত হয় । ভগবদ্‌গীতায় বলা হয়েছে — স্ত্রীয়ো বৈশ্যাথা শুদ্রাঃ এবং শ্রীমদ্ভাগবতে স্ত্রীশুদ্রজিবর্দ্ধনাম্ উল্লেখ করা হয়েছে । এই শাস্ত্রোক্তি অনুসারে স্ত্রীলোক , শুদ্র ও দ্বিজবন্ধু সমশ্রেণীভুক্ত । দ্বিজবন্ধু শব্দে উচ্চ ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় বংশজাত হলেও যে ঐ রকম গুণসম্পন্ন নয় , তাকে বোঝায় । বৈদিক সমাজব্যবস্থায় যোগ্যতা অনুসারে ব্যক্তির সামাজিক পরিচয় নির্ণীত হয় । এই ব্যবস্থা খুবই কার্যকর । যেমন কেউ প্রধান বিচারপতির সন্তানরূপে জন্মগ্রহণ করতে পারে , কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে , সেই সন্তানও বিচারপতি । তবু কেউ ব্রাহ্মণবংশে জন্মগ্রহণ করে , যোগ্যতাহীন মূঢ়াধম হলেও সে নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে দাবি করে এবং যোগ্যতা বিচারে সে শুদ্রাধম হলেও লোকে তাকে ব্রাহ্মণ বলে গ্রহণ করে । এই হচ্ছে বৈদিক সংস্কৃতির পতনের কারণ । ভারতবর্ষের ব্রাহ্মণরা কখনও কখনও আমার এই হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের ঘোরতর বিরোধিতা করে , কারণ আমি ইউরোপীয় ও আমেরিকানদের উপযুক্ত শিক্ষাদান করে ব্রাহ্মণরূপে গড়ে তুলি । আমরা তাদের যুক্তিতর্ক গ্রাহ্য করি না , অন্য যুক্তিবাদীদের এই রকম কথাও আমরা কখন শুনব না । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন—

    পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম ।
    সর্বত্র প্রচার হৈবে মোর নাম ৷ “ বিশ্বের প্রতি শহরে ও প্রতি গ্রামে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন প্রচারিত হবে । ” তা হলে ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা ব্রাহ্মণ হবে না কেন ? বস্তুত যিনি কৃষ্ণানুশীলন করছেন , তিনি ইতিমধ্যেই ব্রাহ্মণের স্তর অতিক্রম করেছেন । এই জন্য ভগবদ্গীতায় ( ১৪/২৬ ) উল্লেখ করা হয়েছে—

    মাং চ যোহব্যভিচারেণ ভক্তিযোগেন সেবতে ।
    স গুণান্ সমতীত্যৈতান ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ॥ “ ভক্তিযোগ অনুশীলনকারী গুণময়ী প্রকৃতিকে অতিক্রম করে অচিরেই ব্রহ্মভূত স্তরে উপনীত হন । ” সর্বতোভাবে ভক্তিযোগ অনুশীলনকারী ব্যক্তি শুধু একজন ব্রাহ্মণই হন না , তিনি সর্বোত্তম অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত হন ।

       একমাত্র ব্রাহ্মণ বংশজাত ব্যক্তিই ব্রাহ্মণ হতে পারে , এই বাঁধাধরা ধারণা বৈদিক কৃষ্টির বিনাশ সাধন করেছে । কিন্তু আজ আমরা অভ্রান্ত জ্ঞানের পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছি যে , প্রত্যেকেই তাদের জীবনে পরম সিদ্ধিলাভ করতে পারে । ভগবদ্‌গীতায়( ৯/৩২ ) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন –

    মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেঽপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ । স্ত্ৰীয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেঽপি যান্তি পরাং গতিম্ ॥ “ হে পাৰ্থ , স্ত্রীলোক , বৈশ্য ও শূদ্র — এরা পাপযোনি হলেও আমার শরণাগত হলে , তারাও পরমগতি প্রাপ্ত হয় । ” এই জন্য স্ত্রীলোক , শুদ্র ও বৈশ্যরা নিম্ন শ্রেণীভুক্ত বিবেচিত হলেও তারা হরিভজন করা মাত্র ঐ সকল জড় উপাধিকে অতিক্রম করে । সাধারণত স্ত্রীলোক , শুদ্র বা বৈশ্যরা স্বল্প বুদ্ধিমান বলে গণ্য হয় , কিন্তু যিনি কৃষ্ণভাবনা অনুশীলন করেন , তিনি সবচেয়ে বুদ্ধিমান । এই জন্য চৈতন্য চরিতামৃতে উল্লেখ আছে — কৃষ্ণ যে ভজে সে বড় চতুর । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন—
    ব্রহ্মাণ্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান্ জীব ।
    গুরু কৃষ্ণ প্রসাদে পায় ভক্তিলতা - বীজ ॥

    “ ব্রহ্মাণ্ডে ভ্রমণকারী সমগ্র জীবকুলের মধ্যে সবচেয়ে ভাগ্যবান জীবই গুরুদেব ও ভগবানের কৃপায় ভগবদ্ভক্তির বীজ প্রাপ্ত হন । ” ( চৈঃ চঃ মধ্য ১৯/১৫১ ) ভাগ্যহীন , চরম দুৰ্দ্দশাগ্রস্তদের নিয়ে কৃষ্ণভাবনাময় আন্দোলন সংগঠিত হয়নি । সবচেয়ে ভাগ্যবান জীবদের নিয়ে এটি গঠিত হয়েছে । কৃষ্ণানুশীলনকারীকে সবচেয়ে ভাগ্যবান বলে গণ্য করতে হবে , কারণ তিনি নিজের জীবনকে সার্থক করে গড়ে তোলার পন্থার সন্ধান পেয়েছেন । যিনি কৃষ্ণভক্ত হয়ে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সব সময় কৃষ্ণসেবায় ব্রতী তিনি মহাভাগ্যবান এবং তার জীবন সম্পূর্ণভাবে সার্থক ও সাফল্যপূর্ণ । এখানে এই কথাই দৈন্যভাবে কুন্তীদেবী নিবেদন করেছেন । কুন্তীদেবী স্ত্রীলোক হলেও তিনি ছিলেন মহীয়সী কৃষ্ণভক্ত । তিনি একজন সাধারণ নির্বোধ স্ত্রীলোক ছিলেন না । পক্ষান্তরে , তিনি ছিলেন একজন সবচেয়ে বিদগ্ধা নারী , কেননা তিনি কৃষ্ণের ভগবৎ স্বরূপের পরিচয় স্বীকার করেছেন । তিনি বলেছেন যে , কৃষ্ণ আমাকে প্রণাম জানাতে এসেছে , কিন্তু জড় - জাগতিক দৃষ্টিতে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র হলেও সে পরমেশ্বর ভগবান । এই জন্য পূর্ববর্তী একটি শ্লোক কুণ্ডীদেবী বলেছেন , অলক্ষ্যং সর্বভূতানাং অন্তবহিরবস্থিতম্ — “ তুমি অন্তরে ও বাইরে সর্বত্র বিরাজমান হলেও , তুমি সাধারণ লোকের দৃষ্টির অগোচর । ” অপর একটি শ্লোকে কুন্তীদেবী বলেন , ন লক্ষ্যসে মুদৃশ্য “ তুমি মুঢ় ও অজ্ঞদের দৃষ্টির অগোচর । " এর থেকে জানা যায় যে , কুন্তীদেবী কৃষ্ণকে উপলব্ধি করেছেন । কৃষ্ণোপলব্ধি না হলে তিনি কখনও বলতেন না – ন লক্ষ্যসে মূঢ়দৃশা । কুন্তীদেবী আরো বলেছেন , প্রকৃতেঃ পরম্ তুমি জড়াতীত ।

       এখন , এই শ্লোকেও সদৈন্যে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছেন । এই দৈন্যভাব ভগবদ্ভজনকারীর ভূষণ বিশেষ । এইজন্য চৈতন্য মহাপ্রভু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন— তৃণাদপি সুনীচেন তরোরপি সহিষ্ণুনা— “ কৃষ্ণভাবনার পথে প্রগতির উদ্দেশ্যে তৃণাপেক্ষা দীন - হীন এবং তরু অপেক্ষা সহনশীল হতে হবে । ” হরিভজনে এই সকল গুণাবলীর একান্ত প্রয়োজন , কারণ সমুদ্রযাত্রা পথ যেমন বিঘ্নসঙ্কুল , ঠিক তেমনই এই জড় - জাগতিক জীবনও নানা বিপদে পরিপূর্ণ । সাগরে সর্বদা শান্তিময় অবস্থা আশা করা যায় না । যে কোন মুহূর্তে বিশাল ঢেউ উঠতে পারে , এমন কি বড় বড় জাহাজও আন্দোলিত হয় । সেই রকম এই জড় জগতে আমরা সর্বদাই বিপদ আশা করতে পারি । এই ভব সংসারে শান্তিময় জীবন আশা করা যায় না । বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে পদং পদং যদ্ বিপদাম্ ( ভাঃ ১০/১৪/৫৮ ) –এই ভব - সংসারে প্রতি পদক্ষেপ বিপদসঙ্কুল । কিন্তু হরিভজন করে এই বিপদ অতিক্রম করা যায় ( মায়ামেতাং তরন্তি তে ) ।

       কৃষ্ণভাবনা অনুশীলনকারী হরিভজনের সূচনায় জড়া প্রকৃতির মায়ামোহে নানাভাবে উৎপীড়িত হবেন । কৃষ্ণভাবনায় আমাদের দৃঢ়তা , আমাদের নিষ্ঠা মায়াদেবী পরীক্ষা করবেন । কারণ তিনিও কৃষ্ণের একজন প্রতিনিধি , তাই কৃষ্ণকে বিরক্ত করার স্বাধীনতা তিনি কাউকে দিতে চান না । আমরা বস্তুত ঐকান্তিকভাবে কৃষ্ণভাবনাময় হতে অভিলাষী , নাকি কৃষ্ণকে বিরক্ত করার জন্য কৃষ্ণানুশীলন করছি , মায়াদেবী অত্যন্ত কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে তা দেখতে চান । এটি হচ্ছে মায়াদেবীর কার্য । অতএব কৃষ্ণভজনের সূচনায় মায়া পরীক্ষা করবে এবং কৃষ্ণভজনে প্রগতির পথে আমরা নানাবিধ বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হব । কিন্তু আমরা যদি নিয়ম - বিধি যথাযথভাবে পালন করে নির্দিষ্ট সংখ্যায় পবিত্র হরিনাম জপ করি , তা হলে কৃষ্ণভজনে আমরা দৃঢ় ও অচঞ্চল থাকব । এই নিয়ম - বিধি পালনে অবহেলা করলে , অনতিবিলম্বে মায়া আমাদের গ্রাস করবে । মায়া সর্বদাই প্রস্তুত । আমরা ভবসাগরে পতিত এবং যে কোন মুহূর্তেই আমরা বিচলিত হতে পারি । অতএব যিনি আদৌ চঞ্চল হন না তিনি পরমহংস নামে অভিহিত হন ।

       তাই কুন্তীদেবী বলেছেন তথা পরমহংসানাম্— “ একমাত্র পরমহংসরা তোমাকে তত্ত্বত উপলব্ধি করতে পারেন । ” পরম শব্দের অর্থ ' অন্তিম ' এবং হংস শব্দে ‘ হাঁস ’ । অতএব পরমহংস অর্থে ' আদর্শ হংস ' । হাসকে আমরা জল - মিশ্রিত দুধ দিলে হাঁস জল পরিত্যাগ করে শুধু দুধই পান করবে । সেই রকম উৎকৃষ্টা ও নিকৃষ্টা — এই দুই প্রকৃতি দিয়ে জড় জগৎ গঠিত । উৎকৃষ্টা প্রকৃতির অর্থ হচ্ছে পারমার্থিক জীবন এবং নিকৃষ্টা প্রকৃতির অর্থ জড় জীবন । এইভাবে যে এই জগতের জড়ীয় অংশ ত্যাগ করে শুধু চিন্ময় পারমার্থিক অংশ গ্রহণ করে তাকে পরমহংস বলে ।

       দেহস্থ আত্মাকে দৈহিক কর্মের কারণ বলে জানা উচিত । এই হচ্ছে বাস্তব সত্য । দেহটি হচ্ছে বহিরাবরণ মাত্র । সেই রকম কৃষ্ণকে সকল কর্মের যথার্থ কেন্দ্র বলে জানা উচিত এবং যিনি তা জানেন , তিনি হচ্ছেন একজন পরমহংস । এই ভক্তিযোগ পরমহংসের জন্য , যিনি কৃষ্ণকে সব কিছুর বাস্তব কেন্দ্র বলে জানেন । ভগবদ্‌গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন , অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে – “ আমিই সব কিছুর উৎস; আমা থেকে সব কিছু প্রবর্তিত হয় । ”

       কুন্তীদেবী বলেছেন , “ তুমি পরমহংসকুলের জন্য , মুঢ় ও নির্বোধদের জন্য নও । পরমহংস ও মুনিরাই তোমাকে যথাযথ জানতে পারে । ” মুনিনাম্ শব্দে যাঁরা চিন্তাশীল অথবা যারা মননশীল , তাঁদের উল্লেখ করা হয়েছে এবং অমলাস্থানাম্ শব্দে র্যাঁদের হৃদয় মলশূন্য , তাদেরকে উল্লেখ করা হয়েছে । জড় বিষয়ীর মন কলুষতায় পরিপূর্ণ । এই কলুষতা কি ? কাম ও লোভ । সব বিষয়ী লোকই কামুক ও লোলুপ , এবং তাই তাদের হৃদয় মলিনতায় পঙ্কিল বলে জানা উচিত । কিন্তু যাঁরা এই দুটি মলিনতা থেকে নির্মুক্ত , তাদেরই অমলাম্মানাম্ বলে উল্লেখ করা হয় ।

       যাদের হৃদয় নির্মল ভক্তিযোগ তাদের জন্য , কামুক ও লোলুপদের জন্য নয় । অবশ্য কামুক ও লোলুপরাও পরমার্থ পথে অগ্রসরে প্রয়াসী হতে পারে এবং ক্রমশ তারা ভক্তিযোগ অনুশীলন করতে পারে । কিন্তু একবার ভক্তিযোগে অধিষ্ঠিত হলে কাম অথবা লোভের কোন প্রশ্নই উঠে না । বিরক্তিরুন্যত্র চ ( ভাঃ ১১/২/৪২ ) । এই হচ্ছে পরীক্ষা । কামবাসনা ও লোভ থেকে নির্মুক্ত হলেই ভক্তিযোগে অধিষ্ঠিত হয়ে সে একজন বাস্তবিক পরমহংস হন । কুন্তীদেবী দৈন্যভাবে নিবেদন করেন ,

       “ তুমি শুধু পরমহংস ও মুনিদের উপাস্য । এই অমলাত্মারাই যথার্থভাবে ভক্তিযোগে ব্রতী । কিন্তু আমরা কি ? আমরা নিম্ন তুচ্ছ শ্রেণীভুক্ত স্ত্রীকুল হয়ে কিভাবে তোমাকে উপলব্ধি করব ? কুন্তীদেবী কৃষ্ণোপলব্ধি করেও , একজন সাধারণ নারীর ভূমিকা গ্রহণ করে বলেন , কিভাবে তোমাকে আমি হৃদয়ঙ্গম করব ? এই হচ্ছে দৈন্যভাব ।

  • এখন দেখতে পারেন => " কুন্তীদেবীর শিক্ষা " গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৪ ) সর্বময় সত্য বাসুদেবে শরণাগতি –
  • * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।