শ্রী শ্রী গীতার জ্ঞান সহজে উপলব্ধির উপায় বা গীতার জ্ঞান বুঝতে হলে যে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

পৃষ্ঠা - ১   ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,   ১০   ,   ১১   ,   ১২   ,   ১৩   ,   ১৪

  • হরেকৃষ্ণ।
    শ্রীল প্রভুপাদ রচিত -

    পূর্ববর্তী পৃষ্ঠা'র পর -
    তবুও মানুষ দেশ-কাল-পাত্র অনুসারে হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদির ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করার ফলে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়ে পড়ে। এই ধরনের ধর্ম বিশ্বাস কখনোই সনাতন ধর্ম নয়। কোন হিন্দু তার বিশ্বাস পরিবর্তন করে মুসলমান হতে পারে অথবা কোন মুসলমান তার ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দু হতে পারে, কিংবা কোন খ্রিস্টান তার বিশ্বাস বদলাতে পারে। কিন্তু এই ধর্ম-বিশ্বাসের পরিবর্তন হলেও, অপরকে সেবা করার যে শাশ্বত প্রবৃত্তি মানুষের আছে, তার কোন পরিবর্তন হয় না। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যে কোন ধর্মাবলম্বীই হোক না কেন, মানুষ প্রতিনিয়তই অপরের সেবা করে চলেছে। তাই যে কোন ধর্ম-বিশ্বাসকে অবলম্বন করা এবং সনাতন ধর্মাচরণ করার অর্থ এক নয়। সেবা করাই হচ্ছে সনাতন ধর্ম। বাস্তবিকই ভগবানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হচ্ছে সেবা করার সম্পর্ক। পরমেশ্বর হচ্ছেন পরম ভোক্তা এবং আমরা, জীবেরা হচ্ছি তাঁর সেবক। তাঁরই সন্তোষ বিধানের জন্য আমাদের সৃষ্টি হয়েছে এবং ভগবানকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা যদি সর্বদাই তাঁর সেবা করে চলি, তবেই আমরা সুখী হতে পারি। এ ছাড়া আর কোনভাবেই সুখী হওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। উদরকে বাদ দিয়ে শরীরের কোন অঙ্গ যেমন স্বতন্ত্রভাবে সুখী হতে পারে না, আমরাও তেমন ভগবানের সেবা না করে সুখী হতে পারি না। বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করা বা তাঁদের সেবা করা ভগবদ্গীতাতে অনুমোদন করা হয়নি। সপ্তম অধ্যায়ের বিংশতি শ্লোকে বলা হয়েছে-

    কামৈস্তৈস্তৈর্হৃতজ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তেহন্যদেবতাঃ ।
    তং তং নিয়মমাস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া ॥


    “জড়জাগতিক কামনা-বাসনা দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা তাদের স্বীয় স্বভাব অনুযায়ী এবং পূজার বিশেষ নিয়মবিধি পালন করে বিভিন্ন দেব-দেবীদের শরণাগত হয়।” এখানে পরিষ্কার ভাবেই বলা হয়েছে যে, যারা কামনা-বাসনা দ্বারা পরিচালিত হয়, তারা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা না করে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করে। শ্রীকৃষ্ণ বলতে কোন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিবিশেষের নাম বোঝায় না। শ্রীকৃষ্ণ নামের অর্থ হচ্ছে পরম আনন্দ। পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন সমস্ত আনন্দের উৎস, সমস্ত আনন্দের আধার। আমরা সকলেই আনন্দের অভিলাসী। আনন্দময়োহভ্যাসাৎ (বেদান্তসূত্র ১/১/১২)। ভগবানের অংশ হবার ফলে জীব চৈতন্যময় এবং তাই সে সর্বদাই আনন্দের অনুসন্ধান করে। ভগবান সদানন্দময়, তিনি সমস্ত আনন্দের আধার, তাই জীব যখন ভগবন্মুখী হয়ে সর্বতোভাবে ভগবানের সেবাপরায়ণ হয়ে তাঁর সান্নিধ্যে আসে, তখন তার চিরবাঞ্ছিত দিব্য আনন্দ সে অনুভব করতে পারে।

    ভগবান এই মর্তলোকে অবতরণ করেন তাঁর আনন্দময় বৃন্দাবন-লীলা প্রদর্শন করার জন্য। এই বৃন্দাবন-লীলা হচ্ছে আনন্দের চরম প্রকাশ। শ্রীকৃষ্ণ যখন বৃন্দাবনে থাকেন, তখন সেখানে রাখাল বালকদের সঙ্গে, গোপ-বালিকাদের সঙ্গে, বৃন্দাবনবাসীদের সঙ্গে এবং গাভীদের সঙ্গে তাঁর সমস্ত লীলা হচ্ছে দিব্য আনন্দে পরিপূর্ণ। বৃন্দাবনের প্রতিটি জীবই কৃষ্ণগত প্রাণ, শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া আর কিছুই তাঁরা জানেন না। তিনি যে সবকিছুর পরম ভোক্তা, তাঁর পাদপদ্মে আত্মসমর্পণই যে শ্রেষ্ঠ সমর্পণ এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করাটা যে নিতান্ত নিষ্প্রয়োজন, তা প্রতিপন্ন করার জন্য তিনি তাঁর পিতা নন্দ মহারাজকেও ইন্দ্রের পূজা করা থেকে নিরস্ত করেন। কারণ তিনি প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন যে, অন্য কোন দেব-দেবীর পূজা করবার কোন দরকার নেই মানুষের। পরমেশ্বর ভগবানের সেবা করাই প্রতিটি মানুষের একমাত্র কর্তব্য, কারণ মানব-জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবৎ ধামে ফিরে যাওয়া। ভাগবদ্ গীতার পঞ্চদশ অধ্যায়ের ষষ্ঠ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আলয় ভগবৎ-ধামের বর্ণনা করে বলা হয়েছে- পরবর্তী পৃষ্ঠা
  • Add_6

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।