ভক্তসঙ্গে তীর্থ দর্শন, পূণ্যভূমী- তীর্থক্ষেত্র , গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্রের মহিমা ও এসংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ।

গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র গুলো কোথায় কোথায় অবস্থিত, সেখানে কীভাবে যাবেন? তীর্থক্ষেত্র দর্শনে যেয়ে কোথায় থাকবেন, কি খাবেন ইত্যাদি বিষয়ে ভগবদ্ভক্তদের বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ।

  • ব্ৰহ্মা - ভূমি

    পুষ্কর

    শ্রীমৎ ভক্তিবিকাশ স্বামী মহারাজ

    ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নিউ ইয়র্ক সিটিতে এক দীক্ষা অনুষ্ঠানের সময় শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর এক নতুন শিষ্যের নামকরণ করলেন পুষ্কর দাস । এই নাম দিয়ে শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর সেই নতুন শিষ্যটিকে বললেন , “ পুষ্কর দাস , ভারতে পুষ্কর নামে এক পবিত্র সরোবর আছে । যে - কেউ যদি সেই সরোবরে স্নান করে তাহলে সে ভক্ত হয়ে যায় । তাই তুমি এখন থেকে চেষ্টা কর যাতে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ সেই পুষ্কর সরোবরে স্নান করতে পারে । ” এই পুষ্কর দাসের নাম আপনারা অনেকেই হয়ত শুনে থাকবেন । পুষ্কর দাস মূলতঃ চিত্রশিল্পী । শ্রীল প্রভুপাদের বিভিন্ন গ্রন্থে কৃষ্ণভাবনাময় যেসব সুন্দর রঙীন ছবি থাকে , তার অনেকগুলোই এই পুষ্কর দাসের আঁকা । এছাড়া সে নিয়মিত ‘ ব্যাক টু গডহেড ' নামক ইংরেজী পত্রিকাতেও ছবি আঁকে । যাই হোক , এবার সেই পবিত্র ভূমি ‘ পুষ্কর ' - এর কথায় ফিরে যাওয়া যাক ।

        একবার জগৎ সৃষ্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভগবান ব্রহ্মার ইচ্ছে হলো পৃথিবীর কোন একটি জায়গা তাঁর প্রতি উৎসর্গিত হোক । তাই তিনি তিনটি পদ্ম পাপড়ি পৃথিবীর দিকে নিক্ষেপ করলেন । যখন সেই পদ্ম পাপড়ি তিনটি পৃথিবীর ভূমি স্পর্শ করল , তৎক্ষণাৎ সেখানে তিনটি পবিত্র সরোবরের সৃষ্টি হলো । যেহেতু সরোবর তিনটি ব্রহ্মার ' কর ' অর্থাৎ হাত থেকে নিক্ষেপিত তিনটি ' পুষ্প ' থেকে সৃষ্টি হয়েছিল তাই সেই ক্ষেত্রটি ' পুষ্কর ' নামে খ্যাত হলো । সরোবর তিনটি যথাক্রমে ' জ্যেষ্ঠ পুষ্কর ’ , ‘ মধ্য পুষ্কর ' ও ' কনিষ্ঠ পুষ্কর ' বা ' বুড়া পুষ্কর ' নামে পরিচিত ।

        ‘ মহাভারত ' , ' রামায়ণ ’ , ‘ পদ্মপুরাণ ' ও অন্যান্য শাস্ত্র গ্রন্থে পুষ্করের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে । শ্রীমদ্ভাগবতে ( ১২/১২/৬১ ) বলা হয়েছে , “ যিনি তার মনকে সংযত করেন , পুষ্কর , মথুরা বা দ্বারকায় উপবাস করেন এবং এই শাস্ত্র ( শ্রীমদ্ভাগবত ) অধ্যয়ন করেন তিনি সকল ভয় থেকে মুক্ত হবেন । ”

        মহাভারতের পাণ্ডবগণের পিতামহ ভীষ্মের কাছে সকল পবিত্র তীর্থস্থানের বর্ণনাকালে পুলস্ত মুনি প্রথমেই পুষ্কর তীর্থের কথা বর্ণনা করেছিলেন । তিনি বলেছিলেন যে ' পুষ্কর ' সারা ব্রহ্মাণ্ডজুড়ে খ্যাত এবং যিনি সেখানে যান তিনি ব্রহ্মার মতো উন্নত হন । পুলস্ত্য মুনি বললেন , “ কেবলমাত্র ' পুষ্কর ' এর কথা ভাবার মাধ্যমেই যে কারোর পাপ বিদূরিত হয় । ” পুষ্করে স্নান করার মাধ্যমে প্রাপ্ত বিভিন্ন আশীর্বাদের মধ্যে একটি হচ্ছে স্নাত ব্যক্তি স্বৰ্গলোকে , এমনকি ব্রহ্মলোকেও উন্নীত হন ।

        ব্রহ্মা পুষ্করকে এই ধরনের অসাধারণ কৃপা অনুমোদনের কিছুকাল পরে কোন কোন দেবতারা তাঁর কাছে এসে অভিযোগ করতে লাগলেন তিনি মানুষের স্বর্গ লাভের পথ অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন । তাঁরা এই ভেবে ভীত হলেন যে , এর ফলে মানুষেরা তাদের ধর্মীয় কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করবে আর তার ফলাফল স্বরূপ পৃথিবী অধর্মের যন্ত্রণা ভোগ করবে । এ ব্যাপারে ব্রহ্মাও তাঁদের সঙ্গে একমত হলেন এবং ঘোষণা করলেন যে , এখন থেকে পুষ্করে স্নান করার মাধ্যমে স্বর্গলাভের বর বা আশীর্বাদটি কেবলমাত্র কার্তিক মাসের শেষ পাঁচ দিনই কার্যকরী থাকবে । সেই থেকে কার্তিক মাসের শেষের পাঁচদিন এই পুষ্কর তীর্থে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হয়ে থাকে এবং তখন সমগ্র পুষ্কর ক্ষেত্র এক মহা উৎসবে মেতে ওঠে।

        বৈদিক শাস্ত্র মতে আমরা জানতে পারি যে , পরমেশ্বর ভগবান কৃষ্ণের অংশাবতার শ্রীগর্ভোদকশায়ীর নাভিদেশ থেকে বিকশিত একটি পদ্ম থেকে ব্রহ্মার জন্ম হয়েছিল । যেহেতু সাধারণভাবে ব্রহ্মার জন্ম হয়নি তাই তিনি “ আত্ম - ভূ ” অর্থাৎ স্বয়ম্ভু নামে পরিচিত । যদিও ব্রহ্মাকে এই জগতের স্রষ্টা বলা হয় , কিন্তু ভগবান বিষ্ণু দ্বারা তাঁর মধ্যে সঞ্চারিত শক্তির দ্বারাই তিনি সৃষ্টি করেন । প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টার পদটি যে পদে ব্রহ্মা অভিষিক্ত , সেই পদটি হচ্ছে এমনই একটি পদ যেখানে কোন উচ্চগুণসম্পন্ন জীবকে ভগবান বিষ্ণু অধিষ্ঠিত করেন । ব্রহ্মা অসীম পুরুষোত্তম ভগবান বিষ্ণুর মতো নয় , বরং পরম পুরুষ থেকে উৎসারিত অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবের একজন । আমাদেরই মতো ব্রহ্মাও একজন জীব যদিও ব্রহ্মা , শিব ও বিষ্ণু ব্যতীত অন্য সকল দেবতার ঊর্ধ্বে আসীন কিন্তু তাঁর প্রধান গুণ হল তিনি নিজেকে সবসময় পরমেশ্বর ভগবানের একজন নিত্য দাস মনে করেন । পুষ্কর তীর্থে গিয়ে আমরা ব্রহ্মার উন্নত অবস্থান বিষয়ে সচেতন হই , তাঁর কাছে স্বর্গ লাভের মতো জাগতিক সুখ প্রাপ্তির প্রার্থনা করি । উন্নত চেতনার মানুষেরা জানেন যে , এই ধরনের সুখ পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি শুদ্ধভক্তি প্রাপ্তির সঙ্গে মানানসই নয় । কিন্তু ব্ৰহ্মা সেটিও আমাদের প্রদান পারেন । পৃথিবীর একমাত্র ব্রহ্মা মন্দিরে ব্রহ্মাজীর বিগ্রহ করতে ভাগবতের প্রথম শ্লোকেই বলা হয়েছে পরমেশ্বর ভগবান , ব্রহ্মার হৃদয়ে পারমার্থিক জ্ঞানের প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন । কঠোর তপশ্চর্যার পর ব্রহ্মা হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন যে , ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম ব্রহ্ম আর ব্রহ্মা সহ সকল জীব হচ্ছে তাঁর দাস ।

        ব্রহ্মা হচ্ছেন চারটি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের , অর্থাৎ ভগবান কৃষ্ণ রা বিষ্ণুর শিষ্য পরম্পরার একটির প্রধান । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু , যিনি হচ্ছেন স্বয়ং কৃষ্ণ , তিনি নিজেকে ব্রহ্মার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন । সুতরাং শ্রীচৈতন্যের পরম্পরার অধীন ' আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ'ও ( ইসকন ) ব্রহ্মার সম্প্রদায়ের একটি অংশ এবং ইসকনের সদস্যগণ তাই পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি শুদ্ধ ভক্তি লাভের জন্য ব্রহ্মার কাছে প্রার্থনা জানাতে পারেন ।

        পদ্ম পুরাণের সৃষ্টিখণ্ডের সপ্তদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে , একবার ব্রাহ্মণ ও দেবতাগণকে সঙ্গে করে একটি যজ্ঞ করার উদ্দেশ্যে ব্রহ্মা পুষ্করে গিয়েছিলেন । এই যজ্ঞের নিয়মটি হচ্ছে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যজ্ঞ করতে হবে । তাই যজ্ঞের সমস্ত আয়োজন যখন সম্পন্ন হল তখন ব্রহ্মা তাঁর স্ত্রী সরস্বতীকে নিয়ে আসার জন্য দেবর্ষি নারদকে প্রেরণ করলেন । কিন্তু সেই সময় সরস্বতী ব্রহ্মার কাছে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না । ফলে নারদ একা পুষ্করে ফিরে এলেন । কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যার গণনা অনুযায়ী যজ্ঞ তক্ষুণি শুরু করতে হবে , তাই ব্রহ্মা স্বর্গের রাজা ইন্দ্রের কাছে তাঁকে যজ্ঞে সহায়তার জন্য একজন উপযুক্ত পত্নী প্রদান করতে বললেন । ইন্দ্ৰ একজন গোপ কন্যাকে পছন্দ করলেন । কিন্তু যজ্ঞের জন্য প্রয়োজন ছিল যে , কন্যাকে ব্রাহ্মণকুলের হতে হবে । তাই দেবতারা তাকে একটি গাভীর মুখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে গাভীর পশ্চাৎদেশ দিয়ে বার করে এনে তাকে শুদ্ধ করলেন বা তাকে উন্নত কুলে উন্নীত করলেন । কন্যাটিকে এভাবে শুদ্ধ করানো হয়েছিল কেননা বৈদিক সংস্কৃতিতে গাভীকে ব্রাহ্মণের মতোই শুদ্ধ ও উন্নত শ্রেণীর বলে গণ্য করা হয় । সেই কন্যাটি তখন গায়ত্রী নামে পরিচিত হলেন , অর্থাৎ ' যাকে একটি গাভীর মধ্য দিয়ে টেনে আনা হয়েছিল । '

        এরপর সরস্বতী যজ্ঞস্থলে পৌছে তাঁর স্বামী ব্রহ্মার পাশে বসতে গিয়ে দেখলেন সেখানে আরেকটি নারী— গায়ত্রী বসে আছেন । তা দেখে সরস্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে ব্রহ্মাকে এবং সেখানে উপস্থিত অন্য দেবতাদের অভিশাপ দিলেন । কিন্তু গায়ত্রী সেই অভিশাপকে আশীর্বাদে পরিণত করলেন । যেমন , সরস্বতী ব্রহ্মাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে , ব্রহ্মা কেবলমাত্র কার্তিক মাসের পূর্ণিমা ব্যতীত আর কখনও পূজিত হবেন না । কিন্তু গায়ত্রী ঘোষণা করলেন “ যিনি ব্রহ্মার আরাধনা করবেন , তিনি সম্পদ ও ভালো পরিবার লাভ করবেন এবং ব্রহ্মার সঙ্গে তার পুনর্মিলন ঘটবে । সরস্বতী দেবী ক্রোধে সেই যজ্ঞস্থল ত্যাগ করে নিকটবর্তী একটি পর্বতে গিয়ে তপস্যা করতে লাগলেন ।

        যারা পুষ্কর তীর্থে যাবেন তারা আজও সেখানে সরস্বতী দেবী ও গায়ত্রী দেবী উভয়েরই মন্দির দর্শন করতে পারবেন ।

        সরস্বতী দেবী এই জগতে নদী রূপেও অবস্থান করছেন । বলা হয় যে সরস্বতী নদীর পাঁচটি শাখা— সরস্বতী , সুপপ্রা , চন্দ্রা , কনকা এবং নন্দা আজও পুষ্কর ক্ষেত্রে প্রবাহিত কিন্তু বর্তমানে তারা সাধারণতঃ চোখে দর্শনীয় নয় ।

        সহস্র সহস্র বৎসর ধরে পুষ্কর পবিত্র স্থানরূপে পরিচিত । সেখানে অনেক পরিচিত বৈদিক ঋষিগণ তপস্যা করেছিলেন , যেমন— অগস্ত্য মুনি , পুলস্ত মুনি এবং ঋষি মার্কণ্ডেয় ৷ এই পুষ্কর ক্ষেত্রেই স্বর্গের দাসী মেনকা বিশ্বামিত্র মুনির তপস্যা ভঙ্গ করিয়েছিলেন । বিশ্বামিত্র ছিলেন একজন যোদ্ধা , কিন্তু তিনি ব্রহ্মর্ষি হবার জন্য তপস্যা করেছিলেন কিন্তু স্বর্গের মেনকা তার তপস্যা ভঙ্গ করান । অবশ্য পরে এই পুষ্কর ক্ষেত্রেই বিশ্বামিত্র তাঁর লক্ষ্য প্রাপ্ত হয়েছিলেন ।

        আজও বিশ্বামিত্র মুনির সময়ের হাজার হাজার বৎসর পরও তীর্থযাত্রীরা তাদের মনস্কামনা পূরণের জন্য পুষ্কর তীর্থে গমন করেন । যারা উচ্চতম উপলব্ধির পর্যায়ে রয়েছেন তারা এই পবিত্র তীর্থ এবং এর অধিষ্ঠিত বিগ্রহ ব্রহ্মার কাছে একটি মাত্র প্রার্থনাই করেন — ' তারা যেন কৃষ্ণের প্রতি শুদ্ধ প্রেমে উন্নত হতে পারেন । '

        পুষ্কর ক্ষেত্রে নানা দেবদেবীর প্রায় চারশত মন্দির রয়েছে , কিন্তু এই ক্ষেত্রের প্রধান মন্দিরটি হচ্ছে ভগবান ব্রহ্মার মন্দির । মন্দিরটি শহরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত । সেখানে চতুর্মুখ ব্রহ্মার বামদিকে বসে আছেন গায়ত্রীদেবী এবং ব্রহ্মার ডান দিকে বসে আছেন সাবিত্রী দেবী বা মতান্তরে সরস্বতী দেবী । মন্দিরের চত্বর জুড়ে রয়েছেন বিভিন্ন দেব - দেবীর বিগ্রহ যেমন , ইন্দ্র , কুবের , শিব এবং দুর্গা । আর রয়েছে বিভিন্ন ঋষি - মুনিগণের বিগ্রহ , যেমন দত্তাত্রেয় , নারদ মুনি এবং সপ্তর্ষি বর্গ । মন্দিরে ব্রহ্মার মূল বিগ্রহটি ঠিক কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেটি অজ্ঞাত । সেই মূল বিগ্রহটি মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব সপ্তদশ শতকে ধ্বংস করে ফেলেন । বর্তমান মন্দিরটি ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে পুনঃনির্মিত হয় ।

        এই ব্রহ্মার মন্দিরের থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি পাহাড়ের উপরে রয়েছে ব্রহ্মার প্রথম পত্নী সরস্বতী বা সাবিত্রী দেবীর মন্দির । কথিত আছে সরস্বতী দেবী ক্রুদ্ধ হয়ে ব্রহ্মা ও অন্যান্য দেবতাদের অভিশাপ দিয়ে তপস্যার জন্য এই পর্বতে এসেছিলেন । মন্দিরে পৌঁছতে হলে খুব কষ্টকর এক ঘণ্টার রাস্তা হেঁটে যেতে হবে । অনেক তীর্থযাত্রী তাই দূর থেকে মন্দির দর্শন করে ফিরে যান । সাবিত্রী দেবী পূর্ব দিকে মুখ করে এখানে অধিষ্ঠিত রয়েছেন । এই পাহাড় থেকে পুষ্করের সম্পূর্ণ দৃশ্য দেখা যায় ।

        এছাড়াও আছে গায়ত্রী মন্দির । এই মন্দিরটি সাবিত্রী মন্দির থেকে পুষ্কর শহরের বিপরীত দিকে একটি পাহাড়ের উপর প্রতিষ্ঠিত । প্রধান মন্দিরগুলির মধ্যে আরও রয়েছে বরাহ মন্দির , রঙ্গনাথ মন্দির , রামা - বৈকুণ্ঠ মন্দির এবং কৃষ্ণ মন্দির । একটি ছোট পাহাড়ের উপরে বরাহ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত । সেখানে রয়েছে শ্বেত পাথরে নির্মিত শ্রীকৃষ্ণের বরাহ অবতাররূপ দক্ষিণমুখী বিগ্রহ । মন্দিরের বর্তমান বিগ্রহটি ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত শোনা যায় আদি মন্দিরটি ছিল ১৫০ ফুট উঁচু । দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মোগলেরা এই মন্দিরের উপর তিনবার আক্রমণ চালিয়ে ধ্বংস করে ।

        রঙ্গনাথ মন্দিরটি পুষ্কর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত । সেখানে রয়েছে ছয় ফুট লম্বা বেণুগোপালের অপূর্ব বিগ্রহ । সেখানে রাধারাণী , রুক্মিণী , লক্ষ্মীদেবী এবং নৃসিংহদেবের বিগ্রহও রয়েছে ।

        রামা - বৈকুণ্ঠ মন্দিরটি শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত । এটি আসলে শ্রীশ্রীলক্ষ্মী নারায়ণের মন্দির । একে নতুন রঙ্গনাথ মন্দিরও বলা হয় । আর কৃষ্ণমন্দিরটি রয়েছে শহরের কেন্দ্রস্থল জ্যেষ্ঠ পুষ্কর সরোবর থেকে দু'কিলোমিটার দূরে । এটি মধ্য পুষ্কর সরোবরের প্রধান মন্দির ।

        কার্তিক মাসের শেষ পাঁচদিনে , বিশেষ করে কার্তিক পূর্ণিমার সময় প্রায় দু'লক্ষ পুণ্যার্থী প্রতি বৎসর পুষ্করে আসেন । সেই সময় পুষ্করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উটের মেলা বসে । শুধু উট নয় , ঘোড়া ও অন্যান্য পশু - পাখীও সেই মেলায় আসে এবং কেনা - বেচা হয় ।

        পুষ্কর জায়গাটি ভারতের রাজস্থান রাজ্যের অন্তর্গত । রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে পুষ্কর ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ - পশ্চিমে অবস্থিত । আবার রাজস্থানের প্রসিদ্ধ শহর আজমীড় হয়েও পুষ্কর যাওয়া যায় । আজমীড় থেকে পুষ্কর মাত্র ১৩ কিলোমিটার । পুষ্কর যাবার শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত । পুষ্করে থাকার জায়গা অনেক আছে । প্রচুর হোটেল । এছাড়াও সরোবরের তীর ঘেঁষে সরকারী ট্যুরিষ্ট বাংলো আছে । কেউ যদি কার্তিক মাসে বা কার্তিক পূর্ণিমার সময় পুষ্করে যেতে চান তাহলে বেশ কয়েকমাস আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো । এছাড়া ঐ সময় রাজস্থান সরকার তীর্থযাত্রীদের জন্য আরামদায়ক তাঁবু নির্মাণ করেন । ঐ তাঁবুতেও থাকা যায় । পুষ্করে একটা সুবিধা এই যে , সেখানে কেবল নিরামিষ আহারই সর্বত্র পরিবেশন করা হয় । ব্রহ্মা মন্দিরেরও নিজস্ব রেষ্টুরেন্ট আছে । সেখানকার খাবার - দাবারও বেশ ভাল ।

  • পরবর্তী তীর্থস্থান ২০ ) জয়পুর
  • * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।