শ্রী শ্রী গীতার জ্ঞান সহজে উপলব্ধির উপায় বা গীতার জ্ঞান বুঝতে হলে যে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

পৃষ্ঠা - ১   ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,   ১০   ,   ১১   ,   ১২   ,   ১৩   ,   ১৪

  • হরেকৃষ্ণ।
    শ্রীল প্রভুপাদ রচিত -

    পূর্ববর্তী পৃষ্ঠা'র পর -
    সুতরাং, ভগবদ্গীতাতে আমরা দেখতে পাব যে, পরম নিয়ন্তা, নিয়ন্ত্রণাধীন জীবসকল, নিখিল জগৎ, মহাকাল ও কর্ম- এই সব নিয়েই পূর্ণ সত্যা বিরাজিত, এবং সব কিছুরই আলোচনা এখানে ব্যাখ্যা করা আছে। এগুলি একসাথে নিয়ে এই পূর্ণ পরমসত্তা গঠিত হয়। এই পূর্ণ সত্তাকে বলা হয় পরমতত্ত্ব। এই পূর্ণ সত্তা ও পূর্ণ পরমতত্ত্ব হচ্ছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণ পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁরই বিভিন্ন শক্তির ফলে সমস্ত কিছুরই অভিপ্রকাশ ঘটে থাকে। তিনিই হচ্ছেন সম্যকভাবে পূর্ণ।

    গীতাতে এই কথাও বলা হয়েছে যে, নির্বিশেষ ব্রহ্মও হচ্ছে পূর্ণ পরম পুরুষের অধীন (ব্রহ্মণো হি প্রতিষ্ঠাহম্) নির্বিশেষ ব্রহ্মের আরও বিশদ ব্যাখ্যা করে ব্রহ্মসূত্রতে বলা হয়েছে যে, নির্বিশেষ ব্রহ্ম হচ্ছে সূর্যরশ্মির মতো। নির্বিশেষ ব্রহ্ম হচ্ছে পরম পুরুষোত্তম ভগবানের রশ্মিচ্ছটা। তাই, নির্বিশেষ ব্রহ্ম হচ্ছে পূর্ণ পরম-তত্ত্বের অসম্পূর্ণ উপলব্ধি এবং পরমাত্মার ধারণাও সেই রকম। ভগবদ্গীতার পঞ্চদশ অধ্যায়ে দেখা যাবে যে, পরমাত্মা উপলব্ধিও ভগবানের পূর্ণ উপলব্ধি নয়। কারণ পরমাত্মা হচ্ছে ভগবানের আংশিক প্রকাশ। ভগবদ্গীতাতে আমরা জানতে পারি যে, পুরুষোত্তম ভগবান হচ্ছেন নির্বিশেষ ব্রহ্ম ও পরমাত্মা উভয়েরই ঊর্ধ্বে পরমতত্ত্ব। ভগবান হচ্ছেন সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ। ব্রহ্মসংহিতার শুরুতেই বলা হয়েছে- ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ / অনাদিরাদির্গোবিন্দ সর্বকারণকারণম্। “পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বা গোবিন্দ হচ্ছেন সর্বকারণের কারণ, অনাদির আদি গোবিন্দ এবং সৎ, চিৎ ও আনন্দের মূর্তবিগ্রহ হচ্ছেন তিনিই।” ব্রহ্ম-উপলব্ধি হচ্ছে তাঁর সৎ(শাশ্বত সনাতন) বৈশিষ্টের উপলব্ধি। পরমাত্মা উপলব্ধি হচ্ছে সৎ-চিৎ (অনন্ত জ্ঞান) রূপের উপলব্ধি। কিন্তু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্ধি করা হচ্ছে তাঁর সৎ, চিৎ ও আনন্দের অপ্রাকৃত রূপকে পূর্ণভাবে অনুভব করা।

    অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা মনে করে যে পরমতত্ত্ব হচ্ছেন নির্বিশেষ, তাঁর কোন রূপ নেই, কোন আকার নেই, কিন্তু তাদের এই ধারণাটি ভুল। তিনি হচ্ছেন অপ্রাকৃত চিন্ময় পুরুষ; সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে এইকথা দৃঢ়ভাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। নিত্যো নিত্যানাং চেতনশ্চেতনানাম্। (কঠ উপনিষদ ২/২/১৩) যেমন আমরা সকলে স্বতন্ত্র জীব এবং আমাদের ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য আছে, তেমনি পরম-তত্ত্বের সর্বোচ্চ স্তরে যিনি সর্ব কারণের কারণ, তাঁরও রূপ আছে। তিনি পুরুষ, তিনি ভগবান এবং প্রাকৃত ও অপ্রাকৃত সমস্ত কিছুর উৎস হচ্ছেন তিনিই। তাঁকে উপলব্ধি করা হলে তাঁর অপ্রাকৃত রূপের সব কিছুই উপলব্ধি করা হয়ে যায়। যিনি স্বয়ং পূর্ণ, তিনি কখনোই নির্বিশেষ হতে পারেন না। যদি তিনি নির্বিশেষ হন, যদি তিনি কোন কিছু থেকে ন্যূন হন, তবে তিনি পূর্ণ হবেন কেমন করে? আমাদের অভিজ্ঞতায় যা আছে এবং যা আমাদের অভিজ্ঞতার অতীত তা সবই ভগবানের মধ্যে বিদ্যমান। নতুবা তা পূর্ণতত্ত্ব হতে পারে না।

    সম্যক্ সম্পূর্ণ পুরুষোত্তম ভগবানের মধ্যে রয়েছে বিপুল শক্তিরাজি (পরাস্য শক্তির্বিবিধৈব শ্রূয়তে)। শ্রীকৃষ্ণের শক্তির বিভিন্ন প্রকাশ কিভাবে হয়, তাও ভগবদ্গীতাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই যে পরিদৃশ্যমান জগৎ, অথবা অনিত্য জড় জগৎ, যাতে আমরা অধিষ্ঠিত হয়েছি, এটিও স্বয়ং পূর্ণ, কারণ যে চব্বিশটি উপাদান দ্বারা এই জড় জগৎ অনিত্যরূপে অভিব্যক্ত হয়েছে, সাংখ্য-দর্শন অনুযায়ী, তাদের সম্যক্ রূপে সমন্বয়ের ফলে উদ্ভূত হয়েছে পূর্ণ সম্পদ, যা এই ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য। এর মধ্যে কোন কিছুই অতিরিক্ত নেই, আবার অন্য কিছুর দরকারও নেই। এই অভিপ্রকাশের স্থায়িত্ব পরম পূর্ণের শক্তির দ্বারা নির্ধারিত নিজস্ব সময়ের উপর নির্ভরশীল। সেই সময় শেষ হয়ে গেলে, পরম পূর্ণের পূর্ণ ব্যবস্থার নির্দেশে এই অস্থায়ী অভিব্যক্তির লয় হয়ে যায়। এখানে জীবও তার ক্ষুদ্র সত্তা নিয়ে পূর্ণ এবং পরম পূর্ণ ভগবানকে পূর্ণরূপে উপলব্ধি করবার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সমস্ত জীবেরই আছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ ভগবানের সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান অপূর্ণ, তাই আমরা সব রকমের অপূর্ণতা অনুভব করি। ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞানের পূর্ণ প্রকাশ হয়েছে বেদে এবং বৈদিক জ্ঞান পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়েছে ভগবদগীতাতে। বেদের সমস্ত জ্ঞানই অভ্রান্ত। হিন্দুরা জানে যে, বেদ পূর্ণ ও অভ্রান্ত। যেমন স্মৃতি, অর্থাৎ বৈদিক অনুশাসন অনুযায়ী পশুর মল অপবিত্র এবং তা স্পর্শ করলে স্নান করে পবিত্র হতে হয়। আবার বৈদিক শাস্ত্রেই বলা হচ্ছে যে, গোময় পশুর মল হলেও তা পবিত্র, এমন কি কোন স্থান যদি অপবিত্র হয়ে থাকে, তবে সেখানে গোময় লেপন করলে তা পবিত্র হয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে এটি পরস্পরবিরোধী উক্তি বলে মনে হতে পারে, কিন্তু বৈদিক অনুশাসন বলেই এটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি গ্রহণ করে কেউ ভুল করেছে তা বলা হয় না। পরবর্তীকালে আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়েছে যে, গোময়ে সবকয়টি জীবাণুনাশক গুণ বর্তমান রয়েছে। সুতরাং বৈদিক জ্ঞান সব রকম সন্দেহ ও ভ্রান্তির অতীত, এবং ভগবদগীতা হচ্ছে সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারাংশ।

    বৈদিক জ্ঞান নিয়ে গবেষণা চলে না। গবেষণা বলতে সাধারণত যা বোঝায়, তা ত্রুটিপূর্ণ, কারণ ত্রুটিপূর্ণ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে ঐ সব গবেষণা হয়ে থাকে। পরবর্তী পৃষ্ঠা
  • Add_6

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।