" কুন্তীদেবীর শিক্ষা " সুধি ভগবদ্ভক্তগণ কর্তৃক অতি সমাদৃত এই গ্রন্থ

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক মূল সংস্কৃত শ্লোক, অনুবাদ এবং বিশদ তাৎপর্যসহ ইংরেজি Teachings of Queen Kunti গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ । অনুবাদক : শ্রীমদ্ সুভগ স্বামী মহারাজ

  • ইন্দ্রিয়ের অগোচর

    শ্লোক: ২
    মায়াজবনিকাচ্ছন্নমজ্ঞাধোক্ষজমব্যয়ম্ ।
    ন লক্ষ্যসে মৃঢ়দৃশা নটো নাট্যধরো যথা ॥ ২॥
  • অনুবাদ : তুমি অব্যয় ও জড় ইন্দ্রিয়জ জ্ঞানের অতীত । তুমি মায়া-যবনিকার দ্বারা আচ্ছাদিত । অভিনেতার সাজে সজ্জিত ব্যক্তিকে যেমন চেনা যায় না , তেমনই নির্বোধেরা তোমার সন্ধান পায় না । ( ভাঃ ১/৮/১৯ )
  • তাৎপর্যঃ- ভগবদ্‌গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রতিপাদন করেছেন যে , অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা তাকে আমাদের মতো একজন সাধারণ ব্যক্তি বলে ভুল করে এবং এইভাবে তারা কৃষ্ণকে অবজ্ঞা করে । একই কথা এখানে কুন্তীদেবীর দ্বারা প্রতিপন্ন হয়েছে । অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা হচ্ছে ভগবানের পরম নিয়ামকত্বের বিরোধী এবং তাদের অসুর বলা হয় । অসুরেরা কখনই ভগবানের পরম কর্তৃত্ব স্বীকার করে না । যখন ভগবান স্বয়ং বরাহ , নৃসিংহ , রামাদি রূপে তার আদি রূপ শ্রীকৃষ্ণরূপে আমাদের মধ্যে অবতরণ করেন , তখন তিনি অনেক অদ্ভুত অলৌকিক লীলাবিলাস করেন । শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে মাতা যশোদার কোলে থাকার সময়ই আমরা শ্রীকৃষ্ণকে মানুষের অসাধ্য অদ্ভুত লীলা প্রদর্শন করতে দেখি । কৃষ্ণনিধনের উদ্দেশ্যে স্তনকে বিষময় করা সত্ত্বেও ভগবান কৃষ্ণ পুতনা রাক্ষসীকে বধ করেন । একটি সাধারণ শিশুর মতো ভগবান তার স্তন পান করেন ও সেই সঙ্গে পুতনার জীবনবায়ুও নিঃশেষে শোষণ করেন । সেই রকম একটি বালক যেমন ব্যাঙের ছাতা উত্তোলন করে , তেমনই অতি সহজেই তিনি গোবর্ধন পাহাড় উত্তোলন করেন এবং ব্রজবাসীদের রক্ষার্থে সাত দিনব্যাপী ঐ পাহাড় ধারণ করেন । উপনিষদ , ইতিহাস , পুরাণাদি প্রামাণিক বৈদিক শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই সব অলৌকিক কার্যাবলী লিপিবদ্ধ আছে । ভগবদ্‌গীতার আকারে তিনি চমৎকার উপদেশ প্রদান করেন ।

       একজন নায়ক , গৃহস্থ , গুরু ও ত্যাগী রূপে তিনি দক্ষতার পরম ঔৎকর্ষ প্রদর্শন করেন । ব্যাস , দেবল , অসিত , নারদ , মধ্ব , শঙ্কর , রামানুজ , শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু , জীব গোস্বামী , বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর , ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ও পরম্পরাগত অন্যান্য মহান আচার্য দ্বারা তিনি পরমেশ্বর ভগবানরূপে স্বীকৃত হন । তিনি স্বয়ং প্রামাণিক শাস্ত্রের বহু স্থানে এই কথা ঘোষণা করেছেন । তবুও এক শ্রেণীর আসুরিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি ভগবানকে পরমব্রহ্মারূপে গ্রহণে সর্বদাই অনিচ্ছুক । অল্পজ্ঞতা এর আংশিক কারণ এবং অতীত ও বর্তমান অপকর্মের ফলস্বরূপ একগুয়েমী জেদী মনোভাব তার আংশিক কারণ । এই রকম ব্যক্তিরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাদের সম্মুখে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাকে চিনতে পারেনি । আর একটি অসুবিধা হচ্ছে , যারা তাদের অপূর্ণ ইন্দ্রিয়ের উপর অধিক নির্ভরশীল , তারা কৃষ্ণকে । পরমেশ্বর ভগবানরূপে উপলব্ধি করতে পারে না । এই শ্রেণীর জনগণ । বর্তমানকালের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে তুলনীয় । তারা সব কিছুই তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষালব্ধ জ্ঞান দ্বারা জানতে চায় । কিন্তু অপূর্ণ পরীক্ষামূলক জ্ঞানের মাধ্যমে পরম পুরুষকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয় । এই শ্লোকে তাকে অধোক্ষজ বলে বর্ণনা করা হয়েছে , অর্থাৎ তিনি ইন্দ্রিয়জাত জ্ঞানের অগোচর বা জড় পরীক্ষাজাত জ্ঞানের সীমার অতীত । আমাদের সকল ইন্দ্রিয়ই অপূর্ণ । আমরা সব কিছুই দর্শনে সক্ষম বলে দাবি করলেও , আমাদের অবশ্য স্বীকার করা কর্তব্য যে , শুধু বিশেষ জড় --জাগতিক অবস্থাতেই আমরা বস্তু নিরীক্ষণে সক্ষম । আবার ঐ অবস্থাও আমাদের নিয়ন্ত্রণের অতীত । ভগবান হচ্ছেন আমাদের জড় ইন্দ্রিয়ানুভূতির অতীত বস্তু । কুন্তীদেবী মায়াবদ্ধ জীবাত্মার , বিশেষত অল্পবুদ্ধিসম্পন্না স্ত্রীলোকের এই অক্ষমতা স্বীকার করেন । স্বল্প বুদ্ধিমানদের জন্য মন্দির , মসজিদ্ অথবা গির্জাদি থাকা অবশ্য প্রয়োজন , যাতে তারা ভগবানের পরমেশ্বরত্ব স্বীকার এবং ঐ তীর্থস্থানে আচার্য মহাজন মুখনিঃসৃত পবিত্র ভগবৎ - কথা শ্রবণ করতে পারে । স্বল্প বুদ্ধিমানদের জন্য এই রকম পারমার্থিক জীবনের সূচনা একান্ত প্রয়োজন এবং একমাত্র মুঢ়রাই । জনগণের আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যের মান উন্নয়নকল্পে প্রয়োজনীয় এই রকম ভগবৎ উপাসনার স্থান নির্মাণে নিন্দা করে । সাধারণত মন্দির , মসজিদ বা গির্জাদিতে স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের পরমেশ্বর ভগবানের সম্মুখে প্রণাম কার্যত ভগবৎ - সেবার মাধ্যমে উন্নত ভক্তের ভগবানের ধ্যানের মতোই মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর ।

  • এখন দেখতে পারেন => " কুন্তীদেবীর শিক্ষা " গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৩ ) সবচেয়ে বিদুষী নারী -
  • * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।