" কুন্তীদেবীর শিক্ষা " সুধি ভগবদ্ভক্তগণ কর্তৃক অতি সমাদৃত এই গ্রন্থ

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক মূল সংস্কৃত শ্লোক, অনুবাদ এবং বিশদ তাৎপর্যসহ ইংরেজি Teachings of Queen Kunti গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ । অনুবাদক : শ্রীমদ্ সুভগ স্বামী মহারাজ

  • কৃষ্ণলীলার বিভ্রম

    শ্লোক: ১২
    ন বেদ কশ্চিদ্ভগবংশ্চিকীর্ষিতং
    তবেহমানস্য নৃণাং বিড়ম্বনম্ ।
    ন যস্য কশ্চিদ্দয়িতোঽস্তি কর্হিচিদ্
    দ্বেষ্যশ্চ যস্মিন্ বিষমা মতির্নৃণাম্ ॥ ১২ ॥
  • অনুবাদ : হে ভগবান ! লৌকিকভাবে প্রতীয়মান তোমার দিব্যলীলা কেউই হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না , তাই এগুলি এমনই বিভ্রান্তিকর । কেউই তোমার বিশেষ প্রিয় পাত্র নয় , কারও প্রতিই তুমি বিদ্বেষপরায়ণ নও । তোমার পক্ষপাতিত্ব শুধু জনগণের কল্পনা মাত্র । ( ভাঃ ১/৮/২৯ )
  • তাৎপর্যঃ- পতিত জীবকুলের প্রতি ভগবান সমভাবে কৃপা বিতরণ করেন । তিনি কারও প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন নন । পরমেশ্বর ভগবান একজন মানুষ , এই ধারণাটি বিভ্রান্তিকর । ভগবানের দিব্যলীলা মানুষের কার্যাবলীর মতো প্রতীয়মান হলেও , এগুলি জড় কলুষহীন অপ্রাকৃত লীলা । তিনি নিঃসন্দেহে তাঁর শুদ্ধ ভক্তের প্রতি পক্ষপাতযুক্ত বলে পরিচিত , কিন্তু বস্তুত তিনি কারও প্রতি পক্ষপাতযুক্ত নন , যে - রকম সূর্য কখনও কারও প্রতি পক্ষপাতী নন । সূর্যালোকের সাহায্যে পাথরও কখনও কখনও মূল্যবান মণিতে পরিণত হয় , পক্ষান্তরে প্রচুর সূর্যরশ্মির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও অন্ধব্যক্তি কখনও সূর্যকে দেখতে পারে না । অন্ধকার ও আলোক দুটি বিরোধী বিষয় , কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে , আলোক বিতরণে সূর্য পক্ষপাতিত্ব করেন । সুর্যের আলো সকলের জন্য উন্মুক্ত , কিন্তু এই আলো গ্রহণ ক্ষমতা বিভিন্ন মূর্খ লোকগুলি মনে করে যে , ভগবদ্ভজন হচ্ছে ভগবানের কৃপালাভের জন্য তার অতিস্ততি করা । বস্তুত অপ্রাকৃত ভগবৎ - সেবাপর শুদ্ধ ভক্তরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নয় । ব্যবসায়ীরা মূল্যের বিনিময়ে কারো সেবা করে । অনন্য ভক্ত এই প্রকার প্রতিদানের বিনিময়ে ভগবৎ - সেবা করেন না এবং এই কারণেই পূর্ণ ভগবৎ - কৃপা তার জন্য উন্মুক্ত । বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আর্ত , অর্থার্থী , জিজ্ঞাসু অথবা জ্ঞানীরা সাময়িক ভগবৎ - সম্বন্ধ স্থাপন করে । উদ্দেশ্য সাধিত হলে , ভগবৎসম্পর্কও আর তখন থাকে না । আর্ত ব্যক্তি আদৌ পুণ্যাত্মা হলে সে নিজের উদ্ধারের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে । কিন্তু দুঃখমোচন হওয়া মাত্র , অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর্ত বা দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি ভগবৎ - সম্পর্ক রক্ষায় যত্ন করে না । ভগবৎ - কৃপা তার জন্য উন্মুক্ত হলেও , সে তা গ্রহণে পরান্মুখ । শুদ্ধ ভক্ত ও মিশ্র ভক্তে এখানেই পার্থক্য । যারা সম্পূর্ণভাবে ভগবৎ - সেবা বিরোধী তারা সম্পূর্ণ অন্ধকারে । যারা শুধু প্রয়োজনের সময় ভগবানের কৃপা প্রার্থনা করে , তারা আংশিকভাবে তা প্রাপ্ত হয় , আর অবিশ্রান্তভাবে সতত ভগবৎ - সেবাপরায়ণ প্রেমময় ভক্ত পূর্ণ ভগবৎ - অনুকম্পা প্রাপ্ত হন । ভগবৎ - কৃপা প্রাপ্তিতে এই রকম পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে গ্রাহক সাপেক্ষ , তা অপার করুণাসিন্ধু ভগবান মধুসুদনের পক্ষপাতিত্ব নয় । কৃপাশক্তির মাধ্যমে ভগবান শ্রীহরি যখন জড় জগতে অবতরণ করেন , তখন তিনি মানুষের মতোই ক্রীড়া করেন , এবং তাই তখন প্রতীয়মান হয় ভগবান শুধু তাঁর ভক্তের প্রতি পক্ষপাতিত্বপূর্ণ , বস্তুত এটি সত্য নয় । এই রকম আপাতদৃষ্ট পক্ষপাতিত্বের প্রকাশ সত্ত্বেও ভগবান সকলকে সমভাবে কৃপা বিতরণ করেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপস্থিতিতে কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে সকল যোদ্ধা প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছাড়াই ভব - বন্ধন মুক্ত হন , কারণ ভগবানের সম্মুখে মৃত্যু বিদায়ী আত্মাকে সমস্ত পাপের ফল থেকে পবিত্র করে এবং তাই মুমূর্ষু ব্যক্তি অপ্রাকৃত ধামের কোথাও স্থান পায় । যে কোন ভাবেই হোক , উন্মুক্ত সূর্যরশ্মিতে অবস্থান করলে , যে কেউ উত্তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি থেকে প্রয়োজনীয় উপকার পাবে । অতএব , সিদ্ধান্ত হচ্ছে ভগবান কখনও পক্ষপাতিত্ব করেন না । ভগবান সম্পর্কে জনসাধারণের এই ধারণা ভুল । ভগবদ্‌গীতায় ( ৪/৮ ) ভগবান বলেছেন— পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্ । ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ॥ “ সাধুদের রক্ষা ও অসুর নিধন এবং ধর্ম পুনঃস্থাপনের উদ্দেশ্য আমি যুগে যুগে স্বয়ং অবতরণ করি । ” যখন ভগবান অবতরণ করেন , তখন তার দুটি উদ্দেশ্য থাকে অসুর নিধন করা এবং সাধু বা শ্রদ্ধাবান ভক্তদের উদ্ধার করা । সাধুনাং কথাটির অর্থ ' সন্ত ব্যক্তি ' , যা ভগবদ্ভক্তদের উল্লেখ করে । এর সঙ্গে লৌকিক সাধুতা - অসাধুতা অথবা নীতি দুর্নীতির কোন সম্পর্ক নেই । এর সঙ্গে জড় - জাগতিক কর্মের কোনই সম্পর্ক নেই । কখনও কখনও সাধু বলতে আমরা জড় - জাগতিক ভাল বা নীতিপরায়ণ ব্যক্তিকে মনে অনুমান করি , কিন্তু বস্তুতপক্ষে ' সাধু ' শব্দে অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিকে উল্লেখ করা হয় । অতএব সাধু হচ্ছেন হরিভক্তিপরায়ণ ব্যক্তি কারণ হরিভজনকারী হচ্ছেন গুণাতীত ( স গুণন সমতীত্যৈতান্ ) ।

       এখন , ভগবান ভক্তের উদ্ধারকর্তা , পরিত্রাতা ( পরিত্রাণায় সাধুনাম্ ) কিন্তু ভগবদ্‌গীতায় ( ১৪/২৬ ) স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ আছে যে , ভগবদ্ভক্ত জড় গুণ অতিক্রম করেন ( স গুণান্‌ সমতীত্যৈতান্ ) । কৃষ্ণভক্ত গুণাতীত স্তরে অবস্থিত কারণ তিনি সত্ত্ব , রজ ও তমোগুণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নন । চিন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত ও ইতিমধ্যেই উদ্ধারপ্রাপ্ত সাধুর আবার উদ্ধারের কি প্রয়োজন ? এই প্রশ্ন উঠতে পাবে । ভগবান ভক্তকে উদ্ধার করতে আসেন , কিন্তু ভক্ত ইতিমধ্যেই উদ্ধারপ্রাপ্ত । তাই বিড়ম্বনম্ অর্থাৎ ' বিভ্রান্তিকর ' কথাটি এই শ্লোকে ব্যবহৃত হয়েছে , কারণ এটির দ্বারা পরস্পর বিরোধী বলে প্রতীয়মান হয় ।

       এই পরস্পর বিরোধিতার উত্তর হচ্ছে যে , একজন ভক্তের উদ্ধারের প্রয়োজন নেই । পরমেশ্বর ভগবানকে মুখোমুখী দর্শনে ব্যাকুল হওয়ায় ভক্ত ইতিমধ্যেই মুক্ত । তাই ভক্তকে উদ্ধার না করে তার অন্তরের ইচ্ছা পূর্ণ করতে ভগবান আগমন করেন । ভগবদ্ভক্ত যেমন ভগবানকে সর্বতোভাবে তৃপ্ত করতে চান , ভগবানও সেই রকম ভক্তকে ততোধিক পরিতৃপ্ত করতে ইচ্ছা করেন । ভগবান ও ভক্তের মধ্যে এই রকমই প্রীতির বিনিময় হয়ে থাকে । এমন কি আমাদের সাধারণ ব্যবহারেও আমরা কাউকে ভালবাসলে তাকে তুষ্ট করতে চাই , সেও তখন আমাদের সঙ্গে প্রীতি বিনিময় করে । অতএব এই ভব সংসারে প্রীতি বিনিময় থাকলে , চিন্ময় জগতে এই প্রীতি বিনিময় কত উন্নত হতে পারে । একটি শ্লোকে ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন , সাধু আমার হৃদয় এবং আমিও তাই সাধুর হৃদয়ে অবস্থান করি । প্রকৃত সাধু সতত কৃষ্ণভাবনাময় এবং কৃষ্ণও প্রতিক্ষণ সাধু বা তার ভক্তের ভাবনায় আবিষ্ট ।

       জড় জগতে ভগবানের আবির্ভাব ও অন্তর্ধানকে চিকীর্ষিতম্ বা লীলাবিলাস বলা হয় । এই জড় জগতে শ্রীকৃষ্ণের আগমন হচ্ছে তার লীলা । অবশ্য , এই জড় জগতে ভগবানের আগমনের সময় ভগবানকে কোন বিশেষ কর্ম সম্পাদন করতে হয় ভক্তকে রক্ষা করা এবং ভক্তদ্বেষীকে হনন করা । কিন্তু উভয় কর্মই হচ্ছে তার অপ্রাকৃত লীলাবিলাস ।

       ভগবান কারও প্রতি বিদ্বেষ-পরায়ণ নন । অসুর নিধনও তার অনুকম্পা ছাড়া কিছু নয় । প্রিয়জন বলেই কখনও কখনও আমরা সন্তানদের প্রচণ্ডভাবে চড় – চাপড় মেরে শাস্তি দিই । সেই রকম কৃষ্ণ যখন অসুরনিধন করেন , সেই অসুর হনন লীলা লৌকিক দ্বেষ বা শত্রুতা প্রসূত নয় , পক্ষান্তরে তা অসুরদের প্রতি তাঁর প্রীতির অভিব্যক্তি । এই জন্য বৈদিক শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে , অসুরও ভগবান কর্তৃক নিহত হলে , অচিরেই মুক্তি লাভ করে । যেমন , পুতনা রাক্ষসী ভগবান কৃষ্ণকে হত্যা করতে চেয়েছিল । কৃষ্ণ যখন শৈশবলীলা প্রকট করেছিলেন , তখন পুতনা তার স্তনকে বিষময় করে , সেই স্তন্যপান করাতে কৃষ্ণগৃহে আগমন করে । পুতনা মনে মনে চিন্তা করে , “ আমার স্তন্যপান করা মাত্র শিশু কৃষ্ণ মৃত্যুমুখে পতিত হবে । ” কিন্তু তা কখনও সম্ভব নয় । কৃষ্ণকে কে মারতে পারে ? পক্ষান্তরে পূতনাই স্বয়ং নিহত হয় । স্তন্যপানের সঙ্গে সঙ্গেই কৃষ্ণ পুতনার প্রাণবায়ুও চুষে পান করেন । কিন্তু তার পরিণাম কি ? কৃষ্ণ তার শুভ দিকটি বিবেচনা করলেন । কৃষ্ণ মনে মনে চিন্তা করলেন , “ এই রাক্ষসী আমাকে হত্যা করতে এসেছিল , কিন্তু যে কোনভাবেই হোক আমি তার স্তন্য পান করেছি , সুতরাং সে আমার মাতা । ” এইভাবে চিন্ময়লোকে পুতনা কৃষ্ণের মাতৃপদ লাভ করে । শ্রীমদ্ভাগবতে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে , যেখানে উদ্ধব বিদুরকে বলেছেন যে , কৃষ্ণ হচ্ছেন কৃপাপারাবার , তিনি কৃপাসিন্ধু , তাই বিষদ্বারা কৃষ্ণকে হত্যা করতে চাইলেও সেই রাক্ষসীটিকে ভগবান মাতৃত্বে বরণ করেছেন । তিনি বলেছেন , “ কৃষ্ণ এই রকম অপার কৃপাময় ভগবান হওয়ায় কৃষ্ণ ছাড়া আর কে আমার উপাস্য হতে পারেন ? ”

       কুন্তীদেবী বলেছেন — ন যস্য কশ্চিদ্দয়িতঃ । দয়িত শব্দের অর্থ ' অনুকম্পা ' । কৃষ্ণ কাউকেই অনুকম্পা প্রদর্শন করেন না । দ্বেষ্যশ্চ আর কেউ তার শত্রু নয় । বন্ধুর কাছে আমরা কিছু প্রাপ্তি আশা করি এবং শত্রুর কাছে ক্ষতিকর কার্য আশা করি । কিন্তু কৃষ্ণই একমাত্র যথার্থ পূর্ণ , তাই কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না এবং কেউ তাকে কিছু দানও করতে পারে না । তাই কে - ই বা তার বন্ধু বা শত্রু হতে পারে ? ন যস্য কশ্চিদ্দয়িতোঽস্তি — তিনি কারও অনুকম্পা আশা করেন না । কৃষ্ণ হচ্ছেন সম্যক পূর্ণতত্ত্ব । আমি দীন - দরিদ্র হতে পারি , বন্ধুর কাছে আমি কিছু কৃপা আশা করতে পারি , তার কারণ আমি পূর্ণ নই , যেহেতু আমি সম্যক নই , তাই আমি নানাভাবে অভাবগ্রস্ত , আমি সর্বদাই দরিদ্র এবং সেই জন্য আমি বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চাই , এবং সেই রকম আমি শত্রুকে ঘৃণা করি । পক্ষান্তরে কৃষ্ণ হচ্ছেন পরমতত্ব , তাই কেউই কৃষ্ণের ক্ষতিসাধন করতে পারে না , অথবা কেউ কৃষ্ণকে কিছু দান করতে পারে না ।

       তা হলে কেন আমরা নানাবিধ আরামপ্রদ উপকরণ , পোশাকাদি দ্বারা শ্রীঅঙ্গ সুশোভিত করণ এবং উপাদেয় ভোজ্যদ্রব্য অর্পণের মাধ্যমে মন্দিরে কৃষ্ণোপাসনা করছি ? আমাদের হৃদয়ঙ্গম করা উচিত যে . আহার্যদ্রব্য , সুগন্ধ পুষ্প ও সুন্দর পোশাকাদি অর্ঘ্য কৃষ্ণের প্রয়োজন নেই , কিন্তু আমরা এই রকম অর্থ কৃষ্ণকে নিবেদন করে উপকৃত হব এইভাবে এটি কৃষ্ণের অনুগ্রহ যে , তিনি এইরকম নৈবেদ্য গ্রহণ করেন । কেউ নিজ দেহ সুসজ্জিত করলে আয়নায় তার প্রতিবিম্ব সুসজ্জিত প্রতীয়মান হবে । সেই রকম , আমরা কৃষ্ণের প্রতিবিম্ব হওয়ায় কৃষ্ণের শ্রীঅঙ্গ সুশোভিত করলে আমরাও সুশোভিত হব । বহিবেলে উল্লেখ আছে যে , ভগবানের আকৃতিতে মানুষ তৈরি হয়েছে , সব এর অর্থ হচ্ছে যে , আমরা হচ্ছি ভগবানের আকৃতি ও প্রতিবিম্ব । এই নয় যে , আমাদের আকার অনুযায়ী আমরা ভগবানের কোন আকার কল্পনা করি বা উদ্ভাবন করি । ভগবানে মনুষ্যত্ব আরোপকারী মায়াবাদী দার্শনিকরা বলে , “ পরম সত্য হচ্ছেন নিরাকার , কিন্তু আমরা সাকার হওয়ায় পরম সত্যকে সাকার বলে কল্পনা করি । ” এটি একটি ভ্রম এবং বস্তুত বিপরীত ধারণাটিই বাস্তব সত্য । আমাদের দুটি হাত দুটি পদ ও একটি মাথা আছে , কেন না স্বয়ং ভগবানের এই একই আকৃতি আছে । আমরা ভগবানের প্রতিবিম্ব হওয়ায় আমাদের দৈহিক আকার আছে । তা ছাড়া , তত্ত্বগতভাবে আমাদের হৃদয়ঙ্গম করা উচিত যে , মূল ব্যক্তি যদি লাভবান হয় , তবে প্রতিবিম্বও লাভবান হবে । তাই কৃষ্ণকে সুশোভিত করলে , আমরাও সুশোভিত হব । কৃষ্ণকে তুষ্ট করলে , আমরা তুষ্ট হব । কৃষ্ণকে উত্তম খাদ্য নিবেদন করলে আমরাও সেই উত্তম খাবার পাব । কৃষ্ণকে যে সব উপাদেয় খাদ্যসম্ভার আমরা নিবেদন করি , যারা কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনে যোগদান করেনি , তারা হয়ত কোনদিনই তা কল্পনাও করতে পারবে না , কিন্তু কৃষ্ণে নিবেদিত হওয়ায় আমরাও ঐগুলি উপভোগ করার সুযোগ পাই । তাই সর্বতোভাবে কৃষ্ণকে আমাদের পরিতুষ্ট করা কর্তব্য , তখন আমরাও সর্বতোভাবে তুষ্ট হব ।

       শ্রীকৃষ্ণ আমাদের সেবা চান না , কিন্তু কৃপা করে তিনি আমাদের সেবা গ্রহণ করেন । শ্রীকৃষ্ণ যখন আমাদের তাঁর কাছে শরণাপন্ন হতে আদেশ করেন ( সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ ) , তার অর্থ এই নয় যে , কৃষ্ণের সেবকের প্রয়োজন এবং কৃষ্ণের শরণাগত হলে তিনি উপকৃত হবেন । ইচ্ছামাত্রই কৃষ্ণ বহু কোটি সেবক সৃষ্টি করতে সক্ষম । সুতরাং ঐটি বিষয়বস্তু নয় । কিন্তু আমরা কৃষ্ণের শরণাপন্ন হলে , আমরা রক্ষা পাব , কেন না কৃষ্ণ বলেছেন , অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি “ আমি তোমাকে সকল পাপের ফল থেকে মুক্ত করব । আমরা আশ্রয়হীন হয়ে এই ভবসংসারে দুঃখক্লেশ ভোগ করছি । আমরা এমন কি বহু লোককে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখি , যাদের জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই ।

       সমুদ্রতীরে প্রাতঃভ্রমণে যাওয়ার সময় সেখানে আমরা লক্ষ্যনীয় , উদ্ভ্রান্ত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় বহু যুবকদের ঘোরাফেরা করতে বা ঘুমিয়ে থাকতে দেখি । কিন্তু আমরা কৃষ্ণের শরণাগত হলে জানতে পারব , “ ও , এখন আমি যথার্থ আশ্রয় লাভ করেছি । ” তখন আর বিভ্রান্তি থাকবে না , তখন আর নিঃসহায় ভাব থাকবে না । প্রতিদিন আমি লোকের কাছ থেকে বহু চিঠি পাই । তারা ঐ চিঠিগুলিতে আমার কাছে প্রকাশ করেছে কিভাবে কৃষ্ণভাবনাময় জীবনে তারা আশার আলোক পেয়েছে । তাই এই কথা সত্য নয় যে , শুধু কিছু সেবক সংগ্রহের জন্য কৃষ্ণ এই জড় জগতে অবতরণ করেন । পক্ষান্তরে , আমাদের অন্তিম কল্যাণের জন্যই তিনি অবতরণ করেন ।

       সে যাই হোক , দুর্ভাগ্যবশত কৃষ্ণের সেবক হওয়ার পরিবর্তে , আমরা আরও কত কিছুর সেবকে পরিণত হচ্ছি । আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় ও ইন্দ্রিয়জাত কাম , ক্রোধ , লোভ ও মোহের দাস । বস্তুত সমগ্র জগই এগুলির দাস । কিন্তু কৃষ্ণসেবায় ইন্দ্রিয়গুলি নিযুক্ত করলে আমরা আর ইন্দ্রিয়ের দাস থাকব না , বরং ইন্দ্রিয়ের স্বামী বা গোস্বামী হব । যখন আমরা কৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্কহীন সেবা ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রত্যাখ্যান করার শক্তি অর্জন করব , তখন আমরা উদ্ধারপ্রাপ্ত ।

       এখানে কুন্তীদেবী বলেছেন , “ জড় জগতে তোমার আবির্ভাব বিভ্রান্তিকর । ” আমরা মনে করি , “ কৃষ্ণের কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে কিছু লক্ষ্য আছে , তাই তিনি জড় জগতে অবতরণ করেছেন । ” না , কৃষ্ণ তাঁর দিব্য লীলাবিলাস প্রকটের জন্যই অবতরণ করেন । যেমন , কখনও কখনও রাজ্যপাল কারাগার পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে যান । তিনি কারাধ্যক্ষ থেকে সংবাদ পান , তাই রাজ্যপালের সেখানে যাওয়াটি একটি কর্তব্য কর্ম নয় , তবুও তিনি কখনও কখনও সেখানে যান এই ভেবে , “ দেখি এরা কি করছে । " এটি তাঁর লীলা বলা যায় , কারণ তিনি সেখানে স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন । এমন নয় যে , তিনি কারাবিধির আওতার মধ্যে পড়েন । কিন্তু তবুও মূর্খ কয়েদি ভাবতে পারে “ ওঃ , দেখ , রাজ্যপালও কারাগারে । তাই আমরাও তার সমান । আমিও রাজ্যপাল । ” মূঢ়রা এই রকমই ভাবে । তারা বলে , “ শ্রীকৃষ্ণ একজন অবতার হয়ে অবতরণ করেছেন আমিও একজন অবতার । ” তাই এখানে বলা হয়েছে , ন বেদ কশ্চিদ্ভগবংশ্চিকীর্ষিতম্— “ কেউই তোমার আবির্ভাব ও অন্তর্ধানের উদ্দেশ্য অবগত নয় । ” তবেহমানস্য নৃণাং বিড়ম্বনম্ ভগবানের লীলাবিলাস সত্যই বিভ্রান্তিকর । কেউ তার যথার্থ উদ্দেশ্য হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম নয় । ভগবানের অপ্রাকৃত লীলাবিলাসের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে তার স্বতন্ত্র ইচ্ছা । তিনি মনে করেন , “ আচ্ছা , সেখানে যাই এবং গিয়ে দেখি । ” অসুর হননকার্যে তাঁর জড় জগতে আসা নিষ্প্রয়োজন । অসুর নিধন কার্যের জন্য জড়া প্রকৃতিতে তার বহু প্রতিনিধি আছে । যেমন , এক মুহূর্তে প্রচণ্ড ঝড়ে তিনি হাজার হাজার অসুরকে বধ করতে পারেন । ভক্তকে রক্ষার উদ্দেশ্যেও তার এখানে আসার প্রয়োজন নেই , কারণ ইচ্ছামাত্র তিনি সব কিছু করতে পারেন । কিন্তু লীলাবিলাস উপভোগের জন্য তিনি অবতরণ করেন । “ আচ্ছা , সেখানে যাই এবং গিয়ে দেখি । ” কখনও কখনও শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধলীলা উপভোগ করতে চান । যুদ্ধাভিলাষও শ্রীকৃষ্ণের রয়েছে , নয়তো কোথা হতে আমরা তা পাব ? আমরা শ্রীকৃষ্ণের অংশ বিশেষ হওয়ায় , শ্রীকৃষ্ণের সকল বৈশিষ্ট্যই অনুপরিমাণে আমাদের মধ্যে রয়েছে । আমরা শ্রীকৃষ্ণের নমুনা মাত্র । রণস্পৃহা আমরা কোথা থেকে পেলাম ? শ্রীকৃষ্ণে এই রণস্পৃহা রয়েছে । তাই রাজা যেমন কখনও কখনও তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে কোন মল্লযোদ্ধাকে নিযুক্ত করেন , কৃষ্ণও জীবকুলকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে নিযুক্ত করেন । লড়াই এর জন্য মল্লযোদ্ধাকে রাজা বেতন দেন । সে রাজার শত্রু নয় , পক্ষান্তরে , রাজাকে আনন্দ দানের জন্য মল্লযোদ্ধা কৃত্রিম লড়াই করে । কিন্তু কৃষ্ণ যখন লড়াই করতে চান , তখন কে তার সঙ্গে লড়াই করবে ? কোন সাধারণ জীবের পক্ষে তা সম্ভব নয় । রাজা কৃত্রিম লড়াই করতে চাইলে তিনি কোন যোগ্যতাসম্পন্ন মল্লবীরকে নিযুক্ত করবেন । সেই রকম কোন সাধারণ ব্যক্তির সঙ্গে কৃষ্ণ যুদ্ধ করেন না , কিন্তু পক্ষান্তরে তাঁর কোন মহান ভক্তের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেন । যেহেতু কৃষ্ণ লড়াই করতে চান , তাই তার কিছু ভক্ত শত্রু হয়ে তাঁর সঙ্গে লড়াই করার জন্য এই জড় জগতে অবতরণ করেন । যেমন , হিরণ্যকশিপু ও হিরণ্যাক্ষকে বধ করার উদ্দেশ্যে ভগবান অবতরণ করেন । এদের কি সাধারণ জীব ভাবা উচিত ? না , তারা হচ্ছেন মহান ভগবদ্ভক্ত জয় ও বিজয়। কৃষ্ণের দ্বন্দ্বযুদ্ধ করার স্পৃহা হলে এই ভক্তদ্বয় জড় জগতে আসেন । চিন্ময় জগৎ বৈকুণ্ঠলোকে , যুদ্ধের কোন সম্ভাবনা নেই , কেন না সেখানে সকলেই কৃষ্ণসেবা - পরায়ণ । কার সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করবেন ? এই জন্য শত্রুর বেশে কয়েকজন ভক্তকে তিনি জড় জগতে প্রেরণ করেন এবং তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করতে তিনি এই স্থানে আগমন করেন । সেই সঙ্গে ভগবান আমাদের শিক্ষা দেন যে , তার শত্রু হওয়া বিশেষ লাভজনক নয় এবং পক্ষান্তরে তার সখা বা বন্ধু হওয়া অপেক্ষাকৃত শ্রেয় । কুন্তীদেবী তাই বলেছেন , ন বেদ কশ্চিদ্ভগবংশ্চিকীর্ষিতম্ – অর্থাৎ কেউ তোমার আবির্ভাব ও অন্তর্ধান লীলার উদ্দেশ্য অবগত নয় । " তবেহমানস্য নৃগাং বিড়ম্বনম্ । “ তুমি এই জগতে এক সাধারণ মনুষ্যরূপে লীলা প্রকাশ কর এবং এটি হচ্ছে বিভ্রান্তিকর । " সাধারণ মনুষ্যরূপে প্রতীয়মান হওয়ায় কখনও কখনও লোকে কৃষ্ণের দিব্য লীলাগুলি বিশ্বাস করে না অথবা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না । তারা হতবাক হয়ে ভাবে , “ আমাদের মতো ভগবান কেমন করে একজন সাধারণ ব্যক্তি হতে পারেন ? কিন্তু কৃষ্ণ কখনও কখনও সাধারণ মানুষের ভূমিকা গ্রহণ করলেও , বস্তুত তিনি সাধারণ নন এবং প্রয়োজন মতো তিনি ভগবৎ - শক্তি প্রদর্শন করেন । ভৌমাসুর ষোল হাজার রাজকন্যাকে অপহরণ করলে , রাজকন্যাদের প্রার্থনায় কৃষ্ণ ভৌমাসুরের প্রাসাদে গিয়ে তাকে হত্যা করে সকল রাজকন্যাদের উদ্ধার করেন । কিন্তু কঠোর বৈদিক বিধি অনুযায়ী , অবিবাহিত কন্যা মাত্র এক রাত্রের জন্যও গৃহত্যাগ করলে , কেউ তাকে বিবাহ করবে না । তাই যখন কৃষ্ণ রাজকন্যাদের বললেন , তোমরা নিরাপদে পিতৃগৃহে যেতে পার । " তারা উত্তর দিল , “ মহাশয় , পিতৃগৃহে প্রত্যাবর্তন করলে আমাদের ভাগ্যে কি ঘটবে ? কেউই আমাদের বিবাহ করবে না , কেন না এই অসুরটি আমাদের অপহরণ করেছে । ”

       শ্রীকৃষ্ণ তাদের জিজ্ঞাসা করেন , “ তা হলে তোমরা কি চাও ? ” রাজকন্যারা উত্তর দেয় , “ আমরা তোমাকে আমাদের পতিরূপে চাই । ” আর কৃষ্ণ এতই করুণাময় যে তিনি তৎক্ষণাৎ হ্যাঁ বলেন এবং তাদের গ্রহণ করেন ।

       রাজধানীতে নিজ প্রাসাদে রাজকন্যাদের আনা হলে , ষোল হাজার রাণীকে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনের জন্যে যোল হাজার রাত্রি প্রতীক্ষা করতে হয়নি । পক্ষান্তরে , শ্রীকৃষ্ণ যোল হাজার কৃষ্ণমূর্তিতে নিজেকে বিস্তার করেছেন , ষোল হাজার প্রাসাদ নির্মাণ করেছেন এবং প্রত্যেক মহিষীর সঙ্গে এক একটি প্রাসাদে বসবাস করেছেন ।

       শ্রীমদ্ভাগবতে এই বর্ণনা লিপিবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মুঢ়দের কাছে এগুলি দুর্বোধ্য । পক্ষান্তরে , তারা কৃষ্ণের নিন্দা করে বলে , “ কৃষ্ণ খুব কামুক ছিল । তারা বলে , “ কৃষ্ণ যোল হাজার পত্নী গ্রহণ করেছেন । ” কিন্তু তিনি শুধু কামুকই নন তিনি হচ্ছেন অপরিমেয়ভাবে কামুক । ভগবান হচ্ছেন অনন্ত । মাত্র ষোল হাজার কেন ? এমন কি যোল কোটি পত্নী গ্রহণ করলেও তার পূর্ণতা অপরিমেয়ই থাকে । এই হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ । আমরা শ্রীকৃষ্ণকে কামুক অথবা ইন্দ্রিয়সুখ পরায়ণ বলে অভিযোগ করতে পারি না । শ্রীকৃষ্ণের অসংখ্য ভক্ত এবং শ্রীকৃষ্ণ তাদের সকলকে কৃপা প্রদর্শন করেন । কেউ শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করতে চান , কেউ কৃষ্ণকে সখারূপে লাভ করতে চান , কেউ তাকে পুত্ররূপে লাভ করতে চান , কেউ বা শ্রীকৃষ্ণকে তার খেলার সাথীরূপে লাভ করতে চান । এভাবে ব্রহ্মাণ্ডময় কোটি কোটি কৃষ্ণভক্ত এবং এদের সকলকে কৃষ্ণের তুষ্ট করতে হবে । এই সব ভক্তদের থেকে কোন সহায়তা তার প্রয়োজন নেই , কিন্তু যেহেতু তারা বিশেষভাবে তার সেবা করতে ইচ্ছুক , তাই ভগবান তাদের সঙ্গে প্রীতি বিনিময় করেন । এই ষোল হাজার ভক্ত শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে কামনা করেছেন এবং তাই শ্রীকৃষ্ণ তাদের প্রস্তাবে রাজি হন ।

       এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ কখনও কখনও একজন সাধারণ মানুষের মতো ক্রীড়া করেন , কিন্তু ভগবানরূপে তিনি নিজেকে যোল হাজার মূর্তিতে বিস্তার করেন । এক সময় মহর্ষি নারদ শ্রীকৃষ্ণ ও তার মহিষীদের দর্শনে যান । নারদমুনি ভাকে , “ কৃষ্ণ ষোল হাজার পত্নী গ্রহণ করেছেন । তিনি তাদের সঙ্গে কিভাবে বসবাস করেন , তাই আমি দেখব । ” তখন তিনি শ্রীকৃষ্ণকে যোল হাজার রাজপ্রাসাদের প্রত্যেকটিতে ভিন্ন ভিন্নভাবে বসবাস করতে দেখেন । এক প্রাসাদে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মহিষীর সঙ্গে কথা বলছিলেন অন্য প্রাসাদে তিনি তাঁর সন্তানদের সঙ্গে খেলা করছিলেন ; আর এক প্রাসাদে তিনি পুত্র - কন্যাদের বিবাহের আয়োজন করছিলেন এবং এভাবে কৃষ্ণ ষোল হাজার প্রাসাদে বিভিন্ন লীলাবিলাসে ব্যাপৃত ছিলেন । সেই রকম শৈশবলীলায় কৃষ্ণ এক সাধারণ শিশুর মতো লীলাবিলাস করেছেন । কিন্তু শ্ৰীকৃষ্ণ মাটি ভক্ষণ করেছে কি না তা দেখার জন্য মা যশোদা যখন শ্রীকৃষ্ণকে তার মুখ খুলতে বলেন , তখন নিজ মুখগহ্বরে কৃষ্ণ মাতাকে নিখিল বিশ্ব প্রদর্শন করান । এই হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ । সাধারণ মানুষের মতো ক্রীড়া করলেও , প্রয়োজন মতো তিনি তার ভগবৎ - স্বরূপ প্রদর্শন করান । আর একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যায় । শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের রথচালকের ভূমিকা গ্রহণ করেছেন । কিন্তু অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দেখতে চাইলে , অচিরেই শ্রীকৃষ্ণ সহস্র লক্ষ শির , পাদ , বাহু ও অস্ত্রশস্ত্র সমন্বিত তার বিশ্বরূপ অর্জুনকে প্রদর্শন করান । এই হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ ।

       শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র । তার কোন বন্ধু অথবা শত্রু নেই । বন্ধু ও শত্রু উভয়েরই কল্যাণে তিনি কার্য করেন , এবং পরিণাম উভয়ক্ষেত্রেই এক । সেটিই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অদ্বয় প্রকৃতি , ঐটি তার পূর্ণ স্বভাব ।

  • এখন দেখতে পারেন => " কুন্তীদেবীর শিক্ষা " গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ১৩ ) ব্রহ্মাণ্ডের প্রাণশক্তি
  • * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।