শ্রী শ্রী গীতার জ্ঞান সহজে উপলব্ধির উপায় বা গীতার জ্ঞান বুঝতে হলে যে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

পৃষ্ঠা - ১   ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,   ১০   ,   ১১   ,   ১২   ,   ১৩   ,   ১৪

  • হরেকৃষ্ণ।
    শ্রীল প্রভুপাদ রচিত -

    পূর্ববর্তী পৃষ্ঠা'র পর -
    ভগবান ও তাঁর দিব্যধাম উভয়ই সনাতন। জীবও সনাতন। জীব যখন তার সনাতন প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তুলে সনাতন ধামে ভগবানের সান্নিধ্যে আসে, তখনই তার জীবন সার্থক হয়ে ওঠে। যেহেতু সমস্ত জীব পরমেশ্বরেরই সন্তান, সেই কারণে তাদের সকলেরই প্রতি তিনি পরম করুণাময়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্ গীতাতে (১৪/৪) বলেছেন, সর্বযোনিষু কৌন্তেয় মূর্তয়ঃ সম্ভবন্তি যাঃ/তাসাং ব্রহ্ম মহদযোনিরহং বীজপ্রদঃ পিতা- “হে কৌন্তেয়! সমস্ত যোনিতে যে সমস্ত দেহ উৎপন্ন হয়, ব্রহ্মরূপা প্রকৃতিই তাদের জননী এবং আমিই বীজ প্রদানকারী পিতা।” অবশ্যই বিভিন্ন কর্ম অনুসারে সব রকমের জীব রয়েছে, কিন্তু এখানে ভগবান বলেছেন যে, তিনি সকলেরই পিতা। তাই এই পৃথিবীতে ভগবান অবতরণ করেন এই সমস্ত পতিত, বদ্ধ জীবাত্মাদের উদ্ধার করার জন্য, যাতে তারা তাদের শাশ্বত সনাতন অবস্থা ফিরে পেয়ে ভগবানের সঙ্গে চিরন্তন সঙ্গ লাভ করে এবং সনাতন শাশ্বত চিদাকাশে আবার অধিষ্ঠিত হতে পারে। ভগবান স্বয়ং বিভিন্ন অবতাররূপে অবতরণ করেন, কখনও বা তিনি তাঁর বিশ্বস্ত অনুচরকে অথবা তাঁর প্রিয় সন্তানকে পাঠান, কখনও বা তাঁর অনুগামী ভৃত্যকে বা আচার্যকে পাঠান বদ্ধ জীবাত্মাদের উদ্ধার করবার জন্য।



    তাই সনাতন ধর্ম বলতে কোন সাম্প্রদায়িক ধর্ম পদ্ধতি কে বোঝায় না । এটি হচ্ছে পরম শাশ্বত ভগবানের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত নিত্য শাশ্বত জীবসকলের নিত্য ধর্ম। আগেই বলা হয়েছে, সনাতন ধর্ম হচ্ছে জীবের নিত্য ধর্ম। শ্রীপাদ রামানুজাচার্য সনাতন শব্দটির ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “যার কোন শুরু নেই এবং শেষ নেই।” তাই যখন আমরা সনাতন ধর্মের কথা বলি, শ্রীপাদ রামানুজাচার্যের নির্দেশানুসারে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই ধর্মের আদি নেই এবং অন্ত নেই। বর্তমান জগতে ধর্ম বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি, সনাতন ধর্ম ঠিক তা নয়। ধর্ম বলতে সাধারণত কোন বিশ্বাসকে বোঝায়, এবং এই বিশ্বাসের পরিবর্তন হতে পারে। কোন পন্থার প্রতি কারও বিশ্বাস থাকতে পারে, এবং সে এই বিশ্বাসের পরিবর্তন করে অন্য কিছু গ্রহণ করতেও পারে। কিন্তু সনাতন ধর্ম বলতে সেই সব কার্যকলাপকে বোঝায় যা পরিবর্তন হতে পারে না। যেমন, জল থেকে তার তরলতা কখনই বাদ দেওয়া যায় না, আগুন থেকে যেমন তাপ ও আলোককে বাদ দেওয়া যায় না, তেমনি সনাতন জীবের সনাতন বৃত্তি জীবের থেকে আলাদা করা যায় না। জীবের সঙ্গে তার সনাতন ধর্ম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সুতরাং যখন আমরা সনাতন ধর্মের কথা বলি, তখন শ্রীপাদ রামানুজাচার্যের প্রামাণ্য ভাষ্য মেনে নিতে হবে যে, এর কোন আদি-অন্ত নেই। যার কোন আদি নেই, অন্ত নেই, সেই ধর্ম কখনই সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। এই ধর্ম সমস্ত জীবের ধর্ম, তাই তাকে কখনই কোন সীমার মধ্যে সীমিত রাখা যায় না। একে কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে বদ্ধ রাখাও চলে না। কিন্তু তবুও কিছু সাম্প্রদায়িক লোক মনে করে যে, ‘সনাতন ধর্মও’ একটি সাম্প্রদায়িক ধর্ম, কিন্তু এটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা ও বিকৃত বুদ্ধিজাত অন্ধতার প্রকাশ। আমরা যখন আধুনিক বিজ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে সনাতন ধর্মের যথার্থতা বিশ্লেষণ করি, তখন দেখি যে এই ধর্ম পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ধর্ম- শুধু তাই নয়, এই ধর্ম সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি জীবের ধর্ম।

    অসনাতন ধর্মবিশ্বাসের সূত্রপাতের ইতিহাস পৃথিবীর ইতিহাসের বর্ষপঞ্জিতে লেখা থাকতে পারে, কিন্তু সনাতন ধর্মের সূত্রপাতের কোনো ইতিহাস নেই, কারণ সনাতন ধর্ম সনাতন জীবের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত থেকে চিরকালই বর্তমান। জীব সম্বন্ধেও শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, সে জন্ম-মৃত্যুর অতীত। ভগবদ্ গীতাতে বলা হয়েছে যে, জীবের জন্ম নেই, মৃত্যু নেই। সে শাশ্বত ও অবিনশ্বর এবং তার দেহের মৃত্যু হলেও তার কখনই মৃত্যু হয় না। সনাতন ধর্ম বলতে যে ধর্ম বোঝায়, তা আমাদের বুঝতে হবে ধর্ম কথাটির সংস্কৃত অর্থের মাধ্যমে। ধর্ম বলতে বোঝায় যা অপরিহার্য অঙ্গরূপে কোন কিছুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকে। যেমন, তাপ ও আলোক এই দুটি গুন আগুনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাপ ও আলোক ছাড়া আগুনের কোনরকম প্রকাশ হতে পারে না। তেমনই, জীবের অপরিহার্য অঙ্গ কি? জীবের অস্তিত্বের প্রকাশ কিভাবে হয়? তার নিত্য সঙ্গীরূপে যা তার সঙ্গে চিরকাল বিদ্যমান তা কি? তার এই নিত্য সঙ্গী হচ্ছে তার শাশ্বত গুণবৈশিষ্ট্য, এবং এই শাশ্বত গুণবৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তার সনাতন ধর্ম। সনাতন গোস্বামী যখন শ্রীচৈন্য মহাপ্রভুকে জীবের স্বরূপ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেন, তখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেন, “জীবের ‘স্বরূপ’ হয়- কৃষ্ণের নিত্য দাস।” পরম পুরুষোত্তম ভগবানের নিত্যদাসত্বই হচ্ছে জীবের স্বরূপ- বৈশিষ্ট্য। শ্রীমন্মহাপ্রভুর এই উক্তির বিশ্লেষণ যদি আমরা করি, তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, প্রতিটি জীবই সর্বক্ষণ কারও-না-কারও সেবায় ব্যস্ত। এভাবে অপরের সেবা করার মাধ্যমে জীব জীবনকে উপভোগ করে। নীচুস্তরের পশুরা ভৃত্য যেভাবে প্রভুর সেবা করে, ঠিক সেভাবে মানুষের সেবা করে। মানুষের ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই যে, ‘খ’ প্রভুকে ‘ক’ সেবা করে, ‘গ’ প্রভুকে ‘খ’ সেবা করে, আর ‘গ’ সেবা করে ‘ঘ’ প্রভুকে। এভাবে সকলেই কারও না কারও দাসত্ব করে চলেছে। এই পরিবেশে আমরা দেখতে পাই, বন্ধু বন্ধুর সেবা করে, মা সন্তানের সেবা করে, স্ত্রী স্বামীর সেবা করে, স্বামী স্ত্রীর সেবা করে ইত্যাদি। এভাবে খোঁজ করলে দেখা যাবে যে, জীবকুলের সমাজে সেবামূলক কাজের কোন অন্যথা নেই। রাজনীতিবিদেরা জনগণের কাছে তাদের নানা প্রতিশ্রুতি শুনিয়ে তাদের সেবার ক্ষমতা বোঝাবার চেষ্টা করে থাকে। ভোটদাতারা তাই মনে করে যে, রাজনীতিবিদেরা সমাজের খুব ভালো সেবা করতে পারবে, তাই তারা তাদের মূল্যবান ভোট তাদের দিয়ে দেয়। দোকানদার খরিদ্দারের সেবা করে এবং শিল্পী ধনিক সম্প্রদায়ের সেবা করে। ধনিক সম্প্রদায় তাদের পরিবারের সেবা করে এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্য নিত্য জীবের নিত্য সামর্থ্য অনুযায়ী রাষ্ট্র ও সমাজের সেবা করে। এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, কোন জীবই অপর কোন জীবের সেবা না করে থাকতে পারে না। এর ফলে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে, সেবা হচ্ছে জীবের সর্বকালীন সাথী এবং সেবা কার্যই হচ্ছে জীবের শাশ্বত ধর্ম। পরবর্তী পৃষ্ঠা
  • Add_6

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।