শ্রী শ্রী গীতার জ্ঞান সহজে উপলব্ধির উপায় বা গীতার জ্ঞান বুঝতে হলে যে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

পৃষ্ঠা - ১   ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,     ,   ১০   ,   ১১   ,   ১২   ,   ১৩   ,   ১৪

  • হরেকৃষ্ণ।
    শ্রীল প্রভুপাদ রচিত -

    পূর্ববর্তী পৃষ্ঠা'র পর -
    শ্রীকৃষ্ণের আলয় ভগবৎ-ধামের বর্ণনা করে বলা হয়েছে-

    ন তদ্ ভাসয়তে সূর্যো ন শশাঙ্কো ন পাবকঃ ।
    যদ্ গত্বা ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম ।।
    “আমার পরম ধাম সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি অথবা বৈদ্যুতিক আলোকের দ্বারা আলোকিত নয়। সেখানে একবার পৌঁছলে আর এই জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না।”

    এই শ্লোকে সেই চিরশাশ্বত অপ্রাকৃত আকাশের কথা বলা হয়েছে। আকাশ সম্বন্ধে আমাদের একটি জড়-জাগতিক ধারণা আছে। এই জড় আকাশের কথা যখনই আমরা ভাবি, তখন সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র আদির কথা আপনা থেকেই মনে আসে। কিন্তু এই ভগবান বলেছেন যে, দিব্য আকাশকে আলোকিত করার জন্য সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি অথবা কোনো বৈদ্যুতিক আলোর প্রয়োজন হয় না, কারণ সেই আকাশ দিব্য ব্রহ্মজ্যোতির দ্বারা আলোকিত। এই ব্রহ্মজ্যোতি হচ্ছে ভগবানের দেহ নির্গত রশ্মিচ্ছটা। অন্যান্য গ্রহাদিতে পৌঁছানোর জন্য আমরা কঠিন পরিশ্রম করছি, কিন্তু পরমেশ্বরের আলয় সম্বন্ধে ধারণা করা কিছুই কঠিন নয়। ভগবানের দিব্য ধামের নাম গোলক। ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৩৭) এই গোলকের খুব সুন্দর বিবরণ আছে- গোলোক এব নিবসত্যখিলাত্মভূতঃ। ভগবান চিরকালই তাঁর আলয় গোলকে অবস্থান করেন, তবু এই জগতে থেকেও তাঁর সমীপবর্তী হওয়া যায় এবং এই জগতে ভগবান তাঁর প্রকৃত সচ্চিদানন্দময় রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন। তিনি যখন তাঁর এই রূপ নিয়ে প্রকাশিত হন, তখন আর তাঁর রূপ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করার কোন প্রয়োজনীয়তা আমাদের থাকে না। এই ধরনের জল্পনা-কল্পনা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করার জন্য তিনি তার স্বরূপে অবতীর্ণ হন এবং তার শ্যামসুন্দর রূপ প্রদর্শন করেন। দুর্ভাগ্যবশত অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা তাঁকে চিনতে পারে না এবং তাঁকে সাধারণ মানুষ বলে মনে করে উপহাস করে। ভগবান আমাদের কাছে আমাদেরই মতো একজনের রূপ নিয়ে আসেন এবং আমাদের সঙ্গে লীলাখেলা করেন, কিন্তু তাই বলে তাঁকে আমাদের মতো একজন বলে মনে করা উচিত নয়। তাঁর অনন্ত শক্তির প্রভাবে তিনি তাঁর অপ্রাকৃত রূপ নিয়ে আমাদের সামনে আসেন এবং তাঁর লীলা প্রদর্শন করেন। তাঁর আপন আলোয় গোলোক বৃন্দাবনে তাঁর যে লীলা, এই লীলা তাঁরই প্রতিরূপ।

    চিন্ময় আকাশের ব্রহ্মজ্যোতিতে অসংখ্য গ্রহ ভাসছে। এই ব্রহ্মজ্যোতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে পরম ধাম কৃষ্ণলোক থেকে এবং জড় পদার্থ দ্বারা গঠিত নয় সেই রকম অসংখ্য আনন্দময় চিন্ময় গ্রহ সেই ব্রহ্মজ্যোতিতেই ভাসছে। ভগবান বলেছেন-- ন তদ্ ভাসয়তে সূর্যো ন শশাঙ্কো ন পাবকঃ / যদ্ গত্বা ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম। যে একাবার সেই অপ্রাকৃত আকাশের যায়, তাকে আর এই জড় আকাশে নেমে আসতে হয় না। এই জড়-জাগতিক আকাশে, চাঁদের কথা ছেড়েই দিলাম, যদি মানুষ সবচেয়ে ঊর্ধ্বে যে ব্রহ্মলোক আছে সেখানেও যায়, তবে দেখবে যে, সেখানেও এখানকার মতো জন্ম, মৃত্যু, জরা, ও ব্যাধির হাত থেকে নিস্তার নেই। এই জড় জগতের কোন গ্রহলোকের পক্ষেই এই চারটি নিয়মের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব নয়।

    জীবসকল এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে ভ্রমণ করছে, কিন্তু যে-কোন গ্রহেই আমরা ইচ্ছা করলে যান্ত্রিক উপায়ে যেতে পারি না। অন্যান্য গ্রহে যেতে হলে তার জন্য একটি পদ্ধতি আছে। সেই সম্বন্ধে উল্লেখ আছে যে- যান্তি দেবব্রতা দেবান্ পিতৃ্ন্ যান্তি পিতৃব্রতাঃ। আমাদের গ্রহান্তরে ভ্রমণের জন্য কোন যান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় না। গীতাতে ভগবান বলেছেন- যান্তি দেবব্রতা দেবান্। চন্দ্র, সূর্য আদি উচ্চস্তরের গ্রহদের বলা হয় স্বর্গলোক। গ্রহমণ্ডলীকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে- স্বর্গলোক (উচ্চ) ভূলোক (মধ্য) ও পাতাললোক (নিম্ন)। পৃথিবী ভূলোকের অন্তর্গত। ভগবদ্গীতা থেকে আমরা জানতে পারি, কিভাবে আমরা দেবলোক বা স্বর্গলোকে অতি সহজ প্রক্রিয়ায় যেতে পারি- যান্তি দেবব্রতা দেবান্। কোন বিশেষ গ্রহের বিশেষ দেবতাকে পূজা করলেই সেই গ্রহে যাওয়া যায়। যেমন সূর্যদেবকে পূজা করলে সূর্যলোকে যাওয়া যায়। চন্দ্রদেবকে পূজা করলে চন্দ্রলোকে যাওয়া যায়। এভাবে যে-কোন উচ্চতর গ্রহলোকেই যাওয়া যায়।

    কিন্তু ভাগবদ্গীতা এই জড় জগতের কোন গ্রহলোকে যেতে উপদেশ দিচ্ছে না, কারণ জড় জগতের সর্বোচ্চলোক ব্রহ্মলোকে কোন ধরনের যান্ত্রিক কৌশলের হয়তো চল্লিশ হাজার বছর ভ্রমণ করে (আর ততদিন কেই বা বাঁচবে) গেলেও জন্ম, মৃত্যু, জরা ও ব্যাধির জড় জাগতিক ক্লেশ থেকে সেখানেও নিস্তার পাওয়া যাবে না। কিন্তু যদি কেউ পরম লোক কৃষ্ণলোকে কিংবা চিন্ময় আকাশের অন্য কোন গ্রহে যেতে চায়, তা হলে তাকে সেখানে এই সব জড়-জাগতিক দুর্দশা ভোগ করতে হবে না। চিন্ময় আকাশে যে সমস্ত গ্রহলোক আছে, তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে গোলক বৃন্দাবন, যেখানে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ থাকেন। ভগবদ্গীতায় এই সব কিছুই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে কিভাবে সেই চিন্ময় আকাশে ফিরে গিয়ে প্রকৃতই আনন্দময় জীবন শুরু করা যায়, তার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

    ভগবদ্গীতার পঞ্চদশ অধ্যায়ে এই জড় জগতের প্রকৃত রূপের বর্ণনা করে বলা হয়েছে-

    ঊর্ধ্বমূলমধঃশাখমশ্বত্থং প্রাহুঃরব্যয়ম্ ।
    ছন্দাংসি যস্য পর্ণানি যস্তং বেদ স বেদবিৎ ॥

    “ঊর্ধ্ব ও অধঃশাখা-বিশিষ্ট একটি অব্যয় অশ্বত্থ বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে৷ বৈদিক মন্ত্রসমূহ সেই বৃক্ষের পত্রস্বরুপ। যিনি সেই বৃক্ষটিকে জানেন, তিনিই বেদজ্ঞ ।”

    এখানে জড় জগৎ কে বলা হয়েছে ঊর্ধ্বমূল ও অধঃশাখাবিশিষ্ট একটি অশ্বত্থ গাছের মতো। সাধারণত গাছের শাখা থাকে ঊর্ধ্বমুখী এবং তার মূল থাকে নিম্নমুখী। কিন্তু আমরা যখন জলাশয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সেই জলে গাছের প্রতিবিম্ব দেখি, তখন দেখতে পাই তার মূল ঊর্ধ্বমুখী এবং তার শাখা অধোমুখী। সেই রকম, এই জড় জগত হচ্ছে অপ্রাকৃত জগতের প্রতিবিম্ব। প্রতিবিম্বের কোন স্থায়িত্ব নেই, সে শুধু একটি ছায়া মাত্র। কিন্ত এই ছায়া থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, প্রকৃত বস্তু রয়েছে। মরুভূমিতে জল নেই, কিন্তু মরীচিকার মাধ্যমে আমরা ইঙ্গিত পাই যে, জল বলে একটি পদার্থ আছে। জড় জগতে তেমনি জল নেই, আনন্দ নেই, কিন্তু প্রকৃত আনন্দের, বাস্তবিক জলের সন্ধান রয়েছে অপ্রাকৃত জগতে। ভগবান ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নিম্নলিখিত উপায়ে আমরা চিন্ময় জগৎ লাভ করতে পারি (ভঃ গীঃ ১৫/৫)- পরবর্তী পৃষ্ঠা
  • Add_6

    * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।

    Say something

    Please enter name.
    Please enter valid email adress.
    Please enter your comment.